প্রশ্ন
আমরা পিতা–মাতারা ইসলামি অনুশাসন অনুযায়ী পরিবারকে পরিচালনা করার চেষ্টা করি। কিন্তু বর্তমান অসুস্থ সংস্কৃতির প্রভাবে তা সফল হয়ে উঠে না। এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণের উপায় কী?
উত্তর
بسم الله الرحمٰن الرحيم. حامدا و مصليا و مسلما
পৃথিবীর সূচনালগ্নে আল্লাহ তাআলা আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.)-এর মাধ্যমে একটি পরিবার গঠন করে দুনিয়াতে প্রেরণ করেছিলেন। কুরআন মাজিদে এরই প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে,
يَاأَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُمْ مِنْ نَفْسٍ وَاحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالًا كَثِيرًا وَنِسَاءً
‘হে মানবমণ্ডলী! তোমরা তোমাদের রবকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে একই ব্যক্তি হতে সৃষ্টি করেছেন এবং তা হতে তদীয় সহধর্মিনী সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের উভয় হতে বহু নর ও নারী ছড়িয়ে দিয়েছেন।’ [সূরা নিসা, আয়াত: ১]
পরিবারের মাধ্যমেই দুনিয়ার সূচনা হয়েছে। একারণে মানুষ পরিবার ছাড়া বাঁচতে পারে না। পরিবারের সদস্যদের মাঝে ইসলামি শিক্ষার প্রসার ঘটাতে না পারলে এই পরিবারই কিন্তু আমাদের শত্রুতে পরিণত হবে। বর্তমানে অনেক অভিভাবক আমাদের কাছে অভিযোগ করে যে তাদের সন্তান তাদের কথা শুনে না। স্বামী অভিযোগ করে যে স্ত্রী তার অবাধ্য। এ সমস্যাগুলো মূলত ইসলামি শিক্ষার প্রসার না থাকার কারণে হয়ে থাকে। আদম (আ.)-কে তার পরিবারে নবী করে পাঠানো হয়েছিল যেন তিনি তাদের মাঝে দ্বীনের প্রসার ঘটাতে পারেন।
একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, সন্তান-সন্ততি আমাদের সম্পদ। কুরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে,
الْمَالُ وَالْبَنُونَ زِينَةُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا
‘সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দুনিয়ার জীবনের শোভা।’ [সূরা কাহফ, আয়াত: ৪৬]
দুনিয়ার এই শোভাকে যদি আমরা ইসলাম মোতাবেক পরিচালিত করতে ব্যর্থ হই, তাহলে এরা আমাদের শত্রুতে পরিণত হবে। একটি সহিহ হাদিসে এসেছে রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন,
كُلُّ مَوْلُودٍ يُولَدُ عَلَى الْفِطْرَةِ فَأَبَوَاهُ يُهَوِّدَانِهِ أَوْ يُنَصِّرَانِهِ أَوْ يُمَجِّسَانِهِ
‘প্রত্যেক নবজাতক ফিতরাতের (ইসলামের) উপর জন্মগ্রহণ করে। অতঃপর তার মাতা-পিতা তাকে ইয়াহূদী, নাসারা বা অগ্নি উপাসক করে।’ [সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৩৮৫; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৬৫৮]
বর্তমান সমাজে সন্তানদের নৈতিক চরিত্র খারাপ হওয়ার পিছনে মূলত পরিবারই দায়ী। একটি ছেলে বা মেয়ে যখন প্রাপ্ত বয়স্ক হয় তখন পরিবার থেকে নৈতিক শিক্ষা না পেলে অনৈতিক প্রেমে জড়িয়ে যায়। এমনকি অনেক সময় বাবা-মাকেও অনৈতিক প্রেমে জড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। এটি শরিয়তে সুস্পষ্টরূপে হারাম। এমনকি এমন নারীদের বিয়ে করতেও শরিয়তে নিষেধ করা হয়েছে। কুরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে,
فَانكِحُوهُنَّ بِإِذْنِ أهْلِهِنَّ وَآتُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ مُحْصَنَاتٍ غَيْرَ مُسَافِحَاتٍ وَلا مُتَّخِذَاتِ أَخْدَانٍ
‘সুতরাং তোমরা তাদেরকে তাদের মালিকদের অনুমতিক্রমে বিবাহ কর এবং ন্যায়সঙ্গতভাবে তাদেরকে তাদের মোহর দিয়ে দাও এমতাবস্থায় যে, তারা হবে সতী-সাধ্বী, ব্যভিচারিণী কিংবা গোপন যৌনসঙ্গী গ্রহণকারিণী নয়।’ [সূরা নিসা, আয়াত: ২৫]
সন্তান কখনো খারাপ চরিত্র নিয়ে জন্মগ্রহণ করে না। পরিবার থেকে যথাযথ শিক্ষা না পেলে তারা অনৈতিক কাজে জড়িয়ে যায়। তখন পারিবারিক বন্ধন আর ঠিক থাকে না। সন্তান পিতা-মাতাকে হত্যা করে। ভাই ভাইকে হত্যা করে। ইসলামি শিক্ষা না থাকার কারণে এমনটি হয়ে থাকে। একে অপরের শত্রু হয়ে যায়।
বর্তমানে প্রত্যেকের হাতে হাতে অ্যান্ড্রয়েড সেট। ছেলে-মেয়ে অ্যান্ড্রয়েড সেট দিয়ে কী করছে, বাবা-মা তা খবর রাখেন না। সে কী অ্যান্ড্রয়েড সেট দিয়ে ভালো কাজ করছে, নাকি অশ্লীলতায় জড়িয়ে পড়ছে? বাবা-মা যদি এসকল ক্ষেত্রে খবর রাখতে ব্যর্থ হন তাহলে সেই সন্তানগুলো আর সম্পদ হয় না। বরং শত্রু হয়ে যায়। তাই আমরা বাবা-মাদের কাছে আবেদন করব, আপনারা সন্তানকে ইসলামি শিক্ষায় শিক্ষিত করুন। তারা কী করছে, কাদের সাথে মিশছে তা খবর নিন। অন্যথায় এই সন্তানই আপনার বিরুদ্ধে আল্লাহর কাছে অভিযোগ দিবে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে আমল করার তাওফিক দান করুন।
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم