প্রশ্ন
বিশ্বায়নের এই যুগে আমরা মুসলমানরা কেন পিছিয়ে আছি?
উত্তর
بسم الله الرحمٰن الرحيم. حامدا و مصليا و مسلما
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে শ্রেষ্ঠ জাতি হিসেবে দুনিয়াতে প্রেরণ করেছেন। কুরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে,
كُنْتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ
‘তোমরাই হলে সর্বোত্তম উম্মত।’ [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১১০]
আরেক আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন,
وَأَنتُمُ الْأَعْلَوْنَ
‘বস্তুতঃ তোমরাই জয়ী থাকবে।’ [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৩৯]
বর্তমান বিশ্বে গ্লোবালাইজেশনের যে কথা বলা হচ্ছে, সেই গ্লোবালাইজেশনের অ্যাসাইনমেন্ট দিয়েই আমাদেরকে পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছে। কুরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন,
كُنْتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ
‘তোমরাই হলে সর্বোত্তম উম্মত, যাদেরকে মানুষের জন্য বের করা হয়েছে।’ [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১১০]
সমগ্র বিশ্ববাসীর কল্যাণে আমরা কাজ করব। এটিই মূলত এখানে বুঝানো হয়েছে। আমাদের দীনতার কয়েকটি কারণ উল্লেখ করা যেতে পারে,
১. আমরা আল কুরআন থেকে দূরে সরে পড়েছি। কুরআনের কিছু মানছি আর কিছু মানছি না। যার কারণে নেতৃত্ব আমাদের হাত থেকে চলে গিয়েছে। আল্লাহ তাআলা কুরআন মাজিদে ইরশাদ ইরশাদ করেছেন,
أَفَتُؤْمِنُونَ بِبَعْضِ الْكِتَابِ وَتَكْفُرُونَ بِبَعْضٍ ۚ فَمَا جَزَاءُ مَن يَفْعَلُ ذَٰلِكَ مِنكُمْ إِلَّا خِزْيٌ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا
‘তোমরা কি কিতাবের কিছু অংশে ঈমান রাখ আর কিছু অংশ অস্বীকার কর? সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা তা করে দুনিয়ার জীবনে লাঞ্ছনা ছাড়া তাদের কী প্রতিদান হতে পারে?’ [সূরা বাকারা, আয়াত: ৮৫]
২. নবীর আদর্শকে বাদ দিয়ে ওয়েস্টার্ন কৃষ্টি কালচারের প্রতি ঝুঁকে পড়েছি। একারণেই আমরা বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছি। আল্লাহ তাআলা কুরআন মাজিদে ইরশাদ করেছেন,
فَلْيَحْذَرِ الَّذِينَ يُخَالِفُونَ عَنْ أَمْرِهِ أَن تُصِيبَهُمْ فِتْنَةٌ
‘সুতরাং যারা তাঁর আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে তারা সতর্ক হোক যে, বিপর্যয় তাদের উপর আপতিত হবে।’ [সূরা নূর, আয়াত: ৬৩]
৩. মুসলিম জাতির প্রথম স্লোগান হল, পড়। কিন্তু আমরা এই স্লোগানকে ভুলে গিয়েছি। ফলে জ্ঞান বিজ্ঞানে আমরা পিছিয়ে পড়েছি।
৪. আজকে যারা গ্লোবালাইজেশনের কথা বলছে তাদের মাঝে শিক্ষা-দীক্ষা ও ঐক্য রয়েছে। কিন্তু মুসলিমদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অত্যন্ত দুর্বল। অথচ আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মজবুত করার নির্দেশ দিয়েছেন। কুরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে,
وَأَعِدُّوا لَهُم مَّا اسْتَطَعْتُم مِّن قُوَّةٍ وَمِن رِّبَاطِ الْخَيْلِ
‘আর তাদের মুকাবিলার জন্য তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী শক্তি ও অশ্ব বাহিনী প্রস্তুত কর।’ [সূরা আনফাল, আয়াত: ৬০]
৫. পাশ্চাত্য সভ্যতা অর্থনৈতিকভাবে যতটা মজবুত, আমাদের মুসলিমরা ততটা মজবুত না। অথচ অর্থ উপার্জন খারাপ কোনো বিষয় নয়। কুরআনে অর্থ উপার্জনের প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। কুরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে,
وَلَا تُؤْتُوا السُّفَهَاءَ أَمْوَالَكُمُ الَّتِي جَعَلَ اللَّهُ لَكُمْ قِيَامًا وَارْزُقُوهُمْ فِيهَا وَاكْسُوهُمْ وَقُولُوا لَهُمْ قَوْلًا مَّعْرُوفًا
‘আর তোমরা নির্বোধদের হাতে তোমাদের ধন-সম্পদ দিও না, যাকে আল্লাহ তোমাদের জন্য করেছেন জীবিকার মাধ্যম এবং তোমরা তা থেকে তাদেরকে আহার দাও, তাদেরকে পরিধান করাও এবং তাদের সাথে উত্তম কথা বল।’ [সূরা নিসা, আয়াত: ৫]
আরেক আয়াতে আল্লাহ তাআলা সম্পদকে কল্যাণ বলেছেন,
إِنْ تَرَكَ خَيْرًا الْوَصِيَّةُ لِلْوَالِدَيْنِ وَالْأَقْرَبِينَ بِالْمَعْرُوفِ
‘যদি সে কোন সম্পদ রেখে যায়, তবে পিতা-মাতা ও নিকটাত্মীয়দের জন্য ন্যায়ভিত্তিক অসিয়ত করবে।’ [সূরা বাকারা, আয়াত: ১৮০]
এর কারণ হল, অর্থ থাকলে ক্ষমতা থাকবে। ফলে গ্লোবালাইজেশনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা সহজ হয়ে যাবে।
৬. দাওয়াহ থেকে আমরা পিছিয়ে আছি। বর্তমানে মিডিয়া কনসেপ্ট কিন্তু এই দাওয়াহ থেকেই নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্য করা। এর মাধ্যমেও ইসলামের দাওয়াত এক দেশ থেকে আরেক দেশে ছড়িয়েছে।
সুতরাং আমরা যদি এসকল বিষয়কে যথাযথভাবে অনুধাবন করতে পারি তাহলে আশা করা যায় আমাদের পূর্বের অবস্থা আবার ফিরে আসবে।
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم