সদাকাতুল ফিতরের বিধান : নগদ টাকায় আদায়ে বিভ্রান্তির মিমাংসা
ফিতর এর পরিচয়:- ফিতর বা ফাতূর বলা হয় সেই আহারকে যা দ্বারা রোযাদার রোযা ভঙ্গ করে। [আল মুজাম আল ওয়াসীত/৬৯৪]
ফিতরাকে শরীয়তে ‘যাকাতুল ফিতর এবং সাদাকাতুল ফিতর’ বলা হয়েছে। অর্থাৎ ফিতরের যাকাত বা ফিতরের সদকা। আর যাকাতুল ফিতর বলা হয় ঐ জরুরী দানকে যা, রোযাদারেরা ঈদুল ফিতর উপলক্ষে অভাবীদের দিয়ে থাকে। [আল মুজাম আল ওয়াসীত/৬৯৪]
যেহেতু দীর্ঘ দিন রোযা অর্থাৎ পানাহার থেকে বিরত থাকার পর ইফতার বা আহার শুরু করা হয় সে কারণে এটাকে ফিতরের তথা আহারের যাকাত বলা হয়। [ফাতহুল বারী ৩/৪৬৩]
সাদাকাহ অর্থাৎ দান; ফিতর অর্থ বিরতি দেয়া, এক মাস রোজা রাখার পর রোজা ভাঙা। অতএব সাদাকাতুল ফিতর হলো দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনা শেষে রোজা ভাঙা উপলক্ষে গরীব-মিসকিনকে যা দান করা হয়, তা-ই সাদাকাতুল ফিতর। সাদাকাহ’ মানে দান এবং ‘আল-ফিতর’ মানে রোজা ভেঙে পানাহারের বৈধতা। এক কথায় রোযা ভাঙ্গার সুযোগ পেয়ে পানাহারের বৈধতা প্রাপ্তির আনন্দে কিছু দান। ‘ঈদুল ফিতর’ মানে পানাহারের বৈধতা দানের আনন্দে খুশি। (কাওয়াঈদুল ফিকহিয়াহ, মুগনী, রদ্দুল মুহতার ইত্যাদি)
পরিভাষায় সাদাকাতুল ফিতর মানে ‘নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিকের উপর ঈদুল ফিতরের দিন সুবহে সাদেকের সময় থেকে যে ‘দান’ ওয়াজিব হয়।
মূলত মাহে রমজানের রোজা পালনের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা বান্দার প্রতি যে অফুরন্ত নিয়ামত দান করেছেন, তার শোকর হিসেবে এবং রোজা পালনে ত্রুটি-বিচ্যুতির ক্ষতিপূরণ বিবেচনায় সাদাকাতুল ফিতর ওয়াজিব করা হয়েছে। ওয়াকি ইবনুল জাররাহ (রা.) বলেন, ‘সিজদায়ে সাহু যেমন নামাজের ক্ষতিপূরণ, তেমনি সাদাকাতুল ফিতর রোজার ক্ষতিপূরণ’।
ফিতরার হুকুম বা বিধান :
ফিতরা দেয়া বা আদায় করা ওয়াজিব।
“ফিতরা দেয়ার সামর্থ্য রাখে এরকম প্রত্যেক ব্যক্তিকে নিজের ও পরিবারের ঐ সমস্ত সদস্যদের পক্ষ থেকে ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব, যাদের লালন-পালনের দায়িত্ব শরীয়ত কর্তৃক তার উপরে অর্পিত হয়েছে।” [আল মুগনী, ৪/৩০৭, বুখারী হাদীস নং ১৫০৩] সাদাকাতুল ফিতর ওয়াজিব ঐ ব্যক্তির ওপর যার নিকট ঈদুল ফিতরের দিন সকাল বেলা তার প্রয়োজনীয় সামগ্রী ও খাবার ব্যতীত নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকে। নেসাব হলো সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রৌপ্য বা তার সম পরিমাণ অর্থ বা সম্পদ। যদি স্বর্ণ ও রৌপ্য মূল্যমানে পার্থক্য হয়, তাহলে যেটির মূল্য ধরলে গরীব বেশি উপকৃত হয়, সেটির মূল্যমান ধরেই যাকাত, ফিতরা আদায় করতে হবে। যার ওপর ফিতরা ওয়াজিব হবে, সে তার নিজের এবং তার পোষ্যদের পক্ষ হতে ফিতরা আদায় করবে।
ফিতরার পরিমাণ :
সর্বাধিক মত হলো ফিতরার পরিমাণ এক সা। দলীল- আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক গোলাম, স্বাধীন, পুরুষ, মহিলা, ছোট-বড় সকল মুসলমানের ওপর এক ছা খেজুর বা এক ছা যব যাকাতুল ফিতর ফরজ করেছেন এবং তা লোকেরা ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বেই আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। (বুখারী, মুসলিম)
আবু সাঈদ খুদরী (রা.) বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা যাকাতুল ফিতর বের করে দিতাম এক ছা খাদ্য আথবা এক ছা যব আথবা এক ছা খেজুর আথবা ছা কিসমিস। (বুখারী)
আবু সাঈদ খুদরী (রা.) বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে ঈদুল ফিতরের দিনে এক ছা খাদ্য বের করে দিতাম। তিনি বলেন, তখন আমাদের খাদ্য ছিল যব, কিসমিস, পনির এবং খেজুর। (বুখারী)
আবু সাঈদ খুদরী (রা.) বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে এক ছা খাদ্য অথবা এক ছা খেজুর অথবা এক ছা যব অথবা এক ছা কিসমিস সাদাকাতুল ফিতর হিসেবে আদায় করতাম। যখন মু’আবিয়া (রা.) মদীনায় আসলেন এবং গমের মওসুম শুরু হলো। তিনি বললেন, আমি মনে করি এটার এক মুদ উপরোক্ত মুদের দুই মুদের সমান হবে। (বুখারী)
উল্লেখ্য, দুই মুদ এক ছা সমপরিমাণ। অতএব এক মুদ অর্ধ ছা সমপরিমাণ। আবদুল্লাহ বিন ওমর (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, লোকেরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে সাদাকাতুল ফিতর আদায় করত এক ছা যব অথবা খেজুর অথবা খোসাবিহীন যব অথবা কিসমিস। যখন ওমর (রা.) খলিফা হলেন এবং গমের উৎপাদন বেড়ে গেল, তখন তিনি অর্ধ ছা গমকে উপরোল্লিখিত বস্তগুলোর এক ছা-এর স্থলাভিষিক্ত নির্ধারণ করলেন। (আবু দাউদ)
আবু সাঈদ খুদরী (রা.) বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে এক ছা খাদ্য অথবা এক ছা যব অথবা এক ছা খেজুর অথবা এক ছা কিসমিস অথবা এক ছা পনির সাদাকাতুল ফিতর হিসেবে আদায় করতাম। আমরা এভাবেই আদায় করে আসছিলাম, যখন মু’আবিয়া (রা.) মদীনায় আসলেন এবং লোকদের সাথে কথা বললেন, তখন তিনি বললেন, আমি মনে করি সিরিয়ার দুই মুদ গম এক ছা এর খেজুরের সমপরিমাণ হবে, তখন লোকেরা তা-ই গ্রহণ করল। (তিরমিযি)
আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই সাদাকা (সাদাকাতুল ফিতর) ফরজ করেছেন এক ছা খেজুর অথবা এক ছা যব অথবা অর্ধ ছা গম প্রত্যেক স্বাধীন অথবা দাস, পুরুষ অথবা মহিলা, ছোট অথবা বড় এর ওপর। (আবু দাউদ)
‘সা’ সম্পর্কে বিশ্লেষণ:
ফিতরার সম্বন্ধে আলোচনা হলেই একটি শব্দ উঠে আসে আর তা হল, সা। সা-এর পরিমাণ বর্তমান হিসাবে কত হবে- এ নিয়ে ‘আলেমগণের মাঝে মতবিরোধ রয়েছে। সা হচ্ছে ওজন করার বা মাপার একটি পাত্র। যেমন গ্রামাঞ্চলে কাঠা দ্বারা ধান মাপা হয়। আধুনিক যুগে কিলোগ্রামের প্রচলন হওয়ায় সেই সা’র ওজন আরবেও বিলুপ্ত প্রায়। তবুও মক্কা মদীনায় ঈদের প্রাক্কালে ফিতরার চাল বিক্রয়কারীদের কাছে এই সা’ দেখা যায়। হানাফি আলেমগণ সা-এর হিসাব করেন ইরাকী হিসেবে, যার পরিমাণ বর্তমান হিসাবে হয় প্রায় সাড়ে ৩ কেজি। আবার অনেকে হিসাব করেন মদীনার সা হিসেবে, যার পরিমাণ কারো মতে ৯ কেজি ৯৪৮ গ্রাম, কারো মতে ২ কেজি ৬০০ গ্রাম, কারো মতে ২ কেজি ৩৫ গ্রাম – এভাবে বিভিন্ন মত রয়েছে। হাতের পার্থক্যের কারণে ও জিনিসের বিভিন্নতার কারণে ওজন কমবেশি হতে পারে। এই রকম এক সা’ র পাত্র আমি ১৯৯২ইং সনে নিজে ক্রয় করে সদকাহ করি। তাতে মদীনার শুষ্ক খেজুর ভরে ওজন করলে আড়াই কিলোগ্রাম থেকে সামান্য বেশী হয়। আর তাতে চাল ভরে ওজন করলে প্রায় তিন কিলোগ্রাম হয়। দ্রব্য যত ভারী হবে সা’ তে তার ওজনও ভিন্ন হবে। যেমন এক কাঠাতে চাল দিলে তার ওজন একরকম হবে আর ধান বা সরিষা দিলে আর এক রকম হবে। মোট কথা সা’ র পরিমাণকে সূক্ষ্ম কিলোগ্রামের এক ওজনে নির্ধারণ করা অসম্ভব। কারণ এটি একটি পরিমাপ পাত্র, কোন ওজনের নাম নয়। এই সা’র ব্যাখ্যায় উলামায়ে কেরামদের বিভিন্ন মতের পর একটি সুন্দর, সহজ ও নির্ভরযোগ্য ওজন প্রমাণিত হয় যা, সর্বকাল ও সর্বক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তা হল: একজন সাধারণ শারীরিক গঠনের মানুষ অর্থাৎ অধিক লম্বা নয় এবং বেঁটেও নয়, এই রকম মানুষ তার দুই হাত একত্রে করলে যে অঞ্জলি গঠিত হয়, ঐরকম পূর্ণ চার অঞ্জলি সমান হচ্ছে এক সা। [ফাতাওয়া মাসায়েল/ ১৭২-১৭৩, সউদী ফাতাওয়া ও গবেষণা বিষয়ক স্থায়ী কমিটি, ফতোয়া নং ৫৭৩৩ খন্ড ৯য় পৃ: ৩৬৫]
আশা করি বিষয়টি বুঝা গেছে। আল্লাহ! তুমি আমাদের সঠিক বিধানের প্রতি আমল করার জ্ঞান দাও। আমীন।
সাদাকাতুল ফিতর আদায় করবে এক সা খেজুর অথবা এক ছা খাদ্য অথবা এক ছা যব অথবা এক সা খেজুর অথবা এক সা কিসমিস অথবা এক সা পনির। এর যে কোনো একটি এক সা আদায় করলেই সাদাকাতুল ফিতর আদায় হয়ে যাবে। অধিকাংশ হাদীস এবং অধিক বিশুদ্ধ হাদীস এটাই প্রমাণ করে। তবে কোনো কোনো বর্ণনা অনুযায়ী অর্ধ সা গম দিলেও সাদাকাতুল ফিতর আদায় হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে আদায়কারী যা দিয়েই এবং যে পরিমাণই (এক সা অথবা অর্ধ সা) আদায় করে আশা করি আদায় হয়ে যাবে। তবে এক সা আদায় করাটাই অধিক উত্তম ।
অর্ধ সা’ র ফিতরা প্রচলন :
উপরে বর্ণিত প্রমাণগুলি দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক সা পরিমাণ ফিতরা জরুরী করেছেন। কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং চার খলীফার ইন্তেকালের পর যখন মুআবিয়া (রা.) ইসলামী রাষ্ট্রের খলীফা নির্বাচিত হন এবং ইসলামী রাষ্ট্রের রাজধানী মদীনা হতে দামেস্ক স্থানান্তরিত হয়, তখন তারা গমের সাথে পরিচিতি লাভ করেন। সে সময় সিরিয়ার এই গমের মূল্য খেজুরের দ্বিগুণ ছিল। তাই খলীফা মুয়াবিয়া একদা হজ্জ বা উমরা করার সময় মদীনায় আসলে মিম্বরে বলেন- আমি অর্ধ সা গমকে এক সা খেজুরের সমতুল্য মনে করি। লোকেরা তার এই কথা মেনে নেয়। এরপর থেকে মুসলিম উম্মতের মধ্যে অর্ধ সা ফিতরার প্রচলন শুরু হয়। [দেখুন মুসলিম, অধ্যায়: যাকাত, অনুচ্ছেদ: যাকাতুল ফিতর হাদীস নং ২২৮১ এবং ৮২]
সাহাবী মুয়াবিয়া (রা.) বলেন, ‘‘আমি মনে করি এই অর্ধ সা গম এক সা খেজুরের বরাবর।” [মুসলিম, নং২২৮১] তিনি কিন্তু বলেননি, যে এটা নবীজীর আমল বা তোমরা অর্ধ সা দাও।
যাকাতুল ফিতর বা ফিতরাহ কখন আদায় করতে হবে ?
ঈদুল ফিতরের দুইদিন আগ থেকে শুরু করে ঈদের সালাতের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত। এর পূর্বে আদায় করলে সাদাকাতুল ফিতরের উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে। কেননা সাদাকাতুল ফিতরের উদ্দেশ্য হলো দরিদ্র মানুষের জন্য কিছু খাবারের ব্যবস্থা করা, যাতে তারা ঈদের আনন্দে শরীক হতে পারে।
মহানবী (সা.) তা (সাদাকাতুল ফিতর) লোকেরা ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বেই আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। (বুখারী, মুসলিম)
ইবনু আব্বাস (রা) সুত্রে বর্নিত, তিনি বলেন রাসুল (সা.) যাকাতুল ফিতর ফরয করেছেন অশ্লীল কথা ও খারাপ কাজ হতে রোযাকে পবিত্র করতে এবং মিসকিনদের খাদ্যের জন্য । যে ব্যক্তি নামাযের পূর্বে তা আদায় করে সেটা কবুল সদকাহ গণ্য হবে, আর যে ব্যক্তি সালাতের পর তা আদায় করবে তা সাধারণ দান হিসেবে গৃহীত হবে। (আবু দাউদ, ১ম খন্ড, হা/১৬০৯; ইবনু মাজাহ, হা/১৮২৭)
নগদ অর্থ, টাকা পয়সা দিয়ে ফিতরা আদায় করা কি বৈধ হবে?
নগদ অর্থ দিয়ে সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা যাবে কিনাÑ এনিয়ে আলেমগণের মধ্যে মতবিরোধ থাকলেও টাকা দ্বারা ‘‘ফিতরা’’ দেয়া সহীহ্ হাদীস ও ইমামগণের উক্তি দ্বারা প্রমাণিত।
প্রথম অভিমত- ইমাম আবু হানিফা, আতা, হাসান বাসরী, ছুফয়ান সাওরী, ওমর বিন আব্দুল আজিজ, ও তার অনুসারীদের মতে, নগদ অর্থ দিয়ে সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা বৈধ। কেননা সাদাকাতুল ফিতর আদায়ের একটি অন্যতম লক্ষ্য হলো দরিদ্র মানুষকে ঈদের আনন্দে শরীক হওয়ার সুযোগ করে দেয়া।
দ্বিতীয় অভিমত- ইমাম শাফেঈ, ইমাম মালেক, ইমাম আহমাদ (রহ.) মতে নগদ অর্থ দেয়া বৈধ হবে নয়। কেননা হাদীসে নগদ অর্থের কথা উল্লেখ নেই।
বর্তমানে বিভিন্ন দেশে-বিশেষ করে আমাদের দেশে কতিপয় উলামা প্রচার করে বেড়াচ্ছেন যে, ‘‘সহীহ বুখারীর মাঝে আছে ফিতরা দিতে হবে গম, খেজুর, কিসমিস, পনীর ইত্যাদি খাদ্য দ্রব্য দিয়ে। টাকা দিয়ে আদায় করলে আদায় হবে না!!’’ তাদের এই দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
* ইমাম আবু হানিফা মনে করেন, এই পাঁচটি হলো সদকায়ে ফিতরের ক্ষেত্রে মানদন্ড। এর যে কোনো একটি দ্বারা যেমন আদায় করা যাবে, এর সমমূল্যের যে কোনো দ্রব্য দ্বারাও আদায় করা যাবে। এমনকি মুদ্রা দ্বারাও আদায় করা যাবে। অবশ্য আর তিন ইমামের অভিমত এই ছিল যে, মুদ্রা দ্বারা আদায় করা যাবে না, দ্রব্যের দ্বারাই আদায় করতে হবে। তবে তাদের অনুসারীরা পরবর্তীকালে ইমাম আবু হানিফার (রহ.) অভিমতকেই মেনে নিয়েছেন। এখন সবার দৃষ্টিতেই সমপরিমাণ মুদ্রা দ্বারা ফিতরা আদায় করলে আদায় হয়ে যাবে। তবে হ্যাঁ, শরিয়তের নির্ধারিত মানদন্ড ঠিক রেখে যদি গরিবের উপকার করা যায় তাতে কোনো বাধা নেই; বরং সেটি উত্তম কর্ম বলে বিবেচিত হবে। তাই শুধু আধা সা’ গমের মূল্য পরিশোধ না করে এক সা’ খেজুরের মূল্যের সমপরিমাণ আদায় করতে বাধা নেই, যার বর্তমান বাজার দর প্রায় ১৪০০ টাকা হবে। কিংবা এক সা’ কিসমিসের মূল্যের সমপরিমাণও আদায় করা যায়, যার বাজার দর ৪২০ টাকা প্রায়। কিংবা ১ সা’ পনিরের মূল্যের সমপরিমাণও আদায় করা যায়, যার বাজার দর ৭০০ টাকা প্রায়।
সমাজের বিত্তশালীরা যদি খেজুরের মূল্যে সদকায়ে ফিতর আদায় করেন, মধ্যবিত্তরা যদি পনির ও কিসমিসের মূল্যে আদায় করেন আর নিম্নবিত্ত যাদের ওপর সদকায়ে ফিতর ওয়াজিব হয় তারা যদি যব বা গমের মূল্যে আদায় করেন তাহলে গরিব লাভবান হবে এবং সম্পদের পর্যায় ভেদে এ অভ্যাস সমাজের মানুষের মাঝে গড়ে ওঠা উচিত। এজন্য আলেম-ওলামা ও মসজিদের ইমামরা মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে পারেন। তবে শরিয়ত স্বীকৃত কোনো বিষয়কে আইন করে রহিত করার অধিকার কারও নেই।
❏ ইমাম বুখারী (রহ.), ইবনে আবী শায়বা (রহ.) ও বায়হাকি (রহ.) বলেন, টাকা দিয়ে ফিতরা দিলে আদায় হয়ে যাবে। নিম্মে কতিপয় দলীল দেখলে স্পষ্ট বুঝা যায় নগদ অর্থ, টাকা পয়সা দিয়ে ফিতরা আদায় করা বৈধ।
* ‘‘ফিতরা’’ টাকা দ্বারা আদায় করলেও আদায় হয়ে যাবে। তার দলীল-
* রাসূল (সা.) এর যুগে زَكَاةَ الفِطْرِ ও زكوة যাকাত ‘‘ফিতরা’’ ইত্যাদি টাকা দ্বারা আদায় করা হতো। তার কিছু প্রমাণ নিম্মে –
১.
صحيح البخاري (২/ ১১৬)
وَقَالَ طَاوُسٌ: قَالَ مُعَاذٌ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ لِأَهْلِ اليَمَنِ: ্রائْتُونِي بِعَرْضٍ ثِيَابٍ خَمِيصٍ – أَوْ لَبِيسٍ – فِي الصَّدَقَةِ مَكَانَ الشَّعِيرِ وَالذُّرَةِ أَهْوَنُ عَلَيْكُمْ وَخَيْرٌ لِأَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالْمَدِينَةِগ্ধ وَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: وَأَمَّا خَالِدٌ فَقَدِ احْتَبَسَ أَدْرَاعَهُ وَأَعْتُدَهُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ” وَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ্রتَصَدَّقْنَ وَلَوْ مِنْ حُلِيِّكُنَّগ্ধ فَلَمْ يَسْتَثْنِ صَدَقَةَ الفَرْضِ مِنْ غَيْرِهَا، فَجَعَلَتِ المَرْأَةُ تُلْقِي خُرْصَهَا وَسِخَابَهَا، وَلَمْ يَخُصَّ الذَّهَبَ وَالفِضَّةَ مِنَ العُرُوضِ “
অর্থাৎ যখন রাসূলে কারীম (সা.) হযরত মুয়াজ (রা.) কে ইয়ামেনে পাঠান, তখন তিনি সেখানে সাদকাতুল ফিতর গম আদায় করার পরিবর্তে কাপড় আদায় করেছেন, তিনি বলেন এটি আদায় করা তোমাদের জন্য সহজ। তাছাড়াও রাসূল (সা.) মহিলাদেরকে তাদের অলঙ্কার দিয়ে হলেও সাদকা আদায় করতে বলেছেন। (সহীহ বুখারী-২/১১৬)
২. সাদাকায়ে ফিতর টাকা দ্বারা আদায় করা যাবে এটি ইমাম বুখারী (রহ.) এরও নিজস্ব অভিমত- তাই তিনি এ ব্যাপারে আলাদা অধ্যায় উল্লেখ করেছেন-
فتح الباري لابن حجر (৩/ ৩১২) (قَوْلُهُ بَابُ الْعَرْضِ فِي الزَّكَاةِ)
أَيْ جَوَازُ أَخْذِ الْعَرْضِ وَهُوَ بِفَتْحِ الْمُهْمَلَةِ وَسُكُونِ الرَّاءِ بَعْدَهَا مُعْجَمَةٌ وَالْمُرَادُ بِهِ مَا عَدَا النَّقْدَيْنِ قَالَ بن رَشِيدٍ وَافَقَ الْبُخَارِيُّ فِي هَذِهِ الْمَسْأَلَةِ الْحَنَفِيَّةَ مَعَ كَثْرَةِ مُخَالَفَتِهِ لَهُمْ لَكِنْ قَادَهُ إِلَى ذَلِكَ الدَّلِيلُ ৃৃالخ
”আল্লামা ইবনু রাশীদ (রহ.) বলেন, উক্ত মাসয়ালাটির মাঝে ইমাম বুখারী (রহ.) হানাফীদের সহমত পোষন করেছেন। (ফাতহুল বারী লি ইবনে হাজার-৩/৩১২)”
৩. فِي إِعْطَاءِ الدَّرَاهِمِ فِي زَكَاةِ الْفِطْرِ حَدَّثَنَا أَبُو أُسَامَةَ، عَنْ زُهَيْرٍ، قَالَ: سَمِعْتُ أَبَا إِسْحَاقَ، يَقُولُ: ্রأَدْرَكْتُهُمْ وَهُمْ يُعْطُونَ فِي صَدَقَةِ رَمَضَانَ الدَّرَاهِمَ بِقِيمَةِ الطَّعَامِগ্ধ
(২/৩৯৮/১০৩৭১مصنف ابن أبي شيبة)
অর্থ : হযরত যুহাইর (রহ.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবূ ইসহাক (রহ.) থেকে শুনেছি যে, তিনি বলেছেন, আমি সাহাবায়ে কেরাম (রা.) কে এই অবস্থায় পেয়েছি যে, তারা রমজানে সাদাকায়ে ফিতর খাবারের বিনিময়ে টাকা দ্বারা আদায় করতেন। (ইবনে আবি শায়বা-২/৩৯৮, হাদীস-১০৩৭১) এটির সনদ সম্পূর্ণ সহীহ ।
৪. হযরত হাসান বসরী (রহ.) এর বর্ণণা-
حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، عَنْ سُفْيَانَ، عَنْ هِشَامٍ، عَنِ الْحَسَنِ، قَالَ: ্রلَا بَأْسَ أَنْ تُعْطِيَ الدَّرَاهِمَ فِي صَدَقَةِ الْفِطْرِ
(২/৩৯৮/১০৩৭১مصنف ابن أبي شيبة)
অর্থ : হযরত হাসান বসরী (রহ.) বলেন, টাকা দ্বারা সাদাকায়ে ফিতর আদায় করার দ্বারা কোন সমস্যা নেই। (ইবনে আবি শায়বা-২/৩৯৮, হাদীস-১০৩৭০)
৫. এ বিষয়ে হযরত ওমর বিন আব্দুল আযীয (রহ.) এর চিঠি-
حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، عَنْ قُرَّةَ، قَالَ: جَاءَنَا كِتَابُ عُمَرَ بْنِ عَبْدِ الْعَزِيزِ فِي صَدَقَةِ الْفِطْرِ ্রنِصْفُ صَاعٍ عَنْ كُلِّ إِنْسَانٍ أَوْ قِيمَتُهُ نِصْفُ دِرْهَمٍ
(২/৩৯৮/১০৩৬৯مصنف ابن أبي شيبة)
ওয়াকি (রহ.) বলেন: আমাদের কাছে উমার ইবনে আব্দুল আযীযের চিঠি পাঠিয়েছেন যে, সাদকাতুল ফিতরের পরিমাণ হলো প্রত্যেক ব্যক্তির পক্ষ থেকে আধা সা‘ গম বা তার মূল্য আধা দিরহাম। (ইবনে আবি শায়বা-২/৩৯৮, হাদীস-১০৩৬৯)
৬. এছাড়াও বিখ্যাত ইমাম-ইমাম ইবনে আবী শায়বা তার রচিত কিতাব ইবনে আবি শায়বা-২/৩৯৮ এর মাঝে এই ভাবে অনুচ্ছেদ স্থাপন করেন যে- فِي إِعْطَاءِ الدَّرَاهِمِ فِي زَكَاةِ الْفِطْرِ অর্থাৎ সাদাকায়ে ফিতর টাকা দ্বারা আদায় করার (বৈধতা) সম্পর্কে।
৭. আর ইমাম বায়হাকী (রহ.) তার রচিত কিতাব সুনানুল কুবরা-৪/১৮৯ এর মাঝে এই ভাবে অনুচ্ছেদ স্থাপন করেন যে بَابُ مَنْ أَجَازَ أَخْذَ الْقِيَمِ فِي الزَّكَوَاتِ অথাৎ এই অনুচ্ছেদ হলো টাকা দ্বারা যাকাত আদায় করা অনুমোদিত।
এ বিষয়ে আহমদ আল গুমারী (রহ.) এর আরবী ভাষায় ১৫০ পৃষ্ঠায় ‘‘تحقيق الامال فى فى اخراج زكوة الفطر بالمال’’ নামে একটি গুরুত্বপূর্ণ পুস্তিকা রচনা করেছেন। যা সকলকে পড়ে রাখা আবশ্যক। এ বিষয়ে আরো দেখুন- বাদায়েউস সানায়ে-২/৯৬৯, আল মাবসুত লিসসারাখসী-৩/১১৩ ইত্যাদি।
যাকাতুল ফিতরের জন্য খাদ্য দ্রব্য বৈধ কি ?
আবু সাঈদ খুদরী (রা) বলেন, রাসুল (সা.) এর যুগে ঈদুল ফিতরের দিন আমরা এক সা’ খাদ্য ফিতরা দিতাম। তখন আমাদের খাদ্য ছিল যব, কিসমিস, পনীর ও খেজুর। (বুখারী/১৫০৬; মুসলিম/৯৮৫; আবু দাউদ/১৬১৬)
সুতরাং দেশের প্রধান খাদ্য দ্বারা ফিতরা আদায় করতে হবে। প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে উপরোক্ত হাদিসে যে খাদ্য দ্রব্যের কথা বলা হয়েছে তা সে দেশের প্রধান ও প্রচলিত খাদ্য দ্রব্য ছিল। তাই তা থেকে তারা যাকাতুল ফিতর প্রদান করতেন ঐ সকল খাদ্য দ্রব্য দিয়ে । হাদীসে বর্ণিত খাদ্য দ্রব্যের যে উল্লেখ রয়েছে তা উদাহরণ হিসাবে নির্ধারণ হিসেবে নয়। তাই দেশের প্রধান ও প্রচলিত খাদ্য দ্রব্য দিয়ে ফিতরা প্রদান করতে হবে ।
ধানের ফিতরা আদায় করা যাবে কি ?
ধান কিংবা চাল দ্বারা ফিতরা দেওয়ার প্রমাণ হাদীসের সেই শব্দটি, যেখানে সাহাবী আবু সাঈদ খুদরী (রা.) বলেছেন:
كنا نخرج في عهد رسول الله صلى الله عليه و سلم يوم الفطر صاعا من طعام
“আমরা খাদ্য দ্রব্যের মধ্য হতে এক সা যাকাতুল ফিত্র বের করতাম। সাহাবী আবু সাঈদ খুদরী আরও বলেন: ‘‘সেকালে আমাদের খাদ্য দ্রব্য ছিল: যব, কিশমিশ, পনীর এবং খেজুর”। [বুখারী, অধ্যায়: যাকাত নং ১৫১০]
আমরা আমাদের দেশে প্রধানতঃ খাদ্য হিসেবে চালের ব্যবহার করে থাকি কারণ ধান আমাদের প্রধান খাদ্য নয় এবং সরাসরি আহার্য বস্তু নয়। আমরা বাস্তব ক্ষেত্রে চালের ব্যবহার করি এবং ব্যবহার হতে দেখি, যেমন;
১. মিড ডে মিল প্রোগ্রামের মাধ্যমে দেশের প্রতিটি বিদ্যালয়ে সরকার চাল সরবরাহ করে থাকে, কোনো বিদ্যালয়ে ধান দেওয়া হয় না ।
২. সরকার বা বহিরাগত দেশ থেকে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সাহায্য হিসেবে চাল ও গম ছাড়া কোনো দিন ধান আসতে দেখিনি ।
৩. বি.পি.এল কার্ডধারী দুঃস্থ লোকেদের সরকার খুব সস্তায় চাল ও গম দেয় ।
সুতরাং বাঙালীদের প্রধান খাদ্য চালের ফিতরা আদায় করতে হবে।
তাছাড়া নিম্নোক্ত আলেমগণ চালের ফিতরার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেনঃ- ১. ইবনুল কাইউম (রহ) ইলামুল মুয়াক্কেয়ীন ২/১৮ পৃষ্ঠা, আল্লামা ইবনু বায- মাযমু’আ ফাতাওয়া উষাইমীন ১৪/২০৭ পৃষ্ঠা, আল্লামা উষাইমীন (রহ) মাযমু’আ ফাতাওয়া উষাইমীন ১৮/২৮৭ পৃষ্ঠা, আল্লাম সলেহ বিন ফাওযান আল মুলাখ খাসুল ফিখহী ১/৩৫৩ পৃষ্ঠা, হাফিয আইনুল বারী সিয়াম ও রমযান ১০১ পৃষ্ঠা
সাদাকাতুল ফিতর পাওয়ার হকদার কারা বা কাকে দেয়া হবে ?
সাদাকাতুল ফিতর পাওয়ার উপযুক্ত তারাই, যারা যাকাত পাওয়ার উপযুক্ত। তবে সমাজের দরিদ্র-অনাথ এবং নিজের গরীব আত্মীয় ও প্রতিবেশীকে দেয়াটাই অধিক উত্তম। কেননা হাদীসে সাদাকাতুল ফিতর আদায়ের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, দরিদ্রের খাবারের ব্যবস্থা করা। অতএব সাদাকাতুল ফিতর একমাত্র দরিদ্র-অনাথকে দিয়ে ঈদের আনন্দে তাদের শামিল করবে এবং নিজের রোজাকে ত্রুটি-বিচ্যুতি থেকে পরিচ্ছন্ন করবে- এটাই হবে সাদাকাতুল ফিতরের লক্ষ্য।
ইবনে আব্বাসের (রা.) বর্নিত হাদিসে রাসুল (সা.) শুধু মাত্র ফকীর ও মিসকীনদের মধ্যে বন্টন করতে নির্দেশ দিয়েছেন। সুতরাং ফকীর ও মিশকিনরা শুধু মাত্র ফিতরা পাওয়ার অধিকারি। (আবু দাউদ/১৬০৯; ইবনু মাজাহ/১৮২৭)
ফিতরা কাদের দেয়া যাবে না ?
যাকাতের ন্যায় ফিতরাও কোন হকদারকে মালিক বানিয়ে দিতে হবে। তবে যাদেরকে যাকাত দেয়া বৈধ নয় ১. কোনো ধনী ব্যক্তিকে, ২. ইসলামের দুশমনকে, ৩. কাফিরকে, ৪. মুরতাদকে, ৫. ফাসিককে, ৬. ব্যভিচারী বা ব্যাভিচারিনীকে, ৭. রোজগার করার ক্ষমতা রাখে এমন ব্যক্তিকে, ৮. জিম্মি ব্যক্তিকে, ৯. নিজের স্বামীকে, ১০. নিজের স্ত্রীকে, ১১. নিজের পিতাকে এবং সন্তান সন্ততিকে, ১২. কুরাইশ বংশের হাশিম বংশধরদের, ১৩. মসজিদ নির্মানে বা জনকল্যাণ মুলক কাজে ফিতরা দেয়া যাবে না।
ফিতরার মাল এক জায়গায় জমা করা যায় কি না ?
ইবনু উমার (রা.) হতে বর্নিত, ইদুল ফিতরের একদিন কিংবা দু দিন পুর্বে আদায়কারী বা একটি নির্দিষ্ট ব্যক্তির নিকট তা জমা দিতেন। তিনি আরও বলেন, সাহাবীরা ঐ ব্যক্তির নিকট জমা দিতেন, সরাসরি ফকির মিসকীনদের দিতেন না। (বুখারি/২০৫ পৃষ্টা; আবু দাউদ ১ম খন্ড ২২৭ পৃষ্ঠা) সুতরাং ফিতরার দ্রব্য কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তির কাছে বন্টনের জন্য জমা করা যেতেই পারে ।
কাদের উপর বা কি পরিমাণ সম্পদ থাকলে ফিতরা দেয়া ওয়াজিব হয়?
ঈদের দিন যদি কোন মুসলিম ব্যক্তি তার ও তার পরিবারের প্রয়োজনীয় খাবারের চেয়ে অতিরিক্ত আরো ২ কেজি ৪০ গ্রাম পরিমাণ নির্দিষ্ট খাবার মওজুদ থাকে তাহলে ঐ ব্যক্তি ও তার পরিবারবর্গের সকল সদস্যদের উপর ফিতরা প্রদান ওয়াজিব হয়ে যাবে।
ইবনু উমার (রা) হতে বর্নিত, রাসুল (সা) যাকাতুল ফিতর ফরয করেছেন প্রত্যেক স্বাধীন বা গোলাম, পুরুষ কিংবা নারী নির্বিশেষে সকল মুসলিমের উপর মাথা পিছু এক সা’ খেজুর বা যব রমজানের ফিতরা আদায় করা। (বুখারী,হা/১৫০৩; মুসলিম, হা/৯৮৪)
তবে ইমাম আবু হানীফার (রা.) মতে ঈদের দিন যাকাতের নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে অর্থাৎ ঐদিন ভোরে প্রয়োজনের অতিরিক্ত হিসেবে যার ঘরে সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা বায়ান্ন তোলা রৌপ্য বা এর সমপরিমাণ নগদ অর্থ থাকবে শুধু ঐ পরিবারের উপর ফিতরা দেয়া ওয়াজিব হবে।
১- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বাধীন, কৃতদাস, নারী, পুরুষ, ছোট-বড় প্রত্যেক মুসলিমের প্রতি রমাযানের সিয়ামের কারণে এক সা খেজুর বা এক সা যব ফিতরা হিসেবে ফরয করে দিয়েছেন। (বুখারী ও মুসলিম)
২-সহীহ মুসলিম ও মুসনাদে আহমাদের একটি বিশুদ্ধ হাদীসে আবু হুরায়রাহ (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে,
فِيْ زَكَاةِ الْفِطْرِ عَلَى كُلِّ حَرٍّ وَعَبْدٍ ذَكَرٍ وَأُنْثَى صَغِيْرٍ أَوْ كَبِيْرٍ فَقِيْرٍ أَوْ غَنِىٍّ صَاعًا مِنْ تَمَرٍ
প্রত্যেক স্বাধীন, পরাধীন, নারী, পুরুষ, ছোট- বড়, ফকীর-ধনী প্রত্যেকের উপর জনপ্রতি এক সা ২ কেজি ৪০ গ্রাম পরিমাণ খেজুর ফিতরা হিসেবে দান করা ওয়াজিব। (সহীহ মুসলিম : ২২৮১)
ভাববার বিষয় : [এখানে অনেকে ফিতরার নিসাব নির্ধারণ করতে গিয়ে বলেছেন যে, সাড়ে সাত ভরি সোনা কিংবা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রূপা বা সমপরিমাণ অর্থ থাকলে ফিতরা ওয়াজিব, এমন দলিল কিন্তু হাদীসে পাওয়া যায় না। ফিতরা যেহেতু রোজার ত্রুটি-বিচ্যুতি সংশোধন করার জন্য ফরয করা হয়েছে, সুতরাং এই ফিতরা ধনি-গরীব সকলকেই দিতে হবে। গরীবদেরও তো রোযায় ভুল হতে পারে। এখন প্রশ্ন হলো গরীব লোকেরা পাবে কোথায়? তার উত্তর হলো: তারা ধনীদের কাছ থেকে ফিতরা গ্রহণ করে আবার নিজের পক্ষ থেকে অন্যকে দিবে।]
শেষ কথা : সদাকাতুল ফিতর, যাকাতুল ফিতর বা ফিতরাহ ইসলামী শরীয়তে ওয়াজিব বিধান। দেশ, স্থান, কাল, পাত্র ও পরিস্থিতি ভেদে শরীয়তের মূল দৃষ্টিভঙ্গি সামনে রেখে গরীব মিসকিনের অধিক উপকার হয়। উপকার হয় সে বস্তু দিয়ে ফিতরাহ আদায় করাই শরীয়তের মূল লক্ষ্য। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে ফেৎনা সৃষ্টি না করে সঠিক দ্বীন বুঝে আমল করার তাওফীক দান করুন। আমাদের সকল ইবাদতকে কবুল কুরুন। বরকত দিন। আমীন।
লেখক:
ড. মুহাম্মাদ খলিলুর রহমান
বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষক
ই-মেইল : [email protected]
মোবাইল: ০১৭১১২৮০২৩৬