শবে বরাত, লাইলাতুন নিছফি মিন শা‘বান বা মধ্য শাবানের রজনীর ফজিলতের মহাগুরুত্ব নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা আছে। কুরআন-সুন্নাহর সঠিক জ্ঞানই এই পথ থেকে আমাদের মুক্তি দিতে পারে। আর এতে মুসলিম উম্মাহর বিভাজনের রেখা অনেকাংশেই মিটে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে মনে রাখতে হবে, শবে বরাত নিয়ে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে কোন বিভেদ-বিবাদ নেই। আছে এই দিনকে কেন্দ্র করে যে সকল বিদয়াত আমাদের সমাজে প্রচলিত হয়েছে সে সকল বিদয়াত নিয়ে। ইবাদতের শুরুতে মুসলিম সমাজে বিদয়াত চালু হয়েছে ব্যক্তি বিশেষের দোহাই দিয়ে। উদাহরণ স্বরূপ কাউকে যদি বলা হয়, কেন তুমি এভাবে জিকর বা ইবাদত করছ? সে সঙ্গে সঙ্গে বলবে, অমুক অলি, অমুক পীরসাহেব, অমুক আলিম বা অমুক আকাবের করেছেন তাই করি। সে এ কথা বলে না যে, আল্লাহ বলেছেন তাই করি, রাসুল (সা.) বলেছেন, করেছেন বা সম্মতি দিয়েছেন তাই করি বা অমুক সাহাবি করেছেন তাই করি। সত্যিই এটি মহাপরিতাপের বিষয়।
মনে রাখতে হবে বির্তকিত ও দুর্বল (জয়ীফ) হাদীসের সংখ্যা বেশী হলেও অনেক সংখ্যক সহীহ হাদীসও রয়েছে বিধায় এ রাতের অস্তিত্ব অস্বীকার করার কোনো সুয়োগ নেই। জয়ীফ হাদীস সমূহ একাধিক সনদে বর্ণিত হলে তা হাসান হাদীস রূপে পরিগণিত হয়-এ কথা কে না জানে?! রাসূল (সা.) বলেছেন,শাবান মাসের মধ্য রাতে আল্লাহ তা’য়ালার সৃষ্টির দিকে রহমতের দৃষ্টি দেন, মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষনকারী ব্যক্তি ব্যতিত অন্য সকলকে তিনি ক্ষমা করেন।আল-মুনযিরী তাঁর আত-তারগীব ওয়াত-তারহীবে (২/১৩২)বলেন, “সহীসটি হাদিস”। আহলে হাদিস গুরু #আলবাবানী_রা.ও বলেন হাদিসটি সহীহ। আস্-সাহীহাহ (৩/১৩৫)
হাদীস মতে আল্লাহ তায়ালা এ রাতে যদি দুনিয়ার আকাশে আসেন, যদি তিনি তাঁর বান্দাদেরকে ক্ষমা করেন, যদি অসংখ্য পাপীতাপী লোক আল্লাহর রহমত ও কৃপা লাভ করেন, যদি তারা গ্লানি নিঃশেষে মুক্তচিত্তে পুণ্যপথে অগ্রসর হন, তবে কোন যুক্তিতে বাধা আসবে? খামাখা কোন ভাল জিনিসে জটিলতা সৃষ্টিতে কী লাভ? কোন বিষয় নিয়ে প্যাঁচা-প্যাঁচি করতে গেলে জট কেবল বাড়তেই থাকবে। জট বাঁধাতে ইচ্ছে করলে অনেক বিষয়ে ‘সহীহ হাদিস’ টেনেও বাঁধানো যেতে পারে।যেসব সাধারণ মানুষ এতকাল ধরে শবে বরা’ত পালন করে আসছে তাদের সামনে বিদ্যার প্যাঁচ মেরে শবে বরা’তের গুরুত্ব ও মহিমা খাটো করে ব্যাখ্যা হাজির করা যাবে বটে; কিন্তু এতে দ্বীনের কোন উপকার হবে কি? শুধু এই একটি রাতে কত শত সহস্র লোক আল্লাহর দিকে রুজু হয়ে ইবাদত বন্দেগী করে, আল্লাহর নাম নেয়, কুরআন চর্চা করে,নামাজ পড়ে, জিকির আযকার করে। এই সুবাদে তাদের ছেলেমেয়েরাও ইবাদতের পরিবেশ পেয়ে কান্নাকাটি করে। কিন্তু বিদ্যার ঠাকুর এসে যদি সে রাতের বরকতের দুয়ারে তালা লাগিয়ে দেন তাতে সর্বসাধারণের কি লাভ ?]]
শবে বরাত বা মধ্য শা’বানের রজনী পালন কারীদের ওজর!
অনেকে বলে থাকেন, কুরআন-হাদীসের কোথাও শবে বরাত শব্দ নেই। শবে বরাত বিরোধীদের এরূপ বক্তব্যের জবাবে বলতে হয় যে,শব অর্থ রাত,বরাত অর্থ ভাগ্য, শবে বরাত শব্দ দু’টি যেরূপ কুরআন ও হাদীস শরীফের কোথাও নেই তদ্রুপ নামায, রোযা, খোদা, ফেরেশতা, পীর ইত্যাদি শব্দ কুরআন ও হাদীস শরীফের কোথাও নেই। এখন শবে বরাত বিরোধী লোকেরা কি নামায, রোযা ইত্যাদি শব্দসমুহ কুরআন ও হাদীস শরীফে না থাকার কারনে ছেড়ে দিবেন? মূলতঃ শবে বরাত এবং এর ফযীলত পবিত্র কুরআনে সরাসরি নাথাকলেও সূরা দুখানের ৩নং আয়াতের তাফসীরে কতিপয় মুফাসসির নিসফে শা’বানের রাত ব্যাখ্যা দিয়েছেন। আমরা সেটাকে প্রাধান্য না দিলেও সহীহ্ হাদীসশরীফ দ্বারা এ রাতের গুরুত্ত ও ফজীলত প্রমাণিত। আর হাদীস শরীফে শবে বরাতকে লাইলাতুন নিছফি মিন শা‘বান বা শা‘বান মাসের মধ্য রাত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
শবে বরাত বিষয়ে শরয়ী দলীল
শবে বরাতের অস্তিত্ব প্রমাণে বিভিন্ন সহীহ হাদীস বিদ্যমান। কতিপয় জয়ীফ হাদীসও রয়েছে। একাধিক সনদে জয়ীফ হাদীস সমূহ বর্ণিত হওয়ায় তা হাসান হাদীস রূপে পরিগণিত।কুরআন মজীদে ব্যবহৃত “লাইলাতুল মোবারাকাহ” বাক্যাংশটি অনেকে ”শবে বরাত” উল্লেখ করেন। এই আয়াতখানা সূরা দুখানে এভাবে এসেছে, “আমরা এই কুরআনকে এক মহিমাময় (বরকতময়) রাতে নাজিল করেছি। আমরা অবশ্যই সতর্কদান কারি। আমারই নির্দেশক্রমে উক্ত রাত্রিতে প্রতিটি প্রজ্ঞাময় বিষয়গুলো ফায়সালা হয়। আর নিশ্চয়ই আমিই প্রেরণকারী।” (৪৪:৩)।
এখানে উল্লেখিত আয়াতটি শবে ক্বদর হিসেবে আমরা জানি। তবে যারা আয়াতটির অর্থধারাকে শবে বরাতেও প্রসারিত করেন, তাদের ব্যাখ্যাও শুনতে পারি। এই ব্যাখ্যা-ধারার তারতিব (ক্রম) হচ্ছে এই যে মধ্য শাবানের রাতে গোটা কুরআন বাইতুল মা’মুর থেকে দুনিয়ার আসমানে আসে এবং এতে এক কালীন গুরুত্ব প্রকাশ পায়। তারপর, লাইলাতুল ক্বদরের রাতে প্রথম অংশ নাজিল হয় এবং তাৎপর্যের দিক দিয়ে এটাই বৃহত্তর এবং মূল তাঞ্জীল। ঐ রাতেই (অর্থাৎ শবে ক্বদরের রাতে) আল্লাহর নির্দেশে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় স্থিরকৃত হয়। আর এভাবেই তাঁরা এই দুই রাত কেন্দ্রিক বর্ণনার সমন্বয় করেছেন।
এ প্রসঙ্গে মুফাসসির কুল শিরোমণি রঈসুল মুফাসসিরীন বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আব্দল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) স্বীয় তাফসীরে উল্লেখ করেন, মহান আল্লাহ পাক লাইলাতুম মুবারাকাহ বলতে শা’বান মাসের মধ্য রাত বা শবে বরাতকে বুঝিয়েছেন। আল্লাহ পাক এ রাতে প্রজ্ঞাময় বিষয়গুলোর ফায়সালা করে থাকেন।” (ছফওয়াতুত তাফাসীর, তাফসীরে খাযীন ৪র্থ খন্ডঃ ১১২ পৃষ্ঠা, তাফসীরে ইবনে আব্বাস, তাফসীরে মাযহারী ৮ম খন্ডঃ ৩৬৮ পৃষ্ঠা, তাফসীরে মাযহারী ১০ম খন্ড)
লাইলাতুম মুবারাকাহ দ্বারা শবে বরাতকে বুঝানো হয়েছে, এই আয়াত শরীফের (ইয়ুফরাকু) শব্দের অর্থ ফায়সালা করা। প্রায় সমস্ত তাফসীরে সকল মুফাসসিরীনে কিরামগণ يُفْرَقُ (ইয়ুফরাকু) শব্দের তাফসীর করেছেন ইয়ুকতাবু অর্থাৎ লেখা হয়, ইয়ুফাছছিলু অর্থাৎ ফায়সালা করা হয়, ইয়ুতাজাও ওয়াযূ অর্থাৎ বন্টন বা নির্ধারণ করা হয়, ইয়ুবাররেমু অর্থাৎ বাজেট করা হয়, ইয়ুকদ্বিয়ু অর্থাৎ নির্দেশনা দেওয়া হয়। কাজেই ইয়ুফরাকু -র অর্থ ও তার ব্যাখার মাধ্যমে আরো স্পষ্টভাবে বুঝা যায় যে, লাইলাতুম মুবারাকাহ দ্বারা শবে বরাত বা ভাগ্য রজনীকে বুঝানো হয়েছে। যেই রাত্রিতে সমস্ত মাখলুকাতের ভাগ্যগুলো সামনের এক বছরের জন্য লিপিবদ্ধ করা হয়, আর সেই ভাগ্যলিপি অনুসারে রমাদ্বান মাসের লাইলাতুল ক্বদর বা শবে ক্বদরে তা চালু হয়। এজন্য শবে বরাতকেলাইলাতুত্ তাজবীজ অর্থাৎ ফায়সালার রাত্র এবং শবে ক্বদরকে লাইলাতুল তানফীয অর্থাৎ নির্ধারিত ফায়সালার কার্যকরী করার রাত্র বলা হয়। (তাফসীরে মাযহারী, রুহুল বয়ান, লুবাব)। এখানে হাফেয ইবনু কাছীরের (রহঃ) মতটাকে সমন্বয় করা যায়,তিনি স্বীয় তাফসীরে বলেন, ‘এখানে ‘বরকতময় রাত্রি’ অর্থ ‘ক্বদরের রাত্রি’। যেমন আল্লাহ বলেন,إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِىْ لَيْلَةٍ الْقَدْرِ ‘নিশ্চয়ই আমরা এটি নাযিল করেছি ক্বদরের রাত্রিতে’ (ক্বদর ৯৭/১)। আর সেটি হ’ল রামাযান মাসে। যেমন আল্লাহ বলেন, شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِىْ أُنْزِلَ فِيْهِ الْقُرْآنُ، ‘এই সেই রামাযান মাস যার মধ্যে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে’ (বাক্বারাহ ২/১৮৫)।রমাদান মাসে অবস্থিত কদরের রাতকে বুঝানো হয়েছে, তা একটি অকাট্য বিষয়।
* ইবনুল কায়্যীম (র.) বলেন,
” وهذه هي ليلة القدر قطعا؛ لقوله – تعالى -: “إنا أنزلناه في ليلة القدر”. ومن زعم : أنها ليلة النصف من شعبا، فقد غلط “
“এটি অকাট্যভাবে কদরের রাত্রি। কারণ আল্লাহ বলছেন, “নিশ্চয়ই আমি কুরআনকে কদরের রাত্রিতে নাযিল করেছি”। আর যারা শাবানের মধ্যরাত ধারণা করছে, তারা আসলে ভুল করছে”।
*ইবনু কাসিরও বলছেন,
“ومن قال :إنها ليلة النصف من شعبان فقد أبعد النَّجْعَة؛ فإن نص القرآن أنها في رمضان “
“যারা শাবানের মধ্য রাত্রি বলছেন, তারা বিভ্রান্তির মধ্যে রয়েছেন। বরং এটি যে রমাদান মাসের একটি রাত, সে ব্যাপারে কুরআনের ভাষা সুস্পষ্ট”।
আল্লামা শানকিতী বলেন, ” إنها دعوى باطلة ” (মধ্য শাবানের দাবী) একটি ভিত্তিহীন দাবী”।
তবে ঐ রাত্রিকে মধ্য শা‘বান বা শবেবরাত বলে ইকরিমা প্রমুখ হ’তে যে অভিমত বলা হয়েছে, তা সঙ্গত কারণেই অস্বীকার করা কি ঈমানদারের কাজ?
# ‘তাক্বদীর’ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের দ্ব্যর্থহীন বক্তব্য হ’ল- وَكُلُّ شَىْءٍ فَعَلُوْهُ فِى الزُّبُرِ- وَكُلُّ صَغِيْرٍ وكَبِيْرٍ مُسْتَطَرٌ ‘তাদের সমস্ত কার্যকলাপ রক্ষিত আছে আমলনামায়’। ‘আছে ছোট ও বড় সবকিছুই লিপিবদ্ধ’ (ক্বামার ৫৪/৫২-৫৩)-এর ব্যাখ্যা হাদীছে এসেছে যে, ‘আসমান সমূহ ও যমীন সৃষ্টির পঞ্চাশ হাযার বৎসর পূর্বেই আল্লাহ স্বীয় মাখলূক্বাতের তাক্বদীর লিপিবদ্ধ করেছেন।[3] অতএব‘শবেবরাতেই সারাবছরের ভাগ্য নির্ধারিত হয়’এধারণা পাল্টাতে হবে।
শবে বরাত সম্পর্কিত হাদীস ও সনদের মান
১. হযরত আলী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,إِذَا كَانَتْ لَيْلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ فَقُومُوا لَيْلَهَا وَصُومُوا نَهَارَهَا ‘মধ্য শা‘বান এলে তোমরা রাত্রিতে ইবাদত কর ও দিবসে ছিয়াম পালন কর’ (ইবনু মাজাহ হা/১৩৮৮)। হাদীছটি জঈফ (যঈফাহ হা/২১৩২)। এর সনদে ‘ইবনু আবী সাবাহ’ নামে একজন রাবী আছেন, যিনি বিতর্কিত । তবে– একই মর্মে প্রসিদ্ধ ‘হাদীছে নুযূল’ যা ইবনু মাজাহর ৯৮ পৃষ্ঠায় মা আয়েশা (রাঃ) হ’তে (হা/১৩৬৬) এবং বুখারী শরীফের (মীরাট ছাপা ১৩২৮ হি.) ১৫৩, ৯৩৬ ও ১১১৬ পৃষ্ঠায় যথাক্রমে হাদীছ সংখ্যা ১১৪৫, ৬৩২১ ও ৭৪৯৪ এবং ‘কুতুবে সিত্তাহ’ সহ অন্যান্য হাদীছ গ্রন্থে সর্বমোট ৩০ জন ছাহাবী কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে।[4] সেখানে ‘মধ্য শা‘বানের রাত্রি’ না বলে ‘প্রতি রাত্রির শেষ তৃতীয়াংশ’ বলা হয়েছে। অতএব ছহীহ হাদীছ সমূহের বর্ণনানুযায়ী আল্লাহপাক প্রতি রাত্রির তৃতীয় প্রহরে নিম্ন আকাশে অবতরণ করে বান্দাকে ফজরের সময় পর্যন্ত উপরোক্ত আহবান সমূহ জানিয়ে থাকেন- শুধুমাত্র নির্দিষ্টভাবে মধ্য শা‘বানের একটি রাত্রিকে সীমাবদ্ধ করলাম না।তাই বলে কি অস্বীকার করতে পারবো?
২. “হযরত আয়িশা (রা.) হতে বর্ণিত : فَقَدْتُ رَسُولَ الله -صلى الله عليه وسلم- لَيْلَةً فَخَرَجْتُ فإذا هو بِالْبَقِيعِ فقال: أَكُنْتِ تَخَافِينَ أَنْ يَحِيفَ الله عَلَيْكِ وَرَسُولُهُ، قلت: يا رَسُولَ اللَّهِ إني ظَنَنْتُ أَنَّكَ أَتَيْتَ بَعْضَ نِسَائِكَ، فقال: إِنَّ اللَّهَ عز وجل يَنْزِلُ لَيْلَةَ النِّصْفِ من شَعْبَانَ إلى السَّمَاءِ الدُّنْيَا فَيَغْفِرُ لِأَكْثَرَ من عَدَدِ شَعْرِ غَنَمِ كَلْبٍ
তিনি বলেন, একদা আমি আল্লাহ তা’আলার হাবীব রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে কোন এক রাত্রিতে রাত যাপন করছিলাম। এক সময় উনাকে বিছানায় না পেয়ে আমি মনে করলাম যে, তিনি হয়ত অন্য কোন স্ত্রীর রদ্বিয়ালাহু তা’য়ালা আনহা-এর হুজরা শরীফে তাশরীফ নিয়েছেন। অতঃপর আমি তালাশ করে উনাকে জান্নাতুল বাক্বীতে পেলাম। সেখানে তিনি উম্মতের জন্য আল্লাহ পাকের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছেন। এ অবস্থা দেখে আমি স্বীয় হুজরা শরীফে ফিরে এলে তিনিও ফিরে এলেন এবং বললেনঃ তুমি কি মনে করো আল্লাহ তা’য়ালার হাবীব রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমানতের খিয়ানত করেছেন? আমি বললামঃ ইয়া রসূলাল্লাহ (সা.)! আমি ধারনা করেছিলাম যে, আপনি হয়তো আপনার অন্য কোন আহলিয়ার হুজরা শরীফে তাশরীফ নিয়েছেন। অতঃপর হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’য়ালা শা’বানের ১৫ তারিখ রাত্রিতে পৃথিবীর আকাশে অবতরণ করেন অর্থাৎ রহমতে খাছ নাযিল করেন। অতঃপর তিনি বণী কালবের মেষের গায়ে যত পশম রয়েছে তার চেয়ে বেশী সংখ্যক বান্দাকে ক্ষমা করে থাকেন”। (সুনানে তিরমিযি (২/১২১,১২২), (মুসনাদে আহমাদ ৬/২৩৮) ইবনে মাযাহ, রযীন, মিশকাত শরীফ,ফাওজুল ক্বাদীর, ২য় খন্ড, পৃ,৩১৭)
৩. মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, শাবান মাসের মধ্য রাতে আল্লাহ তা’য়ালার সৃষ্টির দিকে রহমতের দৃষ্টি দেন, মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষনকারী ব্যক্তি ব্যতিত অন্য সকলকে তিনি ক্ষমা করেন। (আলবানী : সহীহাহ/৩/১৩৫,১৩৯)
৪.মুয়ায বিন্ জাবাল অন্য বর্ণনায়,- মধ্য শাবানের রাতে আল্লাহ তাঁর সৃষ্টিলোকের দিকে দৃষ্টি দান করেন এবং সবাইকে মাফ করে দেন কেবল মুশরিক ব্যক্তি ছাড়া ও যার মধ্যে ঘৃণা বিদ্বেষ রয়েছে তাকে ছাড়া। * আল-মুনযিরী তাঁর আত-তারগীব ওয়াত-তারহীবে (২/১৩২)বলেন, “হাদিসটি সহীস”।
* #আহলে_হাদিস_গুরু আল-আলবানী রা. বলেন হাদিসটি সহীহ। আস-সাহীহাহ (৩/১৩৫))
৫. মু‘আয বিন জাবালের (রা.) হাদীস:
হযরত মু‘আয বিন জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (স.) ইরশাদ করেন,
يَطْلُعُ اللَّهُ إِلَى خَلْقِهِ فِي لَيْلَةِ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ فَيَغْفِرُ لِجَمِيعِ خَلْقِهِ إِلا لِمُشْرِكٍ أَوْ مُشَاحِنٍ
“আল্লাহ তাঁর সমস্ত সৃষ্টির দিকে শাবানের মধ্যরাতে দৃষ্টি দেন। অতঃপর তাঁর সমস্ত সৃষ্টিকে মাফ করে দেন, শুধুমাত্র মুশরিক ও হিংসা-বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত”।
এ হাদীসটি ইবনি হিব্বান তাঁর ছহীহের মধ্যে বর্ণনা করেছেন। ইমাম হাইসামী এ হাদীস প্রসঙ্গে বলেন:
رواه الطبراني في الكبير والأوسط ورجالهما ثقات.
“হাদীসটি ইমাম তাবারানী তাঁর আল-মু‘যাম আল-কাবীর ও আছ-ছগীরের মধ্যে রিওয়ায়িত করেছেন। এ দুটোতেই হাদীসটির বর্ণনাকারীরা নির্ভরযোগ্য”।
৬. হযরত আবু বকরের (রা.) হাদীস:
হযরত আবু বকর (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (স.) বলেছেন,
(إذا كانت ليلة النصف من شعبان ينزل الله تبارك وتعالى إلى سماء الدنيا فيغفر لعباده إلا ما كان من مشرك أو مشاحن لأخيه
“যখন শাবানের মধ্য রাত আসে, আল্লাহ দুনিয়ার আকাশে অবর্তীর্ণ হন। তারপর সব বান্দাকে মাফ করে দেন। শুধুমাত্র মুশরিক ও যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের প্রতি শত্রুতাভাবাপন্ন তাদেরকে ছাড়া”।
ইমাম হাইসামী مجمع الزوائد এ বলেন:
رواه البزار وفيه عبد الملك بن عبد الملك ذكره ابن أبي حاتم في الجرح والتعديل ولم يضعفه وبقية رجاله ثقات
“হাদীসটি ইমাম বাযযার বর্ণনা করেছেন। এর সনদের মধ্যে আবদুল মালিক বিন আবদিল মালিক নামে একজন রাবী আছেন। ইবনু আবি হাতিম আল-জারহ অত-তাদিল কিতাবে তার কথা উল্লেখ করেছেন। তবে তাকে দুর্বল বলে আখ্যায়িত করেন নি। এছাড়া, সনদের অন্যান্য সব রাবী (বর্ণনাকারী) বিশ্বস্ত”।
৭.আবু বাকর (রা.) বর্ণনা করেন আল্লাহ তা’আলা মধ্য শাবানের রাতে (দুনিয়ার আসমানে) আসেন এবং সকলকে মাফ করে দেন কেবল সেই ব্যক্তি ছাড়া যার হৃদয়ে ঘৃণা বিদ্বেষ রয়েছে এবং যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শরিক সাব্যস্ত করে (অর্থাৎ মুশরিক)। (আল-আলবানী বলেন, “হাদিসটি অন্য সূত্রে সহীহ।” তাখরীজ মিশকাত আল মাসাবীহ, (ক্রম, ১২৫১) (ইবন হাজর আল-আসক্বালানী তাঁর আল-আমাল আল-মুথলাক্বাহ গ্রন্থ (১২২)
৮. প্রসিদ্ধ ছহীহ হাদীছটি হ’ল-রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘আমাদের মহান প্রতিপালক প্রতি রাতের তৃতীয় প্রহরে দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন এবং বলেন, আছ কি কেউ প্রার্থনাকারী আমি তার প্রার্থনা কবুল করব। আছ কি কেউ যাচ্ঞাকারী, আমি তাকে তা প্রদান করব। আছ কি কেউ ক্ষমাপ্রার্থী, আমি তাকে ক্ষমা করে দিব?’ (ইবনু মাজাহ হা/১৩৮৯; মিশকাত হা/১২৯৯), আরও কিছু যঈফ হাদীছ যেমন আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত আবু উমামা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত (যঈফাহ হা/১৪৫২), আবু মূসা আশ‘আরী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত (ইবনু মাজাহ হা/১৩৯০; মিশকাত হা/১৩০৬)। এতদ্ব্যতীত ইমরান বিন হুছাইন (রাঃ) হ’তে বর্ণিত ছহীহ মুসলিম হা/১১৬১-এর ‘সিরারে শা‘বান’ সম্পর্কিত হাদীছটি বলা হয়।(সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস১৩৮৪)
৯. হযরত আবদুল্লাহ বিন ‘উমরের হাদীস:
عن عبد الله بن عَمْرٍو انَّ رَسُولَ الله -صلى الله عليه وسلم- قال: يَطَّلِعُ الله عز وجل إلى خلقة لَيْلَةَ النِّصْفِ من شَعْبَانَ فَيَغْفِرُ لِعِبَادِهِ الا لاِثْنَيْنِ: مُشَاحِنٍ وَقَاتِلِ نَفْسٍ
হযরত আবদুল্লাহ বিন ‘উমার (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূল (স.) বলেন, “আল্লাহ অর্ধ শাবানের রাতে তাঁর সৃষ্টির প্রতি তাকান। অতঃপর সব বান্দাকে ক্ষমা করে দেন, দু’ শ্রেণী ব্যতীত: ক. মুশাহিন (বিদ্বেষপোষণকারী) ; খ. মানব হত্যাকারী”।
ইমাম হাইসামী বলেন,
رواه أحمد وفيه ابن لهيعة وهو لين الحديث وبقية رجاله وثقوا
“ইমাম আহমাদ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। এর সনদের মধ্যে রয়েছে, ইবনু লাহীয়াহ। তিনি লাইয়্যেনুল হাদীস (হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে কিছুটা কোমলাতা/দুর্বলতা বিশিষ্ট)। তবেঅন্যান্য সব রাবী নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বস্ত”।
এছাড়া, ইমাম বাযযারও এটি বর্ণনা করেছেন।
১০. আওফ বিন মালিকের হাদীস:
عن عوف بن مالك قال قال رسول الله: – الله عليه وسلم- (يطلع الله تبارك وتعالى على خلقه ليلةَ النصف من شعبان، فيغفر لهم كلِّهم إلا لمشركٍ أو مشاحن
হযরত আওফ বিন মালিক থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (স.) বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় সৃষ্টির উপর শাবানের মধ্যরাতে দৃষ্টি নিবন্ধন করেন। এবং তাদের সবাইকেই মাফ করে দেন। শুধুমাত্র মুশরিক ও মুশাহিন ছাড়া।
ইমাম হাইসামী বলেন,
رواه البزار وفيه عبدالرحمن بن زياد بن أنعم وثقه أحمد بن صالح وضعفه جمهور الأئمة وابن لهيعة لين وبقية رجاله ثقات
বাযযার হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। এতে আবদুর রহমান বিন যিয়াদ বিন আনউম রয়েছে। ইমাম আহমাদ তাকে নির্ভরযোগ্য বলে আখ্যায়িত করেছেন। তবে অধিকাংশ আলিম তাকে দুর্বল আখ্যায়িত করেছেন। এছাড়া , ইবনু লাহিয়াহও আছেন। যিনি একটু নরম। বাকী সব রাবী সিকাত”।
৯. কাসীর বিন মুররা আল-হাদরামীর হাদীস।
عن كثير بن مرة الحضرمي، قال: قال رسول الله -صلى الله عليه وسلم-: (إن اللهَ ينزل ليلةَ النصف من شعبان، فيغفر فيها الذنوب إلا لمشركٍ أو مشاحن
হযরত কাসীর বিন মুররা আল-হাদরামী থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (স.) বলেছেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ শাবানের মধ্য রাতে অবতীর্ণ হন। তারপর এ রাতে মুশরিক ও মুশাহিনের গুনাহ ব্যতীত অন্য সব গুনাহ ক্ষমা করে দেন”।(ইবনু আবি শাইবাহ৩/২১৪, আবদুর রাজ্জাক : মুছান্নাফ এবং বাযযার তাঁর মুসনাদের বর্ণনা করেছেন।)
এতক্ষণে আমাদের সামনে যে বিষয়টি পরিষ্কার হয়েছে তাহলো, উপরিউক্ত হাদীসগুলোর সনদসমূহ সমপর্যায়ের নয়। কিছু শুদ্ধ, আবার কিছু দুর্বল। তবে সবগুলো একত্রিত করলে এ কথা না বলে কোন উপায় নেই যে, এ রাতটির ফজিলত একটি প্রতিষ্ঠিত সত্য।
এজন্য গবেষকগণ বলছেন,
أنَّ الأحاديثَ في فضل ليلة النصف من شعبان ثابتة وفي أقلِّ أحولها أحاديث حسنة لغيرها بمجوع طرقها، ومن العلماء من صرح أنها صحيحة لغيرها بمجموع طرقها لأنّ من طرقها حسنة بذاتها
বর্ণনার সবগুলো ধারা একত্রিত করলে হাদীসগুলোর সর্ব নিন্মস্তর হবে ‘হাসান লিগইরিহা’। অনেক গবেষক আবার স্পষ্ট করে বলছেন যে, এদের সবগুলো ধারা সমন্বিত করলে ‘ছহীহ লিগইরিহা’র পর্যায়ভুক্ত হবে। কারণ এগুলো যে সব ধারাই বর্ণিত হয়েছে, তাতে নিজেরাই ‘হাসান’ হিসেবে গণ্য।
এ প্রসঙ্গে শরীয়াহ বিশেষজ্ঞ সর্বজন স্বীকৃত আলেমদের বক্তব্য হলো,
হাফিজ ইবনু রজব (র.) বলেন,
اختلف فيها، فضعفها الأكثرون، وصحح ابن حبان بعضها، وخرجه في صحيحه.
অর্ধ শাবানের রাত সম্পর্কে বর্ণিত হাদীসগুলো নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে। অনেকেই এগুলোকে দুর্বল বলেছেন। ইবনু হিব্বান এদের কিছুকে ছহীহ বলেছেন এবং তার ছহীহ কিতাবের মধ্যে তাখরীজ করেছেন।
ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (র.) বলেন,
وأما ليلة النصف من شعبان ففيها فضلٌ، وكان في السلف من يصلي فيها
“অর্ধ শাবানের রাতের মাহাত্ম্য রয়েছে। সালাফদের মধ্যে কেউ কেউ এ রাতে নামায পড়তেন।”। (ফতোয়া:২০/১২৩)
তিনি আরো বলেন,
ليلةُ نصف شعبان رويَ فيها من الأخبار والآثار ما يقتضي أنها مفضلة ومن السلف من خصَّها بالصلاة فيها وصوم شعبان جاءت فيه أخبار صحيحة أما الصوم يوم نصفه مفرداً فلا أصل له، بل يكره، قال: وكذا اتخاذه موسماً تصنع فيه الأطعمة والحلوى وتظهر فيه الزينة وهو من المواسم المحدثة المبتدعة التي لا أصل لها، وما قيل من قَسْمِ الأرزاق فيها لم يثبت
“অর্ধ শাবানের রাত্রির ব্যাপারে অনেক হাদীস ও আছার বর্ণিত হয়েছে। যদ্বরা এ রাতের মাহাত্ম্য ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়। সালাফ বা পূর্বসুরীদের মধ্যে কেউ কেউ এ রাতে বিশেষ করে নামায আদায় করতেন। শাবান মাসের রোজার ব্যাপারে বিশুদ্ধ হাদীস এসেছে। তবে শুধুমাত্র পনেরতম দিবসে একটি রোজা পালন করার কোন মূলভিত্তি নেই। বরং তা মাকরূহ। তিনি আরো বলেন, তদ্রূপ এটিকে রকমারী খাদ্য, হালুয়া তৈরি ও সাজ-সজ্জা প্রকাশের উপলক্ষ্য বানানো বিদ‘আত। যার কোন ভিত্তি নেই। আর এ রাতে রিযিক বন্টিত হয় এ মর্মে যা কিছু বলা হয় তা প্রমাণিত হয়নি” ।
ইমাম ইবনু নুজাইম আল-মাসরী বলেন,
ومن المندوبات إحياءُ ليالي العشر من رمضان وليلتي العيدين وليالي عشر ذي الحجة وليلة النصف من شعبان كما وردت به الأحاديث وذكرها في الترغيب والترهيب مفصلة والمراد بإحياء الليل قيامه وظاهره الاستيعاب ويجوز أن يراد غالبه، ويكره الاجتماع على إحياء ليلة من هذه الليالي في المساجد،
“যে রাতগুলোকে জাগ্রহ রাখা মুস্তাহাব, সেগুলো হচ্ছে: রমাদানের দশরাত্র, দুই ঈদের দুই রাত্র, জিলহাজ্জ মাসের দশ রাত্র ও শাবানের মধ্যরাত্র। এ মর্মে একাধিক হাদীস রয়েছে। তারগীব ও তারহীব কিতাবে এগুলোর বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে। রাতকে জাগ্রহ রাখার অর্থ হলো, ইবাদাতের মাধ্যমে বিনিদ্র রজনী কাটানো। পুরো রাত বা রাতের বেশির ভাগ সময়, দুটোই হতে পারে। এ সব রাতে ইবাদাতের জন্য মসজিদের একত্রিত হওয়া মাকরুহ”।
আল্লামা মুবারাকপুরী তার “তুহফাতুল আহওয়াজী” নামক গ্রন্থে বলেন,
اعلم أنه قد ورد في فضيلة ليلة النصف من شعبان عدة أحاديث مجموعها يدل على أن لها أصلاً… فهذه الأحاديث بمجموعها حجة على من زعم أنه لم يثبت في فضيلة ليلة النصف من شعبان شيء والله تعالى أعلم
“অর্ধ শাবানের মাহাত্ম্যের ব্যাপারে একাধিক হাদীস বর্ণিত হয়েছে। এগুলো সামষ্টিকভাবে প্রমাণ করে যে, এ রাতের একটি ভিত্তি আছে। এসব হাদীস সামষ্টিকভাবে তাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ যারা মনে করে অর্ধ শাবানের রাতের ব্যাপারে কিছুই সাব্যস্ত হয়নি। আল্লাহই ভালো জানেন”।
আল্লামা নাসিরুদ্দীন আলবানী অর্ধ শাবানের রাত সম্পর্কে বর্ণিত হাদীসগুলো নিয়ে কথা বলেছেন এভাবে,
حديث صحيح روي عن جماعة من الصحابة من طرق مختلفة يشد بعضها بعضاً
“হাদীসটি ছহীহ। একদল সাহাবী থেকে বিভিন্ন সূত্রে তা বর্ণিত হয়েছে। যাদের একটি আরেকটিকে মজবুত করে”।
* وجملة القول أن الحديث بمجموع هذه الطرق صحيح بلا ريب، والصحة تثبت بأقل منها عدداً، مادامت سالمة من الضعف الشديد كما هو الشأن في هذا الحديث
মোটামুটি কথা হলো, এই সব ধারায় বর্ণিত হাদীসটি নিঃসন্দেহে ছহীহ বা বিশুদ্ধ। এর চেয়ে কমসংখ্যক সূত্র দিয়েও হাদীসের বিশুদ্ধতা প্রমাণিত হয়। যদি না তাতে প্রবল কোন দুর্বলতা থাকে। যেমনটি এই হাদীস”।
এ রাতের ব্যাপারে কোন বিশুদ্ধ হাদীস নেই, এ মতের প্রবক্তাদের দাবী খন্ডন করতে গিয়ে আল্লামা আলবানী বলেন,
ليس مما ينبغي الاعتماد عليه، ولئن كان أحد منهم أطلق مثل هذا القول، فإنما أتي من قبل التسرع، وعدم وسع الجهد لتتبع الطرق على هذا النحو الذي بين يديك.
এটা নির্ভরযোগ্য কথা নয়। এ ধরনের কথা যদি কেউ সাধারণভাবে বলেও থাকে, তবে তা নিতান্তই তাড়াহুড়োপ্রসূত। হাদীসটির সবগুলো সূত্র বা বর্ণনার ধারা গবেষণায় যথাসম্ভব শক্তি ব্যয় না করেই এমনটি বলা হতে পারে”।
কুরআন তেলাওয়াত, তাসবীহ তাহলীল, ইস্তেখফার, দান-খয়রাত ইত্যাদি বেশী বেশী করা। তবে কোনোক্রমেই শরীয়ত বিরোধী কিছু করা যাবে না বা বিদ’আত করা যাবে না।
সতর্কতবাণী !
শবে বরাত সম্পর্কিত প্রচলিত ভ্রান্ত বিশ্বাস ও আমল
*রাতে গোসল করাকে সওয়াবের কাজ মনে করা ।
*মৃত ব্যক্তিদের রূহ এ রাতে দুনিয়ায় তাদের ঘরে আসে।
* এ রাতে হালুয়া রুটি তৈরী করে নিজেরা খায় ও অন্যকে দেয়া জরুরী মনে করা।
* বাড়ীতে বাড়ীতে এমনকি মসজিদে মসজিদেও মিলাদ পড়ার বাধ্যতামূলক রেওয়াজ বানানো ।
*আতশবাজী-পটকা ফুটানো, মসজিদ, সরকারী-বেসরকারী ভবনে আলোক সজ্জা করা।
*কবরস্থানগুলো আগরবাতি ও মোমবাতি দিয়ে সজ্জিত করা।
*লোকজন দলে দলে কবরস্থানে যাওয়াটাকে জরুরী মনে করা। ইত্যাদি
*মনে রাখা দরকার মধ্য শা’বানের রাতে যদি কেউ বিদ‘আত করে, তবে সেই বিদ‘আতের বিপক্ষেই কথা বলা উচিৎ, সেই বিদয়াত ও দুষ্কর্ম দূর করতেই তৎপর হতে হবে।
জয়ীফ হাদীস
জয়ীফ বা দূর্বল হাদীসের ও দুর্বলতার কম বা বেশী হতে পারে। কম দুর্বলতা হাদীস হাসান হাদীসের নিকটবর্ত্তী আবার দূর্বলতা বেশি হতে হতে মওজু বা জাল হাদীসে পরিণত হতে পারে, সে ব্যাপারটা বিশেষভাবে লক্ষণীয়। জয়ীফ হাদীস আমলে উৎসাহিত করার জন্য বর্ণনা করা যেতে পারে বা করা উচিৎ। তবে আইন প্রনয়ণে গ্রহনযোগ্য নয়। এ প্রসঙ্গে হযরত ইমাম ইবনে হুমাম রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,”জয়ীফ হাদীস যা মওজু নয় তা ফজিলতের আমল সমূহে গ্রহণযোগ্য” (ফতহুল ক্বাদীর ২/৪৩৮)
সকল হাদীস বিশারদ একমত,যা আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী রহমতল্লাহি আলাইহি তাঁর আল মওজুআতুল কবীরের ১০৮ পৃষ্ঠায় বলেন, “সকলে একমত যে জয়ীফ হাদীস ফজিলত হাসিল করার জন্য আমল করা জায়েজ আছে।”জয়ীফ হাদীস যা মওজু নয় তা ফজিলতের আমল সমূহে গ্রহণযোগ্য” (ফতহুল ক্বাদীর ২/৪৩৮)।
উপরোক্ত বর্ণনার দ্বারা প্রমাণিত হল যে, জয়ীফ হাদীস ফজিলত হাসিল করার জন্য আমল করা জায়েজ আছে। তবে মনে রখতে হবে জয়ীফ হাদীস দ্বারা সাব্যস্ত সকল আমলই মুস্তাহাব।
যেমনঃ আল্লামা ইব্রাহিম হালবী রহমতল্লাহি আলাইহি তাঁর গুলিয়াতুল মুস্তামালী ফি শরহে মুনিয়াতুল মুছাল্লি কিতাবে উল্লেখ করেছেন, “গোসলের পরে রূমাল (কাপড়) দিয়ে শরীর মোছা মুস্তাহাব। হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা (রা.) হতে বর্ণিত আছে – আল্লাহ পাকের হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটুকরা কাপড় (রূমাল) ছিল যা দিয়ে তিনি অযুর পরে শরীর মুবারক মুছতেন” (তিরমিযি শরীফ ১/১১২) ইমাম তিরমিযি এটাকে জয়ীফ হাদীস বলেছেন। কিন্তু ইহা ফজিলত হাসিল করার জন্য আমল করা যাবে।
সুতরাং শবে বরাতের হাদীস সংক্রান্ত কিছু দলিলকে জয়ীফ হাদীস বলে শবে বরাত পালন করা যারা বিদয়াত বলেন তাদের এধরনের বক্তব্য ইসলামী শরীয়তের মূল দৃষ্টিভংগির খেলাফ।
* এ রাতের আমাল সমূহ ব্যাক্তিগত, সম্মিলিত নয়। ফরজ নামায তো অবশ্যই মসজিদে আদায় করতে হবে। এরপর যা কিছু নফল পড়ার তা নিজ নিজ ঘরে একাকী পড়াই উত্তম। এসব নফল আমলের জন্য দলে দলে মসজিদে এসে সমবেত হওয়ার কোন প্রমাণ হাদীসে নেই, আর সাহাবায়ে কেরামের যুগেও এর কোন প্রচলন ছিল না। – ইকতিযাউস্ সিরাতিল মুস্তাকীমঃ ২/৬৩১-৬৪১; মারাকিল ফালাহ ২১৯।
শা‘বান মাসে অধিক হারে নফল ছিয়াম পালন করা সুন্নাত: রামাযানের আগের মাস হিসাবে শা‘বান মাসের প্রধান করণীয় হ’ল অধিকহারে ছিয়াম পালন করা। আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে রামাযান ব্যতীত অন্য কোন মাসে শা‘বানের ন্যায় এত অধিক ছিয়াম পালন করতে দেখিনি। শেষের দিকে তিনি মাত্র কয়েকটি দিন ছিয়াম ত্যাগ করতেন’ (নাসাঈ হা/২১৭৯, সনদ ছহীহ)।
এ রাতে করণীয়:
উল্লিখিত হাদীসগুলো দ্বারা এ রাতের মাহাত্ম্য প্রমাণিত হলেও তাতে এ রাতের করণীয় কী, তা স্পষ্ট করে বলা হয়নি। শুধুমাত্র হযরত ‘আয়িশার হাদীসে কিছু নমুনা পাওয়া যায়। তবে করণীয়ের চেয়ে এগুলোতে বর্জনীয় কাজের প্রতিই অধিক গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে।
তাই এ রাত্রির মাহাত্ম্য অর্জন করতে হলে প্রথমেই ঐ সব কাজ থেকে নিজেকে পবিত্র করতে হবে। তাওবাহ ও পারস্পরিক সম্পর্ক সুসংহত করে নেয়ার মাধ্যমে। হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানির মনোভাব পরিত্যাগ করতে হবে।বেশির ভাগ হাদীসে দুটো জিনিস বেশি এসেছে। “শিরক ও হিংসা-বিদ্বেষ”। কারণ এদুটোই এমন মারাত্মক অপরাধ, যা মানুষের ধার্মিকতার মূলে কুঠারাঘাত করে। শিরকের মাধ্যমে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়। ফলে দ্বীনের লেশমাত্র থাকে না। আর হিংসা-বিদ্বেষের মাধ্যমে মানুষের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়। সমাজে অরাজকতা সৃষ্টি হয়। মুসিলম উম্মাহর মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টি হয়।
পরের দিন রোজা রাখা যাবে কিনা?
*শবে বরাতের ফযিলত অনেকগুলি হাদীস দ্বারা প্রমানিত। সুতরাং তা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। কিন্তু শবে বরাত নিয়ে যে বিদয়াত প্রচলিত তাতো অস্বীকার করতেই হবে। যেমন কিছু লোক দেখা যায় এশার সালাত আদায় করে না, আবার ফজরের সালাতও আদায় করে না। তবে রাত জেগে নফল ইবাদত করে, মাজারে যায়। আবার কিছূ মহিলা পাওয়া যায় রুটি ও হালুয়া তৈরী করতে করতে সালাত আদায় করতে ভূলে যায়, কিন্তু তারা আবার রাত জেগে শুধু নফল সালাত আদায় করে তাদের ব্যাপারে কি বলবেন? আর নিয়মিত যে মুসলিম চাঁদের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ রোজা রাখেন এবং নিয়মিত তাহাজ্জুত আদায় করেন, রাত জেগে নফল সালাত আদায় করেন, তার জন্য আলাদা কিছু আদায় করার কি কোন প্রয়োজন আছে? আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কখন কোন বান্দার প্রতি খাস রহমতের দ্বার খুলে কবুল করে নেন সেটা আমরা কি করে বলি। ঐ সকল লোকতো হাদীস শরীফে বর্নিত অশেষ ফজিলতের প্রতি বিশ্বাস করেই এ রাতে কিছু হলেও ইবাদত করার চেষ্টা করে- এটাকে আমরা নিরুৎসাহিত করে কি লাভ ?
ক.প্রথম কথা হলো, রাসূল (স.) শাবান মাসের বেশির ভাগই রোজা রাখতেন। মেযনটি নিচের হাদীসদ্বয় দ্বারা প্রমাণিত হয়।
روى أسامة بن زيد عن رسول الله صلى الله عليه وعلى آله وسلم، أنه سأله قائلاً: يا رسول الله لم أرك تصوم من شهر من شهور العام كما تصوم من شهر شعبان ! فقال عليه الصلاة والسلام: ذلك شهر يغفل عنه كثير من الناس بين رجب ورمضان، وهو شهر ترتفع فيه الأعمال إلى الله عز وجل، فأحب أن يرتفع عملي إلى الله وأنا صائم
হযরত উসামাহ বিন যাইদ থেকে বর্ণিত। তিনি রাসূল স. কে জিজ্ঞেস করেছিলেন, “ইয়া রাসূলাল্লাহ, শাবান মাসে আপনি যে পরিমাণ রোজা রাখেন, আপনাকে অন্য কোন মাসে এত রোজা রাখতে দেখিনা। তখন রাসূল (স.) বললেন, রজব এবং রমাদানের মধ্যে অবস্থিত শাবান সম্পর্কে অধিকাংশ মানুষই উদাসীন। তাছাড়া, এ মাসে মানুষের আমলগুলো আল্লাহর কাছে পেশ করা হয়, তাই আমি চাই রোজাদার অবস্থায় যেন আমার আমলগুলো আল্লাহর কাছে পেশ করা হয়”।মুসলিম হা/২৬৫৩; মিশকাত হা/৭৯
খ. হযরত আইশা রা. থেকে বণিত।
وَلَمْ أَرَهُ صَائِمًا مِنْ شَهْرٍ قَطُّ أَكْثَرَ مِنْ صِيَامِهِ مِنْ شَعْبَانَ ، كَانَ يَصُومُ شَعْبَانَ كُلَّهُ ، كَانَ يَصُومُ شَعْبَانَ إِلا قَلِيلا .
“রাসলূকে (স.) শাবান মাসের মত এত রোজা অন্য কোন মাসে রাখতে দেখিনি । তিনি পুরো শাবান কিংবা এর অধিকাংশ অংশই রোজা রাখতেন”।(নাসাঈ হা/২১৭৯, সনদ ছহীহ)।
শেষ কথা
আল্লাহ তা’য়ালা এ রাতে যদি দুনিয়ার আকাশে আসেন, যদি তিনি তাঁর বান্দাদেরকে ক্ষমা করেন, যদি অসংখ্য পাপীতাপী লোক আল্লাহর রহমত ও কৃপা লাভ করেন, যদি তারা গ্লানি নিঃশেষে মুক্তচিত্তে পুণ্যপথে অগ্রসর হন তবে কোন যুক্তিতে বাধা আসবে? খামাখা কোন ভাল জিনিসে জটিলতা সৃষ্টিতে কী লাভ? কোন বিষয় নিয়ে প্যাঁচা-প্যাঁচি করতে গেলে জট কেবল বাড়তেই থাকবে। জট বাঁধাতে ইচ্ছে করলে অনেক বিষয়ে ‘সহীহ হাদিস’ টেনেও বাঁধানো যেতে পারে। ঝামেলা সৃষ্টি করা যেতে পারে। হাদিস না মানার অভিযোগে অভিযুক্ত করা যেতে পারে। মনে রাখতে হবে ”বিশ্বাসে মিলে বস্তু-তর্কে বহুদূর” কুতর্কে আল্লাহ নেই। তিনি সুতর্ক ও বিশ্বাসে উপযুক্ত সওয়াব দেন। যেসব সাধারণ মানুষ এতকাল ধরে শবে বরা’ত পালন করে আসছে তাদের সামনে বিদ্যার প্যাঁচ মেরে শবে বরা’তের গুরুত্ব ও মহিমা খাটো করে ব্যাখ্যা হাজির করা যাবে বটে; কিন্তু এতে দ্বীনের কোন উপকার হবে কি? শুধু এই একটি রাতে কত শত সহস্র লোক আল্লাহর দিকে রুজু হয়ে ইবাদত বন্দেগী করে, আল্লাহর নাম নেয়, নামাজ পড়ে, জিকির আযকার করে। এই সুবাদে তাদের ছেলেমেয়েরাও ইবাদতের পরিবেশ পেয়ে কান্নাকাটি করে। কিন্তু বিদ্যার ঠাকুর এসে যদি সে রাতের দুয়ারে তালা লাগিয়ে দেন তাতে সর্বসাধারণের কি লাভ?
সাধারণ লোকেরা তো আর জানেনা কোনটা হাদিসে আছে, তারা তো আর বুঝে না কোনটা বিদয়াত আর কোনটা আমলযোগ্য। তাই এদের সহজেই বিভ্রান্ত করা যায়। এ সকল অপপ্রচার শুধুই মুসলিমদের ঈমান আমল থেকে দূরে সরিয়ে রাখার নিমিত্তে। এদের ভেলকি বাজির আরেকটি কৌশল হল এরা আপনাকে বুঝাবে শবে বরাত সম্পর্কে হাদিসে যা এসেছে তা জাল, জইফ বাতিল ইত্যাদি। যদি সামান্য মূহর্তের জন্য খালিক মালিক মহান রাব্বুল আলামীনের স্মরনে একটু সময় ব্যায় করে যা আপনার দৃষ্টিতে সামান্য, তেমন ইবাদতকে যে আল্লাহ পাক কবুল করবেন না বা কবুল করতে পারেন না এমন গ্যারান্টি আমি আপনি দেয়ার কে? আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত কখন কোন বান্দার প্রতি খাস রহমতের দ্বার খুলে কবুল করে নেন সেটা আমরা কি করে বলি? ঐ সকল লোকতো হাদীস শরীফে বর্ণিত অশেষ ফজিলতের প্রতি বিশ্বাস করেই এ রাতে কিছু হলেও ইবাদত করার চেষ্টা -প্রচেষ্টা করে থাকে- এটাকে আমরা নিরুৎসাহিত করে কি লাভ বা ফায়দা হবে?
২০১৬ইং ১৬ শা’বানের পূর্বে এক সপ্তাহ যাবত দেশের শীর্ষ উলামা মাশায়েখ ও শতাধিক মুফতিদের মতামত গ্রহণ করি। সকলেরই প্রায় এক ও অভিন্ন অভিমত। তা হলো- ১. শবে বরাত উপলক্ষ্যে প্রচলিত সকল বিদ’আত ঘৃণীয় অপরাধ। ২. এ রাতকে কেন্দ্র করে যাবতীয় নফল ইবাদতকে ফরয হিসেবে চিন্তা করার কোনো সুযোগ নেই। ৩. যারা দ্বীনি মহাব্বাতে নফল ইবাদতে মশগুল হন ও মসজিদ পানে ছুটে চলেন, তাদেরকে থামিয়ে দেয়ার দুঃসাহস দেখানো সমীচিন নয়। ৪.এ রাতের সব আমলই নফল বা মুস্তাহাব -তা আমল করতে যেয়ে কোনভাবেই যেন ফরজ ছুটে না যায় ৫. মসজিদ বা বিভিন্ন মাহফিলে এ রাত উপলক্ষে যারা সমবেত হন সে সমস্ত আল্লাহর বান্দাদেরকে নিরুসাহিত না করে কুরআন সুন্নাহর মানদন্ডে দ্বীনের আসল স্প্রিট ও মূলদৃষ্টিভঙ্গি ফুটিয়ে তোলা আমাদের দ্বীনি দাওয়াতের অবিচ্ছেদ্য অংশ। আল্লাহ তা’আলা আমাদের সকলকে দ্বীনের দায়ী হিসেবে কবুল করুন। আমীন।
লেখক : Dr.Khalilur Rahman
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, গবেষক ও কলামিষ্ট।
ই-মেইল: [email protected] =-01711280236
বন্ধুদের অনুরোধে তৃতীয়বার পোষ্ট করা।
(ইবাদত থেকে ফিরিয়ে রাখা বা ইক্বামাতে দ্বীন থেকে ফিরিয়ে রাখার জন্য বলা হয়, …এটা বিদয়াত, বাইয়াত বিদয়াত, ভোট বিদয়াত,রিপোর্ট রাখা বিদয়াত,ইসলামী রাজনীতি তথা ইক্বামাতে দ্বীন বিদয়াত,হারাম-এদের তীর কি ইসলামী আন্দোলনের দিকে? সমাজে এত অনৈসলামিক কাজের বিরুদ্ধে তাদের কোন বক্তব্য-কর্মসূচি কি দেখেছেন!?)