প্রশ্ন
আমাদের এলাকার মসজিদে রমজান মাসে মুসল্লিদের জন্য ইফতারির ব্যবস্থা করা হয়। এলাকার কম বেশি প্রায় সকলেই এতে শরিক হয়। সম্প্রতি কিছু অমুসলিম ভাইয়েরাও মসজিদের এ ইফতারির ব্যবস্থায় শরিক হতে চাচ্ছেন। প্রশ্ন হলো, ইফতারিতে অমুসলিমদের টাকা নেয়া কিংবা খাবার গ্রহণ করা কি জায়েজ হবে?
উত্তর
بسم الله الرحمٰن الرحيم. حامدا و مصليا و مسلما
জি, অমুসলিম ভাইদের থেকে পেশকৃত ইফতারের জন্য হালাল খাবার কিংবা ইফতার সামগ্রী কেনার জন্য নগদ টাকা গ্রহণ করা যায়েয হবে। ইসলামের দৃষ্টিতে এ ধরনের টাকা কিংবা খাবারকে হেবা (অনুদান) বা হাদিয়া (উপহার) বলা হয়।
নবী (সা.) কিছু কিছু কাফেরের কাছ থেকে হাদিয়া গ্রহণ করেছেন। এ ব্যাপারে বেশ কয়েকটি হাদিস রয়েছে।
১) আবু হুমাইদ আল-সাঈদি বলেন: ‘আমি নবী (সা.) এর সাথে তাবুক যুদ্ধ করেছি। আয়লা-র বাদশা নবী (সা.)কে একটি সাদা রঙের খচ্চর উপহার দিয়েছেন এবং তাকে একটি চাদর দিয়েছেন।’ [সহিহ বুখারি, হাদিস: ২৯৯০]
২) আব্বাস বিন আব্দুল মোত্তালিব হুনাইনের দিন সম্পর্কে বলেন: ‘রাসূলুল্লাহ (সা.) একটি সাদা রঙের খচ্চরের উপর ছিলেন; যে খচ্চরটি ফারওয়া বিন নুফাছা আল-জুযামি তাঁকে হাদিয়া দিয়েছিলেন।’ [সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৭৭৫]
৩) আলী বিন আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, নবী (সা.)কে ‘দুমাত’ (একটি স্থান) এর ‘উকাইদির'(রাজা) একটি রেশমী কাপড় হাদিয়া দিয়েছেন। তখন তিনি সেটা আলী (রা.) কে দিয়ে বললেন: ‘এটাকে কেটে খিমার (নারীর অবগুণ্ঠন) বানিয়ে ফাতেমাদেরকে দাও।’ [সহিহ বুখারি, হাদিস: ২৪৭২, সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২০৭১]
ইমাম নববী বলেন: ‘এ হাদিসে কাফেরের হাদিয়া গ্রহণ করা বৈধ হওয়ার পক্ষে দলিল রয়েছে।’ [শারহু মুসলিম ১৪/৫০]
উক্ত হাদিসগুলোর আলোকে প্রমাণিত হয় যে, কাফেরদের হাদিয়া গ্রহণ কিংবা তাদের বাসায় খেতে যাওয়ায় কোনো আপত্তি নেই। তবে শর্ত এই যে কোনো হারাম খাবার খাওয়া যাবে না। যেমন-শুকরের গোস্ত, আল্লাহর নাম ছাড়া অন্য কারো নামে জবাই করা পশু। অনুরূপভাবে আরেকটি শর্ত হচ্ছে তাদের ধর্মীয় উপলক্ষ না হওয়া। যেমন- হিন্দুদের পূজা বা খৃষ্টানদের ক্রিসমাস। এ ধরনের উপলক্ষকেন্দ্রিক তাদের হাদিয়া গ্রহণ করা যাবে না।”[ফাতাওয়া নুরুন আলাদ দারব (২৪/২)]
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم