প্রশ্ন
বর্তমান পৃথিবীতে মানবাধিকারের বিষয়টি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ইসলাম এ সম্পর্কে কী বলে?
উত্তর
بسم الله الرحمٰن الرحيم. حامدا و مصليا و مسلما
ইসলাম-পূর্ব যুগে মানুষের কোনো অধিকার ছিল না। মানুষ তার অধিকার সম্পর্কে ছিল অজ্ঞ। আমাদের নবী রাসূলে আরাবী (সা.) সর্বপ্রথম স্বীয় কর্মের মাধ্যমে মানবাধিকার সুনিশ্চিত করেছেন। তিনি বিদায় হজ্বের ভাষণে আরাফার ময়দানে মানবাধিকারের ঘোষণা দিয়ে পৃথিবীর মানুষকে চমকে দিয়েছিলেন। ইরশাদ করেছিলেন,
إِنَّ دِمَاءَكُمْ وَأَمْوَالَكُمْ عَلَيْكُمْ حَرَامٌ كَحُرْمَةِ يَوْمِكُمْ هَذَا فِي شَهْرِكُمْ هَذَا فِي بَلَدِكُمْ هَذَا … وَدِمَاءُ الْجَاهِلِيَّةِ مَوْضُوعَةٌ … وَرِبَا الْجَاهِلِيَّةِ مَوْضُوعٌ
‘নিশ্চয়ই তোমাদের রক্ত ও সম্পদ (পরস্পরের জন্য) আজকের এই দিন, এই মাস এবং এই শহরের মতোই সম্মানিত।… জাহিলী যুগের রক্তের সকল দাবী বাতিল।…. জাহিলী যুগের সুদও বাতিল হলো।’ [সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৪৭; সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ১৯০৫]
আরেক হাদিসে এসেছে রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন,
أَلَا لَا فَضْلَ لِعَرَبِيٍّ عَلَى عَجَمِيٍّ وَلَا لِعَجَمِيٍّ عَلَى عَرَبِيٍّ وَلَا لِأَحْمَرَ عَلَى أَسْوَدَ وَلَا أَسْوَدَ عَلَى أَحْمَرَ إِلَّا بِالتَّقْوَى
‘শোনো, আরবীর উপর অনারবীর এবং অনারবীর উপর আরবীর, কৃষ্ণকায়ের উপর শ্বেতকায়ের এবং শ্বেতকায়ের উপর কৃষ্ণকায়ের কোন শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা নেই। শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা আছে তো কেবল তাকওয়ার কারণেই।’ [মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ২৩৪৮৯]
আরেক হাদিসে এসেছে রাসূল (সা.) বলেছেন,
كُلُّكُمْ لِآدَمَ، وَآدَمُ مِنْ تُرَابٍ
‘তোমরা প্রত্যেকেই আদম (আ.) থেকে, আর আদম (আ.) মাটি থেকে।’ [আখবারু মাক্কা, ২/১২১]
আল্লাহ তাআলা কুরআন মাজিদে ইরশাদ করেছেন,
يَاأَيُّهَا النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَاكُمْ مِنْ ذَكَرٍ وَأُنْثَى وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوبًا وَقَبَائِلَ لِتَعَارَفُوا إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ
‘হে মানুষ, আমি তোমাদেরকে এক নারী ও এক পুরুষ থেকে সৃষ্টি করেছি আর তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি। যাতে তোমরা পরস্পর পরিচিত হতে পার। তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সেই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন যে তোমাদের মধ্যে অধিক তাকওয়া সম্পন্ন। নিশ্চয় আল্লাহ তো সর্বজ্ঞ, সম্যক অবহিত।’ [সূরা হুজুরাত, আয়াত: ১৩]
পৃথিবীর বুকে বহু মানুষ সুন্দর করে কথা বলতে পারে। কিন্তু আমল করে দেখানোর মত মানুষ খুব কমই আছে। অথচ রাসূল (সা.) শুধু বলেই ক্ষান্ত হননি, বরং আমল করে পৃথিবীর বুকে দৃষ্টান্ত পেশ করে দেখিয়েছেন। বর্তমানে জাতিসংঘ মানবাধিকারের কথা বলে থাকে। এই জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠার একশত বছরও হয়নি। অথচ আমাদের নবী রাসূল (সা.) প্রায় চৌদ্দশত বছর আগেই মানবাধিকারের কথা বলে গেছেন। পাশাপাশি তিনি নিজে তা করেও দেখিছেন। খোলাফায়ে রাশেদিনগণও তা বাস্তবায়ন করে গেছেন। তাই মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে আমাদের রাসূল (সা.) এর দেখানো নীতি অনুসরণ করতে হবে। এ ছাড়া মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم