প্রশ্ন
আমার আম্মা গত কয়েক মাস আগে মারা গেছেন। মারা যাওয়ার দুই মাস আগে তিনি তার সব জায়গা-সম্পত্তি আমার ছোট ভাইকে হেবা করে গেছেন এবং আমার ছোট ভাই আম্মার মৃত্যুর আগেই সেগুলো আম্মার কাছ থেকে বুঝে নিয়েছে। কিন্তু বিষয়টা আমরা জানতাম না, শুধু আব্বা জানতেন। তাই আম্মার মৃত্যুর পর আমরা জায়গা-সম্পত্তি ভাগ করে নিতে চাইলে আব্বা বাধা দিয়ে বলেন, তোর মা তার জায়গা-সম্পত্তি তোর ছোট ভাইকে হেবা করে গেছে। বিষয়টা আমরা সবাই আব্বার দিকে তাকিয়ে মেনে নিলেও বড় ভাই মানতে পারছেন না। বরং আব্বার সাথে একরকম ঝগড়া করে গ্রামের বাড়িতে আম্মার রেখে যাওয়া একটা জমি দখল করে নেন এবং টিনশেড ঘর বানিয়ে পরিবারসহ তাতে থাকা শুরু করেন। উল্লেখ্য, আমার আম্মা মৃত্যুর আগে কয়েক বছর প্যারালাইসিসে আক্রান্ত ছিলেন এবং এ রোগে আক্রান্ত অবস্থায়ই তিনি মারা গেছেন। তবে দীর্ঘদিন প্যারালাইসিসে আক্রান্ত থাকলেও এ কারণে তার শারীরিক অবস্থা দিন দিন অবনতির দিকে যায়নি। বরং মৃত্যু পর্যন্ত প্রায় এক অবস্থায় ছিল। তা ছাড়া মৃত্যুর আগে তিনি প্যারালাইসিস ছাড়া ভিন্ন কোনো রোগে আক্রান্ত হননি। এখন মুহতারামের কাছে প্রশ্ন হল, আমার আম্মা তো মৃত্যুর আগে তার ছোট ছেলেকে জায়গা-সম্পত্তি হেবা করার সময় প্যারালাইজড ছিলেন। সুতরাং এ অবস্থায় তিনি যে হেবা করেছেন, তা কি কার্যকর হয়েছে? দয়া করে সঠিক সমাধান জানিয়ে বাধিত করবেন।
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
حامدا و مصليا و مسلما
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার আম্মা যেহেতু মৃত্যুর আগে তার সব জায়গা-সম্পত্তি আপনার ছোট ভাইকে হেবা করে দিয়েছেন এবং সেও আপনার আম্মার মৃত্যুর আগেই আপনার আম্মা থেকে সব জায়গা-সম্পত্তি বুঝে নিয়েছে, তাই এক্ষেত্রে আপনার আম্মার উক্ত হেবা-দানটি কার্যকর হয়ে গেছে এবং আপনার ছোট ভাই এ সব জায়গা-সম্পত্তির মালিক হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে আপনার আম্মা প্যারালাইজড অবস্থায় থাকা উক্ত হেবা কার্যকর হতে প্রতিবন্ধক হবে না। কেননা প্যারালাইসিস রোগ সাধারণত দীর্ঘমেয়াদী হয়। এটি মারাযুল মওত হিসাবে গণ্য হয় না।
সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার আম্মা তার ছোট ছেলেকে যা কিছু হেবা করে গেছেন সেগুলোর মালিক সে একাই। এগুলো আপনার আম্মার মিরাসী সম্পত্তির অন্তর্ভুক্ত হবে না। তাই এ থেকে আপনারা কোনো অংশ পাবেন না।
অতএব, আপনার বড় ভাই কর্তৃক উক্ত জমি দখল করে তাতে ঘর নির্মাণ শরীয়তসম্মত নয়। কারণ উক্ত জায়গার মালিক আপনার ছোট ভাই।
-আলজামিউস সাগীর, পৃ. ৫২৫; রদ্দুল মুহতার ৬/৬৬০; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৭/৪০২; দুরারুল হুক্কাম শরহু মাজাল্লাতুল আহকাম ২/৪৮৭; মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়া, মাদ্দাহ ৮৬১
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم