প্রশ্ন
একটি জান্নাতি পরিবার গঠনের জন্য আমরা কী কৌশল অবলম্বন করতে পারি?
উত্তর
بسم الله الرحمٰن الرحيم. حامدا و مصليا و مسلما
ইসলামি শরিয়তে আদর্শ পরিবার গঠনের গুরুত্ব অপরিসীম। এ কারণেই আদম (আ.)-এর সাথে হাওয়া (আ.)-কেও দুনিয়াতে পাঠানো হয়েছিল, যেন তারা একটি সুখী ও সুন্দর পরিবার গঠন করতে পারেন। জান্নাতি পরিবার গঠনের জোর তাকিদ দিয়ে কুরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে,
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قُوا أَنْفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا
‘হে মুমিনগণ! তোমরা তোমাদের নিজেদেরকে আর তোমাদের পরিবার-পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা কর।’ [সূরা তাহরিম, আয়াত: ৬]
অর্থাৎ, জাহান্নাম আবশ্যক করে এমন সকল কর্মকান্ড থেকে পরিবারকে রক্ষা করতে হবে। তাহলেই সেটি একটি জান্নাতি পরিবাররূপে গড়ে উঠবে। জান্নাতি পরিবার গঠনের কৌশল সম্পর্কে আরেকটি আয়াতে ইরশাদ হয়েছে,
وَأْمُرْ أَهْلَكَ بِالصَّلَاةِ وَاصْطَبِرْ عَلَيْهَا
‘আর তোমার পরিবার-পরিজনকে সালাত আদায়ের আদেশ দাও এবং নিজেও তার উপর অবিচল থাক।’ [সূরা ত্বহা, আয়াত: ১৩২]
পরিবারের সকল সদস্যকে নিয়েই জান্নাতি পরিবেশ কায়েম করতে হবে। তবে এ কথা ভুলে গেলে চলবে না যে, এই পরিবার কখনো জাহান্নামে যাওয়ার কারণ হয়ে যায়। তাই আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সতর্ক করে দিয়ে ঘোষণা করেন,
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّ مِنْ أَزْوَاجِكُمْ وَأَوْلَادِكُمْ عَدُوًّا لَكُمْ فَاحْذَرُوهُمْ وَإِنْ تَعْفُوا وَتَصْفَحُوا وَتَغْفِرُوا فَإِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَحِيمٌ
‘হে মুমিনগণ, তোমাদের স্বামী-স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততিদের কেউ কেউ তোমাদের দুশমন। অতএব তোমরা তাদের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন কর। আর যদি তোমরা মার্জনা কর, এড়িয়ে যাও এবং মাফ করে দাও তবে নিশ্চয় আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, অসীম দয়ালু।’ [সূরা তাগাবুন, আয়াত: ১৪]
পরিবারের কর্তা তাদের সংশোধনের চেষ্টা করে যাবেন। যদি কখনো তাদের থেকে ছোটখাটো ভুল হয়ে যায় তাহলে তাদের প্রতি কঠোরতা প্রদর্শন করা উচিৎ নয়। বরং ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখতে হবে। কারণ আল্লাহ তাআলা পরম দয়ালু ও ক্ষমাশীল। তাহলেই একটি সুন্দর ও সুখী পরিবার গঠন করা সহজ হবে। তবে মনে রাখতে হবে, দুনিয়ার ধন-দৌলত ও সন্তান-সন্তুতি পরীক্ষা স্বরূপ। তাই পরের আয়াতে আল্লাহ তাআলা আবার সতর্ক করে দিলেন,
إِنَّمَا أَمْوَالُكُمْ وَأَوْلَادُكُمْ فِتْنَةٌ
‘তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তো কেবল পরীক্ষা বিশেষ।’ [সূরা তাহাবুন, আয়াত: ১৫]
সুতরাং সম্পদ উপার্জন ও সন্তানের সুখের জন্য শরিয়ত নিষিদ্ধ কোনো পন্থা গ্রহণ করা যাবে না। বরং সব সময় আল্লাহর উপর ভরসা করে হালাল পথে চলতে হবে। কারণ রিযিকদাতা একমাত্র আল্লাহ তাআল। কুরআন মাজিদে এসেছে,
نَّحْنُ نَرْزُقُهُمْ وَإِيَّاكُمْ
‘আমিই তাদেরকে রিযিক দেই এবং তোমাদেরকেও।’ [সূরা বনী ইসরাইল, আয়াত: ৩১]
কাজেই আমরা যদি শরিয়তের নির্দেশনা অনুসারে পরিবারকে পরিচালিত করতে পারি তাহলেই একটি সুন্দর ও সুখী পরিবার এবং জান্নাতি পরিবার গড়ে তুলতে পারব। আল্লাহ তাআলা তাওফিক দান করুন।
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم