প্রশ্ন
বর্তমানে করোনা পরিস্থিতির কারণে মহা দুর্ভিক্ষ আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। সেক্ষেত্রে কিভাবে যাকাত ও সদকাতুল ফিতর আদায় করলে দারিদ্র বিমোচন সম্ভব? যার ফলে যাকাত গ্রহীতা নিজেও পরবর্তীতে যাকাত দিতে পারে।
উত্তর
بسم الله الرحمٰن الرحيم. حامدا و مصليا و مسلما
আল্লাহ তাআলা চান, মুসলমান যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে। একারণেই যাকাতকে তিনি ইসলামের তৃতীয় স্তম্ভ বানিয়েছেন। হাদিস শরিফে এসেছে, রাসূল (সা.) বলেছেন,
بُنِيَ الإِسْلاَمُ عَلَى خَمْسٍ شَهَادَةِ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ، وَإِقَامِ الصَّلاَةِ، وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ، وَالْحَجِّ، وَصَوْمِ رَمَضَانَ
‘ইসলামের স্তম্ভ হচ্ছে পাঁচটি। ১. আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন উপাস্য নেই এবং নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল-এ কথার সাক্ষ্য প্রদান করা। ২. সালাত কায়িম করা। ৩. যাকাত আদায় করা। ৪. হজ্জ সম্পাদন করা এবং ৫. রমজানের সিয়ামব্রত পালন করা।’ [সহিহ বুখারি, হাদিস: ৮]
কুরআনে আল্লাহ তাআলা অধিকাংশ স্থানে নামাজের সাথে যাকাতের উল্লেখ করেছেন।
আরবের লোকেরা তাবুতে থাকতে পছন্দ করে। তাবু দাঁড় করানোর জন্য চার পাশে চারটি খুঁটি দিয়ে মাঝখানে একটি খুঁটি দিতে হয়। অন্যথায় তাবুর মাথা উঁচু হয় না। যাকাতের বিষয়টিও এমন। যাকাতকে মাঝখানে রাখা হয়েছে যেন মুসলমানরা যাকাতের বিধান বাস্তবায়নের মাধ্যমে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে। কিন্তু বর্তমান পৃথিবীতে মুসলমানরা মুখ থুবড়ে পড়ে আছে যাকাতের বিধান বাস্তবায়ন না করার কারণে। রাসূল (সা.) বলেছেন,
تُؤْخَذُ مِنْ أَغْنِيَائِهِمْ وَتُرَدُّ عَلَى فُقَرَائِهِمْ
‘যেটা (যাকাত) ধনীদের নিকট থেকে গৃহীত হবে আর দরিদ্রদের মাঝে প্রদান করা হবে।’ [সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৩৯৫]
যাকাতের ক্ষেত্রে যদি এই নীতিটি অবলম্বন করা যেত, তাহলে মুসলিম সমাজে কোনো গরিব থাকার কথা না। বর্তমানে আমরা যাকাত ও সদকাতুল ফিতরকে ইহসান হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছি। কেউ আদায় করে, আর কেউ আদায় করে না। অথচ এটি ইহসান নয়। বরং অধিকার। আল্লাহ তাআলা কুরআন মাজিদে ইরশাদ করেছেন,
وَفِي أَمْوَالِهِمْ حَقٌّ لِلسَّائِلِ وَالْمَحْرُومِ
‘আর তাদের ধনসম্পদে রয়েছে প্রার্থী ও বঞ্চিতের হক।’ [সূরা জারিয়াত, আয়াত: ১৯]
আমরা এই হক আদায় না করার কারণে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছি না। আমরা যদি যথাযথভাবে এই হক বাস্তবায়ন করতে পারতাম তাহলে আমাদের মাঝে দরিদ্র থাকত না।
যাকাত ও সদকাতুল ফিতর দ্বারা তখনই দারিদ্র বিমোচন সম্ভব যখন রাষ্ট্রীয়ভাবে এগুলো আদায়ের ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। কারণ, মুসলমানরা দেশ শাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত হলে সর্বপ্রথম তাদের উপর চারটি কাজ ন্যস্ত হয়। এর মাঝে অন্যতম হল যাকাত আদায় করা। কুরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে,
الَّذِينَ إِن مَّكَّنَّاهُمْ فِي الْأَرْضِ أَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ وَأَمَرُوا بِالْمَعْرُوفِ وَنَهَوْا عَنِ الْمُنكَرِ
‘তারা এমন যাদেরকে আমি যমীনে ক্ষমতা দান করলে তারা সালাত কায়েম করবে, যাকাত দেবে এবং সৎকাজের আদেশ দেবে ও অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে।’ [সূরা হজ্ব, আয়াত: ৪১]
এর জন্য আগে জনগণ থেকে যাকাত নিতে হবে। তারপর গরিবদের মাঝে তা দান করতে হবে। কুরআন মাজিদে রাসূল (সা.)-কে উদ্দেশ্য করে ইরশাদ হয়েছে,
خُذْ مِنْ أَمْوَالِهِمْ صَدَقَةً تُطَهِّرُهُمْ وَتُزَكِّيهِم بِهَا
‘তাদের সম্পদ থেকে সদকা নাও। এর মাধ্যমে তাদেরকে তুমি পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করবে।’ [সূরা তাওবা, আয়াত: ১০৩]
কাজেই, মুসলিম অধ্যুষিত এলাকার রাষ্ট্র প্রধানগণ যদি এই আদেশটি রাষ্ট্রীয়ভাবে কার্যকর করতেন এবং যাকাতের আটটি খাতে তা ব্যয় করতেন তাহলে বর্তমান সমাজের চিত্র ভিন্ন হত। তখন যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত লোক আর খুঁজে পাওয়া যেত না। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে বুঝার তাওফিক দান করুন।
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم