প্রশ্ন
অনেক নারীকে দেখা যায় কোনো আত্মীয় মারা গেলে তারা মাতম করে, বুকে থাপ্পর দিয়ে কান্নাকাটি করে ও বিলাপ করে। ইসলাম কি এসকল কর্মকাণ্ড সমর্থন করে?
উত্তর
بسم الله الرحمٰن الرحيم. حامدا و مصليا و مسلما
ইসলামে মৃত ব্যক্তির জন্য মাতম ও আহাজারি করা সম্পূর্ণরূপে হারাম। যারা মাতম করবে, হাদিসে তাদের জন্য ভয়াবহ শাস্তির কথা উল্লেখ রয়েছে। রাসূল (সা.) মাতমকারীদের উপর লানত করেছেন। তাই এরূপ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। তবে স্বাভাবিকভাবে কারো চোখে পানি চলে আসলে তা দোষনীয় নয়।
হাদিস শরিফে এসেছে,
أَنَّ أَبَا مَالِكٍ الأَشْعَرِيَّ حَدَّثَهُ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ أَرْبَعٌ فِي أُمَّتِي مِنْ أَمْرِ الْجَاهِلِيَّةِ لاَ يَتْرُكُونَهُنَّ الْفَخْرُ فِي الأَحْسَابِ وَالطَّعْنُ فِي الأَنْسَابِ وَالاِسْتِسْقَاءُ بِالنُّجُومِ وَالنِّيَاحَةُ . وَقَالَ النَّائِحَةُ إِذَا لَمْ تَتُبْ قَبْلَ مَوْتِهَا تُقَامُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَعَلَيْهَا سِرْبَالٌ مِنْ قَطِرَانٍ وَدِرْعٌ مِنْ جَرَبٍ
‘আবু মালিক আশআরী (রা.) বর্ণনা করেন। রাসূল (সা.) বলেছেন, আমার উম্মতের মধ্যে জাহিলিয়াত বিষয়ের চারটি জিনিস রয়েছে যা তারা ত্যাগ করছে না। বংশ মর্যাদা নিয়ে গর্ব, অন্যের বংশের প্রতি কটাক্ষ, গ্রহ-নক্ষত্রের মাধ্যমে বৃষ্টি প্রার্থনা এবং মৃতদের জন্য বিলাপ করা।
রাসূল (সা.) আরো বলেন, বিলাপকারিণী যদি তার মৃত্যুর পূর্বে তাওবা না করে, তবে কিয়ামতের দিনে তাঁকে দাঁড় করানো হবে, তখন তার দেহে আলকাতরার আবরণ থাকবে এবং খসখসে লোহার পোষাক থাকবে।’ [সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২০৩১; সুনানে তিরমিযি, হাদিস: ১০০১]
অন্য হাদিসে এসেছে,
‘আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসঊদ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, যারা (মৃত ব্যক্তির জন্য শোক প্রকাশে) গালে চপেটাঘাত করে, জামার বক্ষ ছিন্ন করে এবং জাহিলী যুগের মত চিৎকার দেয়, তারা আমাদের দলভুক্ত নয়।’ [সহিহ বুখারি, হাদিস: ১২৯৪]
আরেক হাদিসে এসেছে,
‘উসামা ইবনে যায়েদ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সা.) -এর জনৈকা কন্যা (যায়নাব) তাঁর নিকট লোক পাঠালেন যে, আমার এক পুত্র মরণাপন্ন অবস্থায় রয়েছে, তাই আপনি আমাদের নিকট আসুন। তিনি বলে পাঠালেন, (তাঁকে) সালাম দিবে এবং বলবে, আল্লাহরই অধিকারে যা কিছু তিনি নিয়ে যান আর তাঁরই অধিকারে যা কিছু তিনি দান করেন। তাঁর নিকট সকল কিছুরই একটি নির্দিষ্ট সময় আছে। কাজেই সে যেন ধৈর্য ধারণ করে এবং সাওয়াবের অপেক্ষায় থাকে। তখন তিনি তাঁর কাছে কসম দিয়ে পাঠালেন, তিনি যেন অবশ্যই আগমন করেন। তখন তিনি দণ্ডায়মান হলেন এবং তাঁর সাথে ছিলেন সা’দ ইবনে উবাদাহ, মু‘আয ইবনে জাবাল, উবাই ইবনে কা’ব, যায়েদ ইবনে সাবিত (রা.) এবং আরও কয়েকজন। তখন শিশুটিকে রাসূল (সা.) -এর কাছে তুলে দেয়া হলো। তখন সে ছটফট করছিল। বর্ণনাকারী বলেন, আমার ধারণা যে, তিনি এ কথা বলেছিলেন, যেন তার শ্বাস মশকের মত (শব্দ হচ্ছিল)। আর রাসূল (সা.)-এর দু’ চক্ষু বেয়ে অশ্রু ঝরছিল। সা’দ (রা.) বললেন, হে আল্লাহ্র রাসূল! একি? তিনি বললেন, এ হচ্ছে রহমত, যা আল্লাহ্ তাঁর বান্দার অন্তরে গচ্ছিত রেখেছেন। আর আল্লাহ্ তো তাঁর দয়ালু বান্দাদের প্রতিই দয়া করেন।’ [সহিহ বুখারি, হাদিস: ১২৮৪]
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم