প্রশ্ন
কুরআন শরিফে পড়েছি যে, আল্লাহ তাআলা বলেছেন: স্ত্রী যদি স্বামীর অবাধ্য হয় তাহলে তাকে প্রহার করা যাবে। আমার প্রশ্ন হল, এ ক্ষেত্রে কী কী বিষয় লক্ষ রাখতে হবে?
উত্তর
بسم الله الرحمٰن الرحيم. حامدا و مصليا و مسلما
বর্তমানে আমাদের সমাজে অনেক পুরুষ নামের কাপুরুষ ব্যক্তি ইচ্ছেমত স্ত্রীর গায়ে হাত তোলে। এটি জুলুম ও একেবারেই নিষিদ্ধ। কুরআন মাজিদে আল্লাহ তাআলা যেখানে প্রহারের অনুমতি দিয়েছেন সেখানে প্রহার করার পূর্বে আরও দুটি ধাপ অতিক্রম করতে বলেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَاللَّاتِي تَخَافُونَ نُشُوزَهُنَّ فَعِظُوهُنَّ وَاهْجُرُوهُنَّ فِي الْمَضَاجِعِ وَاضْرِبُوهُنَّ
‘যে সকল স্ত্রীদের থেকে তোমরা অবাধ্যতার ভয় কর তাদেরকে উপদেশ দাও এবং শয্যা পৃথক করে দাও এবং প্রহার কর।’ [সূরা নিসা, আয়াত: ৩৪]
সুতরাং স্বাভাবিক অবস্থায় স্ত্রীর গায়ে হাত তোলার অধিকার স্বামীর নেই। চূড়ান্ত পর্যায়ে স্ত্রীকে সামান্য প্রহারের অনুমতি থাকলেও সেক্ষেত্রে নিম্নোক্ত বিষয়গুলি অবশ্যই লক্ষ রাখতে হবে।
ক. সংশোধনের উপরোক্ত দুটি পন্থা ব্যর্থ হলে কেবল তখনই হালকা প্রহারের অবকাশ আছে।
খ. অন্তরে মুহাব্বত পোষণ রেখে চূড়ান্ত পর্যায়ের অসন্তুষ্টি প্রকাশের জন্য এমনটি করা যাবে। যেন সে সংশোধন হয়ে যায়।
গ. রাগান্বিত অবস্থায় প্রহার করতে পারবে না। কারণ রাগের সময় প্রহার করলে শরিয়তের গণ্ডির মধ্যে থাকা সম্ভব নাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
ঘ. চেহারা ও স্পর্শকাতর অঙ্গসমূহে প্রহার করা যাবে না।
ঙ. ক্ষতের সৃষ্টি হয়, হাড্ডিতে চোট লাগে, চামড়ায় দাগ পড়ে, রক্তপাত হয়, শরীরে প্রভাব-প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় এমনভাবে প্রহার করা যাবে না।
এক কথায় মৃদু প্রহার যার দ্বারা শরীরে দীর্ঘস্থায়ী প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে না। কারণ উদ্দেশ্য প্রহার নয়। উদ্দেশ্য হল সংশোধন করা।
উল্লেখ্য, স্ত্রীর সংশোধনের চূড়ান্ত পর্যায়েও মৃদু প্রহারকে রাসূল সা. অপছন্দ করেছেন। হাদি শরিফে এসেছে, রাসূল সা. বলেন:
তোমরাদের মধ্যে যারা তাদের স্ত্রীকে প্রহার করে তারা ভালো লোক নয়। সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ২১৪৬
অতএব উত্তম আখলাক হল, মৃদু প্রহার থেকেও বিরত থাকা।
খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৪৪৪, বাদায়েউস সানায়ে ৩/৬৫০, আততাশরীয়ুল জিনায়ী ১/৩৮৫
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم