প্রশ্ন
একজন বিবাহিত মেয়ের উপর তার বাবা-মা’র প্রতি এমন কী কী হক রয়েছে যা আদায় করা আবশ্যক? এবং সেই হক গুলো আদায় না করলে আল্লাহ তায়ালা কি কোনো শাস্তি দিবেন?
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
حامدا و مصليا و مسلما
১. নিজের মা-বাবার সঙ্গে সদাচারণ করা- যার নির্দেশ আল্লাহ তাআলা কোরআন মজিদে এবং রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর বহু হাদিসে দিয়েছেন। উক্ত নির্দেশ ছেলে হোক কিংবা মেয়ে হোক-উভয়ের প্রতি। কেননা ‘সন্তান’ বলতে ‘ছেলে-মেয়ে’ উভয়কেই বুঝানো হয়েছে। আর মা-বাবার জন্য সামর্থ্য অনুপাতে খরচ করা, তাঁদের খেদমত করা একপ্রকার ‘সদাচারণ’। সুতরাং মা-বাবা যদি এমন দরিদ্র হয় যে তাঁরা নিজের মালিকানার সম্পদে চলতে অক্ষম এবং অপরদিকে মেয়ে যদি সামর্থ্যবান ও বিত্তবান হয়, তাহলে তার ওপর মা-বাবার ভরণপোষণ ওয়াজিব। এক্ষেত্রে যদি তার সচ্ছল অন্য ভাইবোন থাকে তবে তাদের ওপরেও ভরণপোষণ সমানভাবে ওয়াজিব। সমর্থ থাকা সত্ত্বেও অভাবগ্রস্ত মা-বাবার খরচ না দিলে গুনাহগার হবে। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া ১/৫৬৪)
কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
وَقَضَى رَبُّكَ أَلاَّ تَعْبُدُواْ إِلاَّ إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا
তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সাথে সদব্যবহার কর। (সূরা ইসরা, আয়াত: ২৩)
অন্যত্র তিনি বলেন,
يَسْأَلُونَكَ مَاذَا يُنْفِقُونَ قُلْ مَا أَنْفَقْتُمْ مِنْ خَيْرٍ فَلِلْوَالِدَيْنِ وَالْأَقْرَبِينَ
তোমার কাছে জিজ্ঞাসা করে, তারা কী ব্যয় করবে? বলে দাও-যে বস্তুই তোমরা ব্যয় কর, তা হবে পিতা-মাতার জন্যে,আত্নীয়-আপন জনের জন্যে…। (সূরা বাকারা, আয়াত: ২১৫)
ইবন মুনযির (রহ.) বলেন,
أجمع أهل العلم على أن نفقة الوالدين الفقيرين اللذين لا كسب لهما ولا مال واجبة في مال الولد
ওলামায়ে কেরাম এব্যাপারে একমত যে, সন্তান যদি সামর্থ্যবান হয় এবং মা-বাবা যদি গরিব হয় তাহলে তাঁদের জন্য খরচ করা সন্তানের ওপর ওয়াজিব। (আল মুগনি ১১/৩৭৫)
আর যদি পিতা-মাতা সচ্ছল হয় কিংবা সন্তান-সন্ততি সামর্থ্যবান না হয় তাহলে মা-বাবার ভরণ-পোষণ দেওয়া ওয়াজিব নয়। যদিও এ ক্ষেত্রে উত্তম হলো, কষ্ট হলেও যথাসাধ্য মা-বাবারও ভরণ-পোষণের খরচ চালিয়ে যাওয়া। -তাবঈনুল হাকায়েক ৩/৬৪; রদ্দুল মুহতার ২/৬৭৮
২. সুতরাং উল্লেখিত জিজ্ঞাসার আলোকে মেয়ে/মেয়েদের প্রতি সংক্ষেপে ইসলামের নির্দেশ হল-
১. সর্বাবস্থায় মা-বাবার সঙ্গে সদাচারণ এবং তাঁদের যথাসাধ্য খেদমত করবে। তাঁদের খোঁজখবর নিবে। তাঁদের প্রয়োজনের দিকে খেয়াল রাখবে। তাঁদের শরীয়তসম্মত আদেশ মেনে চলবে। যথাযথভাবে খেয়াল রাখবে তাঁরা যেন কষ্ট না পায়।
২. সামর্থ্যবান হলে নিজের মোহর থেকে অথবা নিজ মালিকানাধীন অন্য সম্পদ থেকে বাবা-মায়ের জন্য খরচ করবে।
৩. সামর্থ্যবান না হলে মা-বাবার ভরণ-পোষণ দেওয়া ওয়াজিব নয়। তবে এক্ষেত্রে মেয়ে নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী পিতামাতাকে সাহায্য করার চেষ্টা করবে। এক্ষেত্রে মেয়েরা ঘরোয়া পরিবেশে শিক্ষকতা করে বা কোন হস্তশিল্প (যেমন সেলাই এর কাজ) বা হাঁস মুরগী পালন করে তাদের সহযোগিতা করতে পারে। স্বামীর সাথে আলোচনা সাপেক্ষে শরীয়তের সীমায় বৈধ হয় এমন যে কোন কর্ম সংস্থানে যোগ দিয়ে উপার্জন করতে পারে।
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم