প্রশ্ন
আমি একজন আলেমের কাছে জানতে পেরেছি যে, ব্যাংকে চাকরির মাধ্যমে উপার্জিত টাকা হারাম। ছেলে ব্যাংকে চাকরি করে। তাই তার উপার্জন দ্বারা মা-বাবা হজ্ব করতে পারবেন না। এই উত্তর থেকে আমার মনে সংশয় এসেছে যে-
১. বিভিন্ন বিধর্মী বিদেশী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ থেকে পোশাক আমদানী করে থাকে। তারা সুদকে হারাম মনে করে না। ব্যাংক থেকে সুদী লোন নিয়ে থাকে এবং ব্যাংক থেকে সুদ দেওয়া হলে তাও গ্রহণ করে। আমি উক্ত প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি হিসাবে বাংলাদেশে তাদের অফিসে কাজ পরিচালনা করে থাকি। এক্ষেত্রে আমার কাজ পোষাকশিল্প নিয়েই। প্রস্তুত করা থেকে নিয়ে শিপমেন্ট পর্যন্ত সকল কাজের পরিচালনা আমার দায়িত্বে। তো এ বাবদ তারা যে বিনিময় প্রদান করে থাকে তা গ্রহণ করা হালাল না হারাম?
২. আমার এক দ্বীনী ভাইয়েরও প্রশ্ন হল, উপরোক্ত কোম্পানী ও এধরনের প্রতিষ্ঠানের আমদানীকৃত পণ্য সে এদেশ থেকে বিদেশে পরিবহন করে থাকে। এ বাবদ তাদের থেকে প্রাপ্ত টাকা হালাল না হারাম। তার পরিবহন সংক্রান্ত কার্যাদিও বৈধ। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, তার পরিবহন খরচ পরিশোধ করছে তো উক্ত ইহুদী-খ্রিস্টানদের কোম্পানী, যারা সুদী লোন নেয় এবং ক্ষেত্রবিশেষে সুদ গ্রহণও করে। এ কারণে আমাদের বেতন ও পারিশ্রমিক অবৈধ গণ্য হবে কি না?
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
حامدا و مصليا و مسلما
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনাদের মূল কাজটি (অর্থাৎ পোশাক আমদানীতে সহযোগিতা ও পণ্যপরিবহনের কাজ) যেহেতু জায়েয তাই এ চাকরি করা বা সেবা দেওয়াও জায়েয। আর আপনাদের পারিশ্রমিক তো দৃশ্যত আপনাদের কাজের মাধ্যম থেকেই আসে। অর্থাৎ আমদানীকারকগণ কম মূল্যে পোশাক কিনে বেশি মূল্যে তা বিক্রয় করে থাকে এবং সেখান থেকে প্রাপ্ত মুনাফা তাদের কর্মচারী ও সেবাদাতাদেরকে দিয়ে থাকে। সুতরাং এটি অবৈধ নয়। তবে ঐ প্রতিষ্ঠানটি যে সুদী লোন নিয়ে কারবার করে থাকে, এটি তো অবশ্যই ঘৃণিত কাজ এবং সাধ্য থাকলে এমন প্রতিষ্ঠানের কাজ না করা তাকওয়ারও দাবি। কিন্তু এ কারণে এ প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত আয়কে নাজায়েয বলা যাবে না। কারণ তারা তো আর সুদের টাকা থেকে এ কর্মচারী বা সেবাদানকারীকে বেতন/পারিশ্রমিক দিচ্ছে এমনটি বলা যায় না এবং সুনিশ্চিতভাবে তা জানাও যায় না। তাই এ নিয়ে সংশয়ের প্রয়োজন নেই।
আর প্রশ্নে উদ্ধৃত মাসআলায় ব্যাংকে চাকরি বাবদ প্রাপ্ত অর্থ হারাম হওয়ার কারণ হল, ব্যাংকে চাকরির অর্থই হল, সুদী কারবারে সহায়তা করা এবং সুদী লেনদেন, সুদী চুক্তি লেখা বা তা সম্পাদনের ক্ষেত্রে কোনো না কোনো পর্যায়ে সরাসরি অংশগ্রহণ করা। আর এগুলোর সবই হারাম। এছাড়া ব্যাংকের উপার্জনের মূল অংশই আসে সুদ থেকে। তাই তা থেকে প্রদত্ত পারিশ্রমিকও হারাম হবে। তাই ব্যাংকের চাকরির সাথে প্রশ্নোক্ত দুটি কর্মস্থলের কোনো মিল নেই।
-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৪১০; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৭৩; ফাফাতাওয়া খানিয়া ২/৩২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৮/১৭৫, ১৫/১৩২
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم