প্রশ্ন
ফিতরার মাঝে এমন কি সৌন্দর্য আছে যা ইসলামের শাশ্বত বিধানকে সমুন্নত করে? যদি একটু খুলে বলতেন তাহলে আমরা উপকৃত হতাম।
উত্তর
بسم الله الرحمٰن الرحيم. حامدا و مصليا و مسلما
ইসলাম জীবন-ঘনিষ্ঠ বাস্তবভিত্তিক একটি ধর্ম। এরই একটি অংশ হল, সদকাতুল ফিতর। সদকাতুল ফিতরের মূল উদ্দেশ্য সম্পর্কে রাসূল (সা.) বলে দিয়েছেন। হাদিস শরিফে এসেছে,
فَرَضَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم زَكَاةَ الْفِطْرِ طُهْرَةً لِلصَّائِمِ مِنَ اللَّغْوِ وَالرَّفَثِ وَطُعْمَةً لِلْمَسَاكِينِ
‘রাসূল (সা.) সদকাতুল ফিতর ফরজ করেছেন- অশ্লীল কথা ও বেহুদা কাজ হতে (রমজানের) সওমকে পবিত্র করতে এবং মিসকীনদের খাদ্যের ব্যবস্থার জন্য।’ [সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ১৬০৯]
রোজা রাখার ক্ষেত্রে যে ভুল-ত্রুটি হয়ে যায় তার ক্ষতিপূরণের জন্য এই সদকাতুল ফিতর। পাশাপাশি ধনীরা শুধু ঈদের আনন্দ উপভোগ করবে, আর গরিবরা বঞ্চিত হবে, এটি ইসলাম সমর্থন করে না। বরং ধনীদের সাথে গরিবরাও যেন ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে পারে এ কারণে সদকাতুল ফিতরের বিধান দেওয়া হয়েছে।
সদকাতুল ফিতরের বিধান দেখে অমুসলিমরাও একথা বলতে বাধ্য হয়েছে যে, রাসূল (সা.) শুধু বিশেষ কোনো জাতি বা রাষ্ট্রের নবি নন, বরং পুরো বিশ্বের সকল মানুষের নবি। কারণ, তিনি যদি শুধু আরব বিশ্বের নবি হতেন তাহলে সদকাতুল ফিতর হিসেবে শুধু আরবের প্রধান খাদ্যবস্তু খেজুর দেওয়ার নির্দেশ দিতেন। কিন্তু সেটি না করে সকল দেশের প্রধান খাদ্যবস্তু সদকাতুল ফিতর হিসেবে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
আরেকটি বিষয় হল, সদকাতুল ফিতরের অপর নাম যাকাতুল ফিতর বলা হয়েছে। যাকাত শব্দের মাঝেই যাকাতুল ফিতরের গুরুত্ব নিহিত রয়েছে। যাকাত শব্দের দু’টি অর্থ। একটি হল, যাকাত অর্থ পবিত্র। অর্থাৎ, যাকাতুল ফিতরের মাধ্যমে দাতার অন্তর লোভ, লালসা, সম্পদের মোহ ইত্যাদি থেকে পবিত্র হয়। পাশাপাশি ধনীদের প্রতি গরিবদের যে আক্রোশ বা হিংসা থাকে এই যাকাতুল ফিতর তার অন্তরের হিংসা ও আক্রোশ থেকে তাকে পবিত্র করে।
আরেকটি অর্থ হল বৃদ্ধি। বর্তমান অর্থনীতিবিদগণ বলেন, অর্থ শুধু সমাজের ধনী শ্রেণির কাছে গচ্ছিত থাকবে, এটি হতে পারে না। বরং সর্বস্তরের মানুষের কাছে সম্পদ গেলে সেটি হবে সমাজের জন্য ইতিবাচক। তৈরি হবে গঠনশীল এক অর্থনীতি। আমরা যদি যথাযথভাবে যাকাত বা ফিতরা দেই তাহলে সর্বস্তরের মানুষের কাছে সম্পদ পৌঁছে যাচ্ছে। যার ফলে সামগ্রিকভাবে অর্থনৈতিক গতিশীলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
দেখুন, দারিদ্র বিমোচনের অন্যতম কার্যকরী ব্যবস্থাও কিন্তু সদকাতুল ফিতর। এই সদকাতুল ফিতরের মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তাও নিশ্চিত হয়। তা এভাবে যে, অভাবের কারণে মানুষ অনেক সময় অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। সদকাতুল ফিতর যথাযথভাবে আদায় হলে মানুষের অভাব অনেকাংশে কমে আসবে। ফলে মানুষের মাঝে অপরাধ প্রবণতাও হ্রাস পাবে। সর্বোপরি আল্লাহ তাআলা মাহে রমজানে আমাদেরকে যে অসংখ্য অগণিত নেয়ামত দান করেছেন, তার কৃতজ্ঞতা স্বরূপ এই সদকাতুল ফিতরের বিধান দেওয়া হয়েছে। কাজেই আমাদেরকে যথাযথভাবে সদকাতুল ফিতর আদায়ে সচেষ্ট হতে হবে। আর এভাবেই তা ইসলামের শাশ্বত বিধানকে সমুন্নত করে।
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم