কওমি-আলিয়ার মাঝে কোন ভেদাভেদ রাখা যাবে না।
বিচারপতি মাওলানা মুফতী মুহাম্মাদ তাকি উসমানি (জন্ম: ১৯৪৩) পাকিস্তানের একজন প্রখ্যাত ইসলামী ব্যক্তিত্ব। তিনি ইসলামী ফিকহ্, হাদিস, অর্থনীতি ও তাসাউফ বিশেষজ্ঞ। তিনি বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী মুসলিম ব্যক্তি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন।তিনি বর্তমানে ইসলামী অর্থনীতিতে সক্রিয় ব্যক্তিদের অন্যতম। তিনি ১৯৮০ সাল থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শরীয়াহ আদালতের এবং ১৯৮২ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের শরীয়াহ আপিল বেঞ্চের বিচারক ছিলেন। তিনি বিখ্যাত তাফসীরগ্রন্থ “মাআরিফুল কোরআন” এর রচয়িতা মুফতি শফী উসমানির সন্তান এবং বিখ্যাত দুই ইসলামী ব্যক্তিত্ব মাওলানা রফী উসমানি ও মাওলানা ওয়ালী রাজীর ভাই।
জন্ম ও বংশ: তিনি ৫ শাওয়াল ১৩৫২ হিজরি/৩ অক্টোবর ১৯৪৩ সালে ভারতের সাহারানপুর জেলার দেওবন্দে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মুহাম্মদ শফি উসমানি ও দাদা মুহাম্মদ ইয়াসিন। তিনি ইসলামের তৃতীয় খলিফা উসমানের বংশধর। একারণে তার নামের সাথে উসমানি শব্দটি ব্যবহার করা হয়। তার বংশের আরেকটি উপাধি হল মিয়াজী, অর্থ শিক্ষক। তার পিতা ও দাদা উভয়ই দারুল উলুম দেওবন্দের শিক্ষক ছিলেন। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে তিনি কনিষ্ঠ।
তার পিতা জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সদস্য হিসেবে পাকিস্তান সৃষ্টির পেছনে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করেছিলেন। এজন্য পাকিস্তান রাষ্ট্রে ইসলামি সংবিধান তৈরির লক্ষ্যে ১৯৪৮ সালের মার্চের শুরুতে স্বপরিবারে তিনি পাকিস্তানের উদ্দেশ্যে হিজরত করেন। তখন তার বয়স হয়েছিল পাঁচ বছর।[৪]
শিক্ষাজীবন
পাকিস্তানের করাচিতে হিজরত করার পর শিক্ষালাভের জন্য বাড়ির কাছে কোনো মাদ্রাসা না থাকায় পরিবারেই তার প্রাথমিক শিক্ষার হাতেখড়ি হয়েছিল। উর্দু ভাষার প্রথম কিতাব হিসেবে মায়ের কাছে তিনি বেহেশতী জেওর ও সীরাতে খাতামুল আম্বিয়া পড়েছেন।পিতার কাছে ফার্সি ভাষার জ্ঞান লাভ করেন।
পরবর্তীতে তার পিতা দারুল উলুম করাচি প্রতিষ্ঠা করলে সেখানেই ভর্তি হন। কিছুদিন উর্দু ও ফার্সি অধ্যয়নের পর ১৩৭২ হিজরির ৫ শাওয়াল তিনি তিনি দরসে নেজামি বিভাগে অধ্যয়ন শুরু করেন। তখন তার বয়স হয়েছিল আট বছর। ১৯৫৯ সালে সর্বকালের সর্বোচ্চ ফলাফল লাভ করে তিনি দরসে নেজামির সর্বোচ্চ শ্রেণি দাওরায়ে হাদিস সমাপ্ত করেন। এরপর তিনি তার পিতার তত্ত্বাবধানে ফিকহশাস্ত্রে দক্ষতা অর্জন করেন। ১৯৬১ সালে তিনি দারুল উলুম করাচি থেকে ফিকহ শাস্ত্রে উচ্চতর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬৪ সালে করাচি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি অর্থনীতি ও রাজনীতিতে স্নাতক এবং ১৯৬৭ সালে আইন শাস্ত্রে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৭০ সালে পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি আরবি ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। এছাড়া ইংরেজি সাহিত্যেও তিনি পারদর্শিতা অর্জন করেছেন।[৬]
প্রসিদ্ধ শিক্ষক
তার শিক্ষকদের মধ্যে সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য হলেন তার পিতা মুহাম্মদ শফি উসমানি, যিনি পাকিস্তানের প্রধান মুফতি ছিলেন। তার সহিহ বুখারীর শিক্ষক হলেন মুফতি রশিদ আহমদ। তার অন্যান্য শিক্ষকগণের মধ্যে রয়েছেন: ওয়ালি হাসান টঙ্কি, সলিমুল্লাহ খান, আকবর আলী, মুহাম্মদ রেযআয়তুল্লাহ, সাহবান মাহমুদ, শামসুল হক প্রমুখ।[৭] এছাড়াও তিনি মুহাম্মদ ইদ্রিস কান্ধলভি, রশিদ আহমদ লুধিয়ানভি ও মুহাম্মদ জাকারিয়া কান্ধলভির কাছ থেকে হাদিস বর্ণনার অনুমতি পেয়েছেন।
· তাসাউফ:আত্মশুদ্ধি অর্জনে তিনি আশরাফ আলী থানভীর খলিফা আব্দুল হাই আরেফীর সাথে আধ্যাত্মিক সম্পর্ক গড়ে তুলেন। মৃত্যুর দশদিন আগে আরেফী তাকে খেলাফত প্রদান করেন। তার মৃত্যুর পর তিনি থানভীর আরেক খলিফা মাসীহুল্লাহ খানের শরণাপন্ন হন।
· কর্মজীবন:১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দে দাওরা হাদিস সমাপনের পর থেকেই তিনি দারুল উলুম করাচিতে অধ্যাপনা করে আসছেন। ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ২০০২ খ্রিষ্টাব্দের মে মাস পর্যন্ত তিনি পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের শরিয়া এ্যাপ্লাইট বেঞ্চের বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। “মিজান ব্যাংক” প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পাকিস্তানে সর্বপ্রথম তিনিই ইসলামী ব্যাংকিং চালু করেন। তাকি উসমানি আন্তর্জাতিক ফিকহ একাডেমি (ওআইসির একটি শাখা সংস্থা) এর একজন স্থায়ী সদস্য। ৯ বছর তিনি আন্তর্জাতিক ফিকহ একাডেমির ভাইস চেয়ারম্যানও ছিলেন।[২] ২০০৪ সালের মার্চ মাসে মাওলানা তাকি উসমানিকে দুবাইয়ে আন্তর্জাতিক ইসলামী অর্থনীতি সংস্থার বার্ষিক অনূষ্ঠানে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রধানমন্ত্রী ইসলামী অর্থনীতিতে তার অবদান ও অর্জনের কারণে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করে। প্রতি সপ্তাহের রবিবার তিনি করাচির দারুল উলুম মাদরাসায় তাযকিয়াহ তথা আত্মশুদ্ধি সম্পর্কে বয়ান করেন। বর্তমানে তিনি দারুল উলুম করাচিতে সহীহ বুখারী,ফিকহ এবং ইসলামী অর্থনীতির দরস (কোন বিষয়ে পরামর্শ বা বক্তব্য প্রদান করা) দেন। ১৯৭০ সালে প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টো আমলে পাকিস্তান ন্যাশনাল এ্যাসেম্বলি কর্তৃক কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা করার ব্যাপারে আলিমদের মধ্য হতে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। জেনারেল জিয়াউল হকের শাসনামলে হদ্দ,ক্বিসাস এবং দিয়ত সম্পর্কিত আইন প্রণয়নে তিনি অগ্রবর্তী ভূমিকা পালন করেন। ১৯৬৭ সাল থেকে তিনি উর্দু মাসিক পত্রিকা আল-বালাগ এবং ১৯৯০ সাল থেকে ইংরেজি মাসিক পত্রিকা আল-বালাগ ইন্টারন্যাশনালের প্রধান সম্পাদক পদে আছেন।ইসলামী ব্যাংকিং ও অর্থনীতি সম্পর্কে তিনি বিভিন্ন পত্রিকা ও সাময়িকীতে বহু প্রবন্ধ লিখেছেন। তিনি আরবি,উর্দু এবং ইংরেজি ভাষায় ষাটের অধিক গ্রন্থের রচয়িতা।[৯] তার রচিত অধিকাংশ বই বাংলায় অনূদিত হয়েছে।
· বর্তমান অজিফা
· দারুল উলূম করাচির শায়খুল হাদিস ও নায়েবে মুহতামিম
· চেয়্যারম্যন, আন্তর্জাতিক স্ট্যার্ন্ডাড শরীয়াহ কাউন্সিল, ইসলামিক অর্থনৈতিক একাউন্টিং ও পরিদর্শন সংস্থা, বাহরাইন।
· স্থায়ী সদস্য, আন্তর্জাতিক ফিকহ একাডেমি , জেদ্দা ( ও আই সির অঙ্গপ্রতিষ্ঠান)
· চেয়্যারম্যন, সেন্টার ফর ইসলামিক ইকোনোমিকস, পাকিস্তান (1991 থেকে)
নতুন পৃথিবীর নতুন নতুন সৃষ্ট সমস্যায় উনার ফতোয়ার বিকল্প নেই।যখন তিনি ছাত্র তখনই তিনি তাফসীর লিখতে সক্ষম হয়েছিলেন। فتح الملهم এই শরাহটি মূলত মুফতী শাব্বীর আহমদ উসমানী (রহঃ)এর অসম্পূর্ণ একটি শরাহ। শাব্বীর আহমেদ উসমানী রহঃ ইন্তেকালের পর উপমহাদেশে এমন কোন আলিমের সাহস হয়নাই,শাব্বীর আহমদ উসমানী রহঃ এর অবশিষ্ট ব্যাখা পূরণ করতে। কেননা শাব্বীর আহমদ উসমানী এমন ব্যক্তি ছিলেন।
বাদশা আব্দুল আযীয বিন আব্দুর রহমান বিন সউদ। তিনি খুব খোদাভীরু শাসক ছিলেন। ১৯০২ সালে রিয়াদ ফতেহ করেন এবং রিয়াদকে মডেল শাসনে রূপান্তরিত করেন। ১৯২৪ সালে তিনি মক্কা বিজয় করেন। ১৯২৫ সালে মদীনা বিজয় করেন। ১৯৩৬ সালে সমগ্র আরব বিজয় করে নাম
রাখেন “আল মামলাকাতুল আরাবিয়্যাতুস সাউদিয়্যা” আহলে নজদের উলামায়ে কেরামগন ছিলেন কঠোর। ছিলেন হিংসাত্মক মনোভাবের। তারা বাদশাহর কাছে পেশ করেন ‘যত ধরনের নিদর্শন রয়েছে সব নি:শেষ করে ফেলেন ‘। মদীনার মধ্যে নিদর্শন ছিল উম্মাহাতুল মূমিনীনদের কবরসমূহ। একদিকে হুজুর সা: এর কবর অপরদিকে প্রায় সাহাবাদের কবর জান্নাতুল বাক্বী। কিন্তু উলামায়ে নজদ নির্দেশ করেন সব গুড়িয়ে নি:শেষ করে ফেলা হোক। এমনকি সবুজ গম্বুজ ভেংগে ফেলার আদেশ দেন। কারণ, কবর পাকা করা তার উপর গম্বুজ করা সম্পূর্ণ হারাম! বাদশা আব্দুল আযীয ছিলেন এক খোদাভীরু শাসক তিনি বিশ্বের উলামায়ে কেরামকে মদীনায় আহ্বান করেন। সাথে উলামায়ে হিন্দের ও। মাশওয়ারা চলে উলামাদের মাঝে। আহলে নজদের বিপক্ষে মুনাযারায় কে হবেন সমগ্র বিশ্বের উলামায়ে কেরামের প্রতিনিধি? সর্বসম্মতি আসল যে,শাব্বীর আহমদ উসমানীই। তিনি লড়বেন উলামায়ে নজদের বিপক্ষে। সুখের কথা, তিনি দারুল উলূম দেওবন্দের ছাত্র ছিলেন। বাহাসের সভাপতি হলেন বাদশা আব্দুল আযীয। বাহাস চলল, উলামায়ে নজদ জাহির সকল হাদীস পেশ করেন আর ভাবেন শাব্বীর আহমদ উসমানী আর কি বা দলীল পেশ করবেন
হযরত উসমানী রহ: বুখারী শরীফের বিনায়ে কাবার একটি হাদীসকে পুঁজি করে দীর্ঘ দু’ঘন্টা আলোচনা করেন যা হযরত আয়েশাকে খেতাব করে বলেছিলেন। যখন উসমানী রহ: আলোচনা করেন তখন উলামায়ে নজদের মাথা নিচের দিকে। জন্য দোয়া আলোচনার পর যখন বাদশা আব্দুল আযীয উলামায়ে নজদের সম্বোধন করে বলেন -এই হিন্দীর বিপক্ষে কি তোমাদের কোন জবাব আছে? প্রত্যুত্তরে উলামায়ে নজদ ছিলেন নীরব নিশ্চুপ। উসমানী রহ: এর বক্তব্যের উপর ভিত্তি করেই সেদিন সবুজ গম্বুজ রাখা হয়। আজকে যে সবুজ গম্বুজ পৃথিবী দেখছে তা উলামায়ে দেওবন্দের ই অবদান।
কিন্তু অবশেষে তাকী উসমানীই সাহস করেন فتح الملهم এর শরাহ পূর্ণাঙ্গ করার।পূর্ণ করে নাম দেন تكملة فتح الملهم বর্তমানে এটি ছয় খন্ডে।পৃথিবীর ইতিহাসে মুসলিম শরীফের এর চেয়ে উন্নত ব্যাখাগ্রন্থ নেই।
#জীবনের তরে তিনি সফলতা অর্জন করছেন পুরো গ্লোবাল পৃথিবীতে।
১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ২০০২ খ্রিষ্টাব্দের মে মাস পর্যন্ত তিনি পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের শরিয়া বেঞ্চের বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
প্রতিষ্টা করেছেন“মিজান ব্যাংক” তিনিই মুসলিম বিশ্বের একমাত্র ব্যক্তি যিনি বিশ্ব ব্যাংকের কাছে লিখিত গবেষণা দাখিল করেন।বিশ্বকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন।বিশ্বে যদি ইসলামী অর্থনীতি এপ্লাই হয়,তাহলে পুরো পৃথিবীর সুদ ছাড়া চলা সম্ভব।এবং সেই নীতি আবেদন করেছেন।অনেক বিশ্লেষক বলছেন অমুসলিম কোন ব্যক্তি এই গবেষণা বিশ্ব ব্যাংকে দাখিল করলে তাকে এই সফলতায় নোবেল প্রদান করা হতো।কিন্তু বিশ্ব ব্যাংক গবেষণা পত্র এপ্লাই করেনি।
তাকী উসমানী আন্তর্জাতিক ফিকহ একাডেমি ( ওআইসির একটি শাখা সংস্থা) এর একজন স্থায়ী সদস্য।
৯ বছর ছিলেন আন্তর্জাতিক ফিকহ একাডেমির ভাইস চেয়ারম্যন।
দুবাইয়ে আন্তর্জাতিক ইসলামী অর্থনীতি সংস্থার বার্ষিক অনূষ্ঠানে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রধানমন্ত্রি ইসলামী অর্থনীতিতে তাকে সম্মাননা প্রদান করেন ২০০৪ সালে।
*মহান আল্লাহ তা’আলা বিশ্ব বিখ্যাত এ ইসলামী ব্যক্তিত্বকে দুনিয়া আখেরাতে কামিয়াবী করুন আমীন। আসুন আমরা আলিয়া কওমীর মাঝখানের ওআল ভেঙ্গে দিই।*
★আরবী যেসব গ্রন্থ রচনা করেছেন★
১।تكملة فتح الملهم بشرح صحيح مسلم (ستّ مجلّدات)
২। بحوث في قضايا فقهية معاصرة (مجلّدان)
৩। أصول الإفتاء وآدابه
৪। أحكام الذبائح
৫। ما هي النصرانية
৬।نظرة عابرة حول التعليم الدينيّ فى باكستان
৭। فقه البيوع على المذاهب الأربعة (مجلدان)
৮।مقالات العثماني (مجلدان)
★ইংরেজিতে যেসকল বই রচনা করেন★
1. The Meanings of the Noble Quran
2. An Introduction To Islamic Finance
3. Contemporary Fatawa
4. Discourses on The Islamic Way of Life
5. Do Not Despise The Sinners
6. Islam & Modernism
7. Islamic Months
8. Legal Rulings on Slaughtered Animals
9. Perform Salah Correctly
10. Qadianism on Trial