প্রশ্ন
রোজার মাধ্যমে কিভাবে আমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারি?
উত্তর
بسم الله الرحمٰن الرحيم. حامدا و مصليا و مسلما
তাকওয়া বলতে আমরা বুঝি, আল্লাহ সবসময় আমাকে দেখছেন, আমার সকল কর্মকাণ্ড রেকর্ড রাখছেন- এই অনুভূতি নিজের মাঝে জাগ্রত করা। পাশাপাশি যাবতীয় অন্যায়মূলক কাজ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখা।
আল্লামা ইবনে কাসীর তার তাফসীর গ্রন্থে লিখেছেন,
إِنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، سَأَلَ أُبَيَّ بْنَ كَعْبٍ عَنِ التَّقْوَى، فَقَالَ لَهُ: أَمَا سَلَكْتَ طَرِيقًا ذَا شَوْكٍ؟ قَالَ: بَلَى قَالَ: فَمَا عَمِلْتَ؟ قَالَ: شَمَّرْتُ وَاجْتَهَدْتُ، قَالَ: فَذَلِكَ التَّقْوَى
‘উমর (রা.) একবার উবাই ইবনে কা’ব (রা.)-কে তাকওয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। উবাই ইবনে কা’ব (রা.) বললেন, আপনার কি কাঁটাযুক্ত দুর্গম পথে চলার সুযোগ হয়েছে? উমর (রা.) বললেন, হাঁ। উবাই ইবনে কা’ব (রা.) জিজ্ঞাসা করলেন, সেখানে আপনি কী করেন? উমর (রা.) বললেন, কাপড় ও শরীরকে কাঁটা থেকে রক্ষার জন্য যথাসম্ভব সতর্কতা অবলম্বন করি। উবাই ইবনে কা’ব (রা.) বললেন, তাকওয়া ঐ ভাবে (গুনাহ থেকে) নিজেকে রক্ষার নাম।’ [তাফসীরে ইবনে কাসীর ১/১৬৪]
আমাদের সমাজে যত অন্যায়-অনাচার, পাপাচার, অশ্লীলতা বিদ্যমান রয়েছে সেগুলো হল কাঁটার মত। এগুলো থেকে বেঁচে থাকাটাই তাকওয়া। এসকল গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার ক্ষেত্রে রোজা হল সহায়ক। কারণ, একজন মানুষ রোজা রাখার মাধ্যমে আল্লাহর বিধি-নিষেধ পালনে অভ্যস্ত হয়ে উঠে। যখন সে আল্লাহর বিধান পালনে অভ্যস্ত হয়ে উঠে তখন স্বাভাবিকভাবেই গুনাহ ত্যাগ করা তার জন্য সহজ হয়ে যায়। সে নিজেকে পরিশুদ্ধ করতে পারে। রমজান শব্দের প্রকৃত অর্থ কিন্তু এটিই। রমজান মানেই হল জ্বালিয়ে পুড়িয়ে খাঁটি করা। স্বর্ণকে আগুনে পুড়ানোর দ্বারা যেভাবে সেটিকে খাঁটি করা হয়, একজন মানুষ রোজা রাখার মাধ্যমেও কিন্তু প্রকৃত মুমিনে পরিণত হয়। কারণ তার এ রোজা তার সকল গুনাহকে জ্বালিয়ে দিয়ে তাকে খাঁটি করে দিবে।
তাকওয়ার স্বরূপ হল, আমি কোন দিকে তাকাচ্ছি, অন্তরে কী ফিকির করছি তা কেউ জানুক আর না জানুক। আল্লাহ তাআলা কিন্তু ঠিকই জানেন। কুরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে,
يَعْلَمُ خَائِنَةَ الْأَعْيُنِ وَمَا تُخْفِي الصُّدُورُ
‘আল্লাহ চক্ষুর অন্যায় কর্ম সম্পর্কেও অবগত, আর অন্তর যা গোপন করে সে সম্পর্কেও।’ [সূরা গাফির, আয়াত: ১৯]
আমরা জানি যে, আল্লাহ তাআলা সব দেখছে। কিন্তু এই অনুভূতি নিজের মাঝে সৃষ্টি করে সে অনুযায়ী নিজের জীবনকে পরিচালনা করাই মূলত তাকওয়া।
দেখুন, রোজার মাধ্যমে মানুষ তাদের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় দুটি চাহিদা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। একটি হল পেটের চাহিদা। আরেকটি হল শারীরিক চাহিদা। এই দুটি চাহিদা নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, বিশেষ করে অন্তরকে কন্ট্রোল করা সহজ হয়ে যায়। যেই অন্তরে অনেক পাপের উদ্রেক হয়ে থাকে।
রোজা রাখার পাশাপাশি অন্যান্য ইবাদত বেশি বেশি করে করতে হবে। বিশেষ করে বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত করা। কারণ, কুরআন মানুষের জন্য বড় সুপারিশকারী হবে। হাদিস শরিফে এসেছে,
اقْرَؤُوا القُرْآنَ فَإِنَّهُ يَأتِي يَوْمَ القِيَامَةِ شَفِيعاً لأَصْحَابِهِ
‘তোমরা কুরআন মাজীদ পাঠ কর। কেননা, কিয়ামতের দিন কুরআন, তার পাঠকের জন্য সুপারিশ-কারী হিসাবে আগমন করবে।’ [সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৮০৪]
তাছাড়া কুরআন নাজিলের মাস রমজান। কুরআনের কারণেই রমজান মাসের এত মর্যাদা। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন,
شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنْزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ
‘রমজান মাস, যাতে কুরআন নাজিল করা হয়েছে।’ [সূরা বাকারা,আয়াত: ১৮৫]
এছাড়া তাহজ্জুদের উপর আমল করা। অন্যান্য নেক আমলগুলো করা। এগুলোও গুনাহ বর্জনে সহায়তা করে থাকে।
রোজা আমাদেরকে দৈহিক দিক থেকে কিছুটা দুর্বল করলেও আমাদের ঈমান মজবুত করে থাকে। একারণেই দেখা যায়, অন্যান্য মাসের চেয়ে রমজানে আমরা ইবাদত বন্দেগী বেশি করে থাকি। সুতরাং রমজান মাস তাকওয়া অর্জনের মাস। তাই আমরা সবাই তাকওয়া অর্জনে প্রয়াসী হব।
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم