প্রশ্ন
বর্তমানে প্রায় প্রতিদিনই পেপার-পত্রিকা খুললেই চোখে পড়ে অমুক স্থানে অমুককে ধর্ষন করে হত্যা করে ফেলা হয়েছে। ধর্ষণই তো অনেক বড় অপরাধ। সাথে আবার নির্মমভাবে হত্যাও করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি কী? ইসলামে এই অপরাধের শাস্তি কী?
উত্তর
بسم الله الرحمٰن الرحيم. حامدا و مصليا و مسلما
ইসলাম বিবাহবহির্ভূত যৌন সম্পর্ককে মারাত্মক অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করে। এ জন্য আল্লাহ তাআলা কুরআন মাজিদে এ ধরনের কোনো কিছুর ধারেকাছে যেতেও নিষেধ করেছেন।
ইরশাদ হচ্ছে-
وَلَا تَقْرَبُوا الزِّنَا
‘তোমরা ব্যভিচারের ধারে কাছেও যেও না।’ [সূরা ইসরা, আয়াত: ৩২]
এই আয়াত থেকেই যিনা সম্পর্কে ইসলামের ধারণা সুস্পষ্ট হয়ে যায়।
যিনা হয়ে থাকে স্বেচ্ছায়। আর ধর্ষণ হয়ে থাকে বলপূর্বক। যখন সাধারণ যিনার ক্ষেত্রেই ইসলাম এত কঠোর তখন ধর্ষণের ক্ষেত্রে যে আরও বেশি কঠোর হবে তা তো বলাই বাহুল্য। আর সাথে যদি হত্যার মতো আরও জঘণ্য অপরাধ যুক্ত হয় তাহলে এর শাস্তি কী হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়।
যেহেতু এখানে একাধিক অপরাধ সেহেতু এখানে শাস্তিও হবে একাধিক। ধর্ষণ করার কারণে প্রথমে যিনার শাস্তি পাবে। অর্থাৎ বিবাহিত হলে পাথর মেরে মৃত্যুদণ্ড। আর অবিবাহিত হলে একশ বেত্রাঘাত।
সাথে সাথে হত্যা করার কারণেও সে শাস্তি পাবে। যদি হত্যা করা হয় অস্ত্র দ্বারা তাহলে অবিবাহিত হলেও হত্যার কারণে কেসাস হিসেবে তাকেও হত্যা করা হবে। আর যদি এমন কোনো কিছু দিয়ে হত্যা করা হয়, যা দিয়ে সাধারণত হত্যা করা হয় না তাহলে তার উপর অর্থদণ্ড আসবে, যার পরিমাণ একশ’ উটের মূল্যের সমপরিমাণ অর্থ (প্রায় কোটি টাকা)।
আল্লাহ তাআলা কুরআন মাজিদে বলেন-
وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ أَنْ يَقْتُلَ مُؤْمِنًا إِلَّا خَطَأً وَمَنْ قَتَلَ مُؤْمِنًا خَطَأً فَتَحْرِيرُ رَقَبَةٍ مُؤْمِنَةٍ وَدِيَةٌ مُسَلَّمَةٌ إِلَى أَهْلِهِ إِلَّا أَنْ يَصَّدَّقُوا فَإِنْ كَانَ مِنْ قَوْمٍ عَدُوٍّ لَكُمْ وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَتَحْرِيرُ رَقَبَةٍ مُؤْمِنَةٍ وَإِنْ كَانَ مِنْ قَوْمٍ بَيْنَكُمْ وَبَيْنَهُمْ مِيثَاقٌ فَدِيَةٌ مُسَلَّمَةٌ إِلَى أَهْلِهِ وَتَحْرِيرُ رَقَبَةٍ مُؤْمِنَةٍ فَمَنْ لَمْ يَجِدْ فَصِيَامُ شَهْرَيْنِ مُتَتَابِعَيْنِ تَوْبَةً مِنَ اللَّهِ وَكَانَ اللَّهُ عَلِيمًا حَكِيمًا (92) وَمَنْ يَقْتُلْ مُؤْمِنًا مُتَعَمِّدًا فَجَزَاؤُهُ جَهَنَّمُ خَالِدًا فِيهَا وَغَضِبَ اللَّهُ عَلَيْهِ وَلَعَنَهُ وَأَعَدَّ لَهُ عَذَابًا عَظِيمًا
‘আর কোন মুমিনের কাজ নয় অন্য মুমিনকে হত্যা করা, তবে ভুলবশত (হলে ভিন্ন কথা)। যে ব্যক্তি ভুলক্রমে কোন মুমিনকে হত্যা করবে, তাহলে একজন মুমিন দাসকে মুক্ত করতে হবে এবং দিয়াত (রক্ত পণ দিতে হবে) যা হস্তান্তর করা হবে তার পরিজনদের কাছে। তবে তারা যদি সদাকা (ক্ষমা) করে দেয় (তাহলে দিতে হবে না)। আর সে যদি তোমাদের শত্রু কওমের হয় এবং সে মুমিন, তাহলে একজন মুমিন দাস মুক্ত করবে। আর যদি এমন কওমের হয় যাদের মধ্যে ও তোমাদের মধ্যে সন্ধিচুক্তি রয়েছে তাহলে দিয়াত দিতে হবে, যা হস্তান্তর করা হবে তার পরিবারের কাছে এবং একজন মুমিন দাস মুক্ত করতে হবে। তবে যদি না পায় তাহলে একাধারে দু’মাস সিয়াম পালন করবে। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমাস্বরূপ। আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
আর যে ইচ্ছাকৃত কোন মুমিনকে হত্যা করবে, তার প্রতিদান হচ্ছে জাহান্নাম, সেখানে সে স্থায়ী হবে। আর আল্লাহ তার উপর ক্রুদ্ধ হবেন, তাকে লা‘নত করবেন এবং তার জন্য বিশাল আযাব প্রস্তুত করে রাখবেন।’ [সূরা নিসা, আয়াত: ৯২-৯৩]
আততাশরীয়ুল জিনাইয়্যুল ইসলামী ২/৩৭৯-৩৮৫
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم