প্রশ্ন
আমরা জানি যে, আল্লাহর হুকুম ছাড়া কোনো কিছুই ঘটে না। আবার প্রত্যেক ব্যক্তির জান আজরাইল (আ.)-ই কবজ করেন, তাহলে আত্নহত্যা করা মহাপাপ কেন?
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
حامدا و مصليا و مسلما
কোন কিছু আল্লাহর হুকুম ছাড়া হয় না, একথা যেমন সত্য। তেমনি মালাকুল মওত তথা আজরাইলই সবার জান কবজ করে একথাও সত্য। কিন্তু ইচ্ছেকৃত নিজেকে হত্যা করা তথা আত্মহত্যা করা মহাপাপ তথা কবীরা গোনাহ এটাও ঠিক।
‘আর আল্লাহর হুকুম ছাড়া কিছু হয় না’ এর অর্থ হলো, আল্লাহ তাআলা ব্যক্তিকে বাঁধাদান করার ক্ষমতা রাখেন। কিন্তু তিনি ব্যক্তিকে দুনিয়ার জীবনে স্বাধীনতা দিয়ে রেখেছেন। সে ইচ্ছে করলে ভালো কাজ করতে পারে, ইচ্ছে করলে খারাপ কাজ করতে পারেন। তিনি এতে সরাসরি বাঁধা প্রদান করেন না। ব্যক্তিকে স্বাধীন করে রেখেছেন।
যদি তিনি বাধা প্রদান করতেন, তাহলে ব্যক্তি তা করতে পারতো না। এক্ষেত্রে উক্ত ব্যক্তির নেক কাজের কোন পুরস্কারও প্রাপ্ত হতো না। কারণ, এটিতো আল্লাহ সরাসরি ব্যক্তি দিয়ে করিয়েছেন। এতে ব্যক্তির কোন কৃতিত্ব বাকি থাকে না। তাই ভালো ও নেক কাজ করলেও ব্যক্তি কোন সওয়াব বা পুরস্কারের হকদার হতো না।
কিন্তু ভালো কাজ করলে ব্যক্তি সওয়াব পায়। সেইসাথে এর কারণে আখেরাতে পুরস্কার স্বরূপ জান্নাতও পাবে। তেমনি দুনিয়াতে খারাপ কাজ করে গেলে তার জন্য শাস্তিও রয়েছে।
এর কারণ হলো, ব্যক্তি ভালো ও খারাপ কাজ করতে স্বাধীন। এ কারণে সে তার ভালো ও মন্দ কাজের পুরস্কার ও শাস্তির হকদার হয়।
এখানে আল্লাহর হুকুমেই সবকিছু হয়, এর অর্থ দাঁড়ায়, আল্লাহ চাইলে বাঁধা দিতে পারেন। কিন্তু বাঁধা না দিয়ে ব্যক্তির স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ না করাটাই আল্লাহর হুকুমে হচ্ছে বলা হয়ে থাকে। কারণ, আল্লাহ চাইলে তা বন্ধ করতে পারেন। কিন্তু এতে করে ব্যক্তির নিজস্বতা ও স্বাধীনতা হস্তক্ষেপ হতো। দুনিয়া যেহেতু পরীক্ষার স্থান। তাই এখানে আল্লাহ তাআলা বান্দার কাজে বাধা না দিয়ে তাকে স্বাধীনতা দিয়েই মূলত তার হুকুমে সব কিছু করতে দিচ্ছেন।
যেহেতু আত্মহত্যা করা গোনাহের কাজ বলে আল্লাহর বিধান রয়েছে। সুতরাং তা লঙ্ঘণ করে ব্যক্তি যখন সেই গোনাহে লিপ্ত হয়, তখন ব্যক্তির স্বাধীন কর্মকাণ্ডে আল্লাহ তাআলা হস্তক্ষেপ না করে স্বাধীন করে রেখেছেন। যেহেতু সে নিজের ইচ্ছেমত আল্লাহর বিধানের উল্টো কাজ করেছে, এ কারণে উক্ত ব্যক্তি পাপিষ্ঠ ও আল্লাহর বিধানের উল্টো পদক্ষেপ নেয়ার কারণে গোনাহগার ও পাপী সাব্যস্ত হয়। সেই হিসেবে সে এর শাস্তি আখেরাতে ভোগ করবে।
েআল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে বলেন,
وَلَا تَقْتُلُوا أَنفُسَكُمْ ۚ إِنَّ اللَّهَ كَانَ بِكُمْ رَحِيمًا [٤:٢٩[
আর তোমরা নিজেদেরকে হত্যা করো না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা’আলা তোমাদের প্রতি দয়ালু। (সূরা নিসা, আয়াত:২৯)
নিজেকে কষ্ট থেকে বা মানসিক যাতনা থেকে মুক্তি দিতে যারা আত্মহত্যা করে, তাদের বিষয়ে ইরশাদ হচ্ছে:
عَنْ جُنْدَب عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ كَانَ بِرَجُلٍ جِرَاحٌ فَقَتَلَ نَفْسَهُ فَقَالَ اللهُ بَدَرَنِي عَبْدِي بِنَفْسِهِ حَرَّمْتُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ
হযরত জুনদুব (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, এক ব্যক্তির (দেহে) যখম ছিল, সে আত্মহত্যা করল। তখন আল্লাহ তা‘আলা বললেন, আমার বান্দা তার প্রাণ নিয়ে আমার সাথে তাড়াহুড়া করল। আমি তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিলাম। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৩৬৪)
অন্য এক হাদিসে এসেছে,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم الَّذِي يَخْنُقُ نَفْسَهُ يَخْنُقُهَا فِي النَّارِ وَالَّذِي يَطْعُنُهَا يَطْعُنُهَا فِي النَّارِ
হযরত আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (সা.) বলেছেন, যে ব্যাক্তি ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামে (অনুরূপভাবে) নিজেকে ফাঁস লাগাতে থাকবে আর যে ব্যাক্তি বর্শার আঘাতে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নাম (অনুরূপভাবে) বর্শা বিঁধতে থাকবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস:১৩৬৫; ইফাবা, হাদিস: ১২৮১)
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم