প্রশ্ন
নবীজি (সা.) কবে থেকে নবী? কুরআন ও হাদিসের দলিল দিয়ে বুঝালে ভালো হতো।
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
حامدا و مصليا و مسلما
১- আমাদের নবী (সা.) নবী হওয়াটা নির্ধারিত হয়েছে তাঁর সৃষ্টির অনেক পূর্বে। যা সূরা আলে ইমরানের ৮১ নং আয়াত থেকে বুঝা যায়। আল্লাহ তা’আলা বলেন,
وَإِذْ أَخَذَ اللَّهُ مِيثَاقَ النَّبِيِّينَ لَمَا آتَيْتُكُم مِّن كِتَابٍ وَحِكْمَةٍ ثُمَّ جَاءَكُمْ رَسُولٌ مُّصَدِّقٌ لِّمَا مَعَكُمْ لَتُؤْمِنُنَّ بِهِ وَلَتَنصُرُنَّهُ ۚ قَالَ أَأَقْرَرْتُمْ وَأَخَذْتُمْ عَلَىٰ ذَٰلِكُمْ إِصْرِي ۖ قَالُوا أَقْرَرْنَا ۚ قَالَ فَاشْهَدُوا وَأَنَا مَعَكُم مِّنَ الشَّاهِدِينَ.
এবং (তাদেরকে সেই সময়ের কথা স্মরণ করাও) যখন আল্লাহ নবীগণ থেকে প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলেন, আমি যদি তোমাদেরকে কিতাব ও হিকমত দান করি, তারপর তোমাদের নিকট কোন রাসূল আগমন করে, যে তোমাদের কাছে যে কিতাব আছে তার সমর্থন করে, তবে তোমরা অবশ্যই তার প্রতি ঈমান আনবে এবং অবশ্যই তার সাহায্য করবে। আল্লাহ (সেই নবীদেরকে) বলেছিলেন, তোমরা কি একথা স্বীকার করছ এবং আমার পক্ষ হতে প্রদত্ত এ দায়িত্ব গ্রহণ করছ? তারা বলেছিল, আমরা স্বীকার করছি। আল্লাহ বললেন, তবে তোমরা (একে অন্যের স্বীকারোক্তি সম্পর্কে) সাক্ষী থাক এবং আমিও তোমাদের সঙ্গে সাক্ষী থাকলাম। (সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৮১)
২- ‘তিনি কখন থেকে নবী’ এ বিষয়টি ফুটে উঠেছে সুনানে তিরমিজির ৩৬০৯ নং হাদিসে
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ مَتَى وَجَبَتْ لَكَ النُّبُوَّةُ؟ قَالَ: «وَآدَمُ بَيْنَ الرُّوحِ وَالجَسَدِ»
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, সাহাবীগণ বললেন: ইয়া রাসূলাল্লাহ! কবে থেকে আপনার জন্য নবুওয়াত নির্ধারিত হয়েছে? তিনি বললেন: আদম (আ.) যখন ছিলেন রূহ ও শরীরের মাঝে। (জামে’ তিরমিযী, হাদিস: ৩৬০৯)
৩- দুনিয়াতে আসার পর তাঁর নবুয়্যাত কখন থেকে প্রকাশ পায়? বিষয়টি ফুটে উঠেছে সহীহ বুখারির ৩৬২২নং হাদিসে
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: «بُعِثَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِأَرْبَعِينَ سَنَةً، فَمَكُثَ بِمَكَّةَ ثَلاَثَ عَشْرَةَ سَنَةً يُوحَى إِلَيْهِ، ثُمَّ أُمِرَ بِالهِجْرَةِ فَهَاجَرَ عَشْرَ سِنِينَ، وَمَاتَ وَهُوَ ابْنُ ثَلاَثٍ وَسِتِّينَ»
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে নবুওয়াত দেওয়া হয় চল্লিশ বছর বয়সে, এরপর তিনি তের বছর মক্কায় অবস্থান করেন। এ সময় তাঁর প্রতি ওহী নাযিল হচ্ছিল। তারপর হিজরতের নির্দেশ পান। এবং হিজরতের পর দশ বছর (মদীনায়) অবস্থান করেন। আর তিনি তেষট্টি বছর বয়সে ইন্তিকাল করেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস:৩৬২২)
অন্য বর্ণনায় এসেছে,
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، أَنَّهُ سَمِعَهُ يَقُولُ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم لَيْسَ بِالطَّوِيلِ الْبَائِنِ وَلاَ بِالْقَصِيرِ وَلَيْسَ بِالأَبْيَضِ الأَمْهَقِ وَلاَ بِالآدَمِ وَلاَ بِالْجَعْدِ الْقَطَطِ وَلاَ بِالسَّبِطِ بَعَثَهُ اللَّهُ عَلَى رَأْسِ أَرْبَعِينَ سَنَةً فَأَقَامَ بِمَكَّةَ عَشْرَ سِنِينَ وَبِالْمَدِينَةِ عَشْرَ سِنِينَ وَتَوَفَّاهُ اللَّهُ عَلَى رَأْسِ سِتِّينَ سَنَةً وَلَيْسَ فِي رَأْسِهِ وَلِحْيَتِهِ عِشْرُونَ شَعْرَةً بَيْضَاءَ .
হযরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বেশী লম্বাও ছিলেন না বা বেশী খাটোও ছিলেন না। একেবারে সাদাও ছিলেন না এবং শ্যামলাও ছিলেন না। তার চুল অতিরিক্ত কোঁকড়ানোও ছিলো না এবং একেবারে সোজাও ছিল না। চল্লিশ বছর বয়সে আল্লাহ তাআলা তাঁকে নুবুওয়াত দান করেন। এরপর তিনি মক্কায় দশ বছর অবস্থান করেন এবং মদীনায় দশ বছর। ষাট বছরের মাথায় আল্লাহ তাআলা তাঁকে ওফাত দান করেন। এ সময় তার মাথায় ও দাড়িতে বিশটি চুলও সাদা ছিল না। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৫৮৭৯)
ইতিহাস ও সীরাতগ্রন্থ গুলো তালাশ করলেও স্পষ্ট আকারে বুঝে আসে যে, উম্মতদের জন্য তাঁর নবুওয়্যাত প্রকাশ পায় চল্লিশ বৎসরে।
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم