প্রশ্ন
আমার বোনকে কিছু দিন আগে তার স্বামী তালাক দিয়ে দেয় এবং দু’জনের মধ্যে সম্পর্ক বিচ্ছেদ হয়ে যায়। নিয়ম অনুযায়ী আমার বোন তার ইদ্দত পূর্ণ করে। এরপরই তার বিবাহের নতুন সম্বন্ধ আসতে শুরু করে। এদিকে তাদের পনেরো মাস বয়সের একটি কন্যাসন্তান রয়েছে। এই মুহূর্তে সে তার মায়ের কাছেই অর্থাৎ আমাদের বাড়িতেই আছে। তবে তার বাবার পরিবার থেকে বলা হচ্ছে, মেয়ের মা যদি অন্যত্র বিবাহ করে তাহলে সে বা এ বাড়ির অন্য কেউ বাচ্চার লালন-পালনের অধিকার ধরে রাখতে পারবে না। বাবার পরিবারই নাকি তখন মেয়ের প্রতিপালনের একমাত্র হকদার। মুহতারামের কাছে আমার জিজ্ঞাসা, শরীয়তের দৃষ্টিতে বাচ্চার প্রতিপালনের বেশি হকদার কে? মা নাকি বাবা? তাছাড়া বাচ্চার মা অন্যত্র বিবাহ করলে কি সত্যিই সে আর বাচ্চার প্রতিপালনের অধিকার রাখে না? যদি নাও রাখে তথাপি মায়ের পর বাচ্চার প্রতিপালনের বেশি হকদার কে? এবং এর কোনো সময়সীমা আছে কি না? বিস্তারিত জানতে আগ্রহী।
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
حامدا و مصليا و مسلما
মা-বাবার মাঝে বিচ্ছেদ হয়ে গেলে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত মা শিশু-সন্তানের লালন-পালনের অধিকার রাখে। তবে যদি মা এ সন্তানের মাহরাম নয় এমন কারো সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় তাহলে তার এ অধিকার থাকবে না। মায়ের পর নানী এবং তার অবর্তমানে দাদী পর্যায়ক্রমে এ অধিকার লাভ করবে।
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو، أَنّ امْرَأَةً قَالَتْ: يَا رَسُولَ اللهِ، إِنّ ابْنِي هَذَا كَانَ بَطْنِي لَهُ وِعَاءً، وَثَدْيِي لَهُ سِقَاءً، وَحِجْرِي لَهُ حِوَاءً، وَإِنّ أَبَاهُ طَلّقَنِي، وَأَرَادَ أَنْ يَنْتَزِعَهُ مِنِّي، فَقَالَ لَهَا رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ: أَنْتِ أَحَقّ بِهِ مَا لَمْ تَنْكِحِي.
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, জনৈকা নারী নবী (সা.)-কে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার এই পুত্র, আমি তাকে গর্ভে ধারণ করেছি, স্তন্যদান করেছি এবং এখনো আমার কোলেই তার আশ্রয়, অথচ তার বাবা আমাকে তালাক দিয়েছে। আর এখন চাইছে, তাকে আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিতে! তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) তাকে বললেন, তুমিই তার বেশি হকদার, যতদিন না তুমি বিবাহ করো। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ২২৭০; নাসবুর রায়াহ ৩/২৬৫)
عَنْ عَبد الرّحْمَنِ بْنُ أَبِي الزِّنَادِ، عَنْ أَبِيهِ، عَنِ الْفُقَهَاءِ الّذِينَ يُنْتَهَى إِلَى قَوْلِهِمْ مِنْ أَهْلِ الْمَدِينَةِ أَنّهُمْ كَانُوا يَقُولُونَ: قَضَى أَبُو بَكْرٍ الصِّدِّيقُ عَلَى عُمَرَ بْنِ الْخَطّابِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا لِجَدّةِ ابْنِهِ عَاصِمِ بْنِ عُمَرَ بِحَضَانَتِهِ حَتّى يَبْلُغَ، وَأُمّ عَاصِمٍ يَوْمَئِذٍ حَيّةٌ مُتَزَوِّجَةٌ.
আবদুর রহমান ইবনে আবিয যিনাদ তার বাবার সূত্রে মদীনার শীর্ষস্থানীয় ও সর্বজনমান্য ফকীহদের বরাতে উল্লেখ করেন, আবু বকর সিদ্দীক (রা.) উমর (রা.)-এর সন্তান আছেম ইবনে উমরের লালন-পালনের বিষয়ে উমর (রা.)-এর বিপক্ষে ও আছেমের নানীর অনুকূলে এই মর্মে রায় প্রদান করেন যে, যতদিন না আছেম বালেগ হয় ততদিন সে তার কাছেই থাকবে। সে সময় উম্মে আছেম জীবিত ছিলেন। তার অন্যত্র বিবাহ হয়েছে। (সুনানে কুবরা, বাইহাকী ৮/৫)
সুতরাং আপনার বোনের যদি অন্যত্র বিবাহ হয়ে যায় (এমন পুরুষের সাথে, যে এ শিশুটির মাহরাম নয়) তাহলে তিনি আর শিশুটির লালন-পালনের হকদার হবে না। সেক্ষেত্রে শিশু সন্তানের লালন-পালনের জন্য শরীয়তের পক্ষ থেকে নির্ধারিত অন্যান্য নারীগণ অগ্রাধিকার পাবেন।
-বাদায়েউস সানায়ে ৩/৪৫৬; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ২/৭২; আলবাহরুর রায়েক ৪/১৬৭; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৫/২৭৩; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৫৬৫; মুখতারাতুন নাওয়াযিল ২/১৮৮
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم