গুনাহের সংজ্ঞা ও উহার প্রকারভেদ
আরবী الذنب অর্থ গুনাহ। ইসলামী মনিষীদের মতে كل ما توعد عليه الشارع শরীয়তের পক্ষ থেকে যে সব কাজের ব্যাপারে শাস্তির কথা বলা হয়েছে তাই গুনাহ।
আল্লাহ প্রদত্ত কয়েকটি শর্ত যথাযথভাবে পূরন না করে আমলে সালেহ বা সৎ কাজ পরিত্যাগ করাকে গুনাহ বলে। আর ঐ শর্তগুলো পূরন করার ধরনের উপর ভিত্তি করে গুনাহ বিভিন্ন শ্রেনীতে বিভক্ত হয়। শর্তগুলো হলো- ১. ওজর তথা বাধ্য-বাধ্যকত (Excuse) ২. অনুশোচনা (Repentance) ৩.উদ্ধার পাওয়ার চেষ্টা
ওজর (Excuse) থাকলে গুনাহ হয় না
কুরআন, হাদীস ইত্যাদীর দলীলসমূহ
আল কুরআন: তোমাদের জন্যে হারাম করা হয়েছে মৃত জীব, রক্ত, শূকরের গোশত এবং সে সকল জীব যা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে উৎসর্গ করা হয়েছে। কিন্তু কেউ যদি কঠিন ঠোকায় পড়ে, আইন ভঙ্গ করার ইচ্ছা না রেখে এবং প্রয়োজন পরিমাণের সীমালংঘন না করে,ম তা হতে কিছু খায় তবে তার কোন গুনাহ হবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল ও অনুগ্রহকারী। (সুরা বাকারা : ১৭৩)
ক. কঠিন ঠেকা তথা কঠিন ওজর থাকা।
খ. আইন ভঙ্গ বা গুনাহ করার ইচ্ছা না থাকা। অর্থাৎ প্রচন্ড অনিচ্ছায়, দুঃখ, অনুশোচনা ইত্যাদী থাকা।
গ. যতটুকু না খেলে বা না করলে জীবন বাঁচে না ততটুকু খাওয়া বা করা।
আল কুরআন: কোন মু’মিন যেন ঈমানদারদের পরিবর্তে কাফিরদের বন্ধু (পৃষ্ঠপোষক) হিসেবে গ্রহন না করে। যে (মু’মিন) এরকম করবে, আল্লাহর সঙ্গে তার কোন (ঈমানের) সম্পর্ক থাকবে না। শুধু তারা ব্যতীত যারা অত্যাচার হতে বাঁচার জন্যে (বাহ্যত) এরকম আচরন করে। (আলে ইমরান : ২৮)
আল কুরআন: আর যারা অত্যাচারিত হওয়ার পর প্রতিশোধ গ্রহন করে তাদের কোনরূপ তিরস্কার করা যেতে পারে না। (শুরা : ৪১)
আল কুরআন: তোমাদের জন্যে হারাম করা হয়েছে মৃত জন্তু (প্রবাহিত) রক্ত, শুকরের গোশত এবং সেই প্রানী যা আল্লাহ ভিন্ন অপর কারো নামে জবেহ করা হয়েছে এবং যা গলায় ফাঁস পড়ে, আঘাত পেয়ে, উপর হতে পড়ে গিয়ে বা সংঘর্ষে পড়ে মারা গিয়েছে। আর যা কোন হিংস্র জন্তু ছিন্নভিন্ন করে মেরেছে, তবে এর মধ্যে যে মরার আগে জবেহ করা হয়েছে সেটি ব্যতীত। অথবা যা কোন আস্তানায় জবেহ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে পাশা খেলে নিজের ভাগ্য জানাও হারাম। এই সকল সম্পূর্ন ফাসেকি। আজ কাফেরগণ তোমাদের দীন সম্পর্কে সম্পূর্ন নিরাশা হয়েছে। তাই তোমরা তাদের ভয় না করে আমাকে ভয় কর। আজ আমি তোমাদের দীনকে তোমাদের জন্যে পরিপূর্ন করে দিয়েছি এবং আমার নিয়ামতও তোমাদের জন্য পূর্ণ করে দিয়েছি। আর তোমাদের জন্যে ইসলামকে দীন হিসেবে কবুল করে নিয়েছি। অবশ্য যদি কোন ব্যক্তি ক্ষুধার কারণে বাধ্য হয়ে, গুনাহ করার (আদেশ অমান্য করার) প্রবণতা (ইচ্ছা) ছাড়া ঐ ধরনের কিছু খায় বা করে, তবে নিশ্চয়ই আল্লাহ মাফকারী ও রহমত দানকারী। (মায়েদা:৩)
আয়াতের শিক্ষা
*আল্লাহর নিদর্শনসমূহের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন না করা,
*হারাম মালসমূহের কোনটিকে হালাল করে না নেয়া,
*কোরবানীর জন্তুর উপর হস্তক্ষেপ না করা
*যে সব লোককে কোনরূপ কষ্ট না দেয়া যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্যে আল্লাহর ঘরে (কাবা ঘরে) যাচ্ছে
*শত্র“দের মোকাবিলায় অবৈধ বাড়াবাড়ি না করা
*ভাল কাজে পরস্পরকে সহযোগিতা করা
*গুনাহের ও সীমা লংঘনের কাজে কাউকে একটুও সহযোগিতা না করা।
তারপর আলোচ্য আয়াতখানিতে মহান আল্লাহ সেই ঈমানদারদের লক্ষ্য করে আরো কিছু হারাম বিষয়ের কথা জানিয়ে দিয়েছেন। বিষয় গুলি হলো-
*মৃত জন্তু (প্রবাহিত) রক্ত, শুকরের গোসত এবং আল্লাহ ব্যতীত অপর কারো নামে জবেহ হয়েছে এমন কোন জন্তুর গোশত খাওয়া
*গলায় ফাঁস পরে, আঘাত পেয়ে, উপর হতে পড়ে গিয়ে, হিংস্র জন্তু দ্বারা ছিন্ন ভিন্ন হযে মারা যাওয়া প্রাণী (মরার আগে জবেহ করা ব্যতীত) খাওয়া।
*গায়রুল্লাহর আস্তানায় জবেহ করা জন্তু খাওয়া।
*পাশা খেলার মাধ্যমে ভাগ্য জানা। এসব গুলিই করা গুনাহের কাজ।
আল-হাদীস
عن ابى أبى سعيد خدري (رض) عن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال من رأى منكم ممكرا فليغيره بيده فأن لم يستطع فبلسانه فإن لم يستكع فبقله وذلك أصعف الأيمان مسلم.
অর্থ আবু সাইদ খুদরী (রা) বলেন, রাসুল (সাঃ) বলেছেন, তোমদের মধ্যে যে কেউ অন্যায় কাজ হতে দেখে সে যেন তা হাত দিয়ে বন্ধ করে। যদি ঐ ক্ষমতা না থাকে তবে সে যেন নিজ জিহ্বা দ্বারা তার প্রতিবাদ করে। আর যদি তার ক্ষমতাও না থাকে সে যেন নিজের অন্তরে তা ঘৃনা করে। আর এট ঈমানের দুর্বলতমস্তর।
ব্যাখ্যা : রাসুল (সাঃ) হাদীসখানির মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন অন্যায় হতে দেখলে প্রথমে হাত দিয়ে তা বন্ধ করতে হবে। সে ক্ষমতা না থাকলে অর্থাৎ ঐ ব্যাপারে ওজর থাকলে মুখ দিয়ে তার প্রতিবাদ করতে হবে। সে ক্ষমতাও না থাকলে অন্তরে তা ঘৃনা করতে হবে। আর অন্তরে ঘৃনা থাকা হল ইমানের দুর্বলতমস্তর।
তাই এ হাদীসের আলোকে বলা যায় ওজর ও ঘৃনা আমলে সালেহ ছেড়ে দেয়ার পর গুনাহ হওয়া না হওয়ার দুটি শর্ত।
عي ابى هريرة قال جاء رجل إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال يا رسول الله أرأيت إن جاء رجل يريد أخذ مالى قال فدا تعطه مالك قال أرأيت إن قاتلني قال قاتله قال أرأيت إن قتلني قال قانت شهيد قال أرأيت إن قتلته قال هو في النار.
অর্থ আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন এক ব্যক্তি রাসুল (সাঃ) এর কাছে এসে বলল : হে আল্লাহর রাসুল যদি কোন লোক আমার ধন-সম্পদ ছিনিয়ে নিতে আসে তাহলৈ সে ব্যাপারে আপনি কি বলেন ? জবাব দিলেন : তোমার ধন-সম্পদ তাদে দিও না। ঐ ব্যক্তি আবর বলল আপনি কি বলেন, যদি সে আমাকে সশস্ত্র আক্রমন করে ? জবাব দিলেন : তুমিও তাকে আক্রমন করো। লোকটি বলল, আপনি কি বলেন, যে যদি আমাকে হত্যা করে ? তিনি বলেন : তাহলে তুমি শহীদ। ঐ ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, আর যদি আমি তাকে হত্যা করি তাহলে সে ক্সেত্রে আপনি কি বলেন? জবাব দিলেন : তাহলে সে জাহান্নামে যাবে। (মুসলিম)
ব্যাখ্যা : কাউকে আক্রমন না করা বা হত্যা না করা দুটি বড় আমলে সালেহ। তাই এ হাদীসখানি থেকেও স্পস্ট বোঝা যায় সমান গুরুত্বের ওজর আমলে ছাড়ার পর গুনাহ হওয়া না হওয়ার একটি অতীবগুরুত্বপূর্ণ শর্ত।
* হযরত ওমর (রাঃ) এর খেলাফাত কালে একসময় দুর্ভীক্ষ হয়। সে সময় পেটের দায়ে যারা চুরি করেছিল, শাস্তিস্বরুপ হাত কাটার ইসলামী নীতি (হদ) তিনি তাদের উপর প্রয়োগ করেননি। কারণ তাদের সমান গুরুত্বের ওজর ছিল। এখান থেকেও বোঝা যায় ওজর তথা বাধ্য-বাধকতা আমলে সালেহ ছাড়ার পর গুনাহ হওয়া না হওয়ার একটি শর্ত।
কুরআন, হাদীস ও বিবেক-বুদ্ধির উল্লিখিত তথ্যসমূহের আলোকে নিশ্চয়তাসহকারে বলা যায় ওজর (Excuse) বা বাধ্য বাধকতা আমলে সালেহ ছাড়ার পর গুনাহ না হওয়ায়র একটি শর্ত।
বিকেব বুদ্ধি
বিবেক বুদ্ধি অনুযায়ী নিষিদ্ধ কাজ করার পর অপরাধ হবে কি হবে না বা হলে কেমন ধরনের অপরাধ হবে তা নির্ধারন করার জন্য ওজর তথা বাধ্য-বাধকতা একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। এজন্যেই নিজের বাঁচানোর জন্যে যদি কেউ অন্যকে হত্যা করে তবে তাতে অপরাধ ধরা হয় না এবং বিচারে তার শাস্তি হয় না।
সুতরাং বিবেকÑবুদ্ধি অনুযায়ী ওজর আমলে সালেহ ছাড়ার পর গুনাহ হওয়া না হওয়া এবং হলে কি ধরনের গুনাহ হবে তা নির্ধারনের ব্যাপারে একটি গুরুত্বপূর্ন শর্ত হওয়ার কথা।
অনুশোচনা (Repentance) থাকলে গুনাহ হয় না
আল-কুরআন
আল কুরআন: যে ব্যক্তি ইমান আনার পর কুফরী কথা বা কাজ করে, সে যদি ওজর বা বাধ্য-বাধকতার কারণে তা করে কিন্তু মনে তার ঈমান দৃঢ় থাকে (তবে তাতে তার কোন গুনাহ নাই)। কিন্তু যে ব্যক্তি মনের সন্তোষসহকারে কুফরী কথা বা কাজ করে তার উপর আল্লাহর গযব বর্ষিত হবে। আর এ ধরনের ব্যক্তির জন্যে রয়েছে কঠিন শাস্তি। (নাহাল :১০৬)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ এখানে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন ওজরের কারণে মনে অনুশোচনাসহকারে কুফরী ধরনের গুনাহ করলেও তাতে গুনাহ ধরা হয় না। তবে মনের সন্তোষসহকারে তা করলে বড় গুনাহ হবে এবং ব্যক্তিকে তার জন্যে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে।
তাই এ আয়াত হতে স্পষ্ট জানা যায় যে ‘অনুশোচনা ’ আমলে সালেহ ছেড়ে দেয়ার পর গুনাহ হওয়া না হওয়ার একটি শর্ত।
* সূরা বাকারার ১৭৩ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন যারা কঠিন ওজরের কারনে অনিচ্ছাসহকারে আয়াতে উল্লিখিত হারাম কাজগুলো করে তাদের কোন গুনাহ হবে না। অনিচ্ছাসহকারে কথাটির অর্থ হল মনের অনুশোচনাসহকারে। তাই এ আয়াপত হতেও বোঝা যায় ‘অনুশোচনা’ আমল ছেড়ে দেয়ার পর গুনাহ হওয়া না হওয়ার একটি শর্ত।
* সুরা মায়েদার ৩নং আয়াতের শেষে আল্লাহ বলেছেন যারা আয়াতে উল্লিখিত নিষিদ্ধ কাজগুলো বাধ্য হয়ে অনিচ্ছাসহকারে করে তাদের আল্লাহ মাফ করে দিবেন। তাই এ আয়াতের মাধ্যমেও বোঝা যায় মনের অনুশোচনা আমলে সালেহ ছেড়ে দেয়ার পর গুনাহ হওয়া না হওয়ার একটি শর্ত।
আল-হাদীস
১ নং হাদীসখানির শেষে রাসুল (সাঃ) বলেছেন অন্যায় কাজ হতে দেখলে মনে ঘৃনা পোষন করা ঈমানের দুর্বলতম। রাসুল (সাঃ) বলেছেন সামনে অন্যায় কাজ হতে দেখলে যার মনে ঘৃনাও সৃষ্টি হয় না তার ঈমান নেই। অনুশোচনা, মনে সৃষ্টি হওয়া ঘৃনার এক ধরনের রূপ।
তাহলে এ হাদসীসখানির মাধ্যমে রাসুল (সাঃ) জানিয়ে দিয়েছেন অনুশোচনা আমলে সালেহ ছাড়ার পর গুনাহ হওয়াা না হওয়ার একটি শর্ত।
وعن جابر قال رسول الله صلى الله عليه وسمل ارحى الله عز وجل الى جبرئيل عليه السلام ان اقلب مدينة كذا وكذا باهلها فقال يارب ان فيهم عبدك فلانا لم يعصك طرفة عين قال اقلبها عليه وعليهم فان وجهه لم يتمعر في ساعة قط.
অর্থ: জাবের (রা) বলেন, রাসুল (সাঃ) বলেছেন মহাপরাক্রমশীল আল্লাহ জিব্রাইল (আ) কে নির্দেশ দিলেন যে অমুক শহরকে তার অধিবাসী সমেত উল্টিয়ে দাও। তিনি বললেন, হে রব, তাদের মধ্যে তো তোমার এক বান্দা আছে যে মুহূর্তের জন্যেও তোমার নাফরমানি করে নাই। রাসুল (সাঃ) বলেন, তখন আল্লাহ তায়ালা বললেন, তার ও অন্য সকলের উপরই শহরটিকে উল্টিয়ে দাও। কারন সম্মুখে পাপচার হতে দেখে মুহূর্তের জন্যে তার চেহারা মলিন হয় নাই। (বায়হাকী, শো’য়াবুল ইমান)
বিবেক বুদ্ধি
অন্যায় কাজ করে কেউ যদি মনের থেকে দুঃখ প্রকাশ করে তবে সাধারণত তাকে ক্ষমা করে দেয়া হয়। দুঃখ প্রকাশা হল মনে থাকা অনুশোচনার বহির্প্রকাশ। মহান আল্লাহ মানুষের চেয়ে অনেক বেশী দয়ালূ ও ক্ষমাশীল। তাই বিবেক বুদ্ধি অনুযায়ী সহজেই বলা যায় যে, আমলে সালেহ ছাড়ার পর কেই যদি মনের থেকে অনশোচনা প্রকাশ করে তবে আল্লাহর সে গুনাহ মাফ করে দেয়ারই কথা। অর্থাৎ ইসলামে অনুশোচনা, আমলে সালেহ ছাড়ার পর গুনাহ হওয়া নাহওয়ার শর্ত হওয়ার কথা।
উদ্ধার পাওয়ার চেষ্টা থাকলে গুনাহ হয় না
আল-কুরআন
আল কুরআন : নিজেদের আত্মার উপর যুলূম করে চলছিল এমন ব্যক্তিদের জনা কবয করতে আসা ফেরেশতাগণ জিজ্ঞাসা করল, তামরা কি অবস্থায় ছিলে ? তারা বলল আমরা দুনিয়ার দুর্বল ছিলাম। ফেরেশতাগণ বলল , আল্লাহর পৃথিবী কি প্রশস্ত ছিল না যে তোমরা দেশ ছেড়ে সেখানে চলে যেতে ? অতএব এদের পরিনতি জাহান্নাম এবং তা অত্যন্ত খারাপ স্থান। তবে ঐ সকল পুরুষ স্ত্রী ও শিশু ব্যতীত যারা প্রকৃতই অসহায় ছিল এবং অন্যত্র চলে যাওয়ার উপায় ছিল না এবং তাদের পথও জানা ছিল না। (নিসা : ৯৭,৯৮)
এ কথোপকথন থেকে তাই সহজে বুঝা যায়, মনে কষ্ট নিয়ে গুনাহের কাজ করে নিজ দেশে থাকা মু’মিনদের নিকট ফেরেশতারা প্রথমে জিজ্ঞাসা করেছিল ঐভাবে গুনাহ করা থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্যে তারা তাদের দেশে ইসলামকে প্রতিষ্ঠার জন্য প্রানপণ চেষ্টা করেছিল কিনা। উত্তরে ঐ লোকেরা বলেছিল, তারা দুর্বল ছিল অর্থাৎ তাদের কিছু ওজর ছিল তাই তারা তা করতে পারে নাই। বা যথাযথভাবে করতে পারে নাই। এরপর ফেরেশতারা তাদের বলেছে, তহরে তাদের হিজরত করে অন্যত্র চলে যাওয়ার দরকার ছিল। আর যেহেতু তারা ঐ কাজ ছাড়ার দরুন বড় গুনাহগার না হওয়ার স্তরে পড়ার মত একেবারেই সহায়সম্বলহীন ছিল না, তাই তাদের দোঘখে যেতে হবে।
এ আয়াত দু’টি থেকে তাই সহজে বোঝা যায়, যে অবস্থার কারণে ব্যক্তি গুনাহের কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে সে অবস্থা থেকে উদ্ধার পাওয়ার চেষ্টা আমলে সালেহ ছেড়ে দেয়ার পর গুনাহ হওয়া না হওয়ার একটি শর্ত।
আল-হাদীস
রাসুল (সাঃ) পুরোজীবন মক্কা শরীফে থেকে ইসলাম পালন করে যেতে পারতেন। কিন্তু যেহেতু মক্কায় জীবনের মক্কায় জীবনের সকল ক্ষেত্রে সঠিকভাবে ইসলাম পালন করা সম্ভব হচ্ছিল না তাই তিনি আল্লাহর নির্দেশে মদিনায় হিজরত করে চলে গিয়েছিলেন এবং সেখানে যেয়ে প্রথমেই একটি ছোট্ট ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে জীবনের সকল ক্ষেত্রে সঠিকভাবে ইসলাম পালনের ব্যবস্থা করেছিলেন।
তাই রাসুল (সাঃ) এর সুন্নাহ থেকেও বোঝা যায় যে, আমলে সালেহ ছাড়ার পর গুনাহ হওয়া না হওয়ার একটি শর্ত হচ্ছে যে অবস্থার কারণে গুনাহের কাজ করতে ব্যক্তি বাধ্য হচ্ছে সে অবস্থা থেকে উদ্ধার পাওয়ার চেষ্টা করা।
কুরআন, হাদীস ও বিবেক-বুদ্ধির উল্লিখিত তথ্য হতে সহজে বোঝা যায় উদ্ধার পাওয়ার চেষ্টা, আমলে সালেহ ছেড়ে দেয়ার পর গুনাহ হওয়া না হওয়ার একটি শর্ত। আর সবচেয়ে বেশী ক্ষেত্রে প্রযোজ্য উদ্ধার পাওয়ার চেষ্টাটি হবে নিজ দেশে ইসলামকে বিজয়ী তথা শাসন ক্ষমতায় বসানোর চেষ্টা। কারণ যেখানে বা যে দেশে অনৈসলামী শাসনব্যবস্থা চালু আছে সেখানে মানুষের জীবনের সকল বিভাগে অনৈসলামিক আইন-কানুন বা বিধি বিধান চালু থাকে। ঐ আইন কানুর মনে না চাইলেও সকলে বাধ্যমূলকভাবে মেনে চলতে হয়।
বিবেক বুদ্ধি
যে ব্যক্তি ওজর তথা বাধ্য-বাধকরতার কারনে মনে অনুশোচনাসহকারে কোন একটি কাজ করছে সে ঐ অবস্থা তেকৈ উদ্দার পাওয়ার চেষ্টা অবশ্যই করবে। অন্য কথায় যদি দেখা যায় এক ব্যক্তি কোন কাজ ইচ্ছা করে বা খুশী মনে করে যাচ্ছে তাবে নিশ্চয়তাসহাকে বলা যায় যে কাজটি সে ব্যধ্যবাধকতার কারণে করছে না। এবং তার মনে কাজটি করার ব্যাপারে কোন অনুশোচনা নেই। তাই বিবেক বুদ্ধি অনুযায়ী ওজর ও অনুশোচনা যদি আমলে সলেহ ছেড়ে দেয়ার পর গুনাহ হওয়া না হওয়ার শর্ত হয়, তবে উদ্ধার পাওয়ার চেষ্টাও তা হবে।
যে ধরনের ওজর, অনুশোচনা ও উদ্ধার পাওয়ার চেষ্টা উপস্থিত থাকলে আমলে সালেহ ছাড়ার পর গুনাহ হয় না।
আল কুরআন
পূর্বে উল্লিখিত আল কুরআনের যে সকল আয়াতের মাধ্যমে মহান আল্লাহ জানিয়েছেন যে, ওজর অনুশোচনা ও উদ্ধার পাওয়ার চেষ্টাসহ নিষিদ্ধ কাজ কালে তথা আমলে সালেহ ছেড়ে দিলে গুনাহ হয় না, সেখানে ওজরগুলো ছেড়ে দেয়া আমলগুলোর সমান গুরুত্বের ছিল। তাই ঐ সকল আয়াত হতে জানা যায়, ছেড়ে দেয়া আমলটির সমান গুরুত্ব পরিমাণের ওজর অনুশোচনা ও উদ্ধার পাওয়ার চেষ্টা থাকলে গুনাহ হয় না।
আল-হাদীস
বিভিন্ন হাদীসের মাধ্যমে জানা যায় সমান গুরুত্বের ওজরের কারণে সামনে অন্যায় কাজ হতে দেখার পর হাত দিয়ে তা প্রতিরোধ বা মুখ দিয়ে তার প্রতিবাদ করতে না পারাকে রাসুল (সাঃ) গুনাহের কাজ বলেননি। অর্থাৎ সমান গুরুত্বের ওজরের কারণে আমলে সালেহ ছাড়লে গুনাহ হয় না।
বিবেক-বুদ্ধি
বিবেক বুদ্ধি অনুযায়ী সমান গুরুত্বের ওজর ও অনুশোচনাসহকারে কোন নিষিদ্ধ কাজ করলে ব্যক্তির অপরাধ হয় না। আর এজন্যে বিচারে তার শাস্তিও হয় না। যেমন কেউ যদি নিজের জীবন বাঁচানোর জন্যে বাধ্য হয়ে অন্য কাউকে হত্যা করে তবে তার শাস্তি হয় না। কারণ হত্যাস্বরূপ নিষিদ্ধ কাজটি সে সমান গুরুত্বের ওজরের কারণে করেছে।
** কুরআন, হাদীস ও বিবেক বুদ্ধি অনুযায়ী তাই সহজেই বলা যায় সমান গুরুত্ব ও পরিমানের ওজর, অনুশোচনা ও উদ্ধার পাওয়ার চেষ্টা সহ আমলে সালেহ ছাড়লে গুনাহ হয় না।
*কবীরা (বড়, মৌলিক) আমল জীবন বাঁচানো বা বড় ওজর এ প্রচন্ড অনুশোচনা ও উদ্ধার পাওয়ার চেষ্টাসহ ছাড়লে গুনাহ হয় না।
* ছগীরা (ছোট, অমৌলিক) আমল ছোট, অল্প বা কিছু না কিছু ওজর অনুশোচনা ও উদ্ধার পাওয়ার চেষ্টাসহ ছাড়লে গুনাহ হয় না।
* গুনাহ দুই প্রকার (১) বড় গুনাহ- (الكبرى)
(২) ছোট গুনাহ- (الصغرى)
* হাদীস শরীফে কবিরা গুনাহ বলতে বলা হয়েছে اجتنبوا السبع الموبقات
সাতটি ধ্বাংশাত্মাক জিনিস থেকে দুরে থাকো।
অন্য হাদীসে বলা হয়েছে এগুলিই হলো কবিরা গুনাহ। এছাড়া কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত সকল ধরনের নিষেধাজ্ঞা বস্তু করা ও আদেশকৃত বস্তু না করাই কবিরাহ গুনাহ।
সেমিনার: জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে পঠিত
তারিখ-০৬/১২/২০০৭