প্রশ্ন
ইহইয়াউ উলুমিদ্দিন কিতাবে আছে, কেউ যদি শবে বরাতে একশ রাকাত নামাজ কিতাবে বর্ণিত বিশেষ পদ্ধতিতে পড়ে তাহলে আল্লাহ তাআলা তার দিকে ৭০ বার দৃষ্টি দিবেন এবং প্রতিবার একটি করে মোট ৭০টি প্রয়োজন পূরণ করবেন। তন্মধ্যে সর্বনিম্ন হল ক্ষমা। জানতে চাচ্ছি, উক্ত বক্তব্য কি সঠিক?
উত্তর
بسم الله الرحمٰن الرحيم. حامدا و مصليا و مسلما
ইহইয়াউ উলুমিদ্দিন কিতাবে শবে বরাতের বিশেষ নামাজের যে বিবরণ দেওয়া হয়েছে তা ভিত্তিহীন। সে সম্পর্কে বর্ণিত হাদিসগুলোও জাল ও বানোয়াট। ইমাম নববি (রহ.) বলেন,
الصَّلَاةُ الْمَعْرُوفَةُ بصلاة الرغائب وهي ثنتى عَشْرَةَ رَكْعَةً تُصَلَّى بَيْنَ الْمَغْرِبِ وَالْعِشَاءِ لَيْلَةَ أَوَّلِ جُمُعَةٍ فِي رَجَبٍ وَصَلَاةُ لَيْلَةِ نِصْفِ شَعْبَانَ مِائَةُ رَكْعَةٍ وَهَاتَانِ الصَّلَاتَانِ بِدْعَتَانِ وَمُنْكَرَانِ قَبِيحَتَانِ وَلَا يُغْتَرُّ بِذَكَرِهِمَا فِي كِتَابِ قُوتِ الْقُلُوبِ وَإِحْيَاءِ عُلُومِ الدِّينِ وَلَا بِالْحَدِيثِ الْمَذْكُورِ فِيهِمَا فَإِنَّ كُلَّ ذَلِكَ بَاطِلٌ
‘সালাতুর রাগায়েব নামে যে নামাজটি পরিচিত, তা হল রজব মাসের প্রথম শুক্রবার মাগরিব থেকে এশার মাঝামাঝি বার রাকাত নামাজ পড়া এবং অর্ধ শাবানের একশ রাকাত নামাজ, এগুলো বিদআত, অপছন্দনীয় ও মন্দ কাজ। কুতুল কুলুব ও ইহইয়াউ উলুমিদ্দিন কিতাবে এই দুই নামাজের উল্লেখ এবং এ সম্পর্কে বর্ণিত হাদিসগুলোর কারণে কেউ যেন ধোঁকায় না পড়ে। কারণ সে সবগুলো হাদিস জাল ও বাতিল।’ [আল মাজমু শরহুল মুহাযযাব ৪/৫৬]
তবে শবে বরাতের রাত একটি ফজিলতপূর্ণ রাত। হাদিস শরিফে এসেছে,
‘আয়েশা (রা.) বলেন, একবার রাসূল (সা.) রাতে নামাযে দাঁড়ালেন এবং এত দীর্ঘ সেজদা করলেন যে, আমার আশঙ্কা হল, তাঁর হয়তো ইনতেকাল হয়ে গেছে। আমি তখন উঠে তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম। তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়ল। যখন তিনি সেজদা থেকে উঠলেন এবং নামায শেষ করলেন তখন আমাকে লক্ষ করে বললেন, হে আয়েশা! অথবা বলেছেন, ও হুমায়রা! তোমার কি এই আশঙ্কা হয়েছে যে, আল্লাহর রাসূল তোমার হক নষ্ট করবেন? আমি উত্তরে বললাম, না, ইয়া রাসূলাল্লাহ। আপনার দীর্ঘ সেজদা থেকে আমার আশঙ্কা হয়েছিল, আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কি না। নবীজী জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি জান এটা কোন্ রাত? আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। তিনি তখন বললেন, এটা হল অর্ধ শা’বানের রাত। (শা’বানের চৌদ্দ তারিখের দিবাগত রাত)। আল্লাহ তাআলা অর্ধ শা’বানের রাতে তাঁর বান্দাদের প্রতি রহমতের দৃষ্টি প্রদান করেন, ক্ষমা প্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করেন এবং অনুগ্রহপ্রার্থীদের প্রতি অনুগ্রহ করেন। আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের ছেড়ে দেন তাদের অবস্থাতেই।’ [শুআবুল ঈমান, বায়হাকী ৩/৩৮২,৩৮৩]
এ রাতে যে কোনো ইবাদত বন্দেগী করা যাবে। বিভিন্ন চটি বইয়ে শবে বরাত উপলক্ষ্যে যে সকল অভিনব নামাজের বিবরণ পাওয়া যায় এগুলোর শরয়ি কোনো ভিত্তি নেই। এগুলো সবই মনগড়া ও বানোয়াট।
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم