প্রশ্ন
আমার একজন খৃস্টান বন্ধু আছে। বিভিন্ন সময় সে আমাকে অনেক উপকার করে থাকে। তার সাথে এ বন্ধুত্ব আমি সবসময় বজায় রাখতে চাই। এতে কি ইসলামের দৃষ্টিতে কোনো অসুবিধা আছে? দলিল সহকারে জানালে উপকৃত হতাম।
উত্তর
بسم الله الرحمٰن الرحيم. حامدا و مصليا و مسلما
অমুসলিমদের সাথে বন্ধুত্ব সাধারণত ২ টি উদ্দেশ্যে হয়।
১। অমুসলিমদের সাথে বন্ধুত্ব সৃষ্টি করে দাওয়াতি কাজের মাধ্যমে তাদেরকে ইসলামের ছায়াতলে নিয়ে আসা।
২। এ ছাড়া অন্য যে কোনো উদ্দেশ্যে অথবা কোনো উদ্দেশ্যে ছাড়াই বন্ধুত্ব সৃষ্টি করা।
১ম প্রকারটি সম্পূর্ণ জায়েয এবং মহা উত্তম একটি কাজ। একজন অমুসলিমকে দাওয়াতি কাজের মাধ্যমে ইসলাম গ্রহণ করানো, এর চেয়ে উত্তম কোনো কাজ হতে পারে না।
পক্ষান্তরে ২য় প্রকারটি সম্পূর্ণ হারাম।
প্রশ্নে উল্লেখিত বর্ণনা অনুযায়ী আপনার বন্ধুত্বটি ২য় প্রকারের অন্তর্ভুক্ত বলেই মনে হচ্ছে। তাই আপনার কর্তব্য হবে দ্রুত এ বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিন্ন করা।
তবে আপনি যদি উদ্দেশ্য পরিবর্তন করতে পারেন তবে এই বন্ধুত্ব আপনার জন্য শুধু জায়েযই হবে না, বরং তা আপনার জন্য নাজাতের উসিলা হতে পারে।
অমুসলিমদের সাথে বন্ধুত্ব হারাম হওয়া সম্পর্কে নিম্নে কিছু দলিল উল্লেখ করা হলো।
পবিত্র কুরআন মাজিদে আল্লাহ সুবহানাহু ও তাআলা বলেন,
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا لَا تَتَّخِذُوا الْكٰفِرِیْنَ اَوْلِیَآءَ مِنْ دُوْنِ الْمُؤْمِنِیْنَ ؕ اَتُرِیْدُوْنَ اَنْ تَجْعَلُوْا لِلّٰهِ عَلَیْكُمْ سُلْطٰنًا مُّبِیْنًا
অর্থ: ‘হে মুমিনগণ, তোমরা মুমিন ছাড়া কাফিরদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ কর না। তোমরা কি আল্লাহর জন্য তোমাদের বিপক্ষে কোনো স্পষ্ট দলীল সাব্যস্ত করতে চাও?’ [সূরা নিসা, আয়াত: ১৪৪]
অন্যত্র আল্লাহ সুবহানাহু ও তাআলা বলেন,
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا لَا تَتَّخِذُوا الْیَهُوْدَ وَ النَّصٰرٰۤی اَوْلِیَآءَ ؔۘ بَعْضُهُمْ اَوْلِیَآءُ بَعْضٍ ؕ وَ مَنْ یَّتَوَلَّهُمْ مِّنْكُمْ فَاِنَّهٗ مِنْهُمْ ؕ اِنَّ اللّٰهَ لَا یَهْدِی الْقَوْمَ الظّٰلِمِیْنَ
অর্থ: ‘হেমুমিনগণ! তোমরা ইহুদী ও নাসারাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ কর না, তারা পরস্পর পরস্পরের বন্ধু। আর তোমাদের মধ্যে যে তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করবে সে নিশ্চয় তাদেরই একজন হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবে। নিশ্চয় আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে হেদায়াত দেন না।’ [সূরা মায়িদা, আয়াত: ৫১]
হাদিস শরিফে এসেছে, আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
‘রাসুলুল্লাহ (সা.) বদর অভিমুখে রওয়ানা হলেন। যখন তিনি ‘হাররাতুল ওবারা’ নামক স্থানে পৌঁছলেন, তখন এমন এক ব্যক্তি এসে তার সাথে সাক্ষাৎ করলো, যে আগে থেকে তার শৌর্য-বীর্য ও সাহসিকতার জন্য মশহুর ছিল। রাসূল (সা.) সাহাবিগণ তাকে দেখতে পেয়ে অত্যন্ত আনন্দিত হলেন। সে যখন সাক্ষাৎ করল, তখন রাসূল (সা.) বললে, আমি আপনার সঙ্গে যেতে এবং আপনার সঙ্গে (গনীমত) পেতে এসেছি। রাসূল (সা.) তাকে বললেন: তুমি কি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান রাখ? সে বললে: না। রাসূল (সা.) বললেন: তাহলে তুমি ফিরে যাও, আমি কোনো মুশরিকের সাহায্য গ্রহণ করব না।’ [সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৮১৭]
এছাড়াও এ ব্যাপারে আরো অসংখ্য দলিল রয়েছে।
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم