প্রশ্ন
জনৈক আলেমকে বলতে শুনলাম, বক্ষ বিদীর্ণ করার ঘটান সঠিক নয়। জানতে চাচ্ছি, সঠিক বিষয় কোনটি?
উত্তর
بسم الله الرحمٰن الرحيم. حامدا و مصليا و مسلما
রাসূল (সা.)-এর বক্ষ মোবারক তিনবার বিদীর্ণ করা হয়েছিল। বিশুদ্ধ সূত্রে তা বর্ণিত। প্রথমবার ছিল বাল্যকালে। হাদিস শরিফে এসেছে,
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ؛ إن رسول الله صلى الله عليه وسلم أتاه جبريل صلى الله عليه وسلم وَهُوَ يَلْعَبُ مَعَ الْغِلْمَانِ. فَأَخَذَهُ فَصَرَعَهُ فَشَقَّ عَنْ قَلْبِهِ. فَاسْتَخْرَجَ الْقَلْبَ. فَاسْتَخْرَجَ مِنْهُ عَلَقَةً. فَقَالَ: هَذَا حَظُّ الشَّيْطَانِ مِنْكَ. ثُمَّ غَسَلَهُ فِي طَسْتٍ مِنْ ذَهَبٍ بِمَاءِ زَمْزَمَ. ثُمَّ لَأَمَهُ. ثُمَّ أَعَادَهُ فِي مَكَانِهِ
‘আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে জিবরীল (আলাইহিস সালাম) এলেন, তখন তিনি শিশুদের সাথে খেলছিলেন। তিনি তাঁকে ধরে শোয়ালেন এবং বক্ষ বিদীর্ণ করে তাঁর হৎপিন্ডটি বের করে আনলেন। তারপর তিনি তাঁর বক্ষ থেকে একটি রক্তপিন্ড বের করলেন এবং বললেন এ অংশটি শয়তানের। এরপর হৎপিণ্ডটিকে একটি স্বর্ণের পাত্রে রেখে যমযমের পানি দিয়ে ধৌত করলেন এবং তার অংশগুলো জড়ো করে আবার তা যথাস্থানে পূনঃস্থাপন করলেন। [সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৬১]
দ্বিতীয়বার হয়েছিল নবুওত প্রাপ্তির সময়। মুহাদ্দিস আবু নুআইম (রহ.) তার কিতাবে লিখেন, রাসূল (সা.) নবুওত প্রাপ্তির ঘটনা উল্লেখ করতে গিয়ে বলেন,
فَأَخَذَنِي جِبْرِيلُ فَاسْتَلْقَانِي لِحَلَاوَةِ الْقَفَا ثُمَّ شَقَّ عَنْ قَلْبِي فَاسْتَخْرَجَهُ ثُمَّ اسْتَخْرَجَ مِنْهُ مَا شَاءَ اللَّهُ أَنْ يَسْتَخْرِجَ ثُمَّ غَسَلَهُ فِي طَسْتٍ مِنْ ذَهَبٍ بِمَاءِ زَمْزَمَ ثُمَّ أَعَادَهُ مَكَانَهُ
‘অতঃপর জিবরাইল (আ.) আমাকে চিৎ করে শোয়ান। আমার বক্ষ বিদীর্ণ করে হৎপিণ্ডটিকে বের করে আল্লাহর আদেশ অনুসারে যা বের করার তা বের করে একটি স্বর্ণের পাত্রে রেখে যমযমের পানি দিয়ে ধৌত করে আবার তা যথাস্থানে পূনঃস্থাপন করলেন। [দালায়েলুন নাবুওয়্যাহ, পৃ. ২১৫, বর্ণনা: ১৬৩]
তৃতীয়বার হয় মিরাজে গমনের আগে। হাদিস শরিফে এসেছে, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন,
بَيْنَمَا أَنَا فِي الْحَطِيمِ – وَرُبَّمَا قَالَ: فِي الْحِجْرِ – مُضْطَجِعًا، إِذْ أَتَانِي آتٍ فَقَدَّ قَالَ: وَسَمِعْتُهُ يَقُولُ: فَشَقَّ مَا بَيْنَ هَذِهِ إِلَى هَذِهِ، فَقُلْتُ لِلْجَارُودِ – وَهْوَ إِلَى جَنْبِي: مَا يَعْنِي بِهِ؟ قَالَ: مِنْ ثُغْرَةِ نَحْرِهِ إِلَى شِعْرَتِهِ، وَسَمِعْتُهُ يَقُولُ: مِنْ قَصِّهِ إِلَى شِعْرَتِهِ، “فَاسْتَخْرَجَ قَلْبِي، ثُمَّ أُتِيتُ بِطَسْتٍ مِنْ ذَهَب مَمْلُوءَةٍ إِيمَانًا فَغُسِلَ قَلْبِي ثُمَّ حُشِيَ
‘এক সময় আমি কা‘বা ঘরের হাতিমের অংশে ছিলাম। কখনো কখনো রাবী (কাতাদাহ) বলেছেন, হিজরে শুয়েছিলাম। হঠাৎ একজন আগন্তুক আমার নিকট এলেন এবং আমার এস্থান হতে সে স্থানের মাঝের অংশটি চিরে ফেললেন। রাবী কাতাদাহ বলেন, আনাস (রাঃ) কখনো কাদ্দা (চিরলেন) শব্দ আবার কখনো শাক্কা (বিদীর্ণ) শব্দ বলেছেন। রাবী বলেন, আমি আমার পার্শ্বে বসা জারূদ (রহ.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, এ দ্বারা কী বুঝিয়েছেন? তিনি বললেন, হলকূমের নিম্নদেশ হতে নাভি পর্যন্ত। কাতাদাহ (রহ.) বলেন, আমি আনাস (রাঃ)-কে এ-ও বলতে শুনেছি বুকের উপরিভাগ হতে নাভির নীচ পর্যন্ত। তারপর আগন্তুক আমার হৃদপিন্ড বের করলেন। তারপর আমার নিকট একটি সোনার পাত্র আনা হল যা ঈমানে পরিপূর্ণ ছিল। তারপর আমার হৃদপিন্ডটি ধৌত করা হল এবং ঈমান দ্বারা পরিপূর্ণ করে যথাস্থানে আবার রেখে দেয়া হল।’ [সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩৮৮৭]
এই তিনটি ঘটনা সম্পর্কে ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.) বলেন,
وجميع ما ورد من شق الصدر واستخراج القلب وغير ذلك من الأمور الخارقة للعادة مما يجب التسليم
‘বক্ষ বিদারণ, হৎপিণ্ড বের করা ইত্যাদি বিস্ময়কর বিষয় সম্পর্কে যত বর্ণনা পাওয়া সবগুলো এগুলো মেনে নেওয়া আবশ্যক।’ [ফাতহুল বারী ৭/২০৫]
কাজেই বক্ষ বিদীণের ঘটনা সঠিক নয় বলা ভুল।
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم