প্রশ্ন
নবীগণ কি মাসুম বা নিষ্পাপ? যদি নিষ্পাপ হয়ে থাকেন তাহলে তাদের কারও কারও দ্বারা যে কিছু কিছু ভুল হয়ে গেছে সেগুলোর ব্যাখ্যা কী?
উত্তর
بسم الله الرحمٰن الرحيم. حامدا و مصليا و مسلما
মাসুম বলা হয় কথা-বার্তা, চাল-চলন, আকীদা-বিশ্বাস, লেনদেন সবদিক থেকে আল্লাহ তাআলা যাকে বিশেষ অনু্গ্রহে শয়তানের প্রভাব থেকে সর্বদা মুক্ত রেখেছেন। ফলে তার দ্বারা কোনো কবীরা কিংবা সগীরা গুনাহ সংঘটিত হয় না। আর সমস্ত নবীগণই এই গুণে গুণান্বিত ছিলেন।
এতদ্বসত্ত্বেও কোনো কোনো নবী থেকে প্রকাশিত যে কাজগুলোকে বাহ্যিকভাবে অপরাধ মনে হয় বাস্তবে তা কোনো অপরাধ ছিল না। বরং তা ছিল উত্তমের বিপরীতে অনুত্তম কাজ।
কিন্তু আল্লাহ তাআলা তার প্রিয় বান্দাদের থেকে যেন অনুত্তম কোনো কাজও প্রকাশিত না হয় তাই এ ধরনের অনুত্তম কাজের জন্যও তাদেরকে সতর্ক করে দেন।
যেমন হযরত মূসা (আ.) থাপ্পড় দিয়ে এক কিবতীকে হত্যা করেছিলেন। অথচ হত্যা করার ব্যাপারে তার কোনোরূপ ইচ্ছা ছিল না। এবং থাপ্পড় দ্বারা সাধারণত কোনো মানুষ মারাও যায় না। কিন্তু এতদ্বসত্ত্বেও মূসা (আ.) আল্লাহ তাআলার কাছে কায়মনোবাক্যে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন।
আল্লামা রাযী (রহ.) তার তাফসীর গ্রন্থে লিখেন, নবীগণের ইসমত চারটি বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত। ১. আকীদা-বিশ্বাস ২. দ্বীনের প্রচার ৩. ফাতাওয়া ও ইজতেহাদ ৪. কাজকর্ম ও স্বভাব-চরিত্র।
প্রথম দুই প্রকারের ক্ষেত্রে নবীদের থেকে কোনো ত্রুটি প্রকাশিত হয়নি। আর ইজতেহাদের ব্যাপারে আলেমদের অভিমত হলো, কোনো বিষয়ে সমাধানের জন্য নবীগণ প্রথমে ওহীর অপেক্ষা করতেন।
যদি ওহী অবতীর্ণ হত তাহলে সেই অনুযায়ীই আমল করতেন। আর যদি ওহী না আসত তাহলে নবীগণ ইজতেহাদ করতেন। যদি তাদের ইজতেহাদের মধ্যে আল্লাহর ইচ্ছার বিপরীত কোনো সিদ্ধান্ত আসত তাহলে আল্লাহ তাআলা তাদেরকে সতর্ক করে দিতেন।
চতুর্থ প্রকারের ব্যাপারে আলেমদের মত হলো, এ ব্যাপারেও আল্লাহ তাআলা নবীগণকে নফস ও শয়তানের প্রভাব থেকে হেফাজত করেছেন। তবে কখনো কখনো তাদের শানের অনুপোযোগী কিছু কাজ প্রকাশিত হয়েছে, যা প্রকৃতপক্ষে পাপ ছিল না। বিশেষ কিছু উদ্দেশ্যেই আল্লাহ তাদের থেকে এমন কাজ প্রকাশ করেছেন।
মাআরিফুল কুরআন, ইদরীস কান্ধলবী ১/১০০-১১৩; তাফসীরে কাবীর ১৩/২৬; আল বাহরুল মুহীত ৯/১৫১; নাসিমুর রিয়াজ ৩/৫৪৬
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم