প্রশ্ন
কোনো বুজুর্গ ব্যক্তির ওসিলা দিয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করা যাবে কি?
উত্তর
بسم الله الرحمٰن الرحيم. حامدا و مصليا و مسلما
হ্যাঁ, অধিকাংশ উলামায়ে কেরামের নিকট বুজুর্গ ব্যক্তির ওসিলা দিয়ে দোয়া করা যাবে। তবে বুজুর্গ ব্যক্তির কাছে প্রার্থনা করা যাবে না। তার কাছে প্রার্থনা করা সরাসরি শিরক।
আল্লাহ তাআলা কুরআন মাজিদে ইরশাদ করেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَابْتَغُوا إِلَيْهِ الْوَسِيلَةَ وَجَاهِدُوا فِي سَبِيلِهِ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
‘হে মুমিনগণ, আল্লাহকে ভয় কর এবং তার নৈকট্যের অনুসন্ধান কর, আর তার রাস্তায় জিহাদ কর, যাতে তোমরা সফল হও।’ [সূরা মায়েদা, আয়াত: ৩৫]
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসিরে রুহুল মাআনিতে বলা হয়েছে,
‘রাসূল (সা.) ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তির ওসিলা দিয়ে দোয়া করতে কোনো অসুবিধা নেই, যদি ওসিলা গ্রহণকারী ব্যক্তি সুনিশ্চিতভাবে জানে যে, আল্লাহর কাছে উক্ত ব্যক্তির বিশেষ কোনো মর্যাদা রয়েছে।’ [তাফসিরে রুহুল মাআনি ৬/১২৮]
হাদিস শরিফে এসেছে,
عَنْ عُثْمَانَ بْنِ حُنَيْفٍ، أَنَّ رَجُلاً، ضَرِيرَ الْبَصَرِ أَتَى النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ ادْعُ اللَّهَ أَنْ يُعَافِيَنِي . قَالَ إِنْ شِئْتَ دَعَوْتُ وَإِنْ شِئْتَ صَبَرْتَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكَ . قَالَ فَادْعُهُ . قَالَ فَأَمَرَهُ أَنْ يَتَوَضَّأَ فَيُحْسِنَ وُضُوءَهُ وَيَدْعُوَ بِهَذَا الدُّعَاءِ اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ وَأَتَوَجَّهُ إِلَيْكَ بِنَبِيِّكَ مُحَمَّدٍ نَبِيِّ الرَّحْمَةِ إِنِّي تَوَجَّهْتُ بِكَ إِلَى رَبِّي فِي حَاجَتِي هَذِهِ لِتُقْضَى لِي اللَّهُمَّ فَشَفِّعْهُ فِيَّ
‘উসমান ইবনে হুনাইফ (রা.) হতে বর্ণিত আছে, এক অন্ধ ব্যক্তি রাসূল (সা.)-এর কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার জন্য আল্লাহ তাআলার নিকট দোয়া করুন, যেন আমাকে তিনি আরোগ্য দান করেন। তিনি বললেন: তুমি কামনা করলে আমি দোয়া করব, আর তুমি চাইলে ধৈর্য ধারণ করতে পার, সেটা হবে তোমার জন্য উত্তম। সে বলল: তার নিকটে দোয়া করুন।
বর্ণনাকারী বলেন, তিনি তাকে উত্তমভাবে অজু করার হুকুম করলেন এবং এই দোয়া করতে বললেন, হে আল্লাহ! তোমার নিকট আমি প্রার্থনা করি এবং তোমার প্রতি মনোনিবেশ করি তোমার নবী, দয়ার নবী রাসূল (সা.)-এর মাধ্যমে। আমি তোমার দিকে ঝুঁকে পড়লাম, আমার প্রয়োজনের জন্য আমার প্রভুর দিকে ধাবিত হলাম, যাতে আমার এ প্রয়োজন পূর্ণ করে দেয়া হয়। হে আল্লাহ! আমার প্রসঙ্গে তুমি তার সুপারিশ কবুল কর।’ [সুনানে তিরমিযি, হাদিস: ৩৫৭৮]
আরেক হাদিসে এসেছে,
عَنْ أَنَسٍ، أَنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ ـ رضى الله عنه ـ كَانَ إِذَا قَحَطُوا اسْتَسْقَى بِالْعَبَّاسِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ فَقَالَ اللَّهُمَّ إِنَّا كُنَّا نَتَوَسَّلُ إِلَيْكَ بِنَبِيِّنَا فَتَسْقِينَا وَإِنَّا نَتَوَسَّلُ إِلَيْكَ بِعَمِّ نَبِيِّنَا فَاسْقِنَا قَالَ فَيُسْقَوْنَ
‘আনাস ইবনে মালিক (রা.) হতে বর্ণিত। উমর ইবনে খাত্তাব (রা.) অনাবৃষ্টির সময়ে আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব (রা.)-এর ওসিলা দিয়ে বৃষ্টির জন্য দোয়া করতেন এবং বলতেন, হে আল্লাহ্! (আগে) আমরা আমাদের নবী রাসূল (সা.) -এর ওসিলা দিয়ে দোয়া করতাম এবং আপনি বৃষ্টি দান করতেন। এখন আমরা আমাদের নবী রাসূল(সা.) -এর চাচার ওসিলা দিয়ে দোয়া করছি, আপনি আমাদেরকে বৃষ্টি দান করুন। বর্ণনাকারী বলেন, দোয়ার সাথে সাথেই বৃষ্টি বর্ষিত হত।’ [সহিহ বুখারি, হাদিস: ১০১০]
তবে অবশ্যই খেয়াল করতে হবে কোনো নেক আমল বা বুজুর্গ ব্যক্তির ওসিলা দিয়ে দোয়া করা আর বুজুর্গের কাছেই সেই বিষয়টি চাওয়া এক কথা নয়। বুজুর্গ ব্যক্তির কাছে চাওয়া শিরক হিসেবে বিবেচিত হবে।
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم