প্রশ্ন
আমাদের এলাকার ওয়াজ-মাহফিলে এক বক্তা বলেছিলেন, পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহারের কারণে পূর্ববর্তী যামানার এক লোক অনেক বড় বিপদ থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন। তারা গুহায় আটকে যাওয়ার পর অলৌকিকভাবে সেখান থেকে বের হতে পেরেছিলেন। এমন কোনো ঘটনা কু্রআন-হাদিসে আছে কি না, আমি তা রেফারেন্স সহ জানতে চাই।
উত্তর
بسم الله الرحمٰن الرحيم. حامدا و مصليا و مسلما
পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহারের ব্যাপারে কুরআন-হাদিসে অনেক ফযিলত বর্ণিত হয়েছে। এমন কি মুশরিক পিতা-মাতার সাথেও সদ্ব্যবহারের আদেশ দেওয়া হয়েছে।
আর আপনি যে ঘটনাটি জানতে চেয়েছেন তা একটি বিস্তারিত ঘটনার সামান্য অংশ। সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম সহ হাদিসের বিভিন্ন গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে। হাদিসটি নিম্নরূপ-
আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, পূর্ব কালে তিন জন ব্যক্তি সফরে বের হয়। পথিমধ্যে তারা মুষলধারে বৃষ্টির মধ্যে পতিত হয়। তখন তিন জনই একটি পাহাড়ের গুহায় আশ্রয় নেয়। হঠাৎ গুহা মুখে একটি বড় পাথর ধসে পড়ে। তাতে গুহার মুখ বন্ধ হয়ে যায়। তিন জনে সাধ্যমত চেষ্টা করেও তা সরাতে ব্যর্থ হয়। তখন তারা পরস্পরে বলতে থাকে যে, এই বিপদ থেকে রক্ষার কেউ নেই আল্লাহ ব্যতীত। অতএব তোমরা আল্লাহকে খুশী করার উদ্দেশ্যে জীবনে কোনো সৎকর্ম করে থাকলে সেটি সঠিকভাবে বল এবং তার দোহাই দিয়ে আল্লাহর নিকট প্রার্থনা কর। আশা করি তিনি আমাদেরকে এই বিপদ থেকে রক্ষা করবেন।
তখন একজন বলল, আমার বৃদ্ধ পিতা-মাতা ছিলেন এবং আমার ছোট ছোট কয়েকটি শিশু সন্তান ছিল। যাদেরকে আমি প্রতিপালন করতাম। আমি প্রতিদিন মেষপাল চরিয়ে যখন ফিরে আসতাম, তখন সন্তানদের পূর্বে পিতা-মাতাকে দুধ পান করাতাম। একদিন আমার ফিরতে রাত হয়ে যায়। অতঃপর আমি দুগ্ধ দোহন করি। ইতিমধ্যে পিতা-মাতা ঘুমিয়ে যান। তখন আমি তাদের মাথার নিকট দুধের পাত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি, যতক্ষণ না তারা জেগে ওঠেন। এ সময় ক্ষুধায় আমার বাচ্চারা আমার পায়ের নিকট কেঁদে গড়াগড়ি খায়। কিন্তু আমি পিতা-মাতার পূর্বে তাদেরকে পান করাতে চাইনি। এভাবে ফজর হয়ে যায়। অতঃপর তারা ঘুম থেকে উঠেন ও দুধ পান করেন। তারপরে আমি বাচ্চাদের পান করাই।
اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتُ فَعَلْتُ ذَلِكَ ابْتِغَاءَ وَجْهِكَ فَفَرِّجْ عَنَّا مَا نَحْنُ فِيهِ مِنْ هَذِهِ الصَّخْرَةِ
‘হে আল্লাহ! যদি আমি এটা তোমার সন্তুষ্টির জন্য করে থাকি, তাহলে তুমি আমাদের থেকে এই পাথর সরিয়ে নাও’!
তখন পাথর কিছুটা সরে গেল এবং তারা আকাশ দেখতে পেল।
দ্বিতীয় জন বলল, হে আল্লাহ! আমার একটা চাচাতো বোন ছিল। যাকে আমি সবচেয়ে ভালোবাসতাম। এক সময় তাকে আমি আহ্বান করলে সে একশ দীনার নিয়ে আসতে বলল। আমি বহু কষ্টে একশ দীনার জমা করলাম। অতঃপর তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলাম। কিন্তু যখন আমি তার প্রতি উদ্যত হলাম, তখন সে বলল,
يَا عَبْدَ اللهِ اتَّقِ اللهَ، وَلاَ تَفْتَحِ الْخَاتَمَ
‘হে আল্লাহর বান্দা! আল্লাহকে ভয় কর। আমার সতীত্ব বিনষ্ট করো না’।
তৎক্ষণাৎ আমি সেখান থেকে উঠে এলাম। হে আল্লাহ! যদি আমি এটা তোমার সন্তুষ্টির জন্য করে থাকি, তাহলে তুমি আমাদের থেকে এই পাথর সরিয়ে নাও’! তখন পাথরের আরও কিছু অংশ সরে গেল।
তৃতীয়জন বলল, হে আল্লাহ! আমি জনৈক ব্যক্তিকে এক পাত্র চাউলের বিনিময়ে মজুর নিয়োগ করি। কাজ শেষে আমি তাকে প্রাপ্য দিয়ে দেই। কিন্তু সে কোনো কারণবশত তা ছেড়ে চলে যায়। তখন আমি তার প্রাপ্যের বিনিময়ে গরু ও রাখাল পালন করতে থাকলাম। অতঃপর একদিন লোকটি আমার কাছে আসল এবং বলল, আল্লাহকে ভয় কর, আমার উপর যুলুম করো না। আমার পাওনাটা দিয়ে দাও’। তখন আমি বললাম, এই গরু ও রাখাল সবই তুমি নিয়ে যাও। লোকটি বলল, আল্লাহকে ভয় কর, আমার সঙ্গে ঠাট্টা করো না’। আমি বললাম, আমি ঠাট্টা করছি না। ঐ গরু ও রাখাল সবই তুমি নিয়ে যাও। অতঃপর লোকটি সব নিয়ে গেল’। হে আল্লাহ! যদি আমি এটা তোমার সন্তুষ্টির জন্য করে থাকি, তাহলে তুমি আমাদের থেকে এই পাথর সরিয়ে নাও’!
তখন পাথরের বাকিটুকু সরে গেল এবং আল্লাহ তাদেরকে মুক্তি দান করলেন’। [সহিহি বুখারি, হাদিস:৫৯৭৪, সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৭৪৩]
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم