প্রশ্ন
আমি দুইটি হাদিস সম্পের্কে জানতে চাচ্ছি। হাদিস দুটি হলো,
১. ‘মসজিদে দুনিয়াবি কথা বলার দ্বারা নেক আমলসমূহ এমনভাবে নষ্ট হয়ে যায় যেমন আগুন শুকনো কাঠকে ধ্বংস করে দেয়।’
২. ‘যে ব্যক্তি মসজিদে দুনিয়াবি কথা বলে আল্লাহ তাআলা তার ৪০ (চল্লিশ) বছরের নেক আমল নষ্ট করে দেন।’
অনেককে এগুলো হাদিস বলে প্রচার করতে শোনা যায়। আবার কেউ কেউ বলেন এগুলো হাদিস নয়। তাই হুজুরের কাছে এ ব্যাপারে সঠিক তথ্য জানতে চাচ্ছি।
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
حامدا و مصليا و مسلما
প্রশ্নে উল্লেখিত কথা দুটি লোকমুখে হাদিস হিসেবে প্রসিদ্ধ হলেও বাস্তবে এর কোনো ভিত্তি নেই। ‘মসজিদে দুনিয়াবি কথা বলার দ্বারা নেক আমলসমূহ এমনভাবে নষ্ট হয়ে যায় যেমন আগুন শুকনো কাঠকে ধ্বংস করে দেয়’- এ বর্ণনাকে মোল্লা আলী কারী (রাহ.) ও আল্লামা সাফারীনী (রাহ.) জাল বলেছেন। আর ‘যে ব্যক্তি মসজিদে দুনিয়াবি কথা বলে আল্লাহ তাআলা তার ৪০ (চল্লিশ) বছরের আমল নষ্ট করে দেন’- এ বর্ণনাটিকে আল্লামা সাগানী (রাহ.) এবং আল্লামা কাউকজী (রাহ.) এবং মোল্লা আলী কারী (রাহ.)-সহ আরো অনেক মুহাদ্দিস জাল বলে উল্লেখ করেছেন। তাই ঐ দু’টিকে হাদিস হিসেবে বর্ণনা বা প্রচার করা জায়েয হবে না।
উল্লেখ্য যে, মসজিদ আল্লাহর ঘর। মসজিদের ভিত্তিই হল নামায, যিকির, তালীম ও অন্যান্য দ্বীনী আমলের জন্য। তাই দুনিয়াবি অনুষ্ঠান, মিটিং কিংবা নিছক দুনিয়াবি কথাবার্তা ও কাজকর্মের জন্য মসজিদে যাওয়া এবং সেখানে অবস্থান করা নাজায়েয। তবে কোনো দ্বীনী কাজের উদ্দেশ্যে মসজিদে যাওয়ার পর প্রসঙ্গক্রমে দুনিয়াবি কোনো বৈধ কথাবার্তা বলা জায়েয আছে। এক্ষেত্রে কারো নামায বা ইবাদতে বিঘ্নতা সৃষ্টি না হওয়া শর্ত। আর অন্যান্য ইবাদতকারীর অসুবিধা করে জোরে জোরে যিকির বা তিলওয়াত করাও নাজায়েয।
-আলমাসনূ, মোল্লা আলী আলকারী পৃ. ৯২, ১৮২; আলবাহরুর রায়েক গিযাউল আলবাব ২/২৪২; ২/৬৩; রদ্দুল মুহতার ১/৬৬২; শরহুল মুনয়া পৃ. ৬১০
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم