প্রশ্ন
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমি জানতে চাচ্ছি যে, চুক্তিভিত্তিক বিবাহ জায়েজ আছে কি? যেমন একজন আমেরিকায় যেতে চায়। সে আমেরিকান এক খ্রিস্টান মহিলাকে বিবাহ করার চুক্তি করলো। কারণ স্ত্রী তার স্বামীর জন্য ভিসা আবেদন করতে পারে।এখন তাদের মধ্যে শুধু কাগজে কলমে বিয়ে হল।পরে সেখানে গিয়ে তার সাথে আর কোনো সম্পর্ক ও রাখেনি। কারণ এখানে চুক্তি ছিল তার আমেরিকায় যাওয়া, সংসার করা নয়। এখন এই পদ্ধতিটি বৈধ হবে কিনা?
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
حامدا و مصليا و مسلما
এধরনের বিবাহ জায়েজ নাই। কেননা শরীয়তের দৃষ্টিতে বিবাহের কিছু শর্ত আছে। সেই শর্তগুলো পুরণ না করলে কখনো বিবাহ শুদ্ধ হবে না।
ইসলামের দৃষ্টিতে বিবাহের মৌলিক শর্ত হলো,
(১) ইজাব কবুল (একপক্ষের প্রস্তাব আরেকপক্ষের গ্রহন) বলা।
(২) দুজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ অথবা একজন পুরুষ ও দুজন নারী সাক্ষীর সম্মুখে বিবাহ সম্পন্ন হওয়া এবং উভয়ে একসাথে ইজাব কবুল শ্রবণ করা। উপরোক্ত দুই শর্ত ছাড়া বিবাহ হবে না।
রাসূল (সা.) বলেছেন-
لا نكاح إلا بوليّ وشاهدين
অভিভাবক ও দুইজন সাক্ষী ছাড়া কোন বিবাহ নেই। (মুসান্নাফে ইবনু আবী শাইবাহ, হাদীস: ১৬১৭১)
عَنْ أَبِي الزُّبَيْرِ الْمَكِّيِّ أَنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ أُتِيَ بِنِكَاحٍ لَمْ يَشْهَدْ عَلَيْهِ إِلَّا رَجُلٌ وَامْرَأَةٌ فَقَالَ هَذَا نِكَاحُ السِّرِّ وَلَا أُجِيزُهُ وَلَوْ كُنْتُ تَقَدَّمْتُ فِيهِ لَرَجَمْتُ
আবূ যুবাইর মক্কী (র.) থেকে বর্ণিত আছে, ওমর (রা.) এর নিকট এমন একটি বিয়ের ঘটনা উপস্থিত করা হল, যে বিয়েতে একজন পুরুষ ও একজন নারী ব্যতীত অন্য কোন সাক্ষী ছিল না। তখন তিনি বললেন,
এটা গোপন বিয়ে। আমি এটাকে জায়েয বলি না। যদি আমার এ সিদ্ধান্ত আমি পূর্বে প্রকাশ করতাম তবে আমি তোমাকে শাস্তি (রজম) দিতাম।
(মুওয়াত্তা মালিক, হাদীস: ১১২৪)
فى الدر المختار- ( و ) شرط ( حضور ) شاهدين ( حرين ) أو حر وحرتين ( مكلفين سامعين قولهما معا ) (الدر المختار ، كتاب النكاح،-3/9
বিবাহ সহীহ হওয়ার শর্ত হল শরীয়তের মুকাল্লাফ [যাদের উপর শরীয়তের বিধান আরোপিত হয়] এমন দুইজন আযাদ পুরুষ সাক্ষি বা একজন আযাদ পুরুষ ও দুইজন মহিলা সাক্ষি হতে হবে, যারা প্রস্তাবনা ও কবুল বলার উভয় বক্তব্য নিজ কানে উপস্থিত থেকে শুনতে পায়। ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়া ১/২৬৮; আদ দুররুল মুখতার ৩/৯;
(তৃতীয় শর্ত হলো) মোহর ধার্য করা।
বিবাহের আগে অভিভাবকের অনুমতি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে সন্তান যদি প্রাপ্ত বয়স্ক হয় এবং উপরোক্ত শর্ত মেনে সে নিজেই নিজের বিবাহ করে ফেলে তাহলে শরীয়তের দৃষ্টিতে যদিও এটা জায়েজ তবে এতে বহুবিধ ক্ষতি রয়েছে যা বলার অপেক্ষা রাখে না।
বিবাহের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো কুফু। এটা যদিও বিবাহের শর্তের অন্তর্ভূক্ত নয় কিন্তু দাম্পত্য জীবনে ভারসাম্য বজায় রাখতে কাফায়াত (বিবাহ প্রত্যাশীদের সমতা) এর ভূমিকাও অপরিসীম। আর হাদিস শরীফে উল্লেখ আছে কুফু হবে চারটি বিষয়ের ভিত্তিতে।
হাদিস শরিফে এসেছে,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: تُنْكَحُ المَرْأَةُ لِأَرْبَعٍ: لِمَالِهَا وَلِحَسَبِهَا وَجَمَالِهَا وَلِدِينِهَا، فَاظْفَرْ بِذَاتِ الدِّينِ، تَرِبَتْ يَدَاكَ
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূল (সা.) বলেন- চারটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রেখে শাদী করা যায়- তার সম্পদ, তার বংশমর্যাদা, তার সৌন্দর্য ও তার দীনদারী। সুতরাং তুমি দীনদারীকেই প্রাধান্য দেবে। অন্যথায় তুমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৪৭২৩; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৩৫০৪)
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم