প্রশ্ন
আমাদের এলাকার একজন আলেম ঝাড়ফুঁক করে থাকেন। আমি জানতে চাচ্ছি, ইসলামি শরিয়তে এর কোনো অস্তিত্ব আছে কি?
উত্তর
بسم الله الرحمٰن الرحيم. حامدا و مصليا و مسلما
ইসলামি শরিয়তে ঝাড়ফুঁকের প্রমাণ আছে। বিভিন্ন হাদিসে স্পষ্টভাবে রয়েছে, সাহাবায়ে কেরাম বিভিন্ন সময় রাসূল (সা.) এর জীবদ্দশায়ই ঝাড়ফুঁক করতেন।
হাদিস শরিফে এসেছে,
‘রাসূল (সা.) একদিন আসমা বিনতে উমাইস (রা.)-কে বললেন, (আসমা রাসূল (সা.) চাচাতো ভাই ও প্রসিদ্ধ সাহাবী জাফর তাইয়ার (রা.)-এর সহধর্মিণী) আমার ভ্রাতুষ্পুত্রদের কী হলো, তারা সকলে দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। তারা কি অভাবে রয়েছে? আসমা বললেন, না, তবে তাদের প্রতি বদ নযর বেশি লাগে; আমরা এর জন্য কি ঝাড়ফুঁক করব? রাসূল (সা.) বললেন, কী পড়ে তোমরা বদ নযরের জন্য ঝাড়ফুঁক কর- তা আমাকে শোনাও। তখন আসমা (রা.) তা পড়ে শোনালেন। তখন রাসূল (সা.) বললেন, অসুবিধা নেই এ দিয়ে ঝাড়ফুঁক কর।’[মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ১৪৫৭৩]
আরেক হাদিসে এসেছে,
‘হযরত উবাদা ইবনে সামেত (রা.) বলেন, আমি জাহিলিয়্যাতের যুগে বদ নযরের ঝাড়ফুঁক করতাম। যখন ইসলাম গ্রহণ করি তখন রাসূল (সা.)-কে বিষয়টি বলি, রাসূল (সা.) বললেন, তুমি যা বলে ঝাড়ফুঁক কর তা আমাকে শোনাও। আমি তাঁকে শোনালাম। তখন রাসূল (সা.) বললেন,অসুবিধা নেই এ দিয়ে ঝাড়ফুঁক করতে পার ।আল্লাহর কসম, রাসূল (সা.) আমাকে অনুমতি না দিলে আমি কোনো এক লোককেও ঝাড়ফুঁক করতাম না।’[মাজমাউয যাওয়ায়েদ, হাদিস: ৮৪৪৪ (তবারানীর বরাতে। হায়ছামী বলেছেন, এর সনদ হাসান।)]
অন্য হাদিসে এসেছে,
‘হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,আমার মামা বিচ্ছুর দংশনের ঝাড়ফুঁক করতেন। যখন রাসূল (সা.) ঝাড়ফুঁক নিষিদ্ধ করেন তখন তিনি রাসূল (সা.)-কে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি ঝাড়ফুঁক থেকে নিষেধ করেন, আমি তো বিচ্ছু কাটার ঝাড়ফুঁক করি। রাসূল (সা.) বললেন, কেউ তার ভাইয়ের উপকার করতে পারলে সে যেন তা করে।’[মুসনাদে আহমাদ ৩/৩০২,হাদিস: ১৪২৩১; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২১৯৯]
তবে রাসূল (সা.) এর পক্ষ থেকে শর্ত আরোপ করে দেওয়া হয়েছিলো যে, তা হতে হবে শিরকমুক্ত। স্বয়ং রাসূল (সা.) সাহাবায়ে কেরামের ঝাড়ফুঁকের মন্ত্রগুলো শুনতেন। তাতে কোনো ধরনের শিরক না থাকলে তা পাঠ করার অনুমোদন দিতেন। এমনকি অন্যদেরও শিখিয়ে দিতে বলতেন।
হাদিস শরিফে এসেছে,
عَنْ عَوْفِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ: كُنَّا نَرْقِي فِي الْجَاهِلِيَّةِ، فَقُلْنَا: يَا رَسُولَ اللَّهِ، كَيْفَ تَرَى فِي ذَلِكَ؟ فَقَالَ: اعْرِضُوا عَلَيَّ رُقَاكُمْ لَا بَأْسَ بِالرُّقَى مَا لَمْ تَكُنْ شِرْكًا
‘আওফ ইবনে মালিক (রা.) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা জাহিলী যুগে ঝাড়ফুঁক করতাম। অতঃপর আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল, এ বিষয়ে আপনার অভিমত কি? তিনি বলেন: তোমাদের ঝাড়ফুঁকের ব্যবস্থাগুলো আমার সামনে পেশ করো; যেসব ঝাড়ফুঁক শিরকের পর্যায়ে পড়ে না, তাতে কোনো দোষ নেই।’ [সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৩৮৮৬]
এ সব হাদিসকে সামনে রেখে মুজতাহিদ ফকীহগণ বলেন: ইসলামে শর্তসাপেক্ষে ঝাড়ফুঁক করার অনুমতি রয়েছে। সে শর্তগুলো হলো:
১. আল্লাহর কালাম বা তাঁর নাম-সিফাত দিয়ে হতে হবে।
২. (আল্লাহর নাম-সিফাত বা আল্লাহর কালাম দিয়ে না হলে) এমন শব্দাবলী দ্বারা হতে হবে, যার অর্থ বুঝা যায় এবং তাতে আপত্তিকর কিছু না থাকে।
৩. এমন বিশ্বাস রাখতে হবে যে, আল্লাহই সুস্থতাদানকারী, ঝাড়ফুঁক নয়।
ফাতহুল বারী১০/২৪০
ইমাম মুহাম্মাদ (রহ.) বলেন,
لا بأس بالرقي بما كان في القرآن و ما كان من ذكر الله، فأما ما كان لا يعرف من الكلام فلا ينبغي أن يرقى به
‘কুরআনের আয়াত এবং আল্লাহর যিকির দ্বারা ঝাড়ফুঁক করতে অসুবিধা নেই। হাঁ, যেসব শব্দাবলীর অর্থ অস্পষ্ট তা দিয়ে ঝাড়ফুঁক করা নিষেধ (কেননা তা শিরকমুক্ত কি না জানা নেই)।’[মুয়াত্তা মুহাম্মাদ পৃ. ৩৭৩-৩৭৪]
যে সব হাদিসে ঝাড়ফুঁক করতে নিষেধাজ্ঞা এসেছে সে সব হাদিস উল্লেখ করার পর ইমাম বায়হাকী (রহ.) বলেন,
‘এসব হাদিসের অর্থ হলো, যদি অস্পষ্ট কোনো শব্দাবলি দ্বারা ঝাড়ফুঁক করে অথবা জাহেলী যুগের মনোভাব নিয়ে ঝাড়ফুঁক করে যে, আল্লাহ নয় এ ঝাড়ফুঁকই রোগ ভালো করে তাহলে তা জায়েয নেই।হাঁ, যদি কুরআনের আয়াত বা আল্লাহর যিকিরের দ্বারা ঝাঁড়ফুক করে এবং এটা বিশ্বাস করে যে, আল্লাহই সুস্থতা দানকারী তাহলে এ ঝাড়ফুঁকে কোনো অসুবিধা নেই।’[সুনানে কুবরা, বায়হাকী ৯/৫৮০]
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم