প্রশ্ন
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমি ইলেকট্রিক ব্যাট দিয়ে মশা মারার ব্যাপারে জানতে চাচ্ছিলাম। সেদিন একটা মাসআলায় দেখতে পেলাম এটাকে “জায়েয” বলেছে। তারপরে আল-কাউসারে দেখলাম স্পষ্টভাবে “না-জায়েজ” লিখেছে। এখন এটা নিয়ে একটু সন্দেহে আছি । দয়া করে সঠিক বিষয়টি জানাবেন।
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
حامدا و مصليا و مسلما
এখানে প্রথমে যে বিষয়টি জানা জরুরি তা হলো, বর্তমানে যে ইলেকট্রনিক ব্যাট পাওয়া যায়, তা দিয়ে কি পোড়ানো হয়, নাকি কারেন্টের শক দিয়ে মারা হয়। যারা বলেন এটি সম্পূর্ণরুপে পুড়িয়ে মারা হয়, তারা এটিকে হারাম বলেন। কেননা হাদিসে কোনো প্রাণীকে পুড়িয়ে মারতে নিষেধ করা হয়েছে।
عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ كُنَّا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِي سَفَرٍ فَانْطَلَقَ لِحَاجَتِهِ فَرَأَيْنَا حُمَّرَةً مَعَهَا فَرْخَانِ فَأَخَذْنَا فَرْخَيْهَا فَجَاءَتِ الْحُمَّرَةُ فَجَعَلَتْ تَفْرُشُ فَجَاءَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ ” مَنْ فَجَعَ هَذِهِ بِوَلَدِهَا رُدُّوا وَلَدَهَا إِلَيْهَا ” . وَرَأَى قَرْيَةَ نَمْلٍ قَدْ حَرَّقْنَاهَا فَقَالَ ” مَنْ حَرَّقَ هَذِهِ ” . قُلْنَا نَحْنُ . قَالَ ” إِنَّهُ لاَ يَنْبَغِي أَنْ يُعَذِّبَ بِالنَّارِ إِلاَّ رَبُّ النَّارِ ” .
আব্দুল্লাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- একদা কোন এক সফরে আমরা রাসূলুল্লাহ্ (সা.) এর সঙ্গী ছিলাম। তিনি প্রকৃতির আহবানে সাড়া দেওয়ার জন্য যান। আমরা সেখানে একটা চড়ুই পাখি দেখতে পাই, যার সাথে দুটি বাচ্চা ছিল। আমরা চড়ুই পাখির বাচ্চা দু‘টিকে ধরে ফেলি, ফলে পাখিটি (আমাদের মাথার উপর) ডানা মেলে উড়তে থাকে। এ সময় নবী করীম (সা.) বলেন- এ চড়ুই পাখির বাচ্চা নিয়ে কে একে বিব্রত করছো? এ বাচ্চাকে তোমরা ফিরিয়ে দাও। এরপর তিনি পিঁপড়ার সেই গর্তটি দেখলেন, যা আমরা পুড়িয়ে দিয়েছিলাম। তখন তিনি জিজ্ঞাসা করলেনঃ কে এটি পুড়িয়েছে? আমরা বললামঃ আমরা পুড়িয়েছি। তখন তিনি বললেনঃ আগুন দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া কেবল মাত্র আগুনের রব ছাড়া আর কারো জন্য উচিত নয়। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ২৬৬৬)
এই হাদীসের ভিত্তিতে কোনো ক্ষতিকর প্রাণীকেও আগুনে পুড়িয়ে মারা জায়েয নেই। আর উক্ত ইলেক্ট্রিক ব্যাট দিয়ে আঘাত করলে যেহেতু মশা পুড়ে মারা যায়, তাই তা দ্বারা মশা মারা জায়েয হবে না।
আর যারা বলেন, এটি সরাসরি আগুনে পোড়ায় না, বরং শক করে মারা যায়, তাদের নিকট এটি ব্যাবহার করতে সমস্যা নেই। দারুল উলুম দেওবন্দের ফতোয়ায় বলা হয়েছে, যদি মশা নিধনের অন্য কোনো পদ্ধতি না থাকে, তাহলে বৈদ্যুতিক ব্যাট দিয়ে মারা জায়েয আছে। আর যদি অন্য কোন পদ্ধতি থেকে থাকে তাহলে বৈদ্যুতিক ব্যাট দিয়ে মারা জায়েয নেয়।
আর এধরণের মতাবরোধপূর্ণ মাসআলায় তাকওয়া অলম্বন করাই উত্তম। তাই প্রথম মতটি নিরাপদ ও তাকওয়াসমৃদ্ধ। এ কারণে অধিকাংশ উলামায়ে কেরাম একে অবৈধ বলেছেন।
আশা করি বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন।
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم