প্রশ্ন
ইসলামের কোন কোন সৌন্দর্যের কারণে অমুসলিমরা সুরক্ষিত থাকে, সম্প্রীতির ভিতরে থাকে? ইসলামের সমাজ ব্যবস্থা অমুসলিমরা কেন গ্রহণ করবে?
উত্তর
بسم الله الرحمٰن الرحيم. حامدا و مصليا و مسلما
ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। যে কারণে ইসলাম ধর্মেই একমাত্র ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের ব্যক্তিগত, সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। এমনকি কোনো অমুসলিমকে জোরপূর্বক মুসলমান বানানোর অনুমতিও ইসলাম দেয়নি। আল্লাহ তাআলা কুরআন মাজিদে ইরশাদ করেছেন,
لَا إِكْرَاهَ فِي الدِّينِ قَدْ تَبَيَّنَ الرُّشْدُ مِنَ الْغَيِّ
‘দীন গ্রহণের ব্যাপারে কোন জবরদস্তি নেই। নিশ্চয় হিদায়াত স্পষ্ট হয়েছে ভ্রষ্টতা থেকে।’ [সূরা বাকারা, আয়াত: ২৫৬]
এটিই হল ইসলামের পার্মানেন্ট বিধান। আরেক আয়াতে ইরশাদ হয়েছে,
لَكُمْ دِينُكُمْ وَلِيَ دِينِ
‘তোমাদের জন্য তোমাদের দীন আর আমার জন্য আমার দীন।’ [সূরা কাফিরূন, আয়াত: ৬]
যারা ইসলামের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে ইসলাম গ্রহণ করবে তাদেরকে পরিশুদ্ধ করার জন্য ইসলামি বিধান প্রয়োগ করতে হবে। আর যারা ভিন্ন ধর্মাবলম্বী থাকবে তাদের অধিকারও যথাযথভাবে নিশ্চিত করতে হবে। এমনটিই রাসূল (সা.) শিক্ষা দিয়েছিলেন। কোথাও বাহিনী প্রেরণ করলে নির্দেশ দিতেন যেন সে এলাকার গির্জা বা ইবাদাতখানা ধ্বংস না করা হয়। সাহাবায়ে কেরামগণও তার উপর আমল করেছেন। যারা ইসলামের বিরুদ্ধে তরবারি ধরেছিল, তারা বন্দি হয়ে আসার পরও তিনি তাদের সাথে খারাপ আচরণ করেননি। বরং তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দিয়েছেন। হাদিস শরিফে ঘটনাটি বর্ণিত হয়েছে এভাবে,
بَعَثَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم خَيْلًا قِبَلَ نَجْدٍ فَجَاءَتْ بِرَجُلٍ مِنْ بَنِيْ حَنِيْفَةَ يُقَالُ لَهُ ثُمَامَةُ بْنُ أُثَالٍ فَرَبَطُوْهُ بِسَارِيَةٍ مِنْ سَوَارِي الْمَسْجِدِ فَخَرَجَ إِلَيْهِ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ مَا عِنْدَكَ يَا ثُمَامَةُ فَقَالَ عِنْدِيْ خَيْرٌ يَا مُحَمَّدُ إِنْ تَقْتُلْنِيْ تَقْتُلْ ذَا دَمٍ وَإِنْ تُنْعِمْ تُنْعِمْ عَلَى شَاكِرٍ وَإِنْ كُنْتَ تُرِيْدُ الْمَالَ فَسَلْ مِنْهُ مَا شِئْتَ فَتُرِكَ حَتَّى كَانَ الْغَدُ ثُمَّ قَالَ لَهُ مَا عِنْدَكَ يَا ثُمَامَةُ قَالَ مَا قُلْتُ لَكَ إِنْ تُنْعِمْ تُنْعِمْ عَلَى شَاكِرٍ فَتَرَكَهُ حَتَّى كَانَ بَعْدَ الْغَدِ فَقَالَ مَا عِنْدَكَ يَا ثُمَامَةُ فَقَالَ عِنْدِيْ مَا قُلْتُ لَكَ فَقَالَ أَطْلِقُوْا ثُمَامَةَ فَانْطَلَقَ إِلَى نَجْلٍ قَرِيْبٍ مِنَ الْمَسْجِدِ فَاغْتَسَلَ ثُمَّ دَخَلَ الْمَسْجِدَ فَقَالَ أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُوْلُ اللهِ يَا مُحَمَّدُ وَاللهِ مَا كَانَ عَلَى الْأَرْضِ وَجْهٌ أَبْغَضَ إِلَيَّ مِنْ وَجْهِكَ فَقَدْ أَصْبَحَ وَجْهُكَ أَحَبَّ الْوُجُوْهِ إِلَيَّ وَاللهِ مَا كَانَ مِنْ دِيْنٍ أَبْغَضَ إِلَيَّ مِنْ دِيْنِكَ فَأَصْبَحَ دِيْنُكَ أَحَبَّ الدِّيْنِ إِلَيَّ وَاللهِ مَا كَانَ مِنْ بَلَدٍ أَبْغَضُ إِلَيَّ مِنْ بَلَدِكَ فَأَصْبَحَ بَلَدُكَ أَحَبَّ الْبِلَادِ إِلَيَّ
‘রাসূল (সা.) একদল অশ্বারোহী সৈন্য নজদের দিকে পাঠিয়েছিলেন। তারা সুমামাহ ইবনে উসাল নামক বনু হানীফার এক লোককে ধরে আনলেন এবং মসজিদে নববীর একটি খুঁটির সঙ্গে তাকে বেঁধে রাখলেন। তখন রাসূল (সা.) তার কাছে গিয়ে বললেন, ওহে সুমামাহ! তোমার কাছে কেমন মনে হচ্ছে? সে উত্তর দিল, হে মুহাম্মাদ! আমার কাছে তো ভালই মনে হচ্ছে। যদি আমাকে হত্যা করেন তাহলে আপনি একজন খুনীকে হত্যা করবেন। আর যদি আপনি অনুগ্রহ করেন তাহলে একজন কৃতজ্ঞ ব্যক্তিকে অনুগ্রহ করবেন। আর যদি আপনি অর্থ সম্পদ পেতে চান তাহলে যতটা ইচ্ছা দাবী করুন। রাসূল (সা.) তাকে সেই অবস্থার উপর রেখে দিলেন। এভাবে পরের দিন আসল। রাসূল (সা.) আবার তাকে বললেন, ওহে সুমামাহ! তোমার কাছে কেমন মনে হচ্ছে? সে বলল, আমার কাছে সেটিই মনে হচ্ছে যা আমি আপনাকে বলেছিলাম যে, যদি আপনি অনুগ্রহ করেন তাহলে একজন কৃতজ্ঞ ব্যক্তির উপর অনুগ্রহ করবেন। তিনি তাকে সেই অবস্থায় রেখে দিলেন। এভাবে এর পরের দিনও আসল। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, হে সুমামাহ! তোমার কাছে কেমন মনে হচ্ছে? সে বলল, আমার কাছে তা-ই মনে হচ্ছে যা আমি পূর্বেই বলেছি। রাসূল (সা.) বললেন, তোমরা সুমামাহর বন্ধন ছেড়ে দাও। এবার সুমামাহ মসজিদে নববীতে প্রবেশ করে বলল, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহর রাসূল। (তিনি বললেন) হে মুহাম্মাদ! আল্লাহর কসম! ইতোপূর্বে আমার কাছে যমীনের উপর আপনার চেহারার চেয়ে অধিক অপছন্দনীয় আর কোন চেহারা ছিল না। কিন্তু এখন আপনার চেহারাই আমার কাছে সকল চেহারা অপেক্ষা অধিক প্রিয়। আল্লাহর কসম! আমার কাছে আপনার দ্বীন অপেক্ষা অধিক ঘৃণিত অন্য কোন দ্বীন ছিল না। এখন আপনার দ্বীনই আমার কাছে সকল দ্বীনের চেয়ে প্রিয়তম। আল্লাহর কসম! আমার মনে আপনার শহরের চেয়ে অধিক খারাপ শহর অন্য কোনটি ছিল না। কিন্তু এখন আপনার শহরটিই আমার কাছে সকল শহর চেয়ে অধিক প্রিয়।’ [সহিহ বুখারি, হাদিস: ৪৩৭২]
এটিই ছিল ইসলামের উদারতা। ইসলামের এ ধরনের নানাবিধ সৌন্দর্য ও উদারতার কারণেই ভিন্ন ধর্মাবলম্বীরা ইসলামি সমাজ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আগ্রহী হবে।
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم