প্রশ্ন
হিন্দুদের পূজায় দেবতার উদ্দেশ্যে নিবেদিত খাদ্য বা কোনো উদ্দেশ্য অর্জনের লক্ষ্যে মাজারে, নদীতে বা অন্যান্য জায়গায় যে সমস্ত খাদ্য দ্রব্যাদি উৎসর্গ করা হয়, যেগুলোকে স্থানীয় ভাষায় ভোগ বলা হয়, তা গ্রহণ করা এবং খাওয়া জায়েয আছে কী? যদি জায়েয হয়ে থাকে তাহলে কাদের জন্য খাওয়া জায়েয? মুশরিকদের ভোগ খাওয়া বৈধ কিনা? ভোগ ও মান্নতের মধ্যে পার্থক্য কী? ভোগের আলামতযুক্ত কোনো জীবিত ছাগল পাওয়া গেলে সেটা জবাই করে খাওয়ার বিধান কী?
উত্তর
بسم الله الرحمٰن الرحيم. حامدا و مصليا و مسلما
মুশরিকদের ভোগ কারো জন্য খাওয়া জায়েয নয়। মুসলমানদের ভোগও যদি গাইরুল্লাহর উদ্দেশ্যে হয় তাহলে তাও কারো জন্য খাওয়া জায়েয হবে না।
ভোগ ও মান্নতের মধ্যে পার্থক্য হলো, ভোগ মানুষের মাঝে প্রচলিত একটি কুপ্রথা এবং তা সাধারণত গাইরুল্লাহর উদ্দেশ্যে হয়ে থাকে।
আর মান্নত যদি সঠিক পদ্ধতিতে আল্লাহর নামে হয়ে থাকে তাহলে সেটা শরিয়তসম্মত একটি ইবাদত বলে গণ্য হয়। আর এরকম মান্নতের খাদ্যবস্তু ফকির মিসকিন তথা গরিবরা খেতে পারে।
তবে মান্নত যদি ভোগ- এর মত গাইরুল্লাহর উদ্দেশ্যে করা হয়, তাহলে এই মান্নত প্রচলিত ভোগের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। আর গাইরুল্লাহ উদ্দেশ্যে জবাই করা প্রাণী মূলত তিন প্রকার-
এক. জবাইয়ের সময় আল্লাহর নাম ব্যতীত অন্য কারো নামে জবাই করা হয়।
দুই. জবাই করা হয় গাইরুল্লাহ উদ্দেশ্যে, কিন্তু জবাই হয় আল্লাহর নামে।
তিন. গাইরুল্লাহর উদ্দেশ্যে প্রাণী ছেড়ে দেওয়া হয়, কিন্তু জবাই উদ্দেশ্য হয় না।
উপরোক্ত তিন প্রকার প্রাণীর বিধান:
প্রথম দুই প্রকার প্রাণী খাওয়া সম্পূর্ণরূপে নাজায়েয।
আল্লাহ তাআলা কুরআন মাজিদে বলেন:
حُرِّمَتْ عَلَيْكُمُ الْمَيْتَةُ وَالْدَّمُ وَلَحْمُ الْخِنْزِيرِ وَمَا أُهِلَّ لِغَيْرِ اللّهِ بِهِ وَالْمُنْخَنِقَةُ وَالْمَوْقُوذَةُ وَالْمُتَرَدِّيَةُ وَالنَّطِيحَةُ وَمَا أَكَلَ السَّبُعُ إِلاَّ مَا ذَكَّيْتُمْ وَمَا ذُبِحَ عَلَى النُّصُبِ وَأَن تَسْتَقْسِمُواْ بِالأَزْلاَمِ
‘তোমাদের জন্যে হারাম করা হয়েছে মৃত জীব, রক্ত, শুকরের মাংস, যেসব জন্তু আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে উৎসর্গকৃত হয়, যা কন্ঠরোধে মারা যায়, যা আঘাত লেগে মারা যায়, যা উচ্চ স্থান থেকে পতনের ফলে মারা যা, যা শিং এর আঘাতে মারা যায় এবং যাকে হিংস্র জন্তু ভক্ষণ করেছে, কিন্তু যাকে তোমরা যবেহ করেছ। যে জন্তু যজ্ঞবেদীতে যবেহ করা হয় এবং যা ভাগ্য নির্ধারক শর দ্বারা বন্টন করা হয়। এসব গোনাহর কাজ।’ [সূরা মায়েদা, আয়াত: ৩]
তৃতীয় প্রকার প্রাণীও নির্ভরযোগ্য মতানুযায়ী খাওয়া জায়েয নেই। তবে জবাই করার পূর্বে মালিক যদি তওবা করে আগের নিয়ত পরিবর্তন করে নেয় অথবা বিক্রয় করে দেয় বা কাউকে দান করে দেয় তখন তৃতীয় প্রকার প্রাণী খাওয়া বৈধ হবে।
প্রশ্নে বর্ণিত ছাগল তৃতীয় প্রকার প্রাণীর হুকুমের অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ উক্ত ছাগল জবাই করে খাওয়া জায়েয হবে না। (তবে জবাই করার পূর্বে মালিক যদি তওবা করে আগের নিয়ত পরিবর্তন করে নেয় অথবা বিক্রয় করে দেয় বা কাউকে দান করে দেয় তখন সেটা খাওয়া জায়েয হবে। নতুবা সেটা খাওয়া হারাম হবে) এবং এর মূল্য মালিককে খুঁজে বের করে ফেরত দিতে হবে। একান্তই যদি মালিককে খুঁজে পাওয়া না যায় তাহলে উক্ত ছাগলের মূল্য গরীবদের মাঝে সদকা করে দিতে হবে।
আর যদি ছাগলের গোশত ভক্ষণকারীরা নিজেরাই গরিব হয়, তাহলে তাদের জন্য মূল্য সদকা করা জরুরি নয়। তবে তওবা করা জরুরি।
আল বাহলুল রায়িক ২/৩২০, আর আশবাহ ওয়ান নাযাইর, পৃ. ৩১৯, ফাতাওয়া শামী ২/৪৩৯, ৬/৩০৯, তাফসীরে আজিজি ২/৯৪৪
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم