প্রশ্ন
হযরত আমার নাম ইমন, আমার ভাইয়ের নাম নীরব, এগুলো আমাদের ডাক নাম। এভাবে বর্তমানে ব্যাপকভাবে ডাকনাম হিসেবে সংক্ষিপ্ত বাংলা-ইংরেজি শব্দে নাম রাখার প্রচলন রয়েছে। যেমন শান্ত , সজিব ইত্যাদি। এখন মুহতারামের কাছে জানতে চাই, এরকম নাম রাখার বিধান কী? এক্ষেত্রে শরীয়তের নীতিমালা কী? আমাদের নামগুলো কি ঠিক আছে? বিষয়টি একটু বিস্তারিত বুঝিয়ে বললে উপকৃত হতাম।
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
حامدا و مصليا و مسلما
ইসলামে সুন্দর ও ভালো নাম রাখার গুরুত্ব অনেক। তাই রাসূলে কারীম (সা.) নিজেই অনেক বাচ্চার নাম রেখে দিয়েছেন এবং কারো অসুন্দর নাম শুনলে তা পরিবর্তন করে দিতেন। তাই নাম রাখার ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত বিষয়াদির প্রতি লক্ষ রাখা উত্তম :
১. আল্লাহ তাআলার কোনো নামের সাথে ‘আব্দ’ যোগ করে নাম রাখা যেমন, আবদুল্লাহ, আবদুর রহমান। হাদিস শরিফে এসেছে, নবী কারীম (সা.) ইরশাদ করেন-
إِنّ أَحَبّ أَسْمَائِكُمْ إِلَى اللهِ عَبْدُ اللهِ وَعَبْدُ الرّحْمنِ.
আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয় নাম আবদুল্লাহ ও আবদুর রহমান। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২১৩১; মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ২২৯১০)
২. কোনো নবীর নামে নাম রাখা, নবী কারীম (সা.) ইরশাদ করেন-
تَسَمّوْا بِأَسْمَاءِ الْأَنْبِيَاءِ.
তোমরা নবীদের নামে নাম রাখ। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ১৯০৩২, আরো দ্রষ্টব্য আল আদাবুল মুফরাদ, হাদিস: ৮৩৬-৮৪০)
৩. সাহাবী-তাবেয়ী কিংবা কোনো নেককার বুযুর্গের নামের সাথে মিলিয়ে নাম রাখা। এক হাদিসে এসেছে, নবী কারীম (সা.) বলেন, আমি তাদের (হাসান, হুসাইন ও মুহাসসিনের) নাম রেখেছি হযরত হারূন আলাইহিস সালামের সন্তানদের নামের সাথে মিলিয়ে। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ৯৫৩)
আর নামের প্রভাব ব্যক্তির মাঝে প্রতিফলিত হওয়ার বিষয়টিও সহিহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। (দ্র. সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৪৯১৭)
আর হাদিস শরিফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন যে-
إِنّكُمْ تُدْعَوْنَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِأَسْمَائِكُمْ، وَأَسْمَاءِ آبَائِكُمْ، فَأَحْسِنُوا أَسْمَاءَكُمْ.
কিয়ামতের দিন প্রত্যেককে তার নিজের নাম ও পিতার নামসহ ডাকা হবে। সুতরাং তোমরা সুন্দর নাম রাখ। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৪৯০৯)
এগুলো হচ্ছে উত্তম নাম রাখার কিছু মূলনীতি। এছাড়াও যে কোনো ভালো অর্থের নামও রাখা জায়েয এবং তা আরবী ছাড়া অন্য ভাষায় (যেমন বাংলা)ও হতে পারে। আর প্রশ্নে উল্লেখিত শান্ত, সজিব ও নীরব নামগুলো রাখার সুযোগ আছে। তবে ইমন সাধারণ অর্থ হিসেবে খুব বেশি সুন্দর নয়।
-তুহফাতুল মাওদূদ পৃ. ৯৯, ১০৬; ফাতাওয়া বায্যাযিয়া ৩/৩৭০; আসসেআয়া ২/১৬৪
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم