প্রশ্ন
মসজিদে আমরা সাধারণত দেখি, আসর ও ফজরের নামাযে সালাম ফেরানোর পর ইমাম সাহেব মুসল্লীদের দিকে মুখ করে বসেন। আমার এক সহপাঠী, ধর্মীয় বিষয়ে বেশ পড়াশোনা আছে তার। সে আমাকে একদিন বলল, এই যে মসজিদগুলোতে ইমাম সাহেবরা ফজর ও আসরের পর মুসল্লীদের দিকে মুখ করে বসেন এটা সুন্নতের খেলাফ। মুসল্লিদের বরাবর না বসে মেহরাবের ডান দিকে বা বাম দিকে সামান্য বাঁকা হয়ে বসা উচিত ইমামের। সহপাঠীর কথায় আমি একটু অবাকই হলাম। ব্যাপকভাবে মসজিদগুলোতে ইমাম সাহেবরা কি তাহলে সুন্নতের খেলাফ আমল করে আসছেন? আপনার কাছে তাই জিজ্ঞাসা, এক্ষেত্রে শরীয়তস্বীকৃত পদ্ধতি কী?
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
حامدا و مصليا و مسلما
প্রশ্নোক্ত ব্যক্তির কথা ঠিক নয়; বরং ফজর ও আসরের নামাযের পর ইমাম সাহেবের মুসল্লীদের দিকে মুখ করে বসা সুন্নত। এটি সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।
হযরত যায়েদ ইবনে খালেদ জুহানী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন-
صَلّى لَنَا رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ صَلاَةَ الصّبْحِ بِالحُدَيْبِيَةِ عَلَى إِثْرِ سَمَاءٍ كَانَتْ مِنَ اللّيْلَةِ، فَلَمّا انْصَرَفَ أَقْبَلَ عَلَى النّاسِ، فَقَالَ: هَلْ تَدْرُونَ مَاذَا قَالَ رَبّكُمْ؟ قَالُوا: اللهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ، قَالَ: أَصْبَحَ مِنْ عِبَادِي مُؤْمِنٌ بِي وَكَافِرٌ، فَأَمّا مَنْ قَالَ: مُطِرْنَا بِفَضْلِ اللهِ وَرَحْمَتِهِ، فَذَلِكَ مُؤْمِنٌ بِي وَكَافِرٌ بِالكَوْكَبِ، وَأَمّا مَنْ قَالَ: بِنَوْءِ كَذَا وَكَذَا، فَذَلِكَ كَافِرٌ بِي وَمُؤْمِنٌ بِالكَوْكَبِ.
হুদাইবিয়াতে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর পিছনে আমরা ফজরের নামায পড়লাম। সে রাতে বৃষ্টি হয়েছিল। তো নামায শেষ হবার পর তিনি সমবেত সকলের দিকে ফিরলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমরা কি জানো তোমাদের রব কী বলেছেন?’… (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৮৪৬)
ছামুরা ইবনে জুনদুব (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
كَانَ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ إِذَا صَلّى الصّبْحَ أَقْبَلَ عَلَيْهِمْ بِوَجْهِهِ فَقَالَ: هَلْ رَأَى أَحَدٌ مِنْكُمُ الْبَارِحَةَ رُؤْيَا.
নবী (সা.) যখন ফজরের নামায শেষ করতেন তখন সকলের দিকে মুখ করে বসতেন। এরপর বলতেন, ‘তোমাদের কেউ কি গত রাতে কোনো স্বপ্ন দেখেছে?’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২২৭৫)
সুতরাং মসজিদগুলোতে ইমামগণ সাধারণত যেভাবে মুসল্লীদের দিকে ফিরে বসেন সেটা হাদীস ও সুন্নাহসম্মত। আর ডানে বা বামে সামান্য বাঁকা হয়ে বসার প্রসঙ্গ তখন, যখন ইমামের সোজাসুজি কোনো মাসবুক ব্যক্তি নামায আদায় করতে থাকে এবং ইমাম ও ঐ নামাযরত ব্যক্তির মাঝে কোনো আড়াল না থাকে। কেননা নামাযীর চেহারা তখন ইমামের চেহারা বরাবর হয়ে যায়। আর এভাবে নামাযীর মুখোমুখি হয়ে বসা অনুচিত।
আর যদি এমন হয় যে, ইমামের সোজাসুজি কোনো কাতারে কোনো মাসবুক নামায আদায় করছে ঠিক, কিন্তু তার ও ইমামের মাঝখানে অন্য মুসল্লীদের আড়াল রয়েছে, তাহলে সেক্ষেত্রে মুসল্লীর দিকে ইমামের ফিরে বসা দূষণীয় নয়। অতএব, এক্ষেত্রে ইমাম সাহেবেরও মুসল্লীদের দিকে ফিরে বসতে অসুবিধা নেই।
উল্লেখ্য যে, কোনো কোনো হাদিসে যে রাসূলে কারীম (সা.)-এর নামাযের সালাম ফেরানোর পর বামে বা ডানে انصراف তথা ফেরার কথা রয়েছে তা দ্বারা উদ্দেশ্য হল, জায়গা ছেড়ে উঠে যাওয়া। মুসল্লীদের দিকে ফিরে বসা নয়। আল্লামা আনওয়ার শাহ কাশ্মীরী (রাহ.) ফয়যুল বারীতে বিষয়টি এভাবেই উল্লেখ করেছেন। প্রশ্নে যে ব্যক্তির কথা বলা হয়েছে তিনি হয়ত ঐ হাদিস থেকে ভুল বুঝে থাকতে পারেন।
-সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ১০৫৩; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদিস: ৩১২৮; মুআত্তা মুহাম্মাদ, পৃ. ১৫৪; শরহে মুসলিম, নববী ৫/২২০; কিতাবুল উম্ম ১/১৫১; ফয়যুল বারী ২/৩১৬; উমদাতুল কারী ৬/১৪৩; ফাতহুল কাদীর ১/৪২৬; বাদায়েউস সানায়ে ১/৩৯৪; খুলাছাতুল ফাতাওয়া ১/১৫৬; হালবাতুল মুজাল্লি ২/২২২; আদদুররুল মুখতার ১/৫৩১-৫৩২
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم