প্রশ্ন
আমি আপনাদের কাছে জানতে চাচ্ছি, আমাদের সন্তানদেরকে কিভাবে গঠন করলে তারা আমাদের জন্য চক্ষু শীতলকারী হবে?
উত্তর
بسم الله الرحمٰن الرحيم. حامدا و مصليا و مسلما
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে দোয়া শিখিয়ে দিয়েছেন,
رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا
‘হে আমাদের রব, আপনি আমাদেরকে এমন স্ত্রী ও সন্তানাদি দান করুন যারা আমাদের চক্ষু শীতল করবে। আর আপনি আমাদেরকে মুত্তাকীদের নেতা বানিয়ে দিন।’ [সূরা ফুরকান, আয়াত: ৭৪]
পরিবারের কর্তা পরিবারের সদস্যদের এমনভাবে গড়ে তুলবেন যেন তারা সৎ হয়, সমাজে অনুকরণীয় হয়। এর জন্য জরুরি হল, পরিবারের সদস্যদেরকে ইসলামি শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলা। পরিবারের কর্তাকে এ ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। কোনো সদস্য যদি ইসলামি শিক্ষা গ্রহণ করতে না চায় তাহলে তাকে বুঝাতে হবে। আল্লাহ তাআলা এ ব্যাপারে কী হুশিয়ারি বাণী দিয়েছেন তা স্মরণ করিয়ে দিতে হবে। মহা প্লাবনের সময় নূহ (আ.)-এর এক পুত্র ঈমান না আনার কারণে যখন ডুবে যাচ্ছিল তখন তিনি তাকে উদ্ধারের আকুতি জানিয়ে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করেছিলেন। আল্লাহ তাআলা তার জবাবে বলেছিলেন,
قَالَ يَانُوحُ إِنَّهُ لَيْسَ مِنْ أَهْلِكَ إِنَّهُ عَمَلٌ غَيْرُ صَالِحٍ فَلَا تَسْأَلْنِ مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ إِنِّي أَعِظُكَ أَنْ تَكُونَ مِنَ الْجَاهِلِينَ
‘তিনি বললেন, ‘হে নূহ, সে নিশ্চয় তোমার পরিবারভুক্ত নয়। সে অবশ্যই অসৎ কর্মপরায়ণ। সুতরাং যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই, আমার কাছে তা চেয়ো না। আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি, যেন মূর্খদের অন্তর্ভুক্ত না হও।’ [সূরা হূদ, আয়াত: ৪৬]
সুতরাং প্রথমে আমাকে ইসলামি শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। তারপর আমার পরিবারের সদস্যদেরকে ইসলামি শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে। তাহলে সেই পরিবার জান্নাতি পরিবারে রূপান্তরিত হবে। সম্পদ হিসেবে গণ্য হবে। আর যদি পরিবারকে ইসলামের পথে পরিচালিত করতে না পারি তাহলে আল্লাহর ধ্বংস আমাদের জন্য অনিবার্য। কুরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে,
فَتَرَبَّصُوا حَتَّىٰ يَأْتِيَ اللَّهُ بِأَمْرِهِ ۗ وَاللَّهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْفَاسِقِينَ
‘তবে তোমরা অপেক্ষা কর আল্লাহ তাঁর নির্দেশ নিয়ে আসা পর্যন্ত। আর আল্লাহ ফাসিক সম্প্রদায়কে হিদায়াত করেন না।’ [সূরা তাওবা, আয়াত: ২৪]
সর্বোপরি ঘরে বাইরে সর্বক্ষেত্রে উত্তম চরিত্রের অধিকারী হতে হবে। ঘরের লোকদের সাথে অত্যাধিক কঠোরতা করা যাবে না। পরিবারের সদস্যদের কাছেও উত্তম চরিত্রবান হতে হবে। হাদিস শরিফে এসেছে রাসূল (সা.) বলেছেন,
خَيْرُكُمْ خَيْرُكُمْ لأَهْلِهِ وَأَنَا خَيْرُكُمْ لأَهْلِي
‘তোমাদের মাঝে সে-ই ভাল যে তার পরিবারের নিকট ভাল। আর আমি আমার পরিবারের নিকট তোমাদের চাইতে উত্তম।’ [সুনানে তিরমিযী, হাদিস: ৩৮৯৫]
পরিবারের কেউ কোনো ভুল করলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখতে হবে। কুরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে,
وَإِنْ تَعْفُوا وَتَصْفَحُوا وَتَغْفِرُوا فَإِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَحِيمٌ
‘আর যদি তোমরা মার্জনা কর, এড়িয়ে যাও এবং মাফ করে দাও তবে নিশ্চয় আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, অসীম দয়ালু।’ [সূরা তাগাবুন, আয়াত: ১৪]
তাহলেই আশা করা যায় সবাই মিলে সুন্দর ও সুখী একটি পরিবার গঠন করতে পারবে।
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم