প্রশ্ন
কেউ যদি রোজা রেখে মিথ্যা বলে, অন্যায় কাজ করে বা মাপে কম দেয়, তাহলে তার রোজার কী হবে?
উত্তর
بسم الله الرحمٰن الرحيم. حامدا و مصليا و مسلما
সিয়ামের দু’টি দিক রয়েছে। একটি হল বাহ্যিক। অপরটি হল অন্তর্নিহিত। কেউ যদি সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও স্ত্রী সহবাস বর্জন করে তাহলে ধরে নেওয়া হয়, বাহ্যিকভাবে তার রোজা পূর্ণ হয়ে গিয়েছে। রোজা রাখার পাশাপাশি কেউ যদি অন্যায় থেকে বিরত না থাকতে পারে, তাহলে বাহ্যিকভাবে তার রোজা হয়ে যায়, কিন্তু রোজার অন্তর্নিহিত তাৎপর্য তার লাভ হয় না। এ ব্যাপারটিই রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন,
كَمْ مِنْ صَائِمٍ لَيْسَ لَهُ مِنْ صِيَامِهِ إِلَّا الظَّمَأُ،
‘অনেক রোজাদার এমন আছে যারা তাদের রোজা দ্বারা ক্ষুধার্ত থাকা ছাড়া আর কোন ফল লাভ করতে পারে না।’ [সুনানে দারেমী, হাদিস: ২৭৬২]
আরেক হাদিসে স্পষ্ট করেই বলে দেওয়া হয়েছে যে,
مَنْ لَمْ يَدَعْ قَوْلَ الزُّورِ وَالْعَمَلَ بِهِ فَلَيْسَ للهِ حَاجَةٌ فِي أَنْ يَدَعَ طَعَامَهُ وَشَرَابَهُ
‘যে ব্যক্তি মিথ্যা বলা ও সে অনুযায়ী আমল বর্জন করেনি, তার এ পানাহার পরিত্যাগ করায় আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই।’ [সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৯০৩]
কেউ যদি রোজা রেখেও মিথ্যা কথা বলে বা অন্যায়মূলক কাজ করে তাহলে তার রোজা ভাঙ্গবে না। তবে রোজার যে অন্তর্নিহিত তাৎপর্য তা সে লাভ করতে পারবে না। সেই রোজা দ্বারা তার শুধু পানাহার ও স্ত্রী সহবাসই বর্জন হবে। তাকওয়া অর্জিত হবে না। রোজাদারদের জন্য জান্নাতের যে স্পেশাল গেট নির্ধারিত রয়েছে সে গেট দিয়ে ঐ ব্যক্তি প্রবেশ করতে পারবে না। হাদিস শরিফে এসেছে রাসূল (সা.) বলেছেন,
قَالَ إِنَّ فِي الْجَنَّةِ بَابًا يُقَالُ لَهُ الرَّيَّانُ يَدْخُلُ مِنْهُ الصَّائِمُونَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ لاَ يَدْخُلُ مِنْهُ أَحَدٌ غَيْرُهُمْ يُقَالُ أَيْنَ الصَّائِمُونَ فَيَقُومُونَ لاَ يَدْخُلُ مِنْهُ أَحَدٌ غَيْرُهُمْ فَإِذَا دَخَلُوا أُغْلِقَ فَلَمْ يَدْخُلْ مِنْهُ أَحَدٌ
‘জান্নাতে রাইয়্যান নামক একটি দরজা আছে। এ দরজা দিয়ে কিয়ামতের দিন সওম পালনকারীরাই প্রবেশ করবে। তাদের ব্যতীত আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। ঘোষণা দেয়া হবে, সওম পালনকারীরা কোথায়? তখন তারা দাঁড়াবে। তারা ব্যতীত আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে না। তাদের প্রবেশের পরই দরজা বন্ধ করে দেয়া হবে। যাতে করে এ দরজাটি দিয়ে আর কেউ প্রবেশ না করে।’ [সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৮৯৬]
এক কথায়, কেউ যদি গুনাহমুক্ত রোজা না রাখতে পারে তাহলে আল্লাহ তাআলা রোজাদারদের জন্য যে পুরস্কার ও ফজিলতের কথা বলেছেন তার কোনোটিই সে লাভ করতে পারবে না। কাজেই রোজা রেখে শুধু পানাহার ও স্ত্রী সহবাসই বর্জন নয়, বরং যাবতীয় মন্দ কাজ বর্জন করতে হবে। পাশাপাশি রমজান থেকে শিক্ষা নিয়ে বাকি এগার মাস গুনাহমুক্ত জীবন যাপন করতে হবে। তাহলেই সেই রোজা আমাদের প্রকৃত রোজা হিসেবে গণ্য হবে। রোজার যে অন্তর্নিহিত তাৎপর্য তা আমরা লাভ করতে পারব। রাইয়্যান নামক জান্নাতের দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারব। অন্যথায় সে রোজা আমাদেরকে মুত্তাকী বানাতে পারবে না। রাইয়্যান নামক জান্নাতের দরজাও খুলে দিতে পারবে না।
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم