ফিক্হ এর সংগা ঃÑ
১. ইলমে ফিক্হ হলো এমনই এক ইলম বা বিদ্যার নাম যাতে আহকামে শরীয়ার এমন আহকামসমূহ আলোচিত হয়, যে আহকাম বিস্তারিত দলীল হতে নির্গত।
২. আল্লামা সূয়ূতী (র:) বলেন Ñ
কুরআন হাদীস অর্জিত বিবেক বুদ্ধি বিবেচনা, সূক্ষ্ম চিন্তার মাধ্যমে লব্ধ জ্ঞানকে ফিক্হ ( ) বলা হয়।
ফিক্হ শাস্ত্রের প্রয়োজনীয়তা
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স)- এর ইন্তেকালের পরে ইসলামের বিপুল ব্যাপ্তির ফলে নুতন সমস্যার উদ্ভব হয়। যদিও হযরত আবু বকর ও ওমর (রা)-এর শাসনামলে এ মতভেদ দানা বেঁধে উঠতে পারেনি; কিন্তু পরবর্তীতে হযরত ওসমান (রা)-এর খেলাফতের শেষের দিকে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অশান্ত হয়ে ওঠে। আর ৪র্থ খলীফা হযরত আলী (রা)-এর সময়ে এসে এ রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিরূপ ধারণ করে। দলাদলিসহ মাযহাবী সম্প্রদায়ের বীজ বপন করে। এ থেকেই সৃষ্টি হয় দু’টি ভিন্নধর্মী সম্প্রদায়Ñ
১. খারেজী ও
২. শীয়া।
এরা উভয় দলই মুসলমান। কিন্তু ধর্মীয় চিন্তাধারা সম্পূর্ণ ভিন্ন।
যদিও খারেজীরা তাদের স্বাতন্ত্র হারিয়ে ফেলায় পৃথিবীর মানচিত্র হতে সাংগঠনিক রূপ হারিয়ে ফেলেছে প্রায়। কারণ এদের মূলনীতি হলো ঃ
٭ কুরআন শরীফ এবং
٭ হযরত আবু বকর ও ওমর (রা)-এর সময়কালীন হাদীসসমূহ।
٭ শায়ীগণ অবশ্য সারা বিশ্বে এখনো বিদ্যমান আছে।
উমাইয়া শাসনের মধ্য যুগ ঃ
উমাইয়া শাসনের সময় কালেও আলেম সম্প্রদায় দু’টি দলে বিভক্ত হলো। যেমনÑ
১. আহলে হাদীস ও
২. আহলে রায়।
আহলে হাদীস ঃ
এরা শুধু হাদীসের বাহ্যিক অর্থ ও উদ্দেশ্য অনুসারে আমল করত। আর কে দোষনীয় মনে করত। হেজাজবাসীরা এ মতে বিশ্বাসী ছিল।
আহলে রায় ঃ
এরা কুরআন ও হাদীসের আলোকে তীক্ষè বুদ্ধিমত্তার ফলে ও যুক্তি তর্কের মাধ্যমে সমস্যার সমাধানে বিশ্বাসী ছিল। ইরাকবাসীরা এ মতের অনুসরণ করত।
হিজরী প্রথম শতাব্দি ঃ
হিজরী ১ম শতাব্দির শেষের দিকে এ দ্বন্দ্ব আরো বেড়ে চলে। এমনকি দ্বন্দ্বের ফলে হাদীসে নব্বী বিনষ্ট হওয়ার আশংকা দেখে উমাইয়া খলীফা ওমর বিন আব্দুল আযীয হাদীস সংকলনের নির্দেশ দেন।
হিজরী ২য় শতাব্দি ঃ
আহলে হাদীস ও আহলে রায়ের মধ্যে এ সময় ঝগড়া তুমুলে ওঠে। হাদীসের আমল নিয়ে বিপুল মতানৈক্য দেখা দেয়। হাদীসের ধরণ প্রকরণ নিয়েও মতামতের দ্বন্দ্ব পরিলক্ষিত হয়। এ সময় সাধারণ মুসলমানগণ রিবাট ঝামেলার মধ্যে নিপতিত হয়। এমনকি তারা অতিষ্ট হয়ে একটা বিধান কামনা করতে থাকে।
ফিক্হ সংকলন
সংকলনের যুগ ঃ
ইলমে ফিক্হ সংকলন ও সম্পাদনা ২৩০ হিজরী মোতাবেক ৮৫২ খ্রিষ্টাব্দ হতে শুরু হয়। সে শুরু হতে আজ পর্যন্ত ইলমে ফিক্হ সম্পাদনার যুগকে প্রখ্যাত মুফতী ও মুজতাহিদগণ ৩ ভাবে বিভক্ত করেছেন। যেমনÑ
প্রথম যুগ ২৩০ হিজরী হতে ৪০০ হিজরী পর্যন্ত
দ্বিতীয় যুগ ৪০০ হিজরী হতে ৭০০ হিজরী পর্যন্ত
তৃতীয় যুগ ৭০০ হিজরী হতে শুরু হয়।
প্রথম যুগ ঃ
এ যুগকেই বলা হয়ে থাকে ইজতেহাদের যুগ। ২৩০ হিজরী মোতাবেক ৮৫২ সাল হতে এ যুগ গণনা করা হয়।
٭ এ সময় ইমাম হানীফা (র) স্বীয় শীষ্যবর্গদেরকে নিয়ে ইলমে ফিক্হ সম্পাদনা শুরু করেন।
٭ ইমাম আবু হানীফা ব্যতীত অন্যান্য ইমামগণও এ সময় ফিক্হ সম্পাদনা করেন, কিন্তু তেমন উল্লেখযোগ্য নয়।
٭ ওয়াল জামায়াতের চারটি এ সময়ই সংকলিত ও সম্পাদিত হয়।
٭ এ যুগে ইজতেহাদের দ্বার উন্মুক্ত ছিল।
٭ এ সময় হতেই লোকজন কোন ফকীহর অনুসরণ শুরু করেন।
٭ ফিক্হ শাস্ত্র মোতাবেক বিচারকগণ এ সময় হতেই বিচার কার্য পরিচালনা করেন।
٭ আলেমগণ ইজতিহাদী মাসয়ালা এ সময় হতেই রচনা শুরু করেন।
٭ এ সময়ই সম্পদিত হয়।
٭ ৪০০ হিজরী মোতাবেক ১০২২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এ যুগের সময় সীমা ধরা হয়।
দ্বিতীয় যুগ ঃ
٭ এ যুগকেই তাকলীদের যুগ বলা হয়।
٭ ৪০০ হিজরী হতে এ যুগের শুরু।
٭ আলেম সম্প্রদায় ও সাধারণ জনতার মতো কোন না কোন মাযহাব অনুসরণ শুরু করেন এ সময় হতেই।
٭ ইজতিহাদের দ্বার প্রায় বন্ধ হয় এ সময়েই।
٭ আলেমগণ এ সময় হতেই স্বীয় মাযহাব অনুসরণে বড় বড় কিতাব রচনা করেন।
٭ আলেমগণের সর্বসম্মতিক্রমে এ সময়েই ৪টি মাযহাব নির্ধারিত হয়। যেমনÑ
১. ইমাম আবু হানীফার (র) হানাফী মাযহাব।
২. ইমাম শাফেয়ীর (র) শাফেয়ী মাযহাব।
৩. ইমাম মালেকের (র) মালেকী মাযহাব ও
৪. ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বলের (র) হাম্বলী মাযহাব।
٭ এ চারটি মাযহাবকেই নিষ্কলুষ সত্য বলে ঘোষণা দেয়া হয় এ সময়েই।
٭ এ চার মাযহাবের অনুকরণ প্রত্যেকের জন্য অবশ্য কর্তব্য করা হয়।
٭ এ সময়েই ঘোষিত হয় যে, একাধিক মাযহাব অনুসরণ নিষিদ্ধ।
٭ সাধারণ লোকজন এ সময় হতেই সমস্যা বিজড়িত মাসয়ালা নিয়ে ফকীহ বা ইমামগণের নিকট যেত।
٭ হিজরী ৭০০ শতাব্দি মোতাবেক ১৩২২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ২য় যুগ ধরা হয়।
তৃতীয় যুগ ঃ
٭ তৃতীয় যুগকেই পূর্ণ তাকলীদ বা অনুসরণের যুগ বলা হয়।
٭ হিজরী ৭৫০ সাল মোতাবেক ১৩৭২ খ্রিস্টাব্দ হতেই এ যুগের শুরু।
٭ ইজতেহাদ এ সময় হতেই বন্ধ হয়েছে।
٭ স্বেচ্ছাচারিতা এ সময় হতেই বন্ধ হয়েছে।
٭ ইজতেহাদ বন্ধ হলে নতুন সমস্যার জন্য ইজতেহাদের দ্বার আজীবন উন্মুক্ত।
٭ এ সময়েই প্রথম ও ২য় যুগের বিরচিত গ্রন্থসমূহের বহু ব্যাখ্যা ও টীকা গ্রন্থ রচিত হয়।