প্রশ্ন
মুমিন মাত্রই জান্নাতের আশা করে। জান্নাতের আলোচনা শুনে তৃপ্তিবোধ করে। আমি আপনাদের কাছে জান্নাতের কিছু নেয়ামত সম্পর্কে জানতে চাই।
উত্তর
بسم الله الرحمٰن الرحيم. حامدا و مصليا و مسلما
জান্নাত কেমন হবে এ ব্যাপারে প্রকৃত জ্ঞান মহান আল্লাহ তাআলার কাছেই রয়েছে। জান্নাতে রয়েছে এমন নেয়ামত যা কখনো কোনো চক্ষু অবলোকন করেনি। কোনো কর্ণ শ্রবণ করেনি। এমনকি কোনো অন্তর কল্পনাও করেনি। এরপরও আল্লাহ তাআলা কুরআন মাজিদে এবং রাসূল (সা.) হাদিস শরিফে বান্দাদের বুঝার সুবিধার্থে কিছু কিছু বর্ণনা দিয়ে দিয়েছেন।
সেখান থেকেই সামান্য আলোচনা এখানে তুলে ধরছি।
আল্লাহ তাআলা কুরআন মাজিদে বলেন,
يَا عِبَادِ لَا خَوْفٌ عَلَيْكُمُ الْيَوْمَ وَلَا أَنْتُمْ تَحْزَنُونَ (68) الَّذِينَ آمَنُوا بِآيَاتِنَا وَكَانُوا مُسْلِمِينَ (69) ادْخُلُوا الْجَنَّةَ أَنْتُمْ وَأَزْوَاجُكُمْ تُحْبَرُونَ (70) يُطَافُ عَلَيْهِمْ بِصِحَافٍ مِنْ ذَهَبٍ وَأَكْوَابٍ وَفِيهَا مَا تَشْتَهِيهِ الْأَنْفُسُ وَتَلَذُّ الْأَعْيُنُ وَأَنْتُمْ فِيهَا خَالِدُونَ (71) وَتِلْكَ الْجَنَّةُ الَّتِي أُورِثْتُمُوهَا بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُونَ (72) لَكُمْ فِيهَا فَاكِهَةٌ كَثِيرَةٌ مِنْهَا تَأْكُلُونَ (73
‘হে আমার বান্দাগণ! আজ তোমাদের কোনো ভয় নেই এবং তোমরা দুঃখিতও হবে না। যারা আমার আয়াতে বিশ্বাস করেছিলে এবং আত্মসমর্পণকারী (মুসলিম) ছিলে। তোমরা এবং তোমাদের সহধর্মিণীগণ সানন্দে জান্নাতে প্রবেশ কর। সবর্ণের থালা ও পান পাত্র নিয়ে ওদের মাঝে ফিরানো হবে, সেখানে রয়েছে এমন সমস্ত কিছু, যা মন চায় এবং যাতে নয়ন তৃপ্ত হয়। সেখানে তোমরা চিরকাল থাকবে। এটিই জান্নাত, তোমরা তোমাদের কর্মের ফলস্বরূপ যার অধিকারী হয়েছ। সেখানে তোমাদের জন্য রয়েছে প্রচুর ফলমূল, তা থেকে তোমরা আহার করবে।’ [সূরা যুখরুফ, আয়াত: ৬৮-৭৩]
অন্য আয়াতে ইরশাদ করেন,
‘নিশ্চয় সাবধানীরা থাকবে নিরাপদ স্থানে- বাগানসমূহে ও ঝরণারাজিতে, ওরা পরিধান করবে মিহি ও পুরু রেশমী বস্ত্র এবং মুখোমুখি হয়ে বসবে। এরূপই ঘটবে ওদের; আর আয়তলোচনা হুরদের সাথে তাদের বিবাহ দেব। সেখানে তারা নিশ্চিন্তে বিবিধ ফলমূল আনতে বলবে। (ইহকালে) প্রথম মৃত্যুর পর তারা সেখানে আর মৃত্যু আস্বাদন করবে না। আর তিনি তাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি হতে রক্ষা করবেন। (এ প্রতিদান) তোমার প্রতিপালকের অনুগ্রহস্বরূপ। এটিই তো মহা সাফল্য।’ [সূরা দুখান, আয়াত: ৫১-৫৭]
হাদিস শরিফে রাসূল (সা.) বলেন,
‘জান্নাতবাসীরা জান্নাতের মধ্যে পানাহার করবে; কিন্তু পেশাব-পায়খানা করবে না, তারা নাক ঝাড়বে না। বরং তাদের ঐ খাবার ঢেকুর ও কস্তুরীবৎ সুগন্ধময় ঘাম (হয়ে দেহ থেকে বের হয়ে যাবে)। তাদের মধ্যে তাসবীহ ও তাকবীর পড়ার স্বয়ংক্রিয় শক্তি প্রক্ষিপ্ত হবে, যেমন শ্বাসক্রিয়ার শক্তি স্বয়ংক্রিয় করা হয়েছে।’ [সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৮৩৫]
অন্য হাদিসে রাসূল (সা.) বলেন,
‘মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘আমি আমার পুণ্যবান বান্দাদের জন্য এমন জিনিস প্রস্তুত রেখেছি, যা কোনো চক্ষু দর্শন করেনি, কোনো কর্ণ শ্রবণ করেনি এবং যার সম্পর্কে কোনো মানুষের মনে ধারণাও জন্মেনি।’ তোমরা চাইলে এ আয়াতটি পাঠ করতে পার; যার অর্থ, ‘কেউই জানে না তার জন্য তার কৃতকর্মের বিনিময় স্বরূপ নয়ন-প্রীতিকর কী পুরস্কার লুকিয়ে রাখা হয়েছে।’ [সূরা সাজদাহ, আয়াত: ১৭; সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩২৪৪]
আরেকটি হাদিসে রাসূল (সা.) বলেন,
‘জান্নাতে প্রবেশকারী প্রথম দলটির আকৃতি পূর্ণিমা রাতের চাঁদের মত হবে। অতঃপর তাদের পরবর্তী দলটি আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্রের ন্যায় জ্যোতির্ময় হবে। তারা [জান্নাতে] পেশাব করবে না, পায়খানা করবে না, থুথু ফেলবে না, নাক ঝাড়বে না। তাদের চিরুনি হবে স্বর্ণের। তাদের ঘাম হবে কস্তুরীর ন্যায় সুগন্ধময়। তাদের ধুনুচিতে থাকবে সুগন্ধ কাঠ। তাদের স্ত্রী হবে আয়তলোচনা হুরগণ। তারা সকলেই একটি মানব কাঠামো, আদি পিতা আদমের আকৃতিতে হবে [যাদের উচ্চতা হবে] ষাট হাত পর্যন্ত।’ [সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩২৪৫]
এ ছাড়াও কুরআন ও হাদিসের ভাণ্ডারে জান্নাতের আলোচনা সংশ্লিষ্ট অনেক আয়াত ও হাদিস রয়েছে।
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم