প্রশ্ন
বর্তমানে আমরা দেখছি, সন্তানের উপর পিতা-মাতার চেয়ে অসুস্থ সংস্কৃতি, বন্ধু-বান্ধবসহ অন্যান্যদের প্রভাব বেশি পড়ছে। যার ফলে তারা খারাপ পথে পরিচালিত হচ্ছে। তাদেরকে জান্নাতের পথে আনতে হলে আমরা কী করতে পারি? এক্ষেত্রে আমাদের করণীয় কী হবে?
উত্তর
بسم الله الرحمٰن الرحيم. حامدا و مصليا و مسلما
বন্ধুত্বের প্রভাব মানুষের উপর পড়ে। এ বিষয়টি রাসূল (সা.) প্রায় পনেরশত বছর আগেই বলে গিয়েছেন। হাদিস শরিফে এসেছে,
الْمَرْءُ عَلَى دِينِ خَلِيلِهِ، فَلْيَنْظُرْ أَحَدُكُمْ مَنْ يُخَالِلْ
‘মানুষ তার বন্ধুর আদর্শে গড়ে উঠে। সুতরাং তার বন্ধু নির্বাচনের সময় এ বিষয়ে খেয়াল রাখা উচিত, সে কাকে বন্ধু নির্বাচন করছে।’ [মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ৮৪১৭]
একটি প্রবাদ বাক্য রয়েছে যে, ‘ব্যক্তির পরিচয় পাওয়া যায় তার বন্ধুর মাধ্যমে’। বন্ধু ভালো হলে ব্যক্তিও ভালো হবে। আর বন্ধু খারাপ হলে তার চরিত্রও খারাপের দিকে যাবে। এ কারণে হাদিস শরিফে বলা হয়েছে,
الْمَرْءُ مَعَ مَنْ أَحَبَّ
‘মানুষ (দুনিয়াতে) যাকে ভালবাসবে (কিয়ামতে) সে তারই সঙ্গী হবে।’ [সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৭৩৭]
তাই বন্ধু নির্বাচনে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। আরেক হাদিসে রাসূল (সা.) সৎ ও অসৎ বন্ধুকে আতর বিক্রেতা ও কামারের সাথে তুলনা করেছেন। হাদিসের ভাষ্য হল,
مَثَلُ الْجَلِيسِ الصَّالِحِ وَالْجَلِيسِ السَّوْءِ كَمَثَلِ صَاحِبِ الْمِسْكِ وَكِيرِ الْحَدَّادِ لاَ يَعْدَمُكَ مِنْ صَاحِبِ الْمِسْكِ إِمَّا تَشْتَرِيهِ أَوْ تَجِدُ رِيحَهُ وَكِيرُ الْحَدَّادِ يُحْرِقُ بَدَنَكَ أَوْ ثَوْبَكَ أَوْ تَجِدُ مِنْهُ رِيحًا خَبِيثَةً
‘সৎ সঙ্গী ও অসৎ সঙ্গীর উদাহরণ মেশক আম্বর বিক্রেতা ও কর্মকারের হাপরের ন্যায়। আতর বিক্রেতাদের থেকে শূন্য হাতে ফিরে আসবে না। হয় তুমি আতর খরিদ করবে, না হয় তার সুঘ্রাণ পাবে। আর কর্মকারের হাপর হয় তোমার ঘর অথবা তোমার কাপড় পুড়িয়ে দেবে, না হয় তুমি তার দুর্গন্ধ পাবে।’ [সহিহ বুখারি, হাদিস: ২১০১]
সুতরাং পিতা-মাতার দায়িত্ব হল, সন্তান কাকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করছে তার খোঁজ-খবর নেওয়া। ভালো বন্ধু নির্বাচনে তাদেরকে সহায়তা করা। ইসলামি স্কলারদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া। কিন্তু সেটি না করে আমরা পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি অমুক-তমুক সেলিব্রেটির সাথে। যাদের মাধ্যমে দ্বীন ও দুনিয়ার ক্ষতি হবে তাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি। অথচ পিতা-মাতার দায়িত্ব ছিল সন্তানকে রাসূলের আদর্শে আদর্শবান করা। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,
لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ
‘অবশ্যই তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।’ [সূরা আহযাব, আয়াত: ২১]
পড়া-লেখার জন্য আমরা তাদেরকে যেভাবে খেয়াল করে থাকি আখেরাতের জন্যও এরচেয়ে বেশি খেয়াল রাখতে হবে।, তাদেরকে ইসলামের শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে। রাসূল (সা.) ও সাহাবায়ে কেরামের ঘটনাবলী তাদের সামনে আলোচনা করতে হবে। ইসলামি স্কলারদের সাথে তাদেরকে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে। তাদের কাছে আসা যাওয়া করতে হবে। এগুলো পিতা-মাতার দায়িত্ব। এ কাজগুলো করলে আশা করা পিতামাতা তাদের দায়িত্ব থেকে মুক্ত হতে পারবেন।
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم