প্রশ্ন
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমরা চারজন বান্ধবী ছিলাম। আমাদের প্রায় ৫-৬ বছরের সম্পর্ক ছিল। তো আমার তিনজন বান্ধবীর মধ্য থেকে দুইজনের মাঝে কোনো কারণে মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়। তাদের মধ্যে একজন দ্বীনদার, আরেকজন ফ্যাশন্যাবল। এখন আমি তাদের মধ্যে সম্পর্ক জুড়ে দিতে চাচ্ছি। এটা কি আমার জন্য ঠিক হবে?
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
حامدا و مصليا و مسلما
ইসলামের দৃষ্টিতে বন্ধুত্বের সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বনেরও নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম। উত্তম বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রে হাদিস শরিফেও দিকনির্দেশনা এসেছে,
عن أبي هريرة أن النبي صلى الله عليه و سلم قال ” الرجل على دين خليله فلينظر أحدكم من يخالل
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূল (সা.) বলেন, ‘মানুষ তার বন্ধু স্বভাবী হয়, তাই তাকে লক্ষ্য করা উচিত, সে কার সঙ্গে বন্ধুত্ব করছে।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ২৪৮৪; সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৪৮৩৩)
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,
وَاصۡبِرۡ نَفۡسَکَ مَعَ الَّذِیۡنَ یَدۡعُوۡنَ رَبَّہُمۡ بِالۡغَدٰوۃِ وَالۡعَشِیِّ یُرِیۡدُوۡنَ وَجۡہَہٗ وَلَا تَعۡدُ عَیۡنٰکَ عَنۡہُمۡ ۚ تُرِیۡدُ زِیۡنَۃَ الۡحَیٰوۃِ الدُّنۡیَا ۚ وَلَا تُطِعۡ مَنۡ اَغۡفَلۡنَا قَلۡبَہٗ عَنۡ ذِکۡرِنَا وَاتَّبَعَ ہَوٰىہُ وَکَانَ اَمۡرُہٗ فُرُطًا
আপনি নিজেকে তাদের সংসর্গে আবদ্ধ রাখুন যারা সকাল ও সন্ধ্যায় তাদের পালনকর্তাকে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে আহবান করে এবং আপনি পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য কামনা করে তাদের থেকে নিজের দৃষ্টি ফিরিয়ে নেবেন না। যার মনকে আমার স্মরণ থেকে গাফেল করে দিয়েছি, যে, নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে এবং যার কার্যকলাপ হচ্ছে সীমা অতিক্রম করা, আপনি তার অনুগত্য করবেন না। (সুরা কাহাফ,আয়াত: ২৮)
ইসলামে বন্ধুত্বের সম্পর্কের বুনিয়াদ হলো, তাকওয়া। যারা আল্লাহ তায়ালার জন্য পরস্পরকে ভালোবাসে তারা হাশরের মাঠে আল্লাহ তায়ালার (আরশের) ছায়ায় থাকবে।
এ কারণেই রাসূলুল্লাহ )সা.( মুমিন ব্যক্তিকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করার নির্দেশনা প্রদান করেছেন। তিনি বলেন,
رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول : ” لا تصاحب إلا مؤمنا ولا يأكل طعامك إلا تقى
‘মুমিন ব্যতীত অন্য কাউকে সঙ্গী বা বন্ধু হিসেবে নির্বাচন করবে না। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ২৫০৬; সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৪৮৩২)
আর বন্ধুত্বের সম্পর্ক যেহেতু আত্মীয়তার সম্পর্ক নয় তাই সেটা স্বাভাবিকভাবেই দীর্ঘস্থায়ী হয় না। স্বার্থের সুবাদে হোক আর জীবিকার তাগিতে হোক এক সময় সেই সম্পর্কে ইতি টানতেই হয়ে। তবে নেককার বন্ধুদের মাঝে সম্পর্ক জুড়ে দেওয়া অবশ্যই ভালো এবং সাওয়াবের কাজ। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,
اِنَّمَا الۡمُؤۡمِنُوۡنَ اِخۡوَۃٌ فَاَصۡلِحُوۡا بَیۡنَ اَخَوَیۡکُمۡ وَاتَّقُوا اللّٰہَ لَعَلَّکُمۡ تُرۡحَمُوۡنَ
প্রকৃতপক্ষে সমস্ত মুসলিম ভাই-ভাই। সুতরাং তোমরা তোমাদের দু’ ভাইয়ের মধ্যে মীমাংসা করে দাও, আল্লাহকে ভয় কর, যাতে তোমাদের প্রতি রহমত করা হয়। (সুরা হুজুরাত, আয়াত: ১০)
যাদের মাঝে সম্পর্কের অবনতি হয়েছে যদি তাদের মাঝে সম্পর্ক জুড়ে দিলে তাদের দ্বীনি ফায়দা হয় তাহলে জুড়ে দেওয়া ভালো। ইনশাআল্লাহ আপনি সাওয়াবের অধিকারী হবেন। কিন্তু যদি তাতে তাদের উভয়ের বা কোনে একজনেরও দ্বীনি ফায়দা না হয় তাহলে সেখানে অযথা সময় নষ্ট করা উচিত হবে না।
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم