আরাফার খুতবার বাংলা তরজমা =১০ই জুলাই ২০১৯ইং
==============================
খতিবঃ শাইখ মুহাম্মাদ বিন হাসান আল-শাইখ ৷
সম্মানিত খতীব সাহেব, প্রথমে আল্লাহ তাআলার প্রশংসা ও নবী কারীম সঃ এর উপর দুরূদ পাঠ করে বলেন:-
হে মুসলমানগণ! আপনারা তাকওয়া অর্জন করুন, সর্বক্ষেত্রে আল্লাহকে ভয় করে চলুন, কেননা দুনিয়াতে সর্বক্ষেত্রে সফলতা ও আখেরাতে নাজাতের একমাত্র চাবি-কাটি হল, তাক্বওয়া তথা আল্লাহভীতি, আল্লাহ বলেন,
وَالآخِرَةُ عِندَ رَبِّكَ لِلْمُتَّقِينَ
অর্থ, পরকালের সফলতা আপনার রবের কাছে মুত্তাকীনদের জন্যেই।
আরেক আয়াতে আল্লাহ বলেন,
أَلَآ إِنَّ أَوْلِيَآءَ ٱللَّهِ لَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ، ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَكَانُوا۟ يَتَّقُونَ، لَهُمُ ٱلْبُشْرَىٰ فِى ٱلْحَيَوٰةِ ٱلدُّنْيَا وَفِى ٱلْءَاخِرَةِ لَا تَبْدِيلَ لِكَلِمَٰتِ ٱللَّهِ ذَٰلِكَ هُوَ ٱلْفَوْزُ ٱلْعَظِيمُ
অর্থঃ মনে রেখো যারা আল্লাহর বন্ধু, তাদের না কোন ভয়-ভীতি আছে, না তারা চিন্তান্বিত হবে। যারা ঈমান এনেছে এবং ভয় করতে রয়েছে, তাদের জন্য সুসংবাদ পার্থিব জীবনে ও পরকালীন জীবনে। আল্লাহর কথার কখনো হের-ফের হয় না। আর এটাই হল মহা সফলতা।
আর তাক্বওয়ার অন্যতম দাবী হল আমরা যেন বিশুদ্ধ তাওহীদকে আকড়ে ধরি, আর এটাই বান্দার উপর আল্লাহ তাআলার সবচেয়ে বড় আদেশ, এবং মানবজাতীকে সৃষ্টিই করা হয়েছে তাঁরা যেন এক ইলাহ’র বিশ্বাসে বিশ্বাসী হয়, আল্লাহ বলেন,
وَمَا خَلَقْتُ ٱلْجِنَّ وَٱلْإِنسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ
অর্থঃ আমার এবাদত করার জন্যই আমি মানব ও জিন জাতিকে সৃষ্টি করেছি।
আর আমরা কেনই বা এক আল্লাহর ইবাদত করবনা? কেননা তিনিই তো গোটা জাহানকে সৃষ্টি করেছেন নিজ একচ্ছত্র শক্তির মাধ্যমে, এবং আমাদের প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সমস্ত আমাল নিয়ে রোজ হাশরে তার সামনেই উপস্থিত হতে হবে, এবং তিনিই আমাদের জীবনে প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁর রহমত অবতীর্ণ করে আমাদের উপর দয়া করেছেন, আল্লাহ বলেন,
مَّا يَفْتَحِ ٱللَّهُ لِلنَّاسِ مِن رَّحْمَةٍ فَلَا مُمْسِكَ لَهَا وَمَا يُمْسِكْ فَلَا مُرْسِلَ لَهُۥ مِنۢ بَعْدِهِۦ وَهُوَ ٱلْعَزِيزُ ٱلْحَكِيمُ
অর্থঃ আল্লাহ মানুষের জন্য অনুগ্রহের মধ্য থেকে যা খুলে দেন, তা ফেরাবার কেউ নেই এবং তিনি যা বারণ করেন, তা কেউ প্রেরণ করতে পারে না তিনি ব্যতিত। তিনি পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়।
আরেক আয়াতে বলেন,
رَّبُّكُمْ ذُو رَحْمَةٍ وَٰسِعَةٍ
অর্থঃ তোমার প্রতিপালক সুপ্রশস্ত করুণার মালিক।
আরেক আয়াতে বলেন,
وَرَبُّكَ ٱلْغَنِىُّ ذُو ٱلرَّحْمَةِ
অর্থঃ আপনার প্রতিপালক অমুখাপেক্ষী, করুণাময়।
হে বোধসম্পন্ন ব্যক্তিগণ! সমগ্র বিশ্বে আল্লাহ তাআলার রহমতের নিদর্শণাবলীর দিকে একটু খেয়াল করে দেখুন, স্বয়ং আল্লাহ বলেন,
وَهُوَ ٱلَّذِى يُنَزِّلُ ٱلْغَيْثَ مِنۢ بَعْدِ مَا قَنَطُوا۟ وَيَنشُرُ رَحْمَتَهُۥ وَهُوَ ٱلْوَلِىُّ ٱلْحَمِيدُ
অর্থঃ মানুষ নিরাশ হয়ে যাওয়ার পরে তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং স্বীয় রহমত ছড়িয়ে দেন। তিনিই কার্যনির্বাহী, প্রশংসিত।
আরেক আয়াতে বলেন,
فَٱنظُرْ إِلَىٰٓ ءَاثَٰرِ رَحْمَتِ ٱللَّهِ كَيْفَ يُحْىِ ٱلْأَرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَآ إِنَّ ذَٰلِكَ لَمُحْىِ ٱلْمَوْتَىٰ وَهُوَ عَلَىٰ كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ
অর্থঃ অতএব, আল্লাহর রহমতের ফল দেখে নাও, কিভাবে তিনি মৃত্তিকার মৃত্যুর পর তাকে জীবিত করেন। নিশ্চয় তিনি মৃতদেরকে জীবিত করবেন এবং তিনি সব কিছুর উপর সর্বশক্তিমান।
আরেক আয়াতে বসেন,
وَمِن رَّحْمَتِهِۦ جَعَلَ لَكُمُ ٱلَّيْلَ وَٱلنَّهَارَ لِتَسْكُنُوا۟ فِيهِ وَلِتَبْتَغُوا۟ مِن فَضْلِهِۦ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ
অর্থঃ তিনিই স্বীয় রহমতে তোমাদের জন্যে রাত ও দিন করেছেন, যাতে তোমরা তাতে বিশ্রাম গ্রহণ কর ও তাঁর অনুগ্রহ অন্বেষণ কর এবং যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।
আরেক আয়াতে বলেন,
قُل لِّمَن مَّا فِى ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِ قُل لِّلَّهِ كَتَبَ عَلَىٰ نَفْسِهِ ٱلرَّحْمَةَ لَيَجْمَعَنَّكُمْ إِلَىٰ يَوْمِ ٱلْقِيَٰمَةِ لَا رَيْبَ فِيهِ
অর্থঃ জিজ্ঞেস করুন, নভোমন্ডল ও ভুমন্ডলে যা আছে, তার মালিক কে? বলে দিনঃআল্লাহ। তিনি অনুকম্পা প্রদর্শনকে নিজ দায়িত্বে লিপিবদ্ধ করে নিয়েছেন। তিনি অবশ্যই তোমাদেরকে কেয়ামতের দিন একত্রিত করবেন। এর আগমনে কোন সন্দেহ নেই।
আর সহীহ হাদীসে আছে, রাসূল সঃ বলেন,
لَمَّا قَضَى اللَّهُ الْخَلْقَ كَتَبَ فِي كِتَابِهِ، فَهْوَ عِنْدَهُ فَوْقَ الْعَرْشِ إِنَّ رَحْمَتِي غَلَبَتْ غَضَبِي
অর্থঃ আল্লাহ যখন সৃষ্টির কাজ শেষ করলেন, তখন তিনি তাঁর কিতাব লাওহে মাহ্ফুজে লিখেন, যা আরশের উপর তাঁর নিকট আছে। নিশ্চয়ই আমার রহমত আমার ক্রোধের উপর প্রবল।
সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৩১৯৪
আমাদের উপর আল্লাহ তাআলার আরেকটি বিশেষ রহমত হলো যে তিনি দ্বীনে ইসলামকে আমাদের জন্য পূর্ণ করে দিয়েছেন৷ আল্লাহ তাআলা ঐয়াতটিতে বলেন, যে আয়াতটি আরাফার এই পবিত্র ময়দানে নাযিল করেছিলেন,
ٱلْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِى وَرَضِيتُ لَكُمُ ٱلْإِسْلَٰمَ دِينًا
অর্থঃ আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্নাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম।
এই মহান ধর্ম যেটিকে পাঁচটি রুকন তথা স্তম্ভের উপর ভিত্তি করা হয়েছে, আর তা হল,
১৷ শাহাদাতাইন ৷
২৷ ইক্বামাতে সালাত ৷
৩৷ ইয়াতাউয যাকাত
৪৷ সাওমু রামাদান ৷
৫৷ হাজ্জু বাইতিল্লাহিল হারাম ৷
এই পঞ্চ স্তম্ভের প্রথমটি হল, দুই কালিমার সাক্ষ্য প্রদান করা, কালিমার প্রথম অংশ হল, আল্লাহ ছাড়া কোন মা’বুদ নেই, এর অর্থ হল, আল্লাহ ছাড়া ইবাদতের উপযুক্ত আর কোনো ইলাহ নেই ৷
আর ২য় অংশ হল, এই কথার সাক্ষ্য প্রদান করা যে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার প্রেরিত নবী ৷
এর অর্থ হল, তাঁর সমস্ত হুকুমের প্রতি আনুগত্যশীল হওয়া, এবং তাঁর আনিত সমস্ত খবরকে সত্য বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করা, এবং তাঁর বলে দেওয়া পদ্ধতী অনুযায়ী আল্লাহর ইবাদত করা৷
ইসলামের ২য় স্তম্ভ হল, নামায ৷
আল্লাহ তাআলা দিবারাত্রি পাচ ওয়াক্ত নামাযকে বান্দার জন্য ফরজ করে দিয়েছেন ৷
ইসলামের ৩য় স্তম্ভ হল যাকাত৷
আর তা হল সম্পদের নির্ধরিত একটি অংশ বের করে গরীব মিসকীনদেরকে দেওয়া৷
আল্লাহ বলেন,
وَأَقِيمُوا۟ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتُوا۟ ٱلزَّكَوٰةَ وَأَطِيعُوا۟ ٱلرَّسُولَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ
অর্থঃ নামায কায়েম কর, যাকাত প্রদান কর এবং রসূলের আনুগত্য কর যাতে তোমরা অনুগ্রহ প্রাপ্ত হও।
ইসলামের চতুর্থ স্তম্ভ হল, রামাদানের রোযা রাখা ৷
আর পঞ্চম স্তম্ভ হল, বাইতুল্লাহ’র হাজ্জ করা ৷
সহীহ হাদীসে আছে, রাসূলল সঃ বলেন,
إِذَا جَاءَ رَمَضَانُ فُتِّحَتْ أَبْوَابُ الرَّحْمَةِ، وَغُلِّقَتْ أَبْوَابُ جَهَنَّمَ، وَسُلْسِلَتِ الشَّيَاطِينُ»
অর্থঃ যখন রমযান মাস আগমন করে তখন জান্নাতের দরজাসমুহ খুলে দেয়া হয়, জাহান্নামের দরজাসমুহ বন্ধ করে দেয়া হয় আর শয়তানদেরকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে রাখা হয়।
সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ২১০০
আর মাথামুন্ডনকারী হাজীগণের জন্য রাসূল সঃ তিন বার দুআ করেছেন৷
আল্লাহ তাআলার আরেকটি বিশেষ রহমত হল, তিনি ঈমানকে আখেরাতে মুক্তির জন্য পথ হিসাবে নির্ধারণ করেছেন, আল্লাহ বলেন,
فَأَمَّا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ بِٱللَّهِ وَٱعْتَصَمُوا۟ بِهِۦ فَسَيُدْخِلُهُمْ فِى رَحْمَةٍ مِّنْهُ وَفَضْلٍ وَيَهْدِيهِمْ إِلَيْهِ صِرَٰطًا مُّسْتَقِيمًا
অর্থঃ অতএব, যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছে এবং তাতে দৃঢ়তা অবলম্বন করেছে তিনি তাদেরকে স্বীয় রহমত ও অনুগ্রহের আওতায় স্থান দেবেন এবং নিজের দিকে আসার মত সরল পথে তুলে দেবেন।
আর রাসূল সঃ থেকে বর্ণিত আছে যে, ঈমানের ছয়টি রুকন রয়েছে, আর তা হল,
الإِيمَان أَنْ تُؤْمِنَ بِاللَّهِ وَمَلاَئِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ وَتُؤْمِنَ بِالْقَدَرِ خَيْرِهِ وَشَرِّهِ ”
অর্থঃ ঈমান এই যে, তুমি আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতাকুল, তাঁর কিতাবসমূহ, তাঁর প্রেরিত নাবীগণ ও শেষ দিনের উপর ঈমান রাখবে এবং তুমি তাকদীর ও এর ভালো ও মন্দের প্রতিও ঈমান রাখবে।
(সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ১)
আমাদের উপর আল্লাহর আরেকটি বিশেষ রহমত, দয়া হল, সমস্ত নবী রাসূলগণকে মানবজাতীর জন্য রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছেন, আল্লাহ আমাদের নবী সঃ সম্পর্কে বলেন,
وَمَآ أَرْسَلْنَٰكَ إِلَّا رَحْمَةً لِّلْعَٰلَمِينَ
অর্থঃ আমি আপনাকে বিশ্ববাসীর জন্যে রহমত স্বরূপই প্রেরণ করেছি।
আল্লাহ আরো বলেন,
وَمَا كُنتَ بِجَانِبِ ٱلطُّورِ إِذْ نَادَيْنَا وَلَٰكِن رَّحْمَةً مِّن رَّبِّكَ لِتُنذِرَ قَوْمًا مَّآ أَتَىٰهُم مِّن نَّذِيرٍ مِّن قَبْلِكَ لَعَلَّهُمْ يَتَذَكَّرُونَ
অর্থঃ আমি যখন মূসাকে আওয়াজ দিয়েছিলাম, তখন আপনি তুর পর্বতের পার্শ্বে ছিলেন না। কিন্তু এটা আপনার পালনকর্তার রহমত স্বরূপ, যাতে আপনি এমন এক সম্প্রদায়কে ভীতি প্রদর্শন করেন, যাদের কাছে আপনার পূর্বে প্রদর্শনকারী আগমন করেনি, যাতে তারা স্মরণ রাখে।
আল্লাহর আরেকটি বিশেষ দয়া হল, তিনি আমাদের কল্যাণের জন্য পথপ্রদর্শক হিসাবে কিতাব নাযিল করেছেন, অাল্লাহ বলেন,
أَوَلَمْ يَكْفِهِمْ أَنَّآ أَنزَلْنَا عَلَيْكَ ٱلْكِتَٰبَ يُتْلَىٰ عَلَيْهِمْ إِنَّ فِى ذَٰلِكَ لَرَحْمَةً وَذِكْرَىٰ لِقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ
অর্থঃ এটাকি তাদের জন্যে যথেষ্ট নয় যে, আমি আপনার প্রতি কিতাব নাযিল করেছি, যা তাদের কাছে পাঠ করা হয়। এতে অবশ্যই বিশ্বাসী লোকদের জন্যে রহমত ও উপদেশ আছে।
আরেক আয়াতে আল্লাহ বলেন,
وَلَقَدْ جِئْنَٰهُم بِكِتَٰبٍ فَصَّلْنَٰهُ عَلَىٰ عِلْمٍ هُدًى وَرَحْمَةً لِّقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ
অর্থঃ আমি তাদের কাছে গ্রন্থ পৌছিয়েছি, যা আমি স্বীয় জ্ঞানে বিস্তারিত বর্ণনা করেছি, যা পথপ্রদর্শক এবং মুমিনদের জন্যে রহমত।
আরেক আয়াতে বলেন,
يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ قَدْ جَآءَتْكُم مَّوْعِظَةٌ مِّن رَّبِّكُمْ وَشِفَآءٌ لِّمَا فِى ٱلصُّدُورِ وَهُدًى وَرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِينَ
অর্থঃ হে মানবকুল, তোমাদের কাছে উপদেশবানী এসেছে তোমাদের পরওয়ারদেগারের পক্ষ থেকে এবং অন্তরের রোগের নিরাময়, হেদায়েত ও রহমত মুসলমানদের জন্য।
আরেক আয়াতে বলেন,
قُلْ بِفَضْلِ ٱللَّهِ وَبِرَحْمَتِهِۦ فَبِذَٰلِكَ فَلْيَفْرَحُوا۟ هُوَ خَيْرٌ مِّمَّا يَجْمَعُونَ
অর্থঃ বল, আল্লাহর দয়া ও মেহেরবাণীতে। সুতরাং এরই প্রতি তাদের সন্তুষ্ট থাকা উচিৎ। এটিই উত্তম সে সমুদয় থেকে যা সঞ্চয় করছ।
আর এজন্যই সাহাবা যামানা থেকে নিয়ে সালাফের আখেরী যামানা পর্যন্ত সবাই রহমত ও দয়ার গুণে গুণান্বিত ছিলেন, যাদের পরিচয় দিতে গিয়ে আল্লাহ বলেন,
أَشِدَّآءُ عَلَى ٱلْكُفَّارِ رُحَمَآءُ بَيْنَهُمْ تَرَىٰهُمْ رُكَّعًا سُجَّدًا يَبْتَغُونَ فَضْلًا مِّنَ ٱللَّهِ وَرِضْوَٰنًا سِيمَاهُمْ فِى وُجُوهِهِم مِّنْ أَثَرِ ٱلسُّجُودِ
অর্থঃ তাঁরা কাফেরদের প্রতি কঠোর, নিজেদের মধ্যে পরস্পর সহানুভূতিশীল। আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনায় আপনি তাদেরকে রুকু ও সেজদারত দেখবেন। তাদের মুখমন্ডলে রয়েছে সেজদার চিহ্ন ।
মুসলমানদের সর্বদায় দয়া ও রহমতের গুণে গুণান্বিত হতে হবে, মুসলমান একে অপরের সহমর্মিতায় এগিয়ে যেতে হবে, যেমনঃ রাসূল সঃ বলেন,
تَرَى الْمُؤْمِنِينَ فِي تَرَاحُمِهِمْ وَتَوَادِّهِمْ وَتَعَاطُفِهِمْ كَمَثَلِ الْجَسَدِ إِذَا اشْتَكَى عُضْوًا تَدَاعَى لَهُ سَائِرُ جَسَدِهِ بِالسَّهَرِ وَالْحُمَّى ”.
অর্থঃ পারস্পরিক দয়া, ভালবাসা ও সহানুভূতি প্রদর্শনে তুমি মু’মিনদের একটি দেহের মত দেখবে। যখন শরীরের একটি অঙ্গ রোগে আক্রান্ত হয়, তখন শরীরের সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ রাত জাগে এবং জ্বরে অংশ নেয়।
(সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৬০১১)
রহমত ও দয়া কেবল মানুষের সাথেই নয় বরং সমস্ত মাখলুকাতের সাথে দয়া প্রদর্শন করা, কেননা রাসূল সঃ বলেন,
الرَّاحِمُونَ يَرْحَمُهُمُ الرَّحْمَنُ ارْحَمُوا مَنْ فِي الأَرْضِ يَرْحَمْكُمْ مَنْ فِي السَّمَاءِ الرَّحِمُ شُجْنَةٌ مِنَ الرَّحْمَنِ فَمَنْ وَصَلَهَا وَصَلَهُ اللَّهُ وَمَنْ قَطَعَهَا قَطَعَهُ اللَّهُ
অর্থঃ আল্লাহ্ তা‘আলা দয়ালুদের উপর দয়া ও অনুগ্রহ করেন। যারা যমীনে বসবাস করছে তাদের প্রতি তোমরা দয়া কর, তাহলে যিনি আকাশে আছেন তিনি তোমাদের প্রতি দয়া করবেন। দয়া রাহমান হতে উদগত। যে লোক দয়ার সম্পর্ক বজায় রাখে আল্লাহ্ তা‘আলাও তার সাথে নিজ সম্পর্ক বজায় রাখেন। যে লোক দয়ার সম্পর্ক ছিন্ন করে, আল্লাহ্ তা‘আলাও তার সাথে দয়ার সম্পর্ক ছিন্ন করেন।
(জামে’ আত-তিরমিজি, হাদিস নং ১৯২৪)
মুসলিম সমাজের প্রত্যেক মানুষের সাথে রহমত ও দয়ার আচরন করতে হবে, সন্তান পিতার সাথে, স্বামী স্ত্রীর সাথে, মালিক তার অধীনস্থের সাথে৷
আল্লাহ মাতা-পিতা সম্পর্কে বলেন,
وَٱخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ ٱلذُّلِّ مِنَ ٱلرَّحْمَةِ وَقُل رَّبِّ ٱرْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِى صَغِيرًا
অর্থঃ তাদের সামনে ভালবাসার সাথে, নম্রভাবে মাথা নত করে দাও এবং দুআতে বলঃ হে পালনকর্তা, তাদের উভয়ের প্রতি রহম কর, যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন।
স্বামী স্ত্রী সম্পর্কে বলেন,
وَمِنْ ءَايَٰتِهِۦٓ أَنْ خَلَقَ لَكُم مِّنْ أَنفُسِكُمْ أَزْوَٰجًا لِّتَسْكُنُوٓا۟ إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُم مَّوَدَّةً وَرَحْمَةً إِنَّ فِى ذَٰلِكَ لَءَايَٰتٍ لِّقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ
অর্থঃ আল্লাহর আরেকটি নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্যে তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সংগিনীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাক, এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে।
হাদীস আছে,
جَاءَ أَعْرَابِيٌّ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ تُقَبِّلُونَ الصِّبْيَانَ فَمَا نُقَبِّلُهُمْ. فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ” أَوَ أَمْلِكُ لَكَ أَنْ نَزَعَ اللَّهُ مِنْ قَلْبِكَ الرَّحْمَةَ ”.
অর্থঃ এক বেদুঈন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট এসে বললো। আপনারা শিশুদের চুম্বন করেন, কিন্তু আমরা ওদের চুম্বন করি না। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আল্লাহ যদি তোমার হৃদয় হতে দয়া উঠিয়ে নেন, তবে তোমার উপর আমার কি কোন অধিকার আছে?
(সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৫৯৯৮)
শুধু মানুষের ক্ষেত্রেই নয় বরং চতুস্পদ জন্তুর ক্ষেত্রেও দয়ার আচরন করতে হবে, যেমন এক ব্যাভিচারিণী মহিলা পিপাসিত কুকুরকে পানি পান করিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করেছে, এবং এক লোক মুসলমানদের চলাচলের পথের কাটা সরিয়ে দেওয়ায় সে জান্নাতে প্রবেশ করেছে ৷
হে ঈমানদারগণ! রহমত, দয়া ও সহমর্মিতা প্রকাশের চমৎকার একটি উপমা হল, হাজীগণকে যারা রাস্তাঘাট বলে দিয়ে, বা পানি পান করিয়ে অথবা খাদ্য দিয়ে সহিযোগিতা করছে, বিশেষত যারা মা’যুর ও মহিলা এবং ছোট্ট বাচ্ছাদেরকে আরামের সাথে চলাচল ও থাকার জন্য সহযোগিতা করছে ৷
এবং সৌদীসরকারের অনেক বড় কৃতিত্ব যে তিনি আল্লাহর মেহমান হাজী সাহেবানদের সকল কাজ আরামদায়ক হওয়ার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করেছেন৷ এবং হাজী ও উমরাকারীদের সহজার্থে হারামাইনের সীমানাকে অনেক গুণে প্রশস্ত করেছেন, এবং সদা তাদের খিদমতে সরকার নিয়েজিত রয়েছেন৷
এই মহৎ কাজের সর্বপ্রথম উদ্যুক্তা হলেন, মুহতারম বাদশাহ আব্দুল আযীয রহঃ এবং তার পরে তার সৎ ও নিষ্ঠাবান সন্তানগণ, তারা হলেন, “সুঊদ, ফায়সাল, খালিদ, ফাহদ, আব্দুল্লাহ” আল্লাহ তাদেরকে জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থান দান করুন৷
বর্তমান সময়ে আমরা যারা এত উন্নতি ও সফলতা প্রত্যেক্ষ করছি, এবং যা দেখে মুসলমানদের অন্তর খুশীতে ভরে যায়, তার সবকিছুর অবদান হল, বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আযীযের, হে আল্লাহ আপনি তাঁকে সত্য ও কল্যাণের উপর অটল রাখুন এবং তাঁর সকল কাজে আপনি তাঁর সহযোগিতা করুন৷
এবং তার মন্ত্রীপরিষদ প্রধান মুহাম্মাদ বিন সালমান সহ সমস্ত দায়িত্বশীলদেরকে কল্যাণ ও কামিয়াবী, এবং জাযায়ে খাইর দান করুন৷
হে মুসলমান ভায়েরা! প্রত্যেকই নিজ আত্মাকে পরিশোধন করুন, এবং তাকওয়া অর্জন করুন, এবং সর্বদা যিকির আযকার, তাসবীহ তাহলীল ও কুরআন তিলাওয়াতে নিজেকে মগ্ন রাখুন,
কুরআন সম্পর্কে হাদীসে আছে, রাসূল সঃ বলেন
وَمَا اجْتَمَعَ قَوْمٌ فِي بَيْتٍ مِنْ بُيُوتِ اللَّهِ يَتْلُونَ كِتَابَ اللَّهِ وَيَتَدَارَسُونَهُ بَيْنَهُمْ إِلاَّ نَزَلَتْ عَلَيْهِمُ السَّكِينَةُ وَغَشِيَتْهُمُ الرَّحْمَةُ وَحَفَّتْهُمُ الْمَلاَئِكَةُ وَذَكَرَهُمُ اللَّهُ فِيمَنْ عِنْدَهُ
অর্থঃ যখন কোন সম্প্রদায় আল্লাহর গৃহসমূহের কোন একটি গৃহে একত্রিত হয়ে আল্লাহর কিতাব পাঠ করে এবং একে অপরের সাথে মিলে (কুরআন) অধ্যয়নে লিপ্ত থাকে তখন তাদের উপর শন্তিধারা অবতীর্ণ হয়। রহ্মাত তাদেরকে আচ্ছন্ন করে ফেলে এবং ফেরেশ্তাগণ তাদেরকে পরিবেষ্টন করে রাখেন। আর আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নিকটবর্তীদের (ফেরেশ্তাগণের) মধ্যে তাদের কথা আলোচনা করেন।
সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৬৭৪৬
কুরআন সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَإِذَا قُرِئَ ٱلْقُرْءَانُ فَٱسْتَمِعُوا۟ لَهُۥ وَأَنصِتُوا۟ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ
অর্থঃ আর যখন কোরআন পাঠ করা হয়, তখন তাতে কান লাগিয়ে রাখ এবং নিশ্চুপ থাক যাতে তোমাদের উপর রহমত হয়।
আরেক আয়াতে আল্লাহ বলেন,
وَهَٰذَا كِتَٰبٌ أَنزَلْنَٰهُ مُبَارَكٌ فَٱتَّبِعُوهُ وَٱتَّقُوا۟ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ
অর্থঃ এটি এমন একটি গ্রন্থ, যা আমি অবতীর্ণ করেছি, খুব মঙ্গলময়, অতএব, এর অনুসরণ কর এবং ভয় কর-যাতে তোমরা করুণাপ্রাপ্ত হও।
আরেক আয়াতে আছে,
أَمَّنْ هُوَ قَٰنِتٌ ءَانَآءَ ٱلَّيْلِ سَاجِدًا وَقَآئِمًا يَحْذَرُ ٱلْءَاخِرَةَ وَيَرْجُوا۟ رَحْمَةَ رَبِّهِۦ قُلْ هَلْ يَسْتَوِى ٱلَّذِينَ يَعْلَمُونَ وَٱلَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ إِنَّمَا يَتَذَكَّرُ أُو۟لُوا۟ ٱلْأَلْبَٰبِ
অর্থঃ যে ব্যক্তি রাত্রিকালে সেজদার মাধ্যমে অথবা দাঁড়িয়ে এবাদত করে, পরকালের আশংকা রাখে এবং তার পালনকর্তার রহমত প্রত্যাশা করে, সে কি তার সমান, যে এরূপ করে না; বলুন, যারা জানে এবং যারা জানে না; তারা কি সমান হতে পারে? চিন্তা-ভাবনা কেবল তারাই করে, যারা বুদ্ধিমান।
হে ঈমানদারগণ! আল্লাহর রহমত পেতে হলে, আল্লাহর বান্দাদের প্রতি ইহসান করতে হবে,
আল্লাহ বলেন,
إِنَّ رَحْمَتَ ٱللَّهِ قَرِيبٌ مِّنَ ٱلْمُحْسِنِينَ
অর্থঃ নিশ্চয় আল্লাহর করুণা সৎকর্মশীলদের নিকটবর্তী।
আরেক আয়াতে আছে,
نُصِيبُ بِرَحْمَتِنَا مَن نَّشَآءُ وَلَا نُضِيعُ أَجْرَ ٱلْمُحْسِنِينَ
অর্থঃ আমি স্বীয় রহমত যাকে ইচ্ছা পৌছে দেই এবং আমি পূণ্যবানদের প্রতিদান বিনষ্ট করি না।
আল্লাহর রহমত পাওয়ার আরেকটি মাধ্যম হল, দুই ঝগড়াকারীর মাঝে মীমাংসা করে দেওয়া,
আল্লাহ বলেন,
إِنَّمَا ٱلْمُؤْمِنُونَ إِخْوَةٌ فَأَصْلِحُوا۟ بَيْنَ أَخَوَيْكُمْ وَٱتَّقُوا۟ ٱللَّهَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ
অর্থঃ মুমিনরা তো পরস্পর ভাই-ভাই। অতএব, তোমরা তোমাদের দুই ভাইয়ের মধ্যে মীমাংসা করবে এবং আল্লাহকে ভয় করবে-যাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হও।
আল্লাহর রহমত অবতীর্ণ হওয়ার আরেকটি মাধ্যম হল, সকল কাজে আল্লাহ ও রাসূল সঃ এর আনুগত্যশীল হওয়া, আল্লাহ বলেন,
وَأَطِيعُوا۟ ٱللَّهَ وَٱلرَّسُولَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ
অর্থঃ আর তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহ ও রসূলের, যাতে তোমাদের উপর রহমত করা হয়।
আল্লাহর রহমত পাওয়ার আরেকটি মাধ্যম হল বিপদ-আপদে ধৈর্য ধারণ করা, আল্লাহ বলেন,
وَبَشِّرِ ٱلصَّٰبِرِينَ، ٱلَّذِينَ إِذَآ أَصَٰبَتْهُم مُّصِيبَةٌ قَالُوٓا۟ إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّآ إِلَيْهِ رَٰجِعُونَ، أُو۟لَٰٓئِكَ عَلَيْهِمْ صَلَوَٰتٌ مِّن رَّبِّهِمْ وَرَحْمَةٌ وَأُو۟لَٰٓئِكَ هُمُ ٱلْمُهْتَدُونَ
অর্থ, সুসংবাদ দাও সবরকারীদের, যখন তারা বিপদে পতিত হয়, তখন বলে, নিশ্চয় আমরা সবাই আল্লাহর জন্য এবং আমরা সবাই তাঁরই সান্নিধ্যে ফিরে যাবো, তারা সে সমস্ত লোক, যাদের প্রতি আল্লাহর অফুরন্ত অনুগ্রহ ও রহমত রয়েছে এবং এসব লোকই হেদায়েত প্রাপ্ত।
আর কিছু কাজ আছে যে গুলো করলে আল্লাহর রহমত লাভ করা যাবে, আল্লাহ বলেন,
وَٱلْمُؤْمِنُونَ وَٱلْمُؤْمِنَٰتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَآءُ بَعْضٍ يَأْمُرُونَ بِٱلْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ ٱلْمُنكَرِ وَيُقِيمُونَ ٱلصَّلَوٰةَ وَيُؤْتُونَ ٱلزَّكَوٰةَ وَيُطِيعُونَ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥٓ أُو۟لَٰٓئِكَ سَيَرْحَمُهُمُ ٱللَّهُ إِنَّ ٱللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ
অর্থঃ আর ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারী একে অপরের সহায়ক। তারা ভাল কথার শিক্ষা দেয় এবং মন্দ থেকে বিরত রাখে। নামায প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তাঁর রসূলের নির্দেশ অনুযায়ী জীবন যাপন করে। এদেরই উপর আল্লাহ তা’আলা দয়া করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশীল, সুকৌশলী।
আরেক আয়াতে আল্লাহ বলেন,
وَٱكْتُبْ لَنَا فِى هَٰذِهِ ٱلدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِى ٱلْءَاخِرَةِ إِنَّا هُدْنَآ إِلَيْكَ قَالَ عَذَابِىٓ أُصِيبُ بِهِۦ مَنْ أَشَآءُ وَرَحْمَتِى وَسِعَتْ كُلَّ شَىْءٍ فَسَأَكْتُبُهَا لِلَّذِينَ يَتَّقُونَ وَيُؤْتُونَ ٱلزَّكَوٰةَ وَٱلَّذِينَ هُم بِـَٔايَٰتِنَا يُؤْمِنُونَ
অর্থঃ আর পৃথিবীতে এবং আখেরাতে আমাদের জন্য কল্যাণ লিখে দাও। আমরা তোমার দিকে প্রত্যাবর্তন করছি। আল্লাহ তা’আলা বললেন, আমার আযাব তারই উপর পরিব্যাপ্ত। সুতরাং তা তাদের জন্য লিখে দেব যারা ভয় রাখে, যাকাত দান করে এবং যারা আমার আয়তসমুহের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে।
আরেক আয়াতে আছে,
ٱلَّذِينَ يَتَّبِعُونَ ٱلرَّسُولَ ٱلنَّبِىَّ ٱلْأُمِّىَّ ٱلَّذِى يَجِدُونَهُۥ مَكْتُوبًا عِندَهُمْ فِى ٱلتَّوْرَىٰةِ وَٱلْإِنجِيلِ يَأْمُرُهُم بِٱلْمَعْرُوفِ وَيَنْهَىٰهُمْ عَنِ ٱلْمُنكَرِ وَيُحِلُّ لَهُمُ ٱلطَّيِّبَٰتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيْهِمُ ٱلْخَبَٰٓئِثَ وَيَضَعُ عَنْهُمْ إِصْرَهُمْ وَٱلْأَغْلَٰلَ ٱلَّتِى كَانَتْ عَلَيْهِمْ فَٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ بِهِۦ وَعَزَّرُوهُ وَنَصَرُوهُ وَٱتَّبَعُوا۟ ٱلنُّورَ ٱلَّذِىٓ أُنزِلَ مَعَهُۥٓ أُو۟لَٰٓئِكَ هُمُ ٱلْمُفْلِحُونَ
অর্থঃ সেসমস্ত লোক, যারা আনুগত্য অবলম্বন করে এ রসূলের, যিনি উম্মী নবী, যাঁর সম্পর্কে তারা নিজেদের কাছে রক্ষিত তওরাত ও ইঞ্জিলে লেখা দেখতে পায়, তিনি তাদেরকে নির্দেশ দেন সৎকর্মের, বারণ করেন অসৎকর্ম থেকে; তাদের জন্য যাবতীয় পবিত্র বস্তু হালাল ঘোষনা করেন ও নিষিদ্ধ করেন হারাম বস্তুসমূহ এবং তাদের উপর থেকে সে বোঝা নামিয়ে দেন এবং বন্দীত্ব অপসারণ করেন যা তাদের উপর বিদ্যমান ছিল। সুতরাং যেসব লোক তাঁর উপর ঈমান এনেছে, তাঁর সাহচর্য অবলম্বন করেছে, তাঁকে সাহায্য করেছে এবং সে নূরের অনুসরণ করেছে যা তার সাথে অবতীর্ণ করা হয়েছে, শুধুমাত্র তারাই নিজেদের উদ্দেশ্য সফলতা অর্জন করতে পেরেছে।
আল্লাহর রহমত লাভের আরেকটি মাধ্যম হল বেশী বেশী ইস্তিগফাক পড়া, আল্লাহ বলেন,
لَوْلَا تَسْتَغْفِرُونَ ٱللَّهَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ
অর্থঃ তোমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছ না কেন? যদি করো তাহলে তোমরা দয়াপ্রাপ্ত হবে।
হে মুসলিম! আপনার যত গোনাহই থাকুকনা কেন আল্লাহর রহমত থেকে কখনও নিরাশ হবেন না, আল্লাহ তাআলা বান্দার জন্য দিবারাত্রি তওবার দরজা খুলে রেখেছেন, আল্লাহ বলেন,
قُلْ يَٰعِبَادِىَ ٱلَّذِينَ أَسْرَفُوا۟ عَلَىٰٓ أَنفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوا۟ مِن رَّحْمَةِ ٱللَّهِ إِنَّ ٱللَّهَ يَغْفِرُ ٱلذُّنُوبَ جَمِيعًا إِنَّهُۥ هُوَ ٱلْغَفُورُ ٱلرَّحِيمُ
অর্থঃ বলুন, হে আমার বান্দাগণ যারা নিজেদের উপর যুলুম করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গোনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
আরেক আয়াতে আল্লাহ বলেন,
قَالَ وَمَن يَقْنَطُ مِن رَّحْمَةِ رَبِّهِۦٓ إِلَّا ٱلضَّآلُّونَ
অর্থঃ তিনি বললেনঃ পালনকর্তার রহমত থেকে পথভ্রষ্টরা ছাড়া কে নিরাশ হয় ?
আল্লাহর রহমত পাওয়ার জন্য তার কাছে বেশী বেশী রহমতের জন্য দুআ করতে হবে৷
হে আল্লাহর ঘরের মেহমান হাজী সাহেবান!
আপনারা এখন পবিত্র ভূমিতে রয়েছেন, এই স্থানে আল্লাহ সমস্ত দুআ কবুল করেন, এবং সর্বদা অবিরাম আল্লাহর রহমত এই স্থানে অবতীর্ণ হতে থাকে, রাসূল সঃ বলেন,
مَا مِنْ يَوْمٍ أَكْثَرَ مِنْ أَنْ يُعْتِقَ اللَّهُ فِيهِ عَبْدًا مِنَ النَّارِ مِنْ يَوْمِ عَرَفَةَ وَإِنَّهُ لَيَدْنُو ثُمَّ يُبَاهِي بِهِمُ الْمَلاَئِكَةَ فَيَقُولُ مَا أَرَادَ هَؤُلاَءِ ”.
অর্থঃ ‘আরাফাহ্ দিবসের তুলনায় এমন কোন দিন নেই- যেদিন আল্লাহ তা’আলা সর্বাধিক লোককে দোযখের আগুন থেকে মুক্তি দান করেন। আল্লাহ তা’আলা নিকটবর্তী হন, অতঃপর বান্দাদের সম্পর্কে মালায়িকার সামনে গৌরব করেন এবং বলেনঃ তারা কী উদ্দেশে সমবেত হয়েছে৷
(সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৩১৭৯)
সুতরাং এই পবিত্র স্থানে সবাই একে অপরের জন্য, নিজ পরিবারের জন্য, এবং ব্যপকভাবে সমস্ত মুসলমানদের দ্বীন ও দুনিয়ার সফলতার জন্য দুআ করুন৷
আজকের এই দিনে অত্র পবিত্র স্থান আরাফায় রাসূল সঃ প্রথমে যহোর ও আসরের নামায এক সাথে পর পর দুই রাকাত করে কসর আদায় করেছেন, অতঃপর নিজ উটনীর উপর আরোহন করে ঐতিহাসিক খুৎবাহ প্রদান করে সূর্য অস্ত যাওয়ার আগে আগে মুযদালিফার দিকে রওয়ান করেন, সেই ঐতিহাসিক খুৎবাহতে রাসূল সঃ বলেন,
أَيُّهَا النَّاسُ عَلَيْكُمْ بِالسَّكِينَةِ فَإِنَّ الْبِرَّ لَيْسَ بِالإِيضَاعِ أَوْضَعُوا أَسْرَعُوا {خِلاَلَكُمْ} مِنْ التَّخَلُّلِ بَيْنَكُمْ {وَفَجَّرْنَا خِلاَلَهُمَا} بَيْنَهُمَا
হে লোক সকল! তোমরা ধীরস্থিরতা অবলম্বন কর। কেননা, উট দ্রুত হাকানোর মধ্যে কোন কল্যাণ নেই।
(সহিহ বুখারী, হাদিস নং ১৬৭১)
অতঃপর মুযদালিফায় পৌঁছে আযান ইকামাত দিয়ে মাগরীবের তিন রাকাত নামায আদায় করেন, অতঃপর মাগরীবের নামায আদায়ের সাথে সাথে এশার নামাযের আযান ও ইকামাত দিয়ে এশার জন্য চার রাকাতের স্থলে দুই রাকাত কসর আদায় করেন৷
অতঃপর মুযদালিফাতেই রাত্রি যাপন করেন, এবং ফজরের নামায প্রথম ওয়াক্তেই দুই রাকাত আদায় করেন, এবং পূর্ণ সকাল হওয়া পর্যন্ত দুআ করতে থাকেন, অতঃপর সকাল হলে মিনার দিকে রওয়ানা করেন, এবং জামারায়ে আকাবাতে সূর্য উদয়ের পর পর সাতটি কংকর নিক্ষেপ করেন, এবং তার হাদীকে যবেহ করেন, অতঃপর মাথা মুন্ডন করেন, অতঃপর বাইতুল্লাহতে “তাওয়াফে ইফাজা” করেন, এবং আইয়ামে তাশরীকের বাকী দিন গুলো মিনাতেই অবস্থান করেন, এবং “জামরায়ে সালাসা” তথা তিন জামরায় তিন দিন পর্যন্ত সূর্য হেলে পড়ার পর পাথর নিক্ষেপ করেন, এবং মাযুর ব্যক্তিদেরকে মিনা ত্যগ করার সুযোগ দেন৷
আসল সুন্নাত হল, ১৩ তারিখ পর্যন্ত মিনাতেই অবস্থান করা, এবং এটাই উত্তম, তবে চলে যাওয়াও জায়েয৷
হে আল্লাহ! আপনি হাজী সাহেবানদের উপর রহম করুন, তাদের হাজ্জকে কবুল করুন, তাদের সমস্ত কাজ সহজ করে দিন, এবং তাদেরকে সুস্থতার সাথে ও সফলতার সাথে তাদের দেশে ফিরে যাওয়ার তাওফীক দান করুন, তাদের সমস্ত গোনাহ মাফ করে দেন, তাদের সকল প্রয়োজন মিটিয়ে দেন৷
হে আল্লাহ! আপনি সকল মুসলিম ও মুমিন নর-নারীর উপর রহম করুন, তাদেরকে ক্ষমা করুন, তাদের পরস্পরে ভ্রাতৃত্ব স্থাপন করে দিন, পরস্পরের মাঝে রহম, দয়া সহমর্মিতার পরিবেশ কায়েম করে দিন, তাদের অন্তরকে পবিত্র করে দিন, মুসলমানদের রিজিকে প্রশস্ততা দান করুন, তাদের মধ্যে থেকে অসুস্থদেরকে সুস্থতা দান করুন, তাদের গোনাহ মাফ করুন, যারা মৃত্যুবরণ করেছে তাদেরকে ক্ষমা করে দিন, দরিদ্রদেরকে ধন-সম্পদ দিয়ে স্বাবলম্বী করুন, ঋণগ্রস্থদের ঋণ শোধ করার তাওফীক দান করুন, এবং মুসলিমদেশ গুলোতে কল্যাণ ও সফলতা দান করুন৷
(سُبۡحٰنَ رَبِّکَ رَبِّ الۡعِزَّۃِ عَمَّا یَصِفُوۡنَ، وَ سَلٰمٌ عَلَی الۡمُرۡسَلِیۡنَ، وَ الۡحَمۡدُ لِلّٰہِ رَبِّ الۡعٰلَمِیۡنَ.
وصل اللهم وسلم وبارك علي عبدك ورسولك محمد وعلي آله وصحبه أجمعين.