ভাষা আন্দোলন; পটভূমি থেকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস
১৫ ই ফেব্র“য়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:২০
ভাষার মাধ্যমে মানুষ তার অস্তিত্ব, অবস্থান, গতি-প্রকৃতি ও শক্তির অন্বয় রচনা করে। অস্তিত্বের জন্য, মনুষ্যত্ব ও মানবিক অর্জনের জন্য তার ভাষা ব্যবহার করে। ভাষার চালিত শক্তির প্রয়োগে তার দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যেমন সঞ্চালিত হয়, মস্তিষ্ক কোটর, স্মৃতিকোষ, চেতনা- চৈতন্য, অনুভূতি ও উপলব্ধি তেমনি ক্রিয়াশীল হতে থাকে। ব্যক্তিসত্ত্বা ভাষার মাধ্যমে জাগরিত হয়-বিকশিত হয়। একটি জাতির সত্ত্বাও প্রথমত এবং শেষত ভাষার মাধ্যমে বিকশিত হতে থাকে। ভাষা মানুষের অস্তিত্বকে ধারণ করে এবং স্পন্দমান করে। আমরা আমাদের মায়ের হৃদয়ের স্পন্দন শুনি এই ভাষায়। আমাদের ঘুম নেমে আসে মাতৃভাষার ছন্দে। মাতৃভাষার আদরে নেমে আসে রাতের নিরালা। ভোরের নরম আলো জ্বলে ওঠে আমাদের মাতৃভাষার সৌন্দর্যে। এখনো এই সুন্দরই আমাদেরকে তৃপ্ত করে। সুতরাং মাতৃভাষা আমাদের মুখের ভাষা নয়, আমাদের অস্তিত্বের ভাষা। মাতৃভাষাকে বাদ দিলে আমাদের পরিচয় গৌণ হয়ে যায়। শেকড় ছিন্ন বৃক্ষের মতো দুর্বল হয়ে যায়।
১৭৭৮ সালে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে প্রথম মত পোষণ করেন ব্রিটিশ লেখক ন্যাথিনিয়েল ব্র্যাসি হ্যালহেড। ১৯১৮ সালে ভারতের ঐতিহ্যবাহী শান্তিনিকেতনে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সভাপতিত্বে ভারতের সাধারণ ভাষা কী হওয়া উচিত তা নিয়ে একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় রবিঠাকুর ভারতের সাধারণ ভাষা হিসেবে হিন্দির পক্ষে মত পোষণ করেন। এ প্রস্তাবের সরাসরি বিরোধিতা করেন ওই সভায় অংশগ্রহণকারী ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ। তিনি তার বক্তব্যে বাংলাকে ভারতের সাধারণ ভাষা করার প্রস্তাব পেশ করেন। ওই সময়ে হিন্দি- প্রেমিকরা হিন্দিভাষাকে সমর্থন করে গান্ধীজীর বরাবরে একটি পত্র লেখেন তা হলো- the only possible national language for intercourse is hindi in India. ‘Urdu and Urdu shall be the only state language of Pakistan.
১৯২১ সালে নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী লিখিত আকারে ব্রিটিশ সরকারের কাছে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা ঘোষণার প্রস্তাব পেশ করেন। ১৯৪৬ সালে বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগ সম্পাদক আবুল হাশিম প্রাদেশিক কাউন্সিলের কাছে পেশকৃত খসড়া ম্যানিফেস্টোতে বাংলাকে পূর্ব বাংলার রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব করেন। ১৯৪৭ সালের ৩০ জুন দৈনিক আজাদ পত্রিকায় পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা প্রবন্ধে আব্দুল হক বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে অভিমত প্রকাশ করেন। ১৯৪৮ সাল নবগঠিত পাকিস্তান গণপরিষদের প্রথম বৈঠক বসে করাচিতে। বৈঠকের শুরুতেই উর্দু ও ইংরেজিকে গণপরিষদের সরকারি ভাষা বলে ঘোষণা করা হয়। ১৯৪৮ সালের মার্চে এ নিয়ে সীমিত পর্যায়ে আন্দোলন হয়।
পূর্ব বাংলার বিরূপ প্রতিক্রিয়া: গণপরিষদ সদস্য বাবু ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত (কুমিল্ল¬া) সভায় একটি মুলতবি প্রস্তাব উত্থাপন করেন। তাতে তিনি উর্দু-ইংরেজির সাথে বাংলাকেও গণপরিষদের সরকারি ভাষা ঘোষণার দাবি জানান।
ভাষা-বিক্ষোভ ও ১৪৪ ধারা ভঙ্গ: বঙ্গীয় সমাজে বাংলাভাষার অবস্থান নিয়ে বাঙালি মুসলমানদের আত্ম-অন্বেষায় যে ভাষা চেতনার উন্মেষ ঘটে, তারই সূত্র ধরে বিভাগোত্তর তৎকালীন পূর্ববঙ্গের রাজধানী (বর্তমান বাংলাদেশ) ঢাকায় ১৯৪৭ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বরে ভাষা-বিক্ষোভ শুরু হয়। ১৯৪৮ সালের মার্চে এ নিয়ে সীমিত পর্যায়ে আন্দোলন হয় এবং ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্র“য়ারি (৮ ফালগুন, ১৩৫৯) যার চরম প্রকাশ ঘটে। । ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্র“য়ারি সকাল ১০টায় ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল বের করা হয়। এ আন্দোলনকে প্রতিহত করতে পুলিশ মেডিক্যাল কলেজের সামনে ছাত্রদের ওপর বেপরোয়া গুলি ছোড়ে। পুলিশ নিরস্ত্র ছাত্রদের ওপর বন্দুক, বেয়নেট, টিয়ারগ্যাস, লাঠিসোঁটা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ছাত্ররাও পুলিশের সঙ্গে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। ফলে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ আরো অনেকে শহীদ হন। এ হত্যাকাণ্ডের কথা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়লে সমগ্র বাংলাদেশ বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে। ফলে বিক্ষুব্ধ জনতার সামনে আতঙ্কিত সরকার বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
এইদিন সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ১৪৪ ধারা অমান্য করে রাজপথে বেরিয়ে এলে পুলিশ তাদের ওপর গুলি চালায়। এতে বরকত, জব্বার, আবদুস সালাম, রফিক সহ ছয়জন ছাত্র-যুবক হতাহত হন।
রাজপথে প্রতিবাদী মিছিল: এ ঘটনার প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ ঢাকাবাসী ঢাকা মেডিকেল কলেজের হোস্টেলে সমবেত হন। নানা-নির্যাতন সত্ত্বেও ছাত্রদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ জানাতে পরের দিন ২২ ফেব্র“য়ারি পুনরায় রাজপথে নেমে আসে। এদিন নবাবপুর, রণখোলা ও ভিক্টোরিয়া পার্ক এলাকায় পুলিশ মিছিলে গুলিবর্ষণ করে। এ দিনে শহীদ হন শফিউর রহমান, আব্দুল আউয়াল ও অহিদুল্লাহসহ একাধিক ব্যক্তি।
শহীদ মিনার স্থাপন ও ভাঙ্গন: ১৯৫২ সালের ২৩ ফেব্র“য়ারি তারিখের রাতে ছাত্রজনতার এক বৈঠকে নেতৃবৃন্দ শহীদদের স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য একটি শহীদ মিনার স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয় এবং সেই রাতের অন্ধকারেই গুলিবর্ষণের স্থানে নিজেদের নকশা অনুযায়ী ইট দিয়ে নির্মিত হয় শহীদ মিনার। কিন্তু ২৬ ফেব্র“য়ারি, ১৯৫২ তারিখে পুলিশ এ শহীদ মিনার ভেঙ্গে দেয়। সে জন্য ২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৩ তারিখে প্রথম শহীদ দিবস পালনের জন্য কাগজ দিয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়। পরের দুই বছরও ঐ স্থানে কালো কাপড় দিয়ে ঘিরে শহীদ মিনারের অভাব পূরণ করা হয়।
বাংলাভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি: অনেক প্রতিবন্ধকতা পার করে ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের প্রথম সংবিধানে সরকার বাংলাভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়।
যেভাবে স্বীকৃতি পেল ২১ ফেব্র“য়ারি
বাংলা ভাষা আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ২১ ফেব্র“য়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস স্বীকৃতি পেল। এর পিছনে ও রয়েছে দীর্ঘ সাধনা। কানাডা প্রবাসী বাঙালি রফিকুল ইসলাম এবং আবদুস সালামের প্রতিষ্ঠিত “The mother language lover of the world” সংগঠন ১৯৮৮ সালের ২৯ মার্চ জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনানের কাছে ২১ ফেব্র“য়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণার প্রস্তাব করে একটি চিঠি পাঠান। এ চিঠিতে সাত জাতি ও সাত ভাষার দশজন স্বাক্ষর করেন। এর এক বছর পর, ইউনেস্কো সদর দফতরের ভাষা বিভাগের আন্না মারিয়া রফিকুল ইসলামকে ১৯৯৯ সালের ৩ মার্চ সম্মতিসূচক চিঠি লেখেন, Regarding your request to declare the 21 February as . The idea is indeed very interesting অবশেষে Bangladesh National Commission-র পক্ষে সচিব কফিল উদ্দিন আহমদ প্রস্তাবে স্বাক্ষর করেন। বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশন তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর অনুমতিক্রমে প্রস্তাবটি ইউনেস্কো সদর দফতরে পেশ করেন। ইউনেস্কোর ২৮টি সদস্যরাষ্ট্র বাংলাদেশের প্রস্তাব লিখিতভাবে সমর্থন করে। রক্তের নজরানা পেশ করে যে ভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করেছে আমাদের বীর সেনানীরা, রাজকীয় ভাষা হিসেবে। তাঁদের আন্দোলনের সূত্র ধরেই ২১ ফেব্র“য়ারি আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।
শহীদ দিবস থেকে “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস”
২১ ফেব্র“য়ারি শহীদ দিবস। অমর একুশে। একুশের রক্তস্নাত পথ বেয়ে এদিনটি আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। হাসান মাহমুদের (ফতেমোল্লার)The Makers of History: International Mother Language Day নামের এই লেখায় ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
১৯৫২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে এক রফিক পুলিশের গুলিতে প্রাণ দিয়ে একুশে ফেব্র“য়ারিকে অমর করেছিলেন। তার ৪৬ বছর পরে আরেকজন রফিক সুদূর কানাডায় বসে আরেক দুঃসাহসী কাজ করে ফেললেন ।
১) ১৯৯৮ সালের ৯ই জানুয়ারী রফিক জাতিসংঘের তৎকালীন জেনারেল সেক্রেটারী কফি আনানকে একটি চিঠি লেখেন। সেই চিঠিতে রফিক ১৯৫২ সালে ভাষা শহীদদের অবদানের কথা উল্লেখ করে কফি আনানকে প্রস্তাব করেন ২১শে ফেব্রুয়ারিকে ‘মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে যেন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়।
২) সে সময় সেক্রেটারী জেনারেলের প্রধান তথ্য কর্মচারী হিসেবে কর্মরত হাসান ফেরদৌসের (যিনি একজন সাহিত্যিক হিসেবেও পরিচিত) নজরে এ চিঠিটি আসে। তিনি ১৯৯৮ সালের ২০ শে জানুয়ারী রফিককে অনুরোধ করেন তিনি যেন জাতিসংঘের অন্য কোন সদস্য রাষ্ট্রের কারো কাছ থেকে একই ধরনের প্রস্তাব আনার ব্যবস্থা করেন।
৩) সেই উপদেশ মোতাবেক রফিক তার সহযোদ্ধা আব্দুস সালামকে সাথে নিয়ে “এ গ্র“প অব মাদার ল্যাংগুয়েজ অফ দ্যা ওর্য়াল্ড” নামে একটি সংগঠন দাঁড় করান। এতে একজন ইংরেজীভাষী, একজন জার্মানভাষী, একজন ক্যান্টোনিজভাষী, একজন কাচ্চিভাষী সদস্য ছিলেন। তারা আবারো কফি আনানকে “এ গ্র“প অব মাদার ল্যাংগুয়েজ অফ দ্যা ওর্য়াল্ড”-এর পক্ষ থেকে একটি চিঠি লেখেন এবং চিঠির একটি কপি ইউএনওর ক্যানাডিয়ান এম্বাসেডর ডেভিড ফাওলারের কাছেও প্রেরণ করেন।
৪) এর মধ্যে একটি বছর পার হয়ে গেলো। ১৯৯৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে হাসান ফেরদৌস সাহেব রফিক এবং সালামকে উপদেশ দেন ইউনেস্কোর ভাষা বিভাগের জোশেফ পডের সাথে দেখা করতে। তারা জোশেফের সাথে দেখা করার পর জোশেফ তাদের উপদেশ দেন ইউনেস্কোর আনা মারিয়ার সাথে দেখা করতে। এই আনা মারিয়া নামের এই ভদ্রমহিলাকে আমরা কৃতজ্ঞতাভরে স্মরণ করবো, কারণ এই ভদ্রমহিলাই রফিক-সালামের কাজকে অনেক সহজ করে দেন। আনা মারিয়া রফিক-সালামের কথা মন দিয়ে শোনেন এবং তারপর পরামর্শ দেন তাদের প্রস্তাব ৫টি সদস্য দেশ- ক্যানাডা, ভারত, হাঙ্গেরি, ফিনল্যান্ড এবং বাংলাদেশ দ্বারা আনীত হতে হবে।
৫) সে সময় বাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রী এম এ সাদেক এবং শিক্ষা সচিব কাজী রকিবুদ্দিন, অধ্যাপক কফিলউদ্দিন আহমেদ, মশিউর রহমান (প্রধানমন্ত্রীর সেক্রেটারিয়েটের তৎকালীন ডিরেক্টর), সৈয়দ মোজাম্মেল আলি (ফ্রান্সে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত), ইকতিয়ার চৌধুরী (কাউন্সিলর), তোজাম্মেল হক (ইউনেস্কোর সেক্রেটারি জেনেরালের শীর্ষ উপদেষ্টা) সহ অন্য অনেকেই জড়িত হয়ে পড়েন। তারা দিন রাত ধরে পরিশ্রম করেন আরো ২৯টি দেশকে প্রস্তাবটির স্বপক্ষে সমর্থন আদায়ে। অন্যান্য বাংলাদেশী এবং প্রবাসীদের কাছে ব্যাপারটা অগোচরেই ছিল- পর্দার অন্তরালে কি দুঃসাহসিক নাটক চলছিলো সে সময়। এই উচ্চাভিলাসী প্রজেক্টের সাথে জড়িত ব্যক্তিরা এবং ক্যানাডার ভ্যাঙ্কুভার শহরের জনা কয়েক লোক কেবল ব্যাপারটা জানেন এবং বুকে আশা নিয়ে তারা সেসময় স্বপ্নের জাল বুনে চলেছেন প্রতিদিন।
৬) ১৯৯৯ সালের ৯ ই সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী স্বাক্ষরিত ফ্যাক্স পাঠান হলো ।
৮) ১৬ই নভেম্বর কোন এক অজ্ঞাত কারণে (সময়াভাবে?) বহুল প্রতাশিত প্রস্তাবটি ইউনেস্কোর সভায় উত্থাপন করা হলো না।
৯) পরদিন- ১৭ই নভেম্বর ১৯৯৯। এক ঐতিহাসিক দিন। প্রস্তাব উত্থাপন করা হলো সভার প্রথমেই। ১৮৮টি দেশ এতে সাথে সাথেই সমর্থন জানালো। কোন দেশই এর বিরোধিতা করলোনা, এমনকি খোদ পাকিস্তানও নয়। সর্বসম্মতিক্রমে ২১শে ফেব্র“য়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে গৃহীত হলো ইউনেস্কোর সভায়।
এভাবেই ২১শে ফেব্র“য়ারি একটি আন্তর্জাতিক দিনে পরিণত হলো। কিন্তু এতো কিছুর পরেও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মূল উদ্যোক্তা রফিক এবং সালাম সবার কাছে অচেনাই রয়ে গেলেন। তাদের ত্যাগ তিতিক্ষা আর পরিশ্রম অজ্ঞাতই থেকে গেল। কেউ জানলো না কি নিঃসীম উৎকন্ঠা আর আশায় পার করেছিলেন তারা ১৯৯৯ সালের নভেম্বর মাসের শেষ ক’টি বিনিদ্র রজনী।
১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ৩০তম সাধারণ সম্মেলনে ইউনেস্কো ২১ ফেব্র“য়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। ঘোষণায় বলা হয়- Ò21 February is proclaimed international mother language day througout the world to commemorate the martyrs who sacrificed their lives on this day in 1952.Ó
বর্তমান বিশ্বের ১৮৮ দেশে এ দিবসটি পালিত হচ্ছে যথার্থ গুরুত্ব সহকারে। উলি¬খিত দেশগুলোর জনসাধারণের কাছে বাংলাভাষা আজ সর্বোচ্চ মর্যাদার আসনে আসীন। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস: আমাদের প্রাণের উচ্চারণ। মাতৃভাষা মানুষের জন্মগত অধিকার। এ অধিকার মানুষ লাভ করে স্বয়ং স্রষ্টা থেকে। যে মাটির কোলে যে মানুষ জন্মগ্রহণ করে যে মাটির ভাষা তার অস্তিত্বের সাথে জড়িয়ে থাকে। তার চোখ, মুখ, বুকের সাথে লেগে থাকে সে ভাষার গভীর আবরণ। তার স্বপ্ন সাধনা, আশা-আকাঙ্খা তৃপ্তি ও সম্ভাবনার সমস্ত আকাশ জুড়ে উড়তে থাকে মাতৃভাষার প্রাণময় নীল ঘড়ি। যে মাটির রসসিক্ত জলবায়ুর জৌলুসে বেড়ে ওঠে মানুষের শরীর সে মাটির ভাষা উপেক্ষা করার শক্তিই বা কার থাকে। কারো থাকে না। থাকে না বলেই যে মানুষ যে ভূগোলে নিরস্তিত্ব থেকে অস্তিত্ব পায় সে ভূগোলের ভাষা তার জিহ্বায় জড়িয়ে পড়ে। সে ভাষার স্বাদ, গন্ধ, স্পর্শ অনুভবের ভিতর ডানা ঝাপটায়। বুকের গভীরে ডালপালা মেলে। শতদল ফুটে যায় ভাষার সৌরভে।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে ঘোষণা হবার পর সারা পৃথিবীতে বাংলা ভাষা সম্মানিত হয়েছে। বাংলাভাষার প্রতি বিশ্বনাগরিকদের আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। আমার মাতৃভাষা আমার প্রাণের ভাষা। আমার হৃদয় মেলে বেরিয়ে আসা স্বপ্নের ভাষা-প্রাণের উচ্চারণ। একুশের চেতনা যেমন সমানাধিকারের চেতনা তেমনি একুশের চেতনা মানে অসাম্প্রদায়িকতার মহান চেতনা।
ঐক্য ও সম্প্রীতির শিক্ষা: মহান একুশ আমাদের সবার মধ্যে ঐক্য ও সম্প্রীতির সেতুবন্ধন বচন করে। একুশের সবচেয়ে বড় দান হলো গোটা জাতিকে সে একত্রিত করতে সফল হয়েছে। জাতির ওপর যত বড়ই আঘাত আসুক না কেন, জাতি আত্মকলহে যতই নিমজ্জিত থাকুক না কেন একুশকে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করতে সবাইকে একত্রেই আসতে হয়। এভাবে একুশ সকলের মধ্যে ঐক্য ও সম্প্রীতি সৃষ্টি করে।
ভাষার মৌলিক অধিকার শিক্ষা: একুশ সারা পৃথিবীর মানুষের জীবনে একটি সচেতন প্রবাহ সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে। ভাষার মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। একুশ শিখিয়েছে-আমি ভিখারি হতে পারি, দুঃখ-অশ্র“র কঠিনভারে চূর্ণ হতে আপত্তি নেই। আমি মাতৃহারা অনাথ বালক হতে পারি, কিন্তু আমার শেষসম্বল ভাষাকে ত্যাগ করতে পারি না।
মানসিক ও নৈতিক বিকাশ: মানুষের মানসিক আর নৈতিক বিকাশের সঙ্গে ভাষার সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। ভাষার পথ বেয়েই তার সব রকম বিকাশের সূত্রপাত। আর এই ভাষাকে আমাদের সামনে জাগ্রত করে রেখেছে ২১ ফেব্র“য়ারি। একুশ আমাদের মানসিক ও নৈতিক বিকাশের পথ প্রদর্শক।
মাথা নত না করার শিক্ষা: একুশে ফেব্রুয়ারি স্মরণীয় শহীদদের স্মৃতি আমাদের এ প্রেরণা দেয় আমরা ইতিহাসের পাতায় নেহায়েৎ হতভাগ্য ও করুণার পাত্র হয়ে থাকবো না। আমাদের জাতীয় জীবনের খাতায় আমরা নব নব স্মরণীয় তারিখ সংযোজন করবো। আমরা আমাদের ভাষার পরিচয়ে পৃথিবীর বুকে স্থান করে নেব।
ভাষার প্রতি ভালবাসার শিক্ষা: ভাষাবিহীন জীবন রূহবিহীন দেহের ন্যায়। রূহ ছাড়া যেমন দেহের কেনো মূল্য নেই, ঠিক তেমনি ভাষা ছাড়া জীবন অচল। যা আমরা বুঝতে পারি একুশে ফেব্র“য়ারির শহীদদের ত্যাগের মাধ্যমে। ভাষার প্রতি অগাধ ভালবাসার কারণেই তারা তাদের জীবনকে বিলিয়ে দিয়েছিল।
আমাদের করণীয়:
বাংলা বানান সংস্কার করা: অমর একুশকে সামনে রেখে বাংলাভাষাকে সংস্কার, সমৃদ্ধিও বেগবান করার জন্য বানান যাতে কোনো মতেই প্রতিবন্ধকতা হয়ে না দাঁড়ায়। আজ আমাদের এই প্রতিভা নিতে হবে। আধুনিক বানান ভাষার গতিময়তা বাড়িয়ে দিতে পারে। মূলধ্বনিকে সামনে রেখে বলিষ্ঠ এবং সঠিক উচ্চারণের সাথে তাকে মিলিয়ে নেয়াই ভাষার ইতিহাসে বানান, উচ্চারণ ও লেখায় তার সঠিক অবস্থান খুঁজে নেবে।
ঐতিহ্য থেকে প্রেরণা গ্রহণ: একুশে ফেব্র“য়ারি আজ আমাদের ঐতিহ্যে পরিণত। এ ঐতিহ্য থেকে আমরা প্রেরণা গ্রহণ করবো, সঞ্চয় করবো শক্তি ও সাহস। কিন্তু আমাদের পদক্ষেপ হবে সামনের দিকে, দৃষ্টি থাকবে ভবিষ্যতের প্রাণে এবং আমরা এগিয়ে যাবো মহত্তর ত্যাগের নবতর সংকল্প বুকে নিয়ে। এভাবে বাংলাদেশের ইতিহাসের পাতায় সংযোজিত হবে আরো নতুন নতুন স্মরণীয় তারিখ। তা হলেই একুশে ফেব্র“য়ারি পালন হবে সার্থক।
মাতৃভাষাকে সমৃদ্ধ সাহিত্যে পরিণত করা: ইতিহাসের জটিল আবর্তে মাতৃভাষার স্বীকৃতি ও আত্মপ্রতিষ্ঠা নিঃসন্দেহে মূল্যবান। কিন্তু মাতৃভাষা যদি স্রেফ মাতৃভাষাই থেকে যায়, সমৃদ্ধ সাহিত্যে রূপান্তরিত না হয়, তাহলে তা আমাদের বৃহত্তর জীবনের চাহিদা মিটাতে হবে ব্যর্থ। তখন আমাদের পরনির্ভরতাও ঘুচবে না কিছুতেই। আমরা যা ছিলাম তাই থেকে যাবে-এগুতে পারবো না সামনের দিকে এক পাও। একুশে ফেব্র“য়ারির ইতিহাসকে সফল করে তুলতে হলে মাতৃভাষা আর মাতৃভাষার সাহিত্যকে আমাদের জীবনের উপযোগি করে গড়ে তুলতে হবে। করতে হবে তাকে সব জ্ঞানের বাহন।
১৯৯৯ সালে ২১শে ফেব্র“য়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণার পর বিগত প্রায় এক যুগে এশিয়া -আফ্রিকা-অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন দেশে বহু ভাষা মরে গেছে, বহু ভাষা চিরতরে লুপ্ত হয়ে গেছে। লন্ডনের স্কুল অব অরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজের অধ্যাপক পিটার কে অস্টিনের মতে পৃথিবীজুড়ে বিদ্যমান সাত হাজার ভাষার মধ্যে প্রায় চার হাজার ভাষাই এখন বিপন্ন। বিগত দুই বছরে তিন শ’য়ের বেশি ভাষা চিরতরে হারিয়ে গেছে এবং এ ঘটনা ঘটেছে ২১শে ফেব্র“য়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণার পরে। একুশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে বিপন্ন হাজার তিনেক ভাষা চিরতরে হারিয়ে যাবে বলে ভাষাবিজ্ঞানীরা মনে করেন। ইংরেজি, স্প্যানিশ, হিন্দি বা সোয়াহিলির মতো রাজনৈতিক অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী ভাষাগুলোর দিকে ঝুঁকে পড়বে দুর্বল ভাষাভাষী জনগোষ্ঠী। জেরু, খোমানি, ওরো উইন, কুসুন্ডা, আইনু, গুউগু যিমিধিইর, কেট, বো-এসব ভাষা খুব শিগগিরই হারিয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করেছিলেন পিটার কে অস্টিন। ইতোমধ্যে ২০১০ সালের ২রা ফেব্র“য়ারি পৃথিবীর প্রাচীন ভাষাগুলোর একটি বো ভাষায় কথাবলা বোয়া সিনিয়র নামের এক মাত্র মানুষটির মৃত্যু হয়েছে। আন্দামানের পোর্ট ব্লোয়ারে বোয়ার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে হারিয়ে গেল বো ভাষা। আগামী ৪০-৫০ বছরের মধ্যে এমনি হারিয়ে যাবে শত শত ভাষা।
এ প্রেক্ষাপটেই তাৎপর্যময় হয়ে উঠতে পারে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ইউনেস্কো, জাতিসংঘ এমনকি তৃতীয় বিশ্বের রাষ্ট্রসমূহ এ প্রবণতার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারে। তাহলেই এই দিবস পালন হতে পারে অর্থবহ। পৃথিবীর শত শত ভাষার মতো বাংলা ভাষাও আজ আসন্ন এক বিপন্নতার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে।
মোবাইল ফোনে এসএমএস-এর মাধ্যমে বাংলাভাষাকে যেভাবে ধ্বংস করা হচ্ছে, যেভাবে বেতারে বাংলা-ইংরেজি মিলিয়ে জগাখিচুড়ি ভাষায় অনুষ্ঠান প্রচার করা হচ্ছে, তাতে কোন দিন না আমরাও বলিভিয়ার ভাগ্য বরণ করবো, কে জানে? পঁচাত্তর-উত্তর নব্য এলিট শ্রেণী বাংলার পরিবর্তে ক্রমশ ঝুঁকে পড়ছে ইংরেজি ভাষার প্রতি। ঔপনিবেশিক মানস-প্রবণতা নব্য এই এলিটদের ভাষাবোধ নিয়ন্ত্রণে পালন করছে মূখ্য ভূমিকা। ঔপনিবেশিক মানসÑপ্রবণতার কারণেই দোকানের বাংলা নাম ইংরেজিতে লেখা হয়, বিয়ে আর মিলাদের দাওয়াতপত্র লেখা হয় ইংরেজিতে, অধ্যাপক সাহেব ক্লাশে শিক্ষার্থীদের ইংরেজি ভাষায় পঠন-পাঠনের সবক দেন, মন্ত্রী মহোদয় প্রচার মাধ্যমে বলেন এমন কথা- ‘উই আর লুকিং ফর শক্রস।’ যারা বিধান রচনা করেন, যারা আইন প্রণয়ন করেন, যারা আগামী দিনের দক্ষ নাগরিক গড়ে তোলেন তাদের মধ্যে যদি সংগোপনে বাসা বেঁধে থাকে ঔপনিবেশিক মানসতা, তাহলে মাতৃভাষা টিকে থাকবে কীভাবে? ঔপনিবেশিক মানসিকতার ভূত ঘাড় থেকে না নামা পর্যন্ত রোগী ইংরেজি বকুক আর না বকুক ডাক্তার সাহেব ব্যবস্থাপত্র ইংরেজিতে লিখবেনই, গ্রাহকের ইংরেজি জ্ঞান থাকুক আর না থাকুক ব্যাংক-বীমার কাগজপত্র ইংরেজিতে লেখা হবেই, বিপনী বিতানের পরিবর্তে আমরা খুঁজবো শপিং মল, আদর্শ শহরের পরিবর্তে জায়গা খুঁজবো মডেল টাউন বা রিভার ভিউতে।
বর্তমান কাল পুঁজিবাদশাসিত কাল। পুঁজির মালিক যে, সে যে সবকিছুর মতো ভাষাকেও পণ্য বানাতে চাইবে সেকথা আমরা ভালো করেই বুঝি। চরিত্রগতভাবে পুঁজিবাদ নি¤œবর্গের শিল্প-সাহিত্যের মিত্র নয়, মিত্র নয় তৃতীয় বিশ্বের শত শত ভাষার।
মূল্যবোধে অনুপ্রাণিত হওয়া: মূল্যবোধ মানে সত্যবোধ-আমাদের ইতিাসে একুশে ফেব্র“য়ারি অমর হয়ে আছে। এ সত্যবোধের এক অবিস্মরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে এদিন এগিয়ে এসেছিল আমাদের তরুণ ছাত্র সমাজ জীবনের মূল্যবোধ তথা সত্যরক্ষায়। এরা সত্যরক্ষার মৌলিক-এদের হাতে ছিল মূল্যবোধের অদৃশ্য হাতিয়ার। আমাদের উচিত এ নদ-নদী আর সমুদ্র- মেখলা, সবুজে ছাও যা প্রিয় মাতৃভূমিতে যারা জন্মাবে তাদেরকে মূল্যবোধে অনুপ্রাণিত করা। যাতে করে তারা বুঝতে পারে মূল্যবোধে অনুপ্রাণিত হয়ে কি করে জীবন তুচ্ছ করে এগিয়ে যেতে হয় সত্য আর মনুষ্যত্ব রক্ষায়।
যুদ্ধ করে মাতৃভূমির স্বাধীনতা অর্জন ও রক্ত দিয়ে ভাষার মর্যাদা রক্ষা করা এই দুটি কোনো জাতির পক্ষেই একসাথে করা সম্ভব হয়নি। সে বিচারে আমরা অবশ্যই বিশেষ মর্যাদাবান জাতি হিসেবে পরিগণিত হবার দাবি রাখি। বাংলাদেশের জনগণকে আত্মপ্রত্যয়ী করে তুলতে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন খুবই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। শুধু বাংলাদেশে নয়, রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন বিশ্বের অন্যান্য জাতির জন্যও শিক্ষণীয় অবদান রেখেছে।
উপসংহার
কল্পনা করুন তো ভাষাবিহীন একটি পৃথিবীর কথা, একেক জন মানুষ যেন এক একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ, একে অপরের থেকে দূর-দূরান্ত, কেবল নির্বাক চোখে তাকিয়ে রয়, যেখানে মা কোনোদিন সন্তানের মুখে ‘‘মা’’ ডাক শুনতে পায় না। ভাবুন তো অক্ষরবিহীন একটি পৃথিবীর কথা! জগতের সকল পুস্তক যেখানে শোকে সাদা! পিতার কাছে টাকা চেয়ে পুত্র আর চিঠি লেখে না, রানার যেখানে অলস ঘুমায়, কিন্তু আমরা জানি এটা অসম্ভব, কথা ছাড়া পৃথিবী অচল, লেখা ছাড়া সভ্যতা স্থবির। আমাদের ভাষা বেঁচে থাকে আমাদের কথায় আর লেখায় আর আমরা বেঁচে থাকি আমাদের ভাষায়। মাতৃভাষাকে রক্ষার জন্য প্রতিটি জাতি বদ্ধপরিকর। বাঙালি জাতি তার জলন্ত প্রমাণ। কৃষ্ণচূড়ার রক্তলালে রঞ্জিত আমাদের ভাষা শহীদদের আত্মবলিদান। বায়ান্ন সালের ২১ ফেব্র“য়ারিতে ঢাকার রাজপতে তারা বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছেন মাতৃভাষাকে রক্ষার জন্য। যার ফলে এই দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছি। আমরা পেয়েছি আমাদের গৌরবময় স্বাধীনতা। ইতিহাস যে শুধু অতীত নয়, ভবিষ্যতকেও গর্ভে ধরে রাখে তার এক জ্বলজ্বলে নজীর রেখে গেছেন আমাদের ভাষা শহীদেরা। তারা আজ পৃথিবীর সকল ভাষাভাষী মানুষের নিকট শ্রদ্ধেয়। সমগ্র বিশ্বের মানুষ তাদেরকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে। তাদের আত্মত্যাগকে কেন্দ্র করেই তারা একুশকে নিজেদের মাতৃভাষার সম্মান রক্ষার্থে পালন করে।
তথ্যসূত্র
১) আল মুজাহিদী, একুশে ফেব্র“য়ারি ২০০৩, যুগান্তর, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস
২) জাফর, জাকির আবু, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, আমাদের প্রাণের উচ্চারণ, সচিত্র বাংলাদেশ, পৃ.৬৪, একুশে সংখ্যা
৪) ইসলাম, অধ্যাপক এম শহীদুল, ভাষা আন্দোলন: পটভূমি থেকে মাতৃভাষা দিবস, সচিত্র বাংলাদেশ, একুশে সংখ্যা, পৃ.১৭
১৭) সরকার, পবন কুমার, শহীদ দিবস থেকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, সচিত্র বাংলাদেশ, একুশে সংখ্যা, পৃ.৬৭
২৩) রহমান, মুহম্মদ লুৎফর, বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা, বৈশাখ ১৩২৬
৩৩) ২১ ফেব্র“য়ারি ২০০৮, প্রথম আলো