প্রশ্ন
আমাদের সাধারণ লোকদের মাঝে এই ধারণা আছে যে, কুরআন বুঝার দায়িত্ব শুধু আলেমদের। আমাদের দায়িত্ব শুধু খতম দেওয়া। বুঝার দায়িত্ব নয়। এ ব্যাপারে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি কী?
উত্তর
بسم الله الرحمٰن الرحيم. حامدا و مصليا و مسلما
কুরআন হেফাজতের দায়িত্ব স্বয়ং আল্লাহ তাআলা নিয়েছেন। কুরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে,
إِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا الذِّكْرَ وَإِنَّا لَهُ لَحَافِظُونَ
‘নিশ্চয় আমিই কুরআন নাজিল করেছি আর অবশ্যই আমি তার সংরক্ষক।’ [সূরা হিজর, আয়াত: ৯]
কুরআন বুঝা মানুষের জন্য কঠিন নয়, বরং সহজ। আল্লাহ তাআলা নিজেই তা সহজ করে দিয়েছেন। কুরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে,
وَلَقَدْ يَسَّرْنَا الْقُرْآنَ لِلذِّكْرِ فَهَلْ مِنْ مُدَّكِرٍ
‘আর আমি তো কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি উপদেশ গ্রহণের জন্য। অতএব কোন উপদেশ গ্রহণকারী আছে কি?’ [সূরা কামার, আয়াত: ১৭]
কুরআন সকলকেই বুঝে পড়ার চেষ্টা করতে হবে। এ দায়িত্ব সকলের। একারণেই ইসলামি শরিয়তে কুরআনের পরিচয় দেওয়া হয়েছে এভাবে,
القرآن اسم للنظم والمعنى جميعا
‘কুরআন শব্দ ও অর্থ উভয়ের সমষ্টি।’ [নুরুল আনওয়ার ১/৩৮]
মানুষের ব্যক্তিগত, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক জীবনসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে এই কুরআন সুষ্ঠু সমাধান দিয়েছে। কাজেই শুধু পড়ার দ্বারা কুরআনের যথাযথ হক আদায় হবে না। বরং বুঝে পড়তে হবে। কুরআনের বিধি-বিধান মোতাবেক জীবন পরিচালনা করতে হবে। কাজেই কুরআন বুঝার দায়িত্ব শুধু আলেমদের উপর ছেড়ে দিলেই হবে না, বরং নিজেদের সর্বাত্মক চেষ্টা করে যেতে হবে। কারণ কুরআন সম্পর্কে বিভিন্ন দলে ভাগ হওয়াকে আল্লাহ তাআলা তিরষ্কার করেছেন। কুরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে,
الَّذِينَ جَعَلُوا الْقُرْآنَ عِضِينَ (91) فَوَرَبِّكَ لَنَسْأَلَنَّهُمْ أَجْمَعِينَ (92) عَمَّا كَانُوا يَعْمَلُونَ (93)
‘যারা কুরআনকে বিভিন্নভাবে বিভক্ত করেছে। সুতরাং তোমার রবের শপথ! আমি তাদের সকলকে প্রশ্ন করবই, সেই বিষয়ে, যা তারা করে।’ [সূরা হিজর, আয়াত: ৯১-৯৩]
পাশাপাশি কুরআনের সাথে বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে হবে। কারণ এই কুরআনের মাধ্যমেই আমরা সঠিক পথে পরিচালিত হতে পারি। কুরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে,
وَأُوحِيَ إِلَيَّ هَٰذَا الْقُرْآنُ لِأُنذِرَكُم بِهِ وَمَن بَلَغَ
‘আর এ কুরআন আমার কাছে ওহী করে পাঠানো হয়েছে যেন তোমাদেরকে ও যার কাছে এটা পৌঁছবে তাদেরকে এর মাধ্যমে আমি সতর্ক করি।’ [সূরা আনআম, আয়াত: ১৯]
কুরআনের প্রায় তেতাল্লিশ স্থানে কুরআন থেকে হেদায়েত গ্রহণ করতে, আমল করতে ও কুরআন বুঝতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আরেক আয়াতে ইরশাদ হয়েছে,
وَلَقَدْ صَرَّفْنَا فِي هَذَا الْقُرْآنِ لِيَذَّكَّرُوا وَمَا يَزِيدُهُمْ إِلَّا نُفُورًا
‘আর অবশ্যই আমি এ কুরআনে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছি, যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে; কিন্তু তা কেবল তাদের বিমুখতাই বৃদ্ধি করে।’ [সূরা বনী ইসরাইল, আয়াত: ৪১]
সর্বোপরি কুরআন পাঠের সময় অবশ্যই আমাদেরকে শয়তান থেকে আশ্রয় পার্থনা করতে হবে। কেননা, কুরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে,
فَإِذَا قَرَأْتَ الْقُرْآنَ فَاسْتَعِذْ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ
‘সুতরাং যখন তুমি কুরআন পড়বে তখন আল্লাহর কাছে বিতাড়িত শয়তান হতে পানাহ চাও।’ [সূরা নাহল, আয়াত: ৯৮]
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে কুরআন বুঝে পড়ার তাওফিক দান করুন।
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم