প্রশ্ন
আমার দাদু চিটাগাংয়ে আমার চাচার বাসায় থাকতেন। কয়েক দিন আগে তিনি চাচার বাসায় মারা যান। আমার চাচা সেখানে একবার জানাযার নামায পড়ান। এরপর তাকে মাটি দেওয়ার জন্য শরীয়তপুরে নিয়ে আসেন। এখানে এসে পুনরায় তার জানাযার নামায পড়া হয়। এতে আমাদের এলাকার মসজিদের ইমাম সাহেব শরীক হওয়া থেকে বিরত থাকেন। তিনি বলেন, দ্বিতীয়বার জানাযার নামায পড়া ঠিক না। আমার চাচা তাকে বললেন, সহিহ বুখারিতে আছে, সাহাবায়ে কেরাম এক মহিলার জানাযার নামায পড়ার পর রাসূলুল্লাহ (সা.) পুনরায় ঐ মহিলার কবরের ওপর জানাযার নামায পড়েছেন। এখন মুফতী সাহেবের কাছে জানতে চাই, এ বিষয়ে শরীয়তের বিধান কী? দ্বিতীয়বার জানাযার নামায পড়া যাবে কি না? যদি না যায় তাহলে সহিহ বুখারির এই হাদিসের ব্যাখ্যা কী? দলীলসহ বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
حامدا و مصليا و مسلما
মায়্যেতের অভিভাবকের মধ্য থেকে কেউ মৃতের একবার জানাযার নামায পড়ে ফেললে দ্বিতীয়বার জানাযার নামায পড়া যায় না। কেননা, শরীয়তের বিধান জানাযার নামায একবারই পড়া। এক বর্ণনায় এসেছে, নাফে‘ (রাহ). বলেন-
كَانَ ابْنُ عُمَرَ إِذَا انْتَهَى إِلَى جِنَازَةٍ وَقَدْ صُلِّيَ عَلَيْهَا دَعَا وَانْصَرَفَ وَلَمْ يُعِدِ الصّلَاةَ
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) যখন কোনো জানাযায় গিয়ে দেখতেন জানাযার নামায শেষ হয়ে গেছে তখন তিনি শুধু দুআ করে ফিরে আসতেন। পুনরায় নামায পড়তেন না। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, বর্ণনা: ৬৫৪৫)
ইবরাহীম নাখায়ী (রাহ.) বলেন-
لَا يُعَادُ عَلَى مَيِّتٍ الصّلَاةُ.
মায়্যেতের দ্বিতীয়বার জানাযার নামায পড়া যাবে না। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, বর্ণনা: ৬৫৪৪)
অবশ্য মায়্যেতের অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া জানাযার নামায সম্পন্ন করা হলে অভিভাবক উক্ত নামায পুনরায় পড়াতে পারবেন। এক্ষেত্রে তার পেছনে কেবলমাত্র ওইসকল লোক শরিক হতে পারবেন, যারা পূর্বের জানাযায় শরিক হননি। আর প্রশ্নে উল্লেখিত বুখারি শরিফের ঘটনাটি রাসূল (সা.) সঙ্গে খাস ছিল।
বিশিষ্ট ফকীহ ও মুহাদ্দিস ফখরুদ্দীন যায়লায়ী (রাহ.) উক্ত হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) দ্বিতীয়বার জানাযার নামায পড়েছেন মুসলিম উম্মার অভিভাবক হিসেবে। (দেখুন- তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৫৭৪)
ইমাম মুহাম্মাদ (রাহ.) বলেন-
وَلا يَنْبَغِي أَنْ يُصَلّى عَلَى جِنَازَةٍ قَدْ صُلِّيَ عَلَيْهَا، وَلَيْسَ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ فِي هَذَا كَغَيْرِهِ، أَلا يُرَى أَنّهُ صَلّى عَلَى النّجَاشِيِّ بِالْمَدِينَةِ، وَقَدْ مَاتَ بِالْحَبَشَةِ، فَصَلاةُ رَسُولِ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ بَرَكَةٌ، وَطَهُورٌ فَلَيْسَتْ كَغَيْرِهَا مِنَ الصّلَوَاتِ.
অর্থাৎ, যে মায়্যেতের একবার জানাযা পড়া হয়েছে দ্বিতীয়বার তার জানাযা পড়া ঠিক নয়। এক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ (সা.) অন্যদের মতো নন। কেননা, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নামায বরকত ও পরিশুদ্ধির কারণ। সুতরাং তাঁর নামায অন্যদের নামাযের মতো নয়। (মুআত্তা মুহাম্মাদ, হাদিস: ৩১৭)
তাছাড়া ইমাম মালেক (রাহ.)-এর বিশিষ্ট শাগরিদ ইবনুল কাসিম (রাহ.) বলেন-
قُلْتُ لِمَالِكٍ: فَالْحَدِيثُ الّذِي جَاءَ عَنِ النّبِيِّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ أَنّهُ صَلّى عَلَى قَبْرِ امْرَأَةٍ؟ قَالَ: قَدْ جَاءَ هَذَا الْحَدِيثُ وَلَيْسَ عَلَيْهِ الْعَمَلُ.
আমি মালেক (রাহ.)-কে বললাম, যে বর্ণনায় এসেছে যে, রাসূল (সা.) এক মহিলার কবরের ওপর তার জানাযার নামায পড়েছেন তার ব্যাখ্যা কী? মালেক (রাহ.) বলেন, উম্মতের আমল এ হাদিস অনুসারে নয়। (ইস্তেযকার ২/৫৫৯)
অর্থাৎ ইমাম মালেক (রাহ.)-ও একথা বুঝাতে চেয়েছেন যে, এটি ছিল রাসূল (সা.)-এর সাথে খাস একটি ঘটনা। আরো বহু ঘটনা এমন হয়েছে, যেখানে রাসূল (সা.) সাহাবার জানাযায় অংশ নিতে পারেননি কিন্তু পুনরায় তার জানাযার নামায পড়েননি। সুতরাং এমন একটি বিশেষ ঘটনা দিয়ে ব্যাপকভাবে দ্বিতীয় জানাযার দলিল পেশ করা উচিত নয়।
-আলমাবসূত, সারাখসী ২/১২৬; ফাতহুল কাদীর ২/৮৪; মুখতাসারুত তাহাবী পৃ. ৪২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৬৪; মিরকাত ৪/১২৯; আলবাহরুর রায়েক ২/১৮১; আদ্দুররুল মুখতার ২/২২৩
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم