প্রশ্ন
আমাদের এলাকায় কারও জন্মবার্ষিকী এবং মৃত্যুবার্ষিকী পালন করার প্রচলন খুবই কম। কিছুদিন আগে ঢাকার একজন আলেম বয়ানের মধ্যে রাসূল (সা.) সহ সকল মানুষের মৃত্যুবার্ষিকী ও জন্মবার্ষিকী পালন করা জায়েয বলে ফতোয়া দেন। এতে আমাদের এলাকায় সকলে একটা দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়ে যায়। সুতরাং উক্ত সমস্যার সমাধানকল্পে শরীয়তের দলিল উল্লেখ করে আমাদেরকে উপকৃত করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
حامدا و مصليا و مسلما
প্রশ্নোক্ত আলেমের কথা ঠিক নয়। জন্মবার্ষিকী-মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা এবং একে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা ইসলামের শিক্ষা নয়। এগুলো বিজাতীয় সংস্কৃতি। এসকল অহেতুক কাজ থেকে মুসলমানদের বিরত থাকা আবশ্যক। শরীয়তে জন্ম দিবস বা মৃত্যু দিবসের আলাদা কোনো গুরুত্ব নেই। বিশেষভাবে এই দিনে কোনো ধরনের আমল বা ইবাদতের বিধান নেই।
আর মৃতব্যক্তিদের জন্য ঈসালে সাওয়াব করা শরীয়ত স্বীকৃত। তবে এর জন্য কোনো দিনক্ষণ নির্দিষ্ট নেই। বরং যে কোনো সময় বা দিনে নফল নামায, দান-সদকা, দুআ ইত্যাদির মাধ্যমে ঈসালে সাওয়াব করা যেতে পারে। কোনো নির্দিষ্ট দিনে বা সময়ে করলে বিশেষ সাওয়াব পাওয়া যাবে- এমন নয়। সালাফে সালেহীন তথা স্বর্ণযুগেও নির্দিষ্ট দিনে মৃতের জন্য এ ধরনের ঈসালে সাওয়াবের আয়োজন করার কোনো প্রমাণ নেই। সুতরাং জন্মদিবস, মৃত্যুদিবস পালন বা এ সংক্রান্ত কোনো অনুষ্ঠান শরীয়তসম্মত নয়।
তেমনিভাবে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জন্মদিবস ও ওয়াফাতদিবস পালন করাটাও শরীয়তের কোনো দলীল দ্বারা প্রমাণিত নয়। এটা যদি জায়েয হত তাহলে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ওফাতের পরে সাহাবায়ে কেরামই সর্বাগ্রে করতেন। কারণ নিঃসন্দেহে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি তাঁদের মহব্বত পরবর্তীদের চেয়ে অনেক অনেক বেশি ছিল। কিন্তু এই ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশের পদ্ধতি যেহেতু তাদের ভালোভাবে জানা ছিল তাই তারা এর জন্য ঐসকল পন্থাই অবলম্বন করেছেন, যেগুলো সুন্নাহ-নির্দেশিত। কোনো একজন সাহাবী থেকেও ভালোবাসা প্রকাশের জন্য জন্মদিবস ও ওফাতদিবস পালন করার কথা প্রমাণিত নেই। তদ্রূপ তাবেয়ীন ও তাবে তাবেয়ীনের যুগেও এর কোনো চর্চা ছিল না।
প্রকাশ থাকে যে, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আগমন আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় রহমত ও সাআদাত। তাঁকে স্মরণ করে তাঁর জন্য দুআ করা এবং দরূদ ও সালাম প্রেরণ করা একদিকে যেমন ইবাদত অপরদিকে আমাদের জীবনে বরকতেরও কারণ। এবং তাঁর জীবনাদর্শ আলোচনা করে আমাদের জীবনে বাস্তবায়ন করা তাঁর প্রতি প্রকৃত ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। কিন্তু তা হতে হবে সে পদ্ধতিতে, যা সাহাবায়ে কেরাম তাদের জীবনে বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছেন। আর কোনোক্রমেই এ আমলগুলোকে কোনো নির্দিষ্ট মাস বা দিনের সাথে সম্পৃক্ত করে নেয়া যাবে না; বরং তা হবে মুমিনের জীবনের অংশ। সে প্রতিদিনই নামাযের বাইরেও সাধ্যানুযায়ী আল্লাহর রাসূলের উপর দরূদ শরীফ পড়বে। এবং নিজ জীবনকে তাঁর আদর্শ ও এবং সুন্নাহ অনুযায়ী পরিচালিত করবে। এতেই আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি তার মহব্বতের প্রমাণ মিলবে। আল্লাহ তাআলা কুরআনে কারীমে ইরশাদ করেন-
قُلْ اِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّوْنَ اللهَ فَاتَّبِعُوْنِیْ یُحْبِبْكُمُ اللهُ وَ یَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوْبَكُمْ وَ اللهُ غَفُوْرٌ رَّحِیْم.
আপনি বলে দিন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস তবে আমার অনুসরণ কর, তাহলে আল্লাহ তোমাদের ভালবাসবেন এবং তোমাদের গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন। আর আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৩১)
-সহিহ বুখারি, হাদিস: ২৬৯৭; শরহে মুসলিম, নববী ১২/১৬; আলইতিসাম, শাতিবী ১/৫০; আলমাদখাল, ইবনুল হাজ ২/২, ৩/২৭৯; ইমদাদুল মুফতীন, পৃ. ১৫১; ফিকহুন নাওয়াযিল ২/১১০
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم
