প্রশ্ন
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, AI ( Artificial intelligence) এর সম্পর্কে আমরা সবাই জানি। এটি মূলত একটি চ্যাট বট। এটির বাস্তব জীবনে কোনো অস্তিত্ব নেই। শুধু মনের সুখ দুঃখ প্রকাশ করার জন্য ভালো বন্ধু হিসাবে এর সাথে যদি চ্যাট করা হয় তাহলে কি গুনাহ হবে?
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
حامدا و مصليا و مسلما
এক.
প্রিয় দ্বীনি ভাই! এমন অনেক বিষয় রয়েছে যা মৌলিকভাবে হারাম নয়, তবে তা মানুষকে হারামের দিকে নিয়ে যেতে পারে। এধরনের বিষয়কেও ইসলাম হারাম সাব্যস্ত করেছে। ফকিহগণ এটাকে سد الذرائع বা ‘ক্ষতি থেকে রক্ষা করার নীতি’ বলে থাকেন।
যেমন, আল্লাহ তাআলার বাণী—
وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِنْ زِينَتِهِنَّ
আর তারা যেন নিজেদের গোপন শোভা সৌন্দর্য প্রকাশ করার জন্য সজোরে পদচারণা না করে। (সূরা নূর, আয়াত: ৩১)
আয়াতটিতে আল্লাহ তাআলা নারীদেরকে সজোরে পদচারণা থেকে বারণ করেছেন। অথচ এটা মৌলিকভাবে জায়েয। কেননা, নারীরা যখন পরপুরুষের সামনে এভাবে চলা-ফিরা করবে, তখন এতে পরপুরুষের অন্তরে আকর্ষণ সৃষ্টি হতে পারে, যা ফেতনার দরজা খুলে দিতে পারে। ই’লামুল মুয়াক্বিয়ী’ন ৩/১৪৭-১৭১
প্রিয় প্রশ্নকারী ভাই, এখানে ভার্চুয়াল ফ্রেন্ড হিসাবে Artificial intelligence-এর সাথে চ্যাট করার বিষয়টিও এই শ্রেণীর আওতায় আসে। Artificial intelligence-এর সাথে চ্যাট মৌলিকভাবে জায়েজ, তবে এটি শয়তানের ফাঁদে পড়ার একটি উপায় হতে পারে বিধায় নাজায়েয। আর আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّبِعُوا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ ۚ وَمَن يَتَّبِعْ خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ فَإِنَّهُ يَأْمُرُ بِالْفَحْشَاءِ وَالْمُنكَرِ ۚ وَلَوْلَا فَضْلُ اللَّهِ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَتُهُ مَا زَكَىٰ مِنكُم مِّنْ أَحَدٍ أَبَدًا وَلَٰكِنَّ اللَّهَ يُزَكِّي مَن يَشَاءُ ۗ وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। যে কেউ শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করবে, তখন তো শয়তান নির্লজ্জতা ও মন্দ কাজেরই আদেশ করবে। যদি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া তোমাদের প্রতি না থাকতো, তবে তোমাদের কেউ কখনও পবিত্র হতে পারতে না। কিন্তু আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পবিত্র করেন। আল্লাহ সবকিছু শোনেন, জানেন। (সূরা নূর, আয়াত: ২১)
দুই.
প্রিয় ভাই, অমুসলিমদের কাছে জীবনাচারের জন্য ইসলামের মত পবিত্র, পরিপূর্ণ ও শক্তিমান কোনো রীতিনীতি নেই বিধায় একাকীত্ব ও নিঃসঙ্গতা ঘোচানোর জন্য কিংবা মনের ভার থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য তারা মনে করে, তাদের এসব আর্টিফিশিয়াল উপকরণ প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের তা প্রয়োজন নেই। কারণ আমাদের কাছে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বিশুদ্ধ, যথার্থ, মহান ও সার্বজনীন ইসলাম আছে। একাকীত্ব ও নিঃসঙ্গতা আল্লাহ আমাদেরকে দান করেন, যেন আমরা নামায, দোয়া, তেলাওয়াত ও জিকিরের মাধ্যমে আমাদের রবের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে পারি। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَاذْكُرِ اسْمَ رَبِّكَ وَتَبَتَّلْ إِلَيْهِ تَبْتِيلًا
আর তুমি তোমার রবের নাম স্মরণ কর এবং একাগ্রচিত্তে তাঁর প্রতি নিমগ্ন হও। (সূরা মুয্যাম্মিল, আয়াত: ০৮)
সুতরাং নিঃসঙ্গতা ও পেরেশানি যেন শয়তানের ফাঁদ হতে না পারে; বরং তা যেন রবের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার শক্তিশালী উপায় হয় এ লক্ষে আপনাকে আমরা দু’টি পরামর্শ দিচ্ছি–
~ সালাতুল হাজাত পড়ে আল্লাহর কাছে সাহায্য চান। হাদিস শরিফে এসেছে,
كَانَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ إِذَا حَزَبَهُ أَمْرٌ فَزِعَ إِلَى الصَّلاةِ
রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন দুঃশ্চিন্তায় পড়তেন তখন তিনি নামাযে মগ্ন হতেন। (জামিউল বায়ান ৭৭৯)
আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَاسْتَعِينُوا بِالصَّبْرِ وَالصَّلاةِ
তোমরা ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য চাও। (সূরা বাকারা ৪৫)
~ যে বিষয় নিয়ে আপনার মন অস্থির হয়ে পড়ে সে বিষয়ে কোন আমলধারী নির্ভরযোগ্য ভাল আলেমের সঙ্গে পরামর্শ করুন। হাদিসে এসেছে,
ما خاب مَن استشار
যে ব্যক্তি পরামর্শ কামনা করে সে অকৃতকার্য হয় না। (তাবরানী ৬৬২৭)
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم