প্রশ্ন
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমার বয়স ২৫ বছর। কিন্তু আমি এখনো অবিবাহিতা। আমার বিয়ের জন্য অনেক চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু কোনোভাবেই কিছু হচ্ছে না। আমি সাত সালাম, ইসমে আযম, সূরা ফুরকানের ৭৪ নং আয়াত পাঠ করি। আরো অনেক আমল করছি বিয়ের জন্য। প্রতিবেশীরা বলে, কালো জাদু করে নাকি আমার বিয়ে বন্ধ করে রাখা হয়েছে। জাদু নষ্ট করলে বিয়ে হবে নতুবা হবে না। বিষয়টা কি বাস্তব নাকি কুসংস্কার?
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
حامدا و مصليا و مسلما
প্রথম কথা হলো, আমাদের সমাজের একটি বড় বিচ্যুতি হল, ক্যারিয়ার গঠনের ধোঁয়াশায় পড়ে যথাসময়ে বিয়ে না করা। পরবর্তীতে যা হয়, তা হল, পাত্র/পাত্রীর বয়স বেড়ে যায় এবং বিবাহ কঠিন হয়ে যায়। আর নিজেদের এই বিচ্যুতি থেকে জন্ম নেয় জাদু-টোনা-নির্ভর নানা ধরণের অন্ধ-বিশ্বাস। মনে রাখবেন, বিয়ে-শাদি অবশ্যই আমাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আর জাদু আমাদের জীবনের ভাল-মন্দের আসল কার্যকারণ নয়, বরং আমাদের জীবনে সেটাই ঘটে যা আল্লাহ তাআলা আমাদের ভাগ্যে নির্ধারণ করে রেখেছেন। আল্লাহ বলেন,
قُلْ لَنْ يُصِيْبَنَا إِلاَّ مَا كَتَبَ اللهُ لَنَا هُوَ مَوْلَانَا
তুমি বল, আল্লাহ আমাদের ভাগ্যে যা লিখে রেখেছেন, তা ব্যতীত কিছুই আমাদের নিকট পৌঁছবে না। তিনিই আমাদের অভিভাবক। (সূরা তওবা, আয়াত: ৫১)
সুতরাং ‘আপনার বিয়ে কেউ বন্ধ করে রেখেছে’ প্রথমে এই অমূলক ধারণা থেকে বের হয়ে আসেুন। দুরাবস্থা, দুর্ভাগ্যের নাগাল ও মন্দভাগ্য থেকে মুক্তির জন্য বেশি বেশি করে আল্লাহর কাছে দোয়া করুন। হাদিসে শরিফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন
لاَ يَرُدُّ الْقَضَاءَ إِلاَّ الدُّعَاءُ
ভাগ্য পরিবর্তন হয় না দোয়া ব্যতীত। (জামে তিরমিযী, হাদিস: ২১৩৯)
প্রিয় দীনি বোন! পাশাপাশি আপনাকে কিছু আমল বলে দিচ্ছি, ইনশা-আল্লাহ এর উসিলায়ও আপনি এই দুরাবস্থা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
নিম্নের দোয়াগুলো বেশি বেশি পড়ুন,
اَللّٰهُمَّ اِنِّىْ اَعُوْذُبِكَ مِنْ جَهْدِالْبَلَاءِ وَدَرْكِ الشَّقَاءِ وَسُوْءِ الْقَضَاءِ و شَمَاتَةِ الْاَعْدَاءِ
অর্থাৎ, হে আল্লাহ! অবশ্যই আমি তোমার নিকট কঠিন দুরাবস্থা, দুর্ভাগ্যের নাগাল, মন্দভাগ্য এবং দুশমনের হাসি থেকে রক্ষা কামনা করছি। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬৩৪৭)
اَللّهُمَّ إِنَّا نَجْعَلُكَ فِيْ نُحُوْرِهِمْ وَنَعُوْذُ بِكَ مِنْ شُرُوْرِهِمْ
অর্থাৎ, হে আল্লাহ! আমরা তোমাকেই তাদের মুখোমুখী করছি এবং তাদের অনিষ্টতা থেকে তোমারই কাছে আশ্রয় চাচ্ছি ।
যেহেতু আপনি আপনার সাথে কারো শত্রুতার আশঙ্কা করছেন, তাই উক্ত দোয়াটি বেশি করে পড়ুন। আবু মুসা আল-আশআরী (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) যখন কোন সম্প্রদায় দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার আশঙ্কা করতেন তখন দোয়াটি বলতেন। (সুনানে আবূ দাউদ, হাদিস: ১৫৩৭)
যথাসম্ভব সার্বক্ষণিক ইস্তেগফার করুন। কেননা রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
مَنْ لَزِمَ الاِسْتِغْفَارَ جَعَلَ اللَّهُ لَهُ مِنْ كُلِّ ضِيقٍ مَخْرَجًا وَمِنْ كُلِّ هَمٍّ فَرَجًا وَرَزَقَهُ مِنْ حَيْثُ لاَ يَحْتَسِب
যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার করবে আল্লাহ তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের সংস্থান করে দেবেন। (সুনানে আবূ দাউদ, হাদিস: ১৫২০)
কোনো কোনো আলেম বলেন, যেসব যুবক-যুবতীদের বিবাহের বয়স অতিক্রম হয়ে যাচ্ছে কিন্তু বিয়ে হচ্ছে না, তাদের মধ্যে যুবকেরা ডান হাত দিয়ে বাম হাতের কব্জি চেপে ধরে এবং যুবতীরা বাম হাত দিয়ে ডান হাতের কব্জি চেপে ধরে প্রত্যহ ফজরের নামাজের পর সূর্যোদয়ের আগে ৪০ বার হিসাবে ৪০ দিন পর্যন্ত আল্লাহর গুণবাচক নাম ‘ইয়া ফাত্তাহু’ (يا فتّاح) -অর্থ হে উন্মুক্তকারী বা প্রস্তুতকারী-পড়লে দ্রত বিয়ে হয়।
কোনো কোনো আলেম বলেন, চল্লিশ দিন সূরা মুমতাহিনা তেলাওয়াত করলে দ্রত বিয়ে হয়।
প্রিয় দীনি বোন! আমলের পাশাপাশি আল্লাহর উপর ভরসা রেখে বৈধ পন্থায় পাত্রের সন্ধান ও চেষ্টা করুন। কুরআনে কারীমে আল্লাহ তাআ’লা বলেন-
وَمَنْ يَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ فَهُوَ حَسْبُهُ
‘‘আর যে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে, আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট।” (সূরা তালাক, আয়াত: ৩)
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
ﺛَﻠَﺎﺛَﺔٌ ﺣَﻖٌّ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻋَﻮْﻧُﻬُﻢْ : ﺍﻟﻤُﺠَﺎﻫِﺪُ ﻓِﻲ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺍﻟﻤُﻜَﺎﺗَﺐُ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻳُﺮِﻳﺪُ ﺍﻷَﺩَﺍﺀَ، ﻭَﺍﻟﻨَّﺎﻛِﺢُ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻳُﺮِﻳﺪُ ﺍﻟﻌَﻔَﺎﻑَ
অর্থাৎ, তিন ব্যক্তিকে সাহায্য করা আল্লাহ্ তায়ালার জন্য কর্তব্য হয়ে যায়। আল্লাহ্ তায়ালার রাস্তায় জিহাদকারী, চুক্তিবদ্ধ গোলাম যে তার মনিবকে চুক্তি অনুযায়ী সম্পদ আদায় করে মুক্ত হতে চায় এবং ওই বিবাহিত ব্যক্তি যে (বিবাহ করার মাধ্যমে) পবিত্র থাকতে চায়। (জামে তিরমিযী, হাদিস: ১৬৫৫, সুনানে নাসায়ী, হাদিস: ৩২১৮)
এরপর দীনদার ও চরিত্রবান পাত্র পেলে তার প্রস্তাব নাকচ করা উচিত হবে না। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
إِذَا خَطَبَ إِلَيْكُمْ مَنْ تَرْضَوْنَ دِينَهُ وَخُلُقَهُ فَزَوِّجُوهُ ، إِلَّا تَفْعَلُوا تَكُنْ فِتْنَةٌ فِي الْأَرْضِ وَفَسَادٌ عَرِيضٌ
তোমরা যে ছেলের দ্বীনাদারি ও চরিত্রের ব্যাপারে সন্তুষ্ট হতে পার সে যদি প্রস্তাব দেয় তাহলে তার কাছে বিয়ে দাও। যদি তা না কর তাহলে পৃথিবীতে মহা ফেতনা-ফাসাদ সৃষ্টি হবে। (জামে তিরমিযী, হাদিস: ১০৮৪)
পরিশেষে দোয়া করি, আল্লাহ আপনার সকল পেরেশানি দূর করে দিন। আমীন।
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم