প্রশ্ন
বিশ্বায়ন বা গ্লোবালাইজেশন বিংশ শতকের শেষভাগে উদ্ভূত এমন একটি আন্তর্জাতিক অবস্থা যাতে পৃথিবীর বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান, উৎপাদন ও বিপণন ব্যবস্থা দৈশিক গণ্ডি ছাড়িয়ে আন্তঃদেশীয় পরিসরে পরিব্যাপ্তি লাভ করেছে। এর ফলে সারা বিশ্ব একটি পরিব্যাপ্ত সমাজে পরিণত হয়েছে এবং অভিন্ন বিনিয়োগ,কর্মসংস্থান,উৎপাদন ও বিপণন প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন দেশ যুগপৎ অংশ গ্রহণ করছে। আমি জানতে চাই, বিশ্বায়নের ক্ষেত্রে ইসলামের সামর্থ্য কতটুকু? এ ব্যাপারে ইসলামের কনসেপ্ট কী?
উত্তর
بسم الله الرحمٰن الرحيم. حامدا و مصليا و مسلما
দুনিয়া ও আখেরাত দুইটি ভিন্ন জিনিস হলেও একটি আরেকটির জন্য সম্পূরক। একারণেই আমাদেরকে দোয়া শিক্ষা দেওয়া হয়েছে,
رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
‘হে আমাদের রব, আমাদেরকে দুনিয়াতে কল্যাণ দিন। আর আখিরাতেও কল্যাণ দিন এবং আমাদেরকে আগুনের আযাব থেকে রক্ষা করুন।’ [সূরা বাকারা, আয়াত: ২০১]
দুনিয়া ও আখেরাত উভয়ই আমাদের চিন্তা-চেতনার অন্তর্ভুক্ত। কাজেই একজন মুসলমান কখনই আঞ্চলিক হতে পারে না। বরং তাকে গোটা মানবজাতিকে নিয়েই ভাবতে হবে। মানবজাতিকে আলোর পথ দেখাতে হবে।
দেখুন, আল্লাহ তাআলা রাসূল (সা.)-কে গোটা মানব জাতির জন্য রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছেন। কুরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে,
وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِّلْعَالَمِينَ
‘আর আমি তো তোমাকে বিশ্ববাসীর জন্য রহমত হিসেবেই প্রেরণ করেছি।’ [সূরা আম্বীয়া, আয়াত: ১০৭]
আজ আমরা বিশ্বায়নের কথা বলছি। অথচ আল্লাহ তাআলা আগেই বিশ্বায়নের কল্যাণের কথা বলে দিয়েছেন। আমি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে সূরা ফাতিহা পড়ি। সেখানেও রয়েছে বিশ্বায়নের ভাবনা। যেমন,
الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ
‘যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই জন্য।’ [সূরা ফাতিহা, আয়াত: ১]
শুধু এই পৃথিবীই নয়, বরং যত গ্রহ আছে সবই আমাদের চিন্তা-চেতনার ভিতরে থাকবে। অথচ আমরা কুরআন নিয়ে গবেষণা করছি না। যার ফলে আমাদের চিন্তা-চেতনার পরিধি সীমিত হয়ে গিয়েছে। আমরা যদি কুরআন নিয়ে গবেষণা করি তাহলে দেখতে পাব, আজ তারা যে বিশ্বায়নের কথা বলছে তা প্রায় পনেরশত বছর আগে রাসূল (সা.) বলে গিয়েছেন। যেদিন তিনি ঘোষণা করেছিলেন,
قُلْ يَاأَيُّهَا النَّاسُ إِنِّي رَسُولُ اللَّهِ إِلَيْكُمْ جَمِيعًا
‘বল, হে মানুষ, আমি তোমাদের সবার প্রতি আল্লাহর রাসূল।’ [সূরা আরাফ, আয়াত: ১৫৮]
রাসূল (সা.) কিয়ামত পর্যন্ত সকল মানুষের নবী। তাঁর পর আর কোনো নবী আসবে না। হাদিস শরিফে এসেছে রাসূল (সা.) বলেছেন,
إِنَّ الرِّسَالَةَ وَالنُّبُوَّةَ قَدِ انْقَطَعَتْ فَلاَ رَسُولَ بَعْدِي وَلاَ نَبِيَّ
‘রিসালাত ও নবুওয়াতের ধারাবাহিকতা অবশ্যই সমাপ্ত হয়ে গেছে। অতএব, আমার পরে আর কোন রাসূলও প্রেরিত হবে না এবং নবীও আসবে না।’ [সূনানে তিরমিযী, হাদিস: ২২৭২]
সুতরাং বিশ্বায়নের ভাবনা আমাদের কাছে পূর্বে থেকেই বিদ্যমান রয়েছে। আমাদের দরকার শুধু বুঝা, মানা ও বাস্তবায়ন করা।
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم