প্রশ্ন
ইসলামে মুরতাদের শাস্তি কী?
উত্তর
بسم الله الرحمٰن الرحيم. حامدا و مصليا و مسلما
মুরতাদ বলা হয় যে ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করার পর ইসলামের কোনো অকাট্য আকিদা-বিশ্বাসকে অস্বীকার বা অবমাননা করে কাফের হয়ে গেছে।
মুরতাদ ব্যক্তি সাধারণ কাফেরের চেয়েও নিকৃষ্ট। সাধারণ কাফের হলো, যে ইসলাম গ্রহণ না করে ইসলাম থেকে বিমুখ থাকল। কিন্তু মুরতাদ হলো, যে ইসলামের মতো এমন সুন্দর দ্বীন ও জীবনব্যবস্থা নিজ চোখে দেখার পরও তা বর্জন করল। তাই মুরতাদের শাস্তিও ভয়াবহ। দুনিয়া ও আখিরাতে উভয় জগতেই মুরতাদ কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হবে।
মুরতাদ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা কুরআন মাজিদে বলেন,
وَمَنْ يَرْتَدِدْ مِنْكُمْ عَنْ دِينِهِ فَيَمُتْ وَهُوَ كَافِرٌ فَأُولَئِكَ حَبِطَتْ أَعْمَالُهُمْ فِي الدُّنْيَا وَالْآَخِرَةِ وَأُولَئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيهَاخَالِدُون
‘আর তোমাদের মধ্যে কেউ যদি নিজের ধর্ম থেকে ফিরে যায়। আর সে অবিশ্বাসী অবস্থায় মারা যায়, তাহলে দুনিয়া ও আখেরাতে তাদের সকল নেক আমল বরবাদ হয়ে যাবে। এই লোকেরাই হল জাহান্নামের অধিবাসী, তারা চিরকাল সেখানে থাকবে।’ [বাকারা, আয়াত: ২১৭]
আরেক আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
إِنَّ الَّذِينَ ارْتَدُّوا عَلَى أَدْبَارِهِمْ مِنْ بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمُ الْهُدَى الشَّيْطَانُ سَوَّلَ لَهُمْ وَأَمْلَى لَهُمْ (25) ذَلِكَ بِأَنَّهُمْ قَالُوا لِلَّذِينَ كَرِهُوا مَا نَزَّلَ اللَّهُ سَنُطِيعُكُمْ فِي بَعْضِ الْأَمْرِ وَاللَّهُ يَعْلَمُ إِسْرَارَهُمْ (26) فَكَيْفَ إِذَا تَوَفَّتْهُمُ الْمَلَائِكَةُ يَضْرِبُونَ وُجُوهَهُمْ وَأَدْبَارَهُمْ (27) ذَلِكَ بِأَنَّهُمُ اتَّبَعُوا مَا أَسْخَطَ اللَّهَ وَكَرِهُوا رِضْوَانَهُ فَأَحْبَطَ أَعْمَالَهُمْ (28)
‘প্রকৃতপক্ষে যারা তাদের সামনে হেদায়েত পরিস্ফুট হওয়ার পরও মুরতাদ হয়ে যায়, (আসলে) শয়তান তাদেরকে ফুসলিয়েছে এবং অমূলক আশা দিয়েছে। এসব এজন্য যে, যারা আল্লাহর নাযিলকৃত বিষয়কে অপছন্দ করে, তাদেরকে (সেই কাফেরদেরকে) তারা (মুরতাদ-মুনাফিকেরা) বলে, কিছু কিছু বিষয়ে আমরা তোমাদের কথাও মানবো। (স্মরণ রাখা উচিত) আল্লাহ তাদের গুপ্ত কথা সম্পর্কে অবগত। ফেরেশতারা যখন এদের চেহারায় এবং পিছন দিক থেকে আঘাত করতে করতে এদের জান কবজ করবে, তখন এদের কী দশা হবে! এসব (শাস্তি) এজন্য যে, তারা এমন মতবাদ বেছে নিয়েছে, যা আল্লাহ তাআলাকে নারাজ করে এবং তারা তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন পছন্দ করে না। তাই আল্লাহ তাদের আমলগুলো বরবাদ করেছেন।’ [মুহাম্মাদ, আয়াত : ২৫-২৮]
দুনিয়াতে মুরতাদের দুনিয়াবী শাস্তির ব্যাপারে মুসলিম স্কলারগণ একমত যে মুরতাদকে প্রথমে তাওবা করতে বলা হবে। যদি সে তাওবা করে তাহলে তাকে মাফ করে দিবে। আর যদি তাওবা না করে তাহলে সবসম্মতিক্রমে তাকে হত্যা করা হবে।
হাদিস শরিফে এসেছে-
عن عبد الله قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : لا يحل دم امرء مسلم يشهد أن لا إله إلا الله، وأني رسولالله، إلا بإحدى ثلاث : النفس بالنفس، والثيب الزاني، والمفارق لدينه، التارك للجماع.
‘আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলে কারীম (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে মুসলমান সাক্ষ্য দেয়, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই আর আমি আল্লাহর রাসূল, তিন কারণের কোনো একটি ব্যতীত তার রক্ত প্রবাহিত করা হালাল নয় : অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা, বিবাহিত ব্যক্তি যেনা করা, ইসলাম ত্যাগ করে উম্মত থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া।’ [সহিহ বুখারি,হাদিস: ৬৮৭৮]
অন্য হাদিসে রয়েছে-
عن عكرمة قال : أتي علي رضي الله عنه بزنادقة فأحرقهم. فبلغ ذلك ابن عباس فقال : لو كنت أنا لم أحرقهم،لنهي رسول الله صلى الله عليه وسلم : لا تعذبوا بعذاب الله، ولقتلتهم لقول رسول الله صلى الله عليه وسلم : من بدلدينه فاقتلو
ইকরিমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আলী (রা.) এর নিকট কয়েকজন মুরতাদ-যিন্দীককে ধরে আনা হল। তিনি তাদের পুড়িয়ে ফেলার নির্দেশ দিলেন। এ-খবর ইবনে আববাস (রা.) এর নিকট পৌঁছলে তিনি বললেন, আমি হলে পুড়িয়ে হত্যা করার আদেশ দিতাম না। কেননা রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা আল্লাহ পাকের শাস্তি দানের বস্ত্ত (আগুন) দ্বারা শাস্তি দিও না।’ আমি বরং এদেরকে হত্যা করতাম। কেননা আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘যে নিজের দ্বীন পরিবর্তন করবে, তাকে হত্যা করে ফেলবে।’ [সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬৯২২]
আল্লাম ইবনুল কায়্যিম (রহ.) বলেন,
‘মুরতাদকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়াটাই যুক্তিসঙ্গত। কারণ সমাজে মুরতাদের অবস্থান বিশৃঙ্খলার দিকে নিয়ে যায়। এমন ব্যক্তিকে বাঁচিয়ে রাখা নির্বুদ্ধিতার পরিচায়ক।’ [ইলামুল মুওয়াক্কিঈন ২/৮৪]
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم